তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস

লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এল পি জি অথবা এল পি গ্যাস) অর্থাৎ চাপে তরলীকৃত জ্বালানি গ্যাস, এ সমস্ত নামে প্রোপেন বা বিউটেন কে বা এদের মিশ্রণকে ও নির্দেশ করা হয়। এটি মূলত দাহ্য হাইড্রোকার্বন গ্যাসের মিশ্রণ এবং জ্বালানি হিসেবে রন্ধন কার্যে, গাড়িতে ও ভবনের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে (HVAC) ব্যবহৃত হয়।

Two ৪৫ কেজি (৯৯ পা) LPG cylinders in New Zealand used for domestic supply.
LPG minibuses in Hong Kong
এল পি জি চালিত গাড়ীর ইঞ্জিন
জাপান- এল পি জি চালিত ফর্কলিফট

এটির ব্যবহার প্রপ্যাল্যান্ট গ্যাস [১] হিসেবে এবং শীতক যন্ত্রের হিমায়ক হিসেবে[২] ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন কার্যে সিএফসি গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এল পি জি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তরের ক্ষয় রোধ করা যায়। এছাড়া যখন গাড়িতে এল পি জি ব্যবহার করা হয় তখন "অটো গ্যাস" নামে অভিহিত হয়।

১৯১০ সালে আবিষ্কৃত হওয়ার পর ১৯১২ সালে বাণিজ্যিক রূপে উৎপাদন শুরু হয়। এটি জ্বলে শেষ হলে কোন অবশেষ থাকেনা এবং সালফার নির্গত হয়না , এজন্য মোট জ্বালানি শক্তির তিন শতাংশই বর্তমানে এল পি জি । এটি গ্যাসীয় হওয়ায় কোন পানি দূষণ বা ভূমির দূষণ ঘটেনা। এর ক্যালোরিফিক মান ৪৬.১ MJ/kg যেখানে ফার্নেস তৈলের জন্য এ মান ৪২.৫ MJ/kg পেট্রোল/গ্যাসোলিন এর জন্য ৪৩.৫ MJ/kg ।[৩] কিন্তু এর শক্তি ঘনত্ব প্রতি একক আয়তনে ২৬ MJ/L অন্যদের তুলনায় বেশ কম; কারণ এর আপেক্ষিক ঘনত্ব ফার্নেস তৈল (প্রায় ০.৫–০.৫৮ kg/L) ও পেট্রোল/গ্যাসোলিন (০.৭১–০.৭৭ kg/L) হতে কম।

এ গ্যাসের স্ফ‌ুটনাংক সাধারণ তাপমাত্রার নিচে থাকে তাই দ্রুত চাপ মুক্ত হয়ে বাতাসে মিশে যেতে পারে। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে যাতে বিস্ফোরণ না হয় সেজন্য ইস্পাত নির্মিত আধারে সর্বোচ্চ চাপ সহনের মাত্রা পূর্ণ করার বদলে ৮০-৮৫% পূর্ণ করা যায়। চাপের ফলে তরল গ্যাস ও আবার বায়বীয় রুপে পরিবর্তন মোটামুটি ২৫০ঃ১ অনুপাত বজায় থাকে। "বাস্পীয় চাপ" নামক একটি মাত্রার চাপে এ গ্যাস তরল হয়ে থাকে, যার জন্য ২০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ বিউটেন এর ক্ষেত্রে ২২০ কিলো প্যাসকাল চাপ প্রয়োজন হয় এবং ৫০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ প্রোপেন এর ক্ষেত্রে ২২০০ কিলো প্যাসকাল চাপ প্রয়োজন হয়। এল পি জি, প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো নয়, বরং বাতাসের চেয়ে ভর বেশি হওয়ায় এটি নিচু স্থান ও বেজমেন্টে জমে থাকতে পারে। বিপদ সমুহ হল - বাতাসের সাথে ছড়িয়ে পড়ার পর আগুনের সংস্পর্শে জ্বলে উঠে, অন্যথায় অক্সিজেনের স্থান দখল করে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস রোধ করতে পারে

ব্যবহার

রন্ধন কার্যে

এলপিজি অনেক দেশে অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়, এটি জ্বালানির উৎস হিসেবে কোন দেশে চাহিদার প্রথমে থাকে।

/ভারতে, প্রায় ৮.৯ মিলিয়ন টন এলপিজি খাদ্যে আহার করা হয় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬ (ছয় মাস) প্রধানত রান্না করার জন্য গার্হস্থ্য খাতে। গার্হস্থ্য সংযোগগুলির সংখ্যা ২৫ মিলিয়ন (যেমন প্রতি ছয়জনের জন্য এক সংযোগ) ৩৫০ মিলিয়ন এলপিজি সিলিন্ডারের প্রচলন নিয়ে। [9] অধিকাংশ এলপিজি প্রয়োজন আমদানি করা হয়। ভারতে পাইপড সিটি গ্যাস সরবরাহ এখনো বড় স্কেলে উন্নত হয়নি। গার্হস্থ্য ব্যবহারকারীদের জন্য ভারত সরকার দ্বারা এলপিজি দেওয়া হয় এলপিজি দাম বৃদ্ধির ফলে ভারতে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে, যেহেতু এটি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভোটিং প্যাটার্নকে প্রভাবিত করে।

এলপিজি একবার হংকংয়ের একটি রান্নার ইন্ধন ছিল; তবে, নতুন ভবনগুলিতে শহরে গ্যাসের বর্ধিত সম্প্রসারণে এলপিজি ব্যবহারের পরিমাণ ২৪% এর কম হলেও আবাসিক ইউনিটগুলি কমিয়ে দেয়। যাইহোক, বৈদ্যুতিক, আবেশন বা ইনফ্রারেড স্টোভ ছাড়া অন্য; এলপিজি-জ্বালানি স্টোভ একমাত্র প্রকার যা অধিকাংশ উপনগর গ্রামে এবং অনেক জনসাধারণের বাসস্থান এস্টেটে পাওয়া যায়।

ব্রাজিলের শহুরে এলাকার এলপিজি হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ রান্নার জ্বালানি জ্বালানি যা রিও ডি জেনেইরো এবং সাও পাওলো শহরের ব্যতিক্রমধর্মী গ্যাস পাইপলাইন অবকাঠামোসহ ব্যতিক্রমধর্মী সব পরিবারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারের একটি সরকারি অনুদান ("ভেলে গাস") এলপিজি অর্জনের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।

এলপিজি সাধারণত উত্তর আমেরিকায় গার্হস্থ্য রান্নার জন্য এবং বহিরাগত grilling জন্য ব্যবহার করা হয়।/

তাপ উৎপাদন

গাড়ির জ্বালানি

শীতক

সহজ প্রাপ্যতা

২০১০-২০১২ সালের সমীক্ষা মতে বিশ্বের প্রাকৃতিক গ্যাসের (যা হতে এল পি জি পাওয়া যায়) প্রমাণিত মজুদ প্রায় ৩০০ ট্রিলিয়ন ঘন মিটার বা ১০৬০০ ট্রিলিয়ন ঘন ফুট বলে জানা যায়। এছাড়া অন্য একটি উৎস হল অপরিশোধিত খনিজ তৈল যাতে এর অপার সম্ভাবনার দিকটি বোঝা যায়। এল পি জি উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২.২% , ফলে এর সংকটের কোন আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

সিলিন্ডার ব্যাবহারের ইতিহাস

সিলিন্ডার উৎপাদনের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ১৮৭০-১৮৮০ সালে কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহন করার জন্য সর্ব প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে চালু করা হয়।

প্রাকৃতিক গ্যাসের সাথে তুলনামূলক সম্পর্ক

এল পি জি মূলত বিউটেনপ্রোপেন এর সমন্বয়ে গঠিত হয়, অপরদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসে থাকে লঘু ভরের মিথেনইথেন

এল পি জি-নির্ভর ব্যবস্থা উদ্ভাবিত হচ্ছে যেখানে এস এন জি (সিনথেটিক ন্যাচারাল গ্যাস) বা প্রাকৃতিক গ্যাস এর একইসাথে স্থানীয় ভাবে মজুদ ও বিতরণ নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে শহরের ৫০০০ এর অধিক বাড়ীতে সেবা দেয়া যায়। এতে বিভিন্ন দূরবর্তী স্থানে পরিবহনের খরচ কমানো সম্ভব। এ প্রযুক্তি বর্তমানে জাপানের শহর ও গ্রামগুলোতে বহুল ব্যবহ্রত হচ্ছে।

পরিবেশের উপর প্রভাব

বর্তমানে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত এল পি জি কে জীবাশ্ম জ্বালানি হতে উৎপাদন করা হচ্ছে। সেহেতু এটি দহনের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড ( CO
2
) নির্গত হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি কয়লার তুলনায় ৫০% কম কার্বন ডাই অক্সাইড ( CO
2
) নির্গত করে এবং প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা শক্তি উৎপাদনের জন্য খনিজ তেলকয়লা এর যথাক্রমে ৮১% ও ৭০% ভাগের সমান কার্বন ডাই অক্সাইড ( CO
2
)নির্গত করে।

এল পি জি অন্য জীবাশ্ম জ্বালানি হতে কম দূষণ ঘটায় কারণ এটি দহনের ফলে কোন অবশেষ থাকেনা।

সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড জনিত বিপদ ও সমাধান

এল পি জি কে প্রেশারাইজড ট্যাংকে রাখতে হবে, সকল পরিশোধনাগারে ও গ্যাস প্লান্টে এগুলো দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোর আকৃতি গোলাকার ও আনুভুমিক ভাবে রাখা হয়। সাধারনত এদের নির্মাণ ও নকশা নির্দিষ্ট করার জন্য কতিপয় সংস্থা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে, এ ধরনের ধারা গুলো প্রণয়ন করে থাকে American Society of Mechanical Engineers (ASME).

প্রেশারাইজড ট্যাংক গুলোতে চাপ নির্গমণের জন্য প্রেশার রিলিফ ভালভ নামক বিশেষ পথ রাখা হয় যাতে অগ্নিকাণ্ড জনিত বিপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী