দস্তক (১৯৭০-এর চলচ্চিত্র)
দস্তক (অনু. ঠক্ঠক্ শব্দ) হল ১৯৭০ সালে নির্মিত একটি হিন্দি চলচ্চিত্র। এটি রচনা ও পরিচালনা করেছিলেন রাজিন্দর সিং বেদী এবং এটি ছিল তাঁর প্রথম পরিচালনা।
দস্তক | |
---|---|
পরিচালক | রাজিন্দর সিং বেদী |
প্রযোজক | রাজিন্দর সিং বেদী |
চিত্রনাট্যকার | রাজিন্দর সিং বেদী |
শ্রেষ্ঠাংশে | সঞ্জীব কুমার রেহানা সুলতান অঞ্জু মহেন্দ্রু |
সুরকার | মদন মোহন মজরুহ সুলতানপুরী (গানের কথা) |
চিত্রগ্রাহক | কমল বোস |
সম্পাদক | হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় |
মুক্তি | ১৯৭০ |
স্থিতিকাল | ১৪০ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
চলচ্চিত্রটি, এর প্রধান অভিনেতা সঞ্জীব কুমার এবং নবাগত রেহানা সুলতানের অভিনয়ের জন্য এবং মদন মোহনের স্মরণীয় গানের জন্য পরিচিত হয়ে আছে। গানের কথা লিখেছিলেন মজরুহ সুলতানপুরী। মদন মোহন এই ছবির জন্য তাঁর প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন। নির্দেশক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় এই সাদা কালো চলচ্চিত্রের সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫৮ সালে মধুমতী ছবির জন্য পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি এই ছবিতে সম্পাদনা করে দ্বিতীয়বারের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন।[১]
সংক্ষিপ্তসার
একটি যৌনপল্লীর পটভূমিতে রচিত অসাধারণ একটি গল্পের জন্য এই চলচ্চিত্রটি পরিচিত হয়ে উঠেছিল। হামিদ (সঞ্জীব কুমার) এবং সালমা (রেহানা সুলতান) নামে নব বিবাহিত এক দম্পতি, অনিচ্ছাকৃতভাবে ওই অঞ্চলে একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিল। তারপরেই তাদের দরজায় কড়া নাড়া (দস্তক) থেকে শুরু হয়েছিল তাদের প্রতিদিনের অশান্তি। ওই ঘরের পূর্বের বাসিন্দা ছিল শমশাদ বেগম (শাকিলা) নামে এক বিখ্যাত মুজরেওয়ালি (নাচনী)।
রূপরেখা
রজিন্দর সিং বেদীর বেতার নাটক, নকল-এ-মকানী (একটি নতুন বাড়িতে স্থানান্তর)র প্রসারিত সংস্করণ হল দস্তক। ১৯৪৪ সালে লাহোরের অল ইন্ডিয়া রেডিওতে এটি সর্বপ্রথম পরিবেশিত হয়েছিল।[২]
মুক্তি পাবার পর, চলচ্চিত্রটি রাজিন্দর সিং বেদীকে ভারতের সমান্তরাল চলচ্চিত্র জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, কারণ দস্তক ঐ দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল।[৩] ১৯৭২ সালে পরিচালককে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, "রাজিন্দর সিং বেদী ছিলেন এক অসাধারণ প্রতিভাধর লেখক। প্রকৃতপক্ষে, সঞ্জীব কুমার এবং রেহানা সুলতান অভিনীত সাদা-কালো চলচ্চিত্র দস্তক এর লেখক পরিচালক হিসাবে রাজিন্দরের এই প্রথম উদ্যোগটির সম্পাদনা করতে পেরে আমি নিজেকে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত মনে করছি। রেহানা 'উর্বশী' পুরস্কার জিতেছিলেন, সেই সময় সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কারের পদটিকে এই নামেই ডাকা হত এবং আমি আমার প্রথম ভালবাসা - সম্পাদনার জন্য ঈপ্সিত ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলাম!"[৪]
চরিত্র চিত্রণ
- সঞ্জীব কুমার হামেদ চরিত্রে
- রেহানা সুলতান সালমা চরিত্রে
- অঞ্জু মহেন্দ্রু মারিয়া চরিত্রে
- শাকিলা শমশাদ হিসাবে
- কমল কাপুর ব্রিজমোহন হিসাবে
- মনমোহন কৃষ্ণ শহীদ হিসাবে
- আনোয়ার হুসেন মারাঠিওয়ালে হিসাবে
- দেব কিশান মির্জা হিসাবে
- নিরঞ্জন শর্মা
- জগদেব
- যশ কুমার
সংগীত
আর.ডি. বর্মণের মতো সংগীত পরিচালকদের সংগীতে যখন প্রচলিত পশ্চিমী তালে সারা দেশ মাতোয়ারা ছিল, তখন মুক্তি পেয়েছিল দস্তক। কিন্তু চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক ঢোলকের তাল এবং রাগ ভিত্তিক সঙ্গীতের ধ্রুপদী ছন্দের বিশারদ হিসাবে দৃঢ় থেকেছিলেন। সংগীত পরিচালক মদন মোহন রাগ-ভিত্তিক সঙ্গীতের শাস্ত্রীয় ঐতিহ্যের প্রতি অনুগত থেকে দস্তক এর সংগীত পরিচালনা করেছিলেন বলে, এর সঙ্গীত এক বিশিষ্টতা অর্জন করেছিল। নেপথ্য কণ্ঠের গানগুলি সম্ভবত লতা মঙ্গেশকর সেরা অবদান ছিল।[৫]
গানের কথা
বিখ্যাত গীতিকার মজরুহ সুলতানপুরীর মর্মভেদী গানের কথার জন্য চলচ্চিত্রটি পরিচিত, বিশেষত গল্পের মহিলা চরিত্র সালমার বেদনাদায়ক অবস্থাকে তুলে ধরার জন্য— সেটি সমাজ সম্পর্কে একটি নাটকীয় বিবৃতি হতে পারে: "হাম হ্যায় মাতায়ে কুছ বাজার কি তরাহ, উঠতি হ্যায় হর নিগাহেঁ খরিদার কি তরাহ" বা নীরব ব্যথা "মাই রে মাই ক্যায় সে কহুঁ পীড় আপনে জিয়া কি..."।[৬]
গান
- "বৈয়াঁ না ধরো" - লতা মঙ্গেশকর - (রাগ চারুকেশীর উপর ভিত্তি করে)[৭]
- "হাম হ্যায় মাতা-এ- কুছা-ও-বাজার" - লতা মঙ্গেশকর
- "মাই রে মাই ক্যায়সে সে কহুঁ" – লতা মঙ্গেশকর/মদন মোহন
- "তুমসে কহুঁ এক বাত" - মোহাম্মদ রফি
পুরস্কার সমূহ
- ১৯৭১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সেরা অভিনেতা - সঞ্জীব কুমার
- ১৯৭১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সেরা অভিনেত্রী - রেহানা সুলতান
- ১৯৭১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সেরা সংগীত পরিচালনা - মদন মোহন
- ১৯৭২ ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ পুরস্কার - (সাদা-কালো) - কমল বোস
- ১৯৭২ ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা পুরস্কার - হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়
সমালোচনা
অভিজিৎ ঘোষের বই, ৪০ রিটেকস: বলিউড ক্লাসিকস ইউ মে হ্যাভ মিসডএ দস্তক স্থান পেয়েছিল।