দৌজিনশি

দৌজিনশি (同人誌) বা জাপানি হরফ অনুসারে দোজিনশি হলো নিজ-প্রকাশিত ম্যাগাজিন, মাঙ্গা অথবা উপন্যাসের মুদ্রণরূপ। দৌজিন-এর একটি বৃহৎ শ্রেণীর অংশ হলো "দৌজিনশি"। এগুলি বেশিরভাগ সময়েই অপেশাদার ব্যক্তিরা কোনো বিদ্যমান সাহিত্য থেকে বুৎপন্ন করে; যদিও কিছু পেশাদার আর্টিস্টরা নিয়মিত শিল্পকলার বাইরে প্রকাশনার স্বার্থে এইরূপ কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

"দৌজিনশি" আর্টিস্টদের দলরা নিজেদেরকে সাকুরু (サークル, সার্কেল) বলে সম্বোধন করে। এইরকম কিছু দল আসলে মাত্র একজন আর্টিস্টকে নিয়েই গঠিত হয়: কখনো কখনো তাদেরকে বলা হয় কোজিন সাকুরু (個人サークル, ব্যক্তিগত সার্কেল)

১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিতরনের মূল রাস্তা হয়ে থেকেছে নিয়মিত ''দৌজিনশি'' সম্মেলনগুলির মাধ্যমে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হলো কমিকেট (কমিক মার্কেট), যেটি টোকিওর বিগ সাইটে গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে, ২০ একর (৮১,০০০ মি) -এরও ওপরে দৌজিনশি কেনা, বেচা ও ব্যবসা করা হয়। অন্যের সৃষ্টির উপর কাজ করে থাকা এই দৌজিনশি আর্টিস্টরা তাদের কাজগুলিকে খুব অল্প সংখ্যায় প্রকাশ করে যাতে মামলা-মোকদ্দমা ও দৌজিনশি -এর ঈপ্সিত পণ্যমূল্য থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।।

ব্যুৎপত্তি

দৌজিনশি শব্দটি ব্যুৎপত্তি লাভ করেছে দৌজিন (同人, "একই ব্যক্তি", অর্থাৎ একই লক্ষ্যের বা পছন্দের ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা) এবং শি (, একটি সাধারন প্রত্যয়, যার অর্থ হলো "পর্যায়ক্রমিক প্রকাশনা") শব্দটি থেকে।।

ইতিহাস

"দৌজিনশি" এর প্রবর্তন হয় প্রাক মেইজি সময়কালে প্রকাশিত মেইরোকু জাসশি" (明六雑誌) থেকে। শুধুমাত্র একটি সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে নয়, "মেইরোকু জাসশি" প্রকৃতপক্ষে "দৌজিনশি" -এর চিন্তাধারা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। "দৌজিনশি" উপন্যাস প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রথম যেই পত্রিকাটি এগিয়ে আসে, সেটি হলো ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ওজাকি কোয়ো ও ইয়ামাদা বিমিয়ো-র সম্পাদিত গারাকুতা বুনকো (我楽多文庫)[১] প্রাক শোওয়া সময়কালে "দৌজিনশি" প্রকাশনা একদম শীর্ষে নিজের জায়গা করে নেয়, এবং এটি তরুণ সৃজনশীল লেখকদের জন্যে মুখপত্র হয়ে ওঠে। লেখকদের ছোট ছোট দল বা ঘনিষ্ট বন্ধুদের মধ্যে সৃষ্টি ও আবন্টিত হয়ে, "দৌজিনশি"গুলি "শিশোসেতসু রীতির উত্থান এবং বিকাশের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ন অবদান রাখে। যুদ্ধোত্তর সময়কালীন, বিভিন্ন সাহিত্য বিদ্যালয় ও নতুন লেখকদের মধ্যে দৌজিনশি-এর গুরুত্ব ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। গুনজো, "বুনগাকুকাই" প্রভৃতি কিছু সাহিত্যক দিনপত্রিকাগুলো এদের জায়গা কেড়ে নিয়েছিল। তবুও এর একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হলো ১৯৩৩ থেকে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রকাশিত বুনগেই শুতো (文芸首都)। আবার কয়েকটি "দৌজিনশি" পত্রিকা বেঁচেও গিয়েছিল কিছু অফিসিয়াল দিনপত্রিকাগুলির মাধ্যমে। "হাইকু" ও "তানকা" পত্রিকাগুলি এখনো প্রকাশিত হয়ে চলেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯৭০ সালে, "দৌজিনশি" প্রকাশনা বৃদ্ধির স্বার্থে ফটোকপি টেকনোলজিকে ব্যবহার করার প্রস্তাব শোনা গিয়েছিল। এইসময়ে মাঙ্গা সম্পাদকরা লেখকদের উৎসাহিত করতে থাকে ভর বাজারে আবেদন রাখার জন্যে, যার ফলে "দৌজিনশি" লেখার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে পারতো।[২]

১৯৮০এর শতকে, "দৌজিনশি" -এর অন্তর্গত বিষয়বস্তুগুলি মূলত অরিজিনাল কাজের নকল হওয়ার চাইতে মূল কাজের লালিকা হয়ে উঠলো। আবেগপ্রবণ সম্পর্কের মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট চরিত্রগুলোকে প্রায়শই "আনিপারো" বলা হত। পুরুষ লেখকরা "উরুসেই ইয়াতসুরা" এবং মহিলা লেখকরা "ক্যাপ্টেন সুবাসা" এর মতো সিরিজে নিয়োগ হতেন।[২] এর ফলে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কমিকেট-এর খ্যাতি বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়; যেটি তার প্রথম ইভেন্ট, "দৌজিনশি" বিতরনের জন্যে উৎসর্গ করেছিল।

১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কিছু "দৌজিনশি" স্রষ্টারা তাদের কাজগুলি বিভিন্ন কমিক বইয়ের দোকানের সাহায্যে বিক্রি করেছিলেন। এই কার্যকলাপটি প্রকাশ্যে ধরা পড়ে যায় যখন এইরকম তিনটি দোকানের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয় একটি "ললিকন" "দৌজিনশি" বিক্রি করার অপরাধে।[৩]

দোজিন মার্ক লাইসেন্সের প্রতীকচিহ্ন

শেষ দশকে এসে "দৌজিনশি" লেখার তাৎপর্যপূর্ন বিস্তার ঘটেছে, এগুলি হাজার হাজার পাঠক ও লেখকদের আকর্ষিত করেছে। ব্যাক্তিগত প্রকাশনা সংস্থাগুলির জন্যে "দৌজিনশি" লেখকরা তাদের লেখা, আঁকা, প্রচার, প্রকাশ ও বিতরন অতি সহজে করে যেতে পেরেছে। উদাহরণস্বরূপ কিছু "দৌজিনশি" বর্তমানে ডিজিটাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। বহু "দৌজিনশি" স্রষ্টারা আবার অনলাইন ডাউনলোড এবং প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড পরিষেবায় যোগদান করছে, যেখানে অন্যরা তাদের কাজ কিছু আমেরিকান চ্যানেল, অর্থাৎ অ্যানিমে শপ ওয়েবসাইট ও বিশেষ অনলাইন ডাইরেক্ট ডিস্ট্রিবিউশন সাইটের মাধ্যমে বিতরন করা শুরু করেছে। ২০০৮ সালে ওটাকু ইন্ডাস্ট্রিতে একটি হোয়াইট পেপার প্রকাশিত হয়, যার দ্বারা বোঝা যায় যে ২০০৭ সালে "দৌজিনশি" বিক্রি করে মোট আয় হয়েছে ২৭.৭৩ বিলিয়ন ইয়েন, বা মোট ওটাকু অর্থব্যয়ের ১৪.৯ শতাংশ।[৪]

আইনি ঝামেলা এড়ানোর জন্যে দোজিন মার্ক (同人マーク) গঠিত হয়, এটি হলো ক্রিয়েটিভ কমনস লাইসেন্সেস কর্তৃক অনুপ্রেরিত একটি লাইসেন্স ফরম্যাট।[৫] সর্বপ্রথম লেখক যিনি এই লাইসেন্সটি অনুমোদন করেছিলেন, তিনি হলেন কেন আকামাতসু। ২০১৩ সালের ২৮শে আগস্ট, উইকলি শোনেন ম্যাগাজিনে মুক্তিপ্রাপ্ত "ইউকিউ হোল্ডার!" মাঙ্গাতে তিনি এটি কাজে লাগান।।[৬]

কমিকেট

কমিকেট হচ্ছে বিশ্বের সবচাইতে বৃহৎ কমিক সম্মেলন। জাপানের টোকিও শহরে এটি বছরে দুবার (গ্রীষ্ম ও শীতে) অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সম্মেলনটি ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল। সেখানে মাত্র ৩২টি দল অংশগ্রহণ করেছিল এবং ৬০০ জন উপস্থিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল মহিলারা, কিন্তু কমিকেটে পুরুষ অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা পরে বৃদ্ধি পায়।[৭] ১৯৮২ সালে, দশ হাজারেরও কম সংখ্যায় লোকে উপস্থিত ছিল, কিন্তু তা বেড়ে এক লক্ষ হয়ে যায় ১৯৮৯ সালে, এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই সংখ্যা পাঁচ লক্ষেরও ওপর ছাড়িয়ে গেছে।[৮] উপস্থিতির এই দ্রুত বৃদ্ধি দেখে দৌজিনশি লেখকরা তাদের কাজের হাজার হাজার কপি বিক্রি করতে থাকলেন এবং বেশ মোটা অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হলেন তাদের এই পেশার মাধ্যমে।[৯] ২০০৯ সালে, মেইজী ইউনিভার্সিটি, তাদের সুরুগাদাই ক্যাম্পাসের এলামনাই এর সম্মান জানাতে একটি দোজিন মাঙ্গা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে, এবং নাম রাখে “ইয়োশিহিরো ইয়োনেজাওয়া মেমোরিয়াল লাইব্রেরী”। এর মধ্যে ৪১৩৭টি বাক্সের সাথে ইয়োনেজাওয়ার নিজস্ব দৌজিনশি কালেকশন রয়েছে এবং দৌজিনশি রচনাশৈলীর আরেকজন বিখ্যাত ব্যাক্তি, সুগুও ইওয়াতার কালেকশন আছে।।[১০]

বিষয়শ্রেণী

প্রধানধারার পাল্টা অংশগুলোর মতোই, দৌজিনশি বিভিন্ন প্রকারে ও ধরনে প্রকাশিত হয়। তবুও নির্ধারিত দর্শকদের জন্যে কিছু নির্দিষ্ট থিম খুব বেশিই প্রচলিত আছে, এবং কয়েকটি প্রধান বিভাগে এই প্রকাশনা শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এগুলিকে বিস্তারিতভাবে মূল কাজ ও আনিপারো কাজে ভাগ করা যায়।[১১]

ফ্যানফিকগুলিতে একটি বিখ্যাত থিম হলো কোনো প্রদত্ত শোয়ের (মূলধারা প্রকাশনার দৌজিনশি কেন্দ্রীভূত) অন্তর্গত চরিত্রদের সমকামী মিলন। এইরকম বহু প্রকাশনা ইয়াওই অথবা ইউরি থিম (সমকামী প্রেমমূলক কাহিনী) ব্যবহার করে, কারন তারা হয়তো এইরকম সম্পর্কগুলি ফুটিয়ে তুলতে চায় অথবা তাদের প্রধান শোয়ের মূল বিবৃতিটি পরোক্ষভাবে প্রকাশ করতে চায়।

দৌজিনশি রচনার আরেকটি বিভাগ হলো ফারি বা কেমোনো, সমকামী নরত্বারোপমূলক পুরুষ প্রাণী বা অল্প কিছু লেসবিয়ান চরিত্রের মিলনকে এটি বর্ণিত করে। ইয়াওইইউরি এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ফারি দৌজিনশি -তে দেখা যায়। এরকম বহু দৌজিনশি প্রেমমূলক অবস্থা বা পরিবেশের মধ্যে চরিত্রগুলিকে উপস্থাপন করে, অথবা এগুলি সাধারনত অ্যানিমে ও মাঙ্গাতে চোখের বা মুখের অতিরঞ্জিত চিত্র ফুটিয়ে তোলে।

প্রকৃত প্রকাশনা সংস্থায় বিশেষ কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এবং এইরকম প্রকাশনার তুমুল চাহিদা থাকার কারনে প্রায় প্রত্যেক দৌজিনশি-এর একটি বৃহৎ অংশ যৌণ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিপূর্ণ থাকে। অবশ্যই দৌজিনশি তৈরি করার মূল গুরুত্ব হলো কোনো বিখ্যাত শোয়ের চরিত্রগুলিকে আরো বিচিত্রভাবে নিজ কল্পনায় ফুটিয়ে তোলা। কাজেই, এইরকম সৃষ্টিগুলোকে ইংরেজিতে 'এইচ-দৌজিনশি' বলা হয়। আগে যৌণ প্রসঙ্গগুলিকে জাপানে এচ্ছি বলা হতো, অতএব সেখান থেকেই ইংরেজির এই বর্তমান নামকরণটি হয়েছে, কিন্তু এখন জাপানে এরো শব্দটির প্রচলন বেশি রয়েছে এইসব ক্ষেত্রে।[১২] বর্তমানে কেবলমাত্র এরো মাঙ্গা (エロ漫画) শব্দটির মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্কদের দৌজিনশি থিমটিকে চিহ্নিত করা হয়। কোনো কোনো সময় আবার এদের "বড়দের জন্যে" (成人向け, সেইজিন মুকে) অথবা ১৮-কিন (১৮禁) ("১৮ বছরের নিচে নিষেধ" (১৮歳未満禁止, ১৮-সাই-মিমান কিনশি) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেসমস্ত প্রকাশনায় এইরকম বিষয়াদি নেই, তাদেরকে পৃথক রাখতে ইপ্পান (一般, , "সাধারন", সাধারন পাঠকদের জন্যে উপযুক্ত) শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

বেশিরভাগ দৌজিনশিগুলি বাণিজ্যিকভাবে আবদ্ধ এবং দৌজিনশি-কা (দৌজিনশি লেখকরা) কর্তৃক প্রকাশিত হয়, যারা বিভিন্ন মুদ্রণ সার্ভিসের সাহায্যে নিজেদের কাজ ছাপায়। তবে কপিবুকগুলি জেরোক্স মেশিন বা অন্য কোনো অনুকরনযোগ্য উপায়ে নিজ প্রচেষ্টায় তৈরি হয়। অল্প কিছুই শুধুমাত্র হাতে আঁকা কপি হয়ে থাকে।

প্রত্যেকটি ইংরেজি ভাগের নামকরণ শুধুমাত্র জাপানীজ থেকেই উৎপত্তি লাভ করেনি। উদাহরনস্বরুপ, এইউ দৌজিনশি হলো বিকল্প বিশ্ব কেন্দ্রিক লেখার একটি সেট।।[১৩]

বৈধতা

বেশিরভাগ দৌজিনশিই হলো এমন একটি অমৌলিক কাজ যা প্রকৃত স্রষ্টার অনুমতি ছাড়াই প্রযোজিত করা হয়। প্রাক ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই এইরকম রীতিরেওয়াজ চলে আসছে।[১৪] দৌজিনশিকে জাপানের স্বত্বাধিকার আইন অনুসারে শিনকোকুজাই হিসেবে মনোনীত করা হয়। অর্থাৎ দৌজিনশি স্রষ্টাদেরকে আইন গ্রেপ্তার করবে না, যতক্ষণ না প্রকৃত স্বত্বাধিকারী অভিযোগ লেখে তার/তাদের বিরুদ্ধে।[১৫] ২০১৬ সালে, তখনকার জাপানীজ প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নিশ্চিত করেন যে যেহেতু দৌজিনশি বাজারে তার প্রকৃত সংস্করণের সাথে প্রতিযোগিতা করে না এবং প্রকৃত স্রষ্টার কাজকে অমর্জদা দেয় না, তাই তারা হচ্ছে শিনকোকুজাই[১৫] স্বত্বাধিকরী দৌজিনশি বাজারের কাছে একটি অ-বাস্তবায়ন বেসরকারি নীতি গ্রহণ করে, কারন এটা দেখা যায় যে ব্যবসায়িক মাঙ্গা বাজারে এগুলি আসলে উপযোগী ছাপ ফেলেছে: ভবিষ্যতের মাঙ্গা আর্টিস্টদের জন্যে এটি একটি প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করে দেয়,[১৬] এবং এখান থেকে প্রায়শই বিভিন্ন প্রকাশকরা প্রতিভাশালী দৌজিনশি স্রষ্টাদের নিয়োগ করে।[১৭] টেম্পল ইউনিভার্সিটির একজন আইন অধ্যাপক সালিল কে. মেহরা অনুমান করেন যে বাজারে দৌজিনশি থাকার কারনেই মাঙ্গার বাজার আরো উৎপাদনশীল হয়ে উঠেছে, আর তাই ইন্ডাস্ট্রিতে কঠোর বাস্তবায়ন নীতি রাখলে সমস্তটাই জলে ডুবে যাবে।।[১৬]

উল্লেখযোগ্য ঘটনাদ্বয়

১৯৯৯ সালে নিনটেনদো একটি কামদ পোকেমন মাঙ্গা লেখকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। সারা মিডিয়ায় হৈচৈ হওয়ার সাথাসাথি দৌজিনশি-কে ঘিরে থাকা জাপানের সকল স্বত্বাধিকারী আইনের একাডেমিক বিশ্লেষণ পর্যন্ত করা হয়েছিল। এইসময়, বৈধ বিশ্লেষণ যেন উপসংহারে বলতে চায় যে যেহেতু দৌজিনশি কেবলমাত্র এক রাতের অপটুদের হাতের কাজ এবং এগুলিকে বাণিজ্যিক বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে না, তাই দৌজিনশিকে অবহেলা করাই শ্রেয়।[১৮] ২০০৬ সালে, একজন আর্টিস্ট ডোরেমন-এর একটি কাল্পনিক অন্তিম অধ্যায় বানিয়ে বিক্রি করেছিল, যেটা পুরোপুরি সম্পূর্নও ছিল না। সেটিকেও প্রকৃত লেখক ফুজিকো ফুজিও সাবধান করে দিয়েছিলেন। ফলে এই দৌজিনশি লেখক তার কাজের বিতরন বন্ধ করে দেন এবং এমনকি তিনি স্বেচ্ছায় প্রকাশককে ক্ষতিপূরণ পর্যন্তও দিয়েছিলেন। প্রকাশক উল্লেখ করেন যে শুধুমাত্র এই দৌজিনশিগুলি তার উদ্বেগের কারন হতে পারে না। ইয়োমিউরী শিনবান বলেন, "ফ্যানজিন কখনো একাধিক সমস্যার সৃষ্টি করে না, যতক্ষণ না সেগুলি কেবলমাত্র এক দিনের প্রদর্শনীতেই বিক্রি করা হচ্ছে," কিন্তু অপরদিকে আরেকজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে এদের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার জন্যে একটি স্বত্বাধিকারী আইন গঠন করা অবশ্যই উচিত।[১৯]

২০২০ সালে, মেধা সম্পত্তি উচ্চ আদালত, একটি দৌজিনশি শেয়ারিং সাইটকে ¥ ২.১৯ মিলিয়ান অর্থ প্রদান করার নির্দেশ দেয় সেই সকল দৌজিনশি এর প্রকৃত লেখকদের কাছে, যাদের কাজের ওপর নির্ভর করে দৌজিনশিগুলি তৈরি হয়েছিল। এই ফাইল শেয়ারিং সাইটটি আবেদন করে, যেহেতু দৌজিনশি হলো একটি অমৌলিক কাজ, তাই এগুলি স্বত্বাধিকারী আইন দ্বারা সুরক্ষিত নয়। তবুও আদালত জারি করে যে দৌজিনশিকে অবৈধভাবে অমৌলিক কাজ বলার কোনো উপযুক্ত প্রমাণ এখনো পর্যন্ত নেই। এই রায়ের উপর নির্ভর করে মন্তব্যকারীরা উল্লেখ করে যে এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক আইনে দৌজিনশি স্রষ্টাদের অধিকার সম্ভাব্যভাবে প্রশস্ত হয়ে উঠতে পারে।।[২০][২১]

প্রভাব

অ্যানিমেনেশন-এর জন ওপলিগার বলেন যে জাপানীজ ফ্যানেদের মধ্যে দৌজিনশি সৃষ্টি করাটা বিশেষ জনপ্রিয় হতে পারে, কিন্তু পশ্চিমী ফ্যানেদের জন্যে নয়। ওপলিগার মনে করেন, যেহেতু জাপানীজ মানুষেরা ছোটবেলা থেকেই অ্যানিমে ও মাঙ্গার সঙ্গে বন্ধুদের মতো বড়ো হয়ে এসেছে, তাই তাদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মাঙ্গা ও অ্যানিমের দৌজিনশি তৈরি করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।[২২] জাপানীজ ভাষা না বোঝবার কারনে পশ্চিমী ফ্যানেরা আরো বিশুদ্ধ চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা অর্জন করে। তারা ছোটবেলা থেকে সামাজিক প্রভাবের কারণে কার্টুন ও কমিক্স দেখতে এবং পড়তে উৎসাহিত হয়, আর তাই তাদের মধ্যে বেশিরভাগজনই বিদ্যমান কাজগুলিকে পুনরায় সুবিন্যস্ত ও ব্যবহার করে অ্যানিমে মিউজিক ভিডিও তৈরি করে।[২৩]

বেশিরভাগ পশ্চিমী সংস্কৃতিতেই অনুমান করা হয় যে দৌজিনশি শুধুমাত্র কোনো বিদ্যমান কাজের অবকলন মাত্র, ফ্যান ফিকশন এর অ্যানালগ ও প্রায় অশ্লীল। এর খানিকটা আবার সত্যও বটে: প্রায়ই দৌজিনশি শুধুমাত্র একটি লালিকা অথবা বিখ্যাত মাঙ্গা, গেম ও অ্যানিমে সিরিজের বিকল্প কাহিনী হয়ে থাকে এবং অতিমাত্রায় অশ্লীল প্রসঙ্গে পরিপূর্ন থাকে। বিপরীত দিকে, অনেকগুলি অশ্লীল প্রসঙ্গহীন পৃথক দৌজিনশিও তৈরি করা হয়। উদাহরনস্বরুপ, তৌহু প্রজেক্ট-কে কেন্দ্র করে বহু দৌজি নশি সৃষ্টি করা হয়েছে, যেগুলি মোটেও অশ্লীল নয়।[২৪][২৫] কয়েকটি দল ২০০৮ সালের বার্ষিক তৌহু অনলি ইভেন্ট রেইতাইসাই -তে আনুমানিকভাবে মাত্র ১০ শতাংশ অ্যাডাল্ট-অনলি থিমের দৌজিনশি প্রকাশ করেছিল।।[২৫]

আরও দেখুন

  • দোজিন মিউজিক
  • দোজিন সফ্ট
  • নিগাতা কমিক মার্কেট
  • ওতাকু

সংশ্লিষ্ট ধারনাদ্বয়

  • অ্যামেটর প্রেস অ্যাসোসিয়েশন
  • ফ্যানজিন
  • ফ্যান ফিকশন
  • মিনিকমিক
  • স্ব-প্রকাশনা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • Passion: বিখ্যাত দৌজিনশি ফ্যানলিস্টিং সাইট

Doujinshi DB ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে: ব্যবহারকারী উপস্থাপিত দৌজিনশি স্রষ্টা, সংগঠন এবং বইয়ের বৃহৎ তথ্যভাণ্ডার

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী