জোসেফ ম্যাক্সওয়েল

জোসেফ "জো" ম্যাক্সওয়েল ,en:Joseph Maxwell ভিসি, এমসি এবং বার, ডিসিএম (১০ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬ – ৬ জুলাই ১৯৬৭) ছিলেন একজন অস্ট্রেলীয় ভিক্টোরিয়া ক্রস গ্রহীতা, যা বীরত্বের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান "in the face of the enemy" এটি ব্রিটিশ এবং কমনওয়েলথ সৈন্য বাহিনীদের দেওয়া হয়ে থাকে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সম্মানিত যোদ্ধা যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে [১] অংশগ্রহণ করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান ইম্পেরিয়াল ফোর্সে যোগ দেন ১৯১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এবং গ্যালিপলিতে দায়িত্ব পালন করেন ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত। মাত্র ১২ মাসে তিনি কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং দু:সাহস প্রদর্শনের জন্য ৪ বার পুরস্কিত হন।

জোসেফ ম্যাক্সওয়েল
জোসেফ ম্যাক্সওয়েল ১৯১৯ এ
জন্ম১০ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬
ফরেস্ট লজ, নিউ সাউথ ওয়েলস
মৃত্যু৬ জুলাই ১৯৬৭(1967-07-06) (বয়স ৭১)
মাত্রাভেল, নিউ সাউথ ওয়েলস
আনুগত্যঅস্ট্রেলিয়া
সেবা/শাখাসিটিজেনস্ সামরিক বাহিনী (১৯১৩–১৫)
অস্ট্রেলিয়ান ইম্পেরিয়াল ফোর্স(১৯১৫-১৯)
কার্যকাল১৯১৩–১৯
১৯৪০
পদমর্যাদালেফটেন্যান্ট
যুদ্ধ/সংগ্রামপ্রথম বিশ্ব যুদ্ধ
  • গ্যালিপলি প্রচারাভিযান
  • ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট (প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ)
  • পিকার্দি-এর যুদ্ধ
  • পজিয়ার যুদ্ধ
  • পাসছেন্ডালের যুদ্ধ
  • এমিন্সের যুদ্ধ
  • দা হিন্ডেনবার্গ লাইন যুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
পুরস্কারভিক্টোরিয়া ক্রস
মিলিটারি ক্রস & পদক
বিশিষ্ট কন্ডাক্ট পদক

যুদ্ধের আগে তিনি একজন শিক্ষানবিশ বয়লার নির্মাতা হিসেবে কাজ করতেন এবং ১৯১৯ সালে অস্ট্রেলিয়া ফেরত আসেন একজন মালী হিসেবে। ১৯৩২ সালে তিনি "Hell's Bells and Mademoiselles" নামের একটি বই প্রকাশ করেন, বইটি হুগ বুগির সহযোগিতায় তার যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দানের সময় বয়সের ভিত্তিতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। কুইন্সল্যান্ড এর তালিকায় তার আসল পরিচয় পাওয়া যায় এবং ছোট একটি প্রশিক্ষণ এর পর তাকে বরখাস্ত করা হয়ে ছিল। ১৯৬৭ সালে ৭১ বছর বয়সে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

শৈশব ও কৈশোর

ম্যাক্সওয়েল ১০ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬ সালে সিডনির ফরেস্ট লজ, নিউ সাউথ ওয়েলস ,[২][৩] এ জন ম্যাক্সওয়েল যিনি একজন শ্রমিক এবং এলিজাবেথ এর ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন।[৪] তিনি তিন বছর অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনীর ক্যাডেটদের একজন সদস্য ছিলেন।,[৫] বিদ্যালয় পালিয়ে তিনি একজন শিক্ষানবিশ বয়েল মেকার হিসেবে নিউক্যাসলের কাছাকাছি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মক্ষেত্রে কাজ করতেন।[৪] ২ বছর তিনি সিটিজেন সামরিক বাহিনীতে সদস্য ছিলেন এবং পরে ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯১৫ সালে তিনি বেশি টাকার জন্য অস্ট্রেলিয়ান ইম্পেরিয়াল ফোর্স এ যোগদান করেছিলেন।[১][৫]

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ

প্রশিক্ষণ, ফেব্রুয়ারি ১৯১৫ থেকে মে ১৯১৭ ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট এ

লিভারপুল [৩] কাম্প থেকে প্রাথমিক ট্রেনিং নেয়ার পর ম্যাক্সওয়েল ১৮তম ব্যাটালিয়ন এর বি কোম্পানি তে ল্যান্স কর্পোরাল হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২৫ মে ১৯১৫ সালে [৬] মিশরের এইচ এম এ টি সিরামিকের জন্য জাহাজে উঠেন। ১৮ তম ব্যাটালিয়ন মিশরে মধ্য জুন থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত টেনিং নিয়েছিল, গ্যালিপলি যাওয়ার আগে, যেখানে তারা ২২ আগস্ট [৭] এঞ্জাক কোভে অবতরন করেছিল।একই দিনে এই সৈন্যদল তাদের প্রথম যুদ্ধ করেছিল তুর্কি দের বিরুদ্ধে হিল ৬০ এ। ২৯ আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধ চলে,এতে অর্ধেক সৈন্য হতাহত হয়েছিল [৭] এবং ম্যাক্সওয়েল স্ট্রেচার বাহক হিসেবে কাজ করেছিল।[৮]

ম্যাক্সওয়েল ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত গালিপলিতে দায়িত্ব পালন করেন। যখন তিনি ৫ম ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্স এ দায়িত্ব নিয়ে ছিলেন তখন জন্ডিসে আক্রান্তদের উপদ্বীপ থেকে ফেরত নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩য় সহায়ক হাসপাতাল, হিলিওপলিসে ছিলেন, তখন একটি স্বাস্থ্যপুনরূদ্ধারকারী ক্যাম্পে তার পোস্ট ছিল। ৫ জানুয়ারি ১৯১৬ সালে[৫] তিনি ১৮তম ব্যাটালিয়নে পুনরায় যোগদান করেন, যেটি গত বছরের ২০ ডিসেম্বের গ্যালিপলি উপদ্বীপ থেকে উদ্বাসিত হয়ে মিশরে গিয়েছিল।[৭] ৪ ফেব্রুইয়ারি ম্যাক্সওয়েল অস্ট্রেলিয়ান চর্ম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, এব্বাসিয়ায় যৌনরোগের কারণে। ১৮ মার্চ ফ্রান্স এবং ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের যুদ্ধের ৪ দিন আগে ব্যাটালিয়ন ফিরে আসেন। [৫]

মার্সাইলেস, ফ্রান্সে পৌঁছে, ম্যাক্সওয়েল ৭ম অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্সে যোগ দেন এবং পরে স্থানান্তরিত হয়ে ৩য় কানাডিয়ান জেনারেল হাসপাতালে যোগ দেন আহতদের সাহায্যের জন্য।[৫][৯] ২ মে তিনি ১ম স্বাস্থ্যপুনরূদ্ধারকারী হিসেবে ডিপো থেকে চলে আসেন, এবং এর ১১ দিন পর ঘাঁটি থেকে বের হয়ে যান। ৭ঃ৩০ এর কুচকাওয়াজে এ ছুটি ছাড়া অনুপস্থিতির জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এতে তার পদমর্যাদার ভঙ্গ হয়, একই দিন তিনি ৮ঃ০০ থেকে ১৩ঃ০০ ২৪মে পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন।[৫] ১ জুন ব্যাটেলিয়নে পুনরায় যোগ দিয়ে পজিয়ের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং অক্টোবরে পদোন্নতি পেয়ে সার্জেণ্ট হন।[৩][৭]

ডান হাঁটুতে সাইনোভাইটিস এর কারণে ম্যাক্সওয়েল ২ দিন হাসপাতালে ছিলেন এবং ২৮ নভেম্বর ১৯১৬ ইংল্যান্ড এ একটি প্রশিক্ষণ ব্যাটালিয়নে তাকে পোস্ট করা হয়। সে ৫মাস সেখানে ছিল ৯ মার্চ ১৯১৭ ফ্রান্সে ফেরত যাওয়ার আগে এবং ৫ দিন পর ১৮তম ব্যাটালিয়ন এ পুনরায় যোগ দেন।[৫] ম্যাক্সওয়েল অফিসার প্রশিক্ষণ জন্য নির্বাচিত হওয়ার আগে কয়েক দিন ফ্রান্সে ছিল। দ্রুত ইংল্যান্ড এ পৌঁছানোর পর তিনি একটা প্রবল সৈন্যদলের সাথে উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী পুলিশ ম্যাক্সওয়েল এর গ্রুপের মুখোমুখি হওয়ার পর সহায়তার জন্য স্থানীয় পুলিশ দলকে অভিযান চালাতে বলেন। ম্যাক্সওয়েলকে ২০£ জরিমানা করা হয় এবং তাকে তার কর্মের জন্য তার ইউনিট ফেরত পাঠানো হয়।[১০]

ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট: মে ১৯১৭ থেকে আগস্ট ১৯১৮

ম্যাক্সওয়েল আবার অফিসার প্রশিক্ষণ জন্য নির্বাচিত হয়েছিল, এবং ৫ জুলাই, তাকে ৬ নং অফিসার্স ক্যাডেট ব্যাটালিয়নে পোস্ট করা হয়েছিল। ৭ আগস্ট কোম্পানি সার্জেন্ট মেজর হিসেবে পদোন্নতি পান ১৮তম ব্যাটালিয়ন এ পুনরায় যোগ দেয়ার আগে।[৫] ৯ দিন পরে ওয়েস্টহয়েক এর কাছে ইয়াপ্রার ৩য় যুদ্ধে অবদানের জন্য তিনি বিশিষ্ট কন্ডাক্ট পদক[৩] পান। যুদ্ধে প্লাটুন কমান্ডার নিহত হয়েছিলেন,তখন ম্যাক্সওয়েল দায়িত্ব নিয়ে আক্রমণ করেন। তিনি নতুনদের ভয়ানক স্থানে যুদ্ধে করতে দেখেন, তিনি তাদেরকে নিরাপদ ও কৌশলগত অবস্থানে নিয়ে যান এতে হতাহতের সংখ্যা কমে যায়।.[২][১১]

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯১৭[১২] দ্বিতীয় লেফটেনেন্ট হিসেবে কমিশনের পর ম্যাক্সওয়েল সেই মাসেই পোয়েল্কাপ্ললে,[৭] বেলজিয়ামে দায়িত্ব নেন। ১ জানুয়ারি ১৯১৮ তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেনেন্ট হন এবং ১০ জানুয়ারি খোস পাঁচড়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭ম অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্সে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়ে ১৭ জানুয়ারি আবার ১৮তম ব্যাটালিয়নে যোগ দেন।[৫]

স্টুডিওতে লে জে ম্যাক্সওয়েল এর প্রতিকৃতি

৮ মার্চ ১৯১৮ এ,[১৩] ম্যাক্সওয়েল পূর্ব প্লয়েগস্ট্রিট এ একটি স্কাউটিং প্যাট্রলের নেতৃত্ব দেন। প্রয়োজনীয় তথ্য লাভের পর তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করেছিলেন।[১২] প্রত্যাহারের পর তিনি এবং তার তিন জন লোক প্রায় ত্রিশ জন জার্মান[২] লোকের নজর রাখতেন। প্যাট্রোল পুনর্গঠন করে তারা পুরানো পরিখা থেকে এসেছে এমন আক্রমণকারী দের আক্রমণ করেন।জার্মানরা দ্রুত পালিয়ে যায়,তিন জন নিহত,একজন আহত হন এবং একজন বন্দি রেখে গিয়েছিল।ম্যাক্সওয়েল তার এ কর্মের জন্য তাকে মিলিটারি ক্রস পদক দেওয়া হয়[১৩] যা ১৩ মে ১৯১৮ লন্ডন গেজেট এ প্রকাশিত হয়েছিল।[১৪]

১৯১৮ সালের সারা বসন্তে ১৮তম ব্যাটালিয়ন জার্মান আক্রমণ প্রতিরধে জড়িত ছিল।[৭] ম্যাক্সওয়েল ছুটি পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে ছিল এবং ১৭ জুলাই ইংল্যান্ডে ফিরে যান।১ আগস্ট[৫] তিনি আবার ফ্রান্সে ১৮তম ব্যাটালিয়নে যোগ দেন , এমিন্সের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আগে মিলিটারি ক্রসের পদক পান। ৯ আগস্ট ব্যাটালিয়নটি রেইনিকোর্টে হামলায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। অন্যান্য অফিসারদের হতাহতের পর ম্যাক্সওয়েল কোম্পানি কমান্ড গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে কোম্পানি ভারী অগ্নিকাণ্ড সত্তেও সময় মত আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিল। একটি ট্যাংক এর অগ্রিম অব্যবহিত আগে শত্রু আগুনের বস্তুর পরিণত হয়েছে এবং একটি ৭৭ মিমি বন্দুক[২] দ্বারা কুপোকাত ছিল।ম্যাক্সওয়েল এর প্রায় কাছাকাছি ছিল তিনি ছুটে গিয়ে ক্রুদের পালিয়ে যেতে দেন।এরপর ট্যাঙ্ক কমান্ডারকে নিরাপদে আনেন, ম্যাক্সওয়েল আবার কোম্পানির আক্রমণে নেতৃত্ব দেন, তারা তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করে সফলতা পান।[১৫] ১ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ এ লন্ডন গেজেট এ তার পদক প্রাপ্তির খবর প্রকাশিত হয়।[১৬]

ভিক্টোরিয়া ক্রস, অক্টোবর ১৯১৮ থেকে আগস্ট ১৯১৯ যুদ্ধবন্দীর প্রত্যর্পন

৩ অক্টোবর ১৯১৮ এ ৫ম ব্রিগেড -১৮তম ব্যাটালিয়ন যেটির অংশ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তারা তাদের শেষ যুদ্ধ করে যখন মন্টব্রেহাইন এবং বিয়েরুভইর কাছে হিন্ডেরবারগ লাইনে ঝামেলা হয়। এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে, ম্যাক্সওয়েল তিনি ভিক্টোরিয়া ক্রস ভূষিত হন, এখানে তিনি বিয়েরুভইর ফন্সম্মে রেখা বরাবর আক্রমণকারী পার্টির সদস্য ছিলেন।[১৭]

আগে থেকেই, ম্যাক্সওয়েল এর কোম্পানি কমান্ডার গুরুতরভাবে আহত ছিলেন তাই ম্যাক্সওয়েল ক্ষমতায় আসেন। মেশিন বন্দুকের গোলাগুলির উপর নির্ভর করে তারা জার্মান বারব্বাইর প্রতিরক্ষাবাহিনীর কাছে যান এতে ম্যাক্সওয়েল ছাড়া সবাই হতাহত হন। একা নিজেকে ঠেলে নিয়ে সরু যাতায়াতের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গিয়াছিলেন। তার কাছে সবচেয়ে বিপজ্জনক মেশিন গান ছিল, তিন জন জার্মান কে হত্যা ও চার জন কে বন্দি করেন।এভাবে তিনি কোম্পানির উদ্দেশ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।.[২][১৮] অল্প কিছুদিন পরে, তারা খেয়াল করল তাদের বাম পাশস্থ আরেক কম্পানি সামনে অগ্রসর হতে বার্থ হয়েছিল। লোকদের জড়ো করে, ম্যাক্সওয়েল পিছন থেকে জার্মান বাহিনীকে আক্রমণ করে। তারা মেশিন গানের সাহায্যে সর্বাগ্রে বন্দুক হামলা চালিয়ে সহজে দ্রুত এগিয়ে গিয়াছিল। রিভলবার দিয়ে ফায়ারিং করে তিনি ৫জন ক্রুকে গুলি করে শান্ত হয়েছিল।[১৮]

পরবর্তীতে আগে থেকেই, ম্যাক্সওয়েল ইংলিশ বক্তা এক বন্দির কাছে জানতে পারেন কিছু জার্মান আত্মসমর্পণ করতে চায় কিন্তু তারা ভয় পাচ্ছিল।[১৯] ২ জন বোর্ডিং এবং বন্দীটির মাধমে - যে দোভাষী তাকে ম্যাক্সওয়েল কাজের জন্য পোস্ট করেন।[২০] তিন অস্ট্রেলীয়, অবিলম্বে বিশ জার্মান সৈন্যদের একটি গ্রুপ দ্বারা বেষ্টিত এবং নিরস্ত্র ছিল। কামান গোলা আনার আগেই তারা তাদের কাছে বন্দি হয়েছিল। ফলে বিভ্রান্তির[২১] সুযোগ নিয়ে ম্যাক্সওয়েল একটি গোপন রিভলবার বের করে মেশিন গান চালক এবং ২ জন জার্মানকে গুলি করে , সেখানে একজন বোর্ডিং পরবর্তীতে আহত হয়েছিল, একটি অভিযাত্রী দল গঠনের আগেই তিনি আক্রমণ করেন এবং নিজের পোস্ট রক্ষা করেন।[২২]

ম্যাক্সওয়েল এর ভিক্টোরিয়া ক্রস প্রাপ্তিতে ৬ জানুয়ারি ১৯১৯ সালে লন্ডন গেজেট এ প্রকাশিত ক্রোড়পত্র:[২৩]

যুদ্ধের কার্যালয়, ৬ই জানুয়ারি, ১৯১৯

মহামান্য রাজা সদয়ভাবে উক্ত কর্মকর্তা,নন কমিশন্ড অফিসার ও সৈনিকদের দের ভিক্টোরিয়া ক্রস পুরস্কার প্রদান করেন।লে. জোসেফ ম্যাক্সওয়েল, এম.ছি., ডি.সি.এম., ১৮তম বিএন., এ.আই.এফ

৩রা অক্টোবর ১৯১৮ সালে বুয়েরভোইর-ফন্সম্মে লাইন, এস্টেটে, উত্তর সেন্ট কুয়েন্টিনের কাছাকাছি সবচেয়ে দুঃসাহসী ও আক্রমণে ভাল নেতৃত্বদানকারী ।

তাঁর কোম্পানি কমান্ডার গুরুতরভাবে আহত থাকায় তাকে দায়িত্ব নিতে হয়। লেফটেন্যান্ট ম্যাক্সওয়েল তারের মাধ্যমে এগিয়ে গিয়ে শাক্তিশালী বন্দুক দিয়ে ৩জন শত্রু নিহত ও ৪ জন কে বন্দী করেন। ভারী অস্ত্র ও তার কোম্পানির সক্রিয়তার কারণে তারা উদ্দেশ্য হাসিল করতে পেরেছিল। পরবর্তীতে তারা নীরবে এক হাতে বন্দুক নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে যখন ২ জন দিয়ে একটি শক্তিশালী ঘাটি দখলের সময় ম্যাক্সওয়েল দক্ষতার সাথে সামলে নেন। তার অবদানের কারণেই তার কোম্পানি অনেকটা নিরাপদে ছিল।

সর্বত্র লে ম্যাক্সওয়েল এর চমৎকার রায় এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া তার ব্যক্তিগত সাহসিকতার একটি উচ্চ উদাহরণস্বরূপ।

১১ নভেম্বর ১৯১৮ [৭] যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয় ,তখন ১৮তম ব্যাটালিয়ন ফ্রন্টলাইন থেকে দূরে প্রশিক্ষণে ছিল। ৮ মার্চ ১৯১৯ ম্যাক্সওয়েল বাকিংহাম প্যালেস এর নৃত্যশালায় রাজা পঞ্চম জর্জ কর্তৃক তার ভিক্টোরিয়া ক্রস গ্রহণ করেন।[৩] তিনি, এইচটি চীন জাহাজের উপরে ১ মে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে যান, ৮জুন মেলবোর্ন এ নামেন এবং সিডনির দিকে অগ্রসর হন। যেখানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইম্পেরিয়াল ফোর্স থেকে ২০ আগস্ট অবাহাতি নেন।[৫]

পরবর্তী জীবন

অব্যাহতির পর ম্যাক্সওয়েল মালি হিসেবে ক্যানবেরা, মরি এবং মাইটলান্ড জেলায় কাজ করত।[২৪] একজন রিপোর্টার হিসেবে নিজেকে বর্ণনা দিয়ে ম্যাক্সওয়েল ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ সালে সিডনীর বেলভিউ হিলে একটি ক্যাথলিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১৯ বছর বয়সী টেইলরেস মাবেল ম্যাক্সওয়েল কে বিয়ে করেন। ১৯২৬ সালে মাবেল এর প্ররোচনার কারণে বিয়ে ভাঙ্গার আগে তাদের কন্যা সন্তান হয়েছিল। [৪]

জোসেফ ম্যাক্সওয়েল (বামে) এবং জন প্যাট্রিক হ্যামিলটন(ডানে) পাসছেন্ডাল,বেলজিয়ামে অস্ট্রেলিয়া্ন ভিছি গ্রহীতার লুইস ম্যাকগীর কবর দর্শন করতে যান ।

১১ নভেম্বর ১৯২৯ এ ভিক্টোরিয়া ক্রস প্রাপ্তদের খাবারের জন্য সিডনীর নিউ সাউথ ওয়েল্স এ আমন্ত্রন করা হয় সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং ১৯৩২ সালে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে হাগি বুগির সহায়তায় লিখা Hell's Bells and Mademoiselles এর প্রকাশকের সাথে দেখা করেন। এমন সময় ম্যাক্সওয়েল ক্যানবেরার[২৫] স্বরাষ্ট্র দপ্তর এ একটি মালী হিসাবে কাজ করতেন।বইটি একটি সাফল্য ছিল, কিন্তু ম্যাক্সওয়েল শীঘ্রই তিনি তা থেকে তৈরি করা টাকা ব্যয় করে ফেলেন।[২৬] ১৯৩০ এর শেষের দিকে তিনি দ্বিতীয় বইয়ের জন্য পাণ্ডুলিপি লিখেন যার নাম ছিল " হিন্দেরবার্গ লাইন থেকে ব্রেডলাইন"। বইটি প্রকাশিত হয়নি কারণ পাণ্ডুলিপিটি একজন পড়তে নিয়ে হারিয়ে ফেলে।[২৭]

১৯৩৩ সালে ম্যাক্সওয়েল ,আলফ্রেড জেমিসনের মামলায় সাক্ষী ছিলেন,যিনি সিঁদ কাটিয়া চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। ম্যাক্সওয়েল জেমিসনের সাবেক প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন এবং তিনি জানতেন জেমিসনের ভাল চরিত্রের ছিল যদিও যুদ্ধ তাকে কিছুতা প্রভাবিত করেছে।[২৫]

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ম্যাক্সওয়েল অংশগ্রহণের চেষ্টা করে কিন্তু বয়স[৪] এবং স্বাস্থ্যের অবনতির[২৬] কারণে পারেননি। ঘটনাচক্রে তিনি কুইন্সল্যান্ড[২৪] ভ্রমণ করেন যেখানে ২৭ জুন ১৯৪০ [২৮] এ জোসেফ ওয়েলস এর আওতায় তালিকাভুক্ত হন। প্রশিক্ষণ এর সময় তিনি ধরা পরেন এবং ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪০ এ ডিসচার্জ হন। [২৯]

১৯৫২ সালে ম্যাক্সওয়েল রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ[২৬] এর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে ভিক্টোরিয়া ক্রস প্রাপ্ত হিসেবে যোগ দেন। ৬ মার্চ ১৯৫৬ এ বন্ডির একজন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তিনি সিডনীতে বিধবা অ্যান মার্টিন কে বিয়ে করেন।[৪] তিন বছর পর তিনি ফ্রান্সে যুদ্ধক্ষেত্র-পরিদর্শন করেন এবং লন্ডনে ভিক্টোরিয়া ক্রস শতবার্ষিকী উদযাপনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি তার স্ত্রীর সাথে ম্যাক্সওয়েল ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ার যুদ্ধের স্মৃতিস্মারক ভিসি কর্নারের উদ্বোধনীতে অংশগ্রহণ করেন।[২৯]

৬ জুলাই ১৯৬৭ এ নিউ সাউথ ওয়েল্স-এর একটি রাস্তার মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার ফলে তিনি মারা যান। তিনি কিছু সময় অকারণে জেলে বন্দী ছিলেন। পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সেন্ট ম্যাথিয়াস অ্যাংলিকান চার্চ, পাডিন্টন[২৯] এ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তার ভস্ম গুলো পূর্ব শহরতলির শ্মশানঘাট এ পোতা হয়। [২৪] অ্যানে ম্যাক্সওয়েল তার স্বামীর পদক সমূহ ভিক্টোরিয়া ব্যারাক,নিউ সাউথ ওয়েল্স-এর আর্মি মিউজিয়ামে উপস্থাপন করেন তার একটি প্রতিকৃতি এবং ভিসি তলবের পিতলের কপি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যালান ফেয়ারহল[২৯] কর্তৃক উন্মোচিত হয়। ২০০৩ এ ম্যাক্সওয়েল এর পদক সমূহ স্থায়ী ঋণ ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ার যুদ্ধের স্মৃতিস্মারক হিসেবে উপস্থাপিত হয়। [৩০]

টীকা

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

  • Ramsland, John (২০১২)। Venturing Into No Man's Land: The Charmed Life of Joseph Maxwell VC, World War I Hero। Melbourne, Australia: Brolga Publishing Pty Ltd। আইএসবিএন 9781-9220-36-636 

বহিঃসংযোগ

  • "Maxwell VC"VC Recipients। Diggerhistory.info। ৯ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০০৮ 
  • "New South Wales – Australia"VC Burials। Victoriacross.org। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০০৮ 
  • Brian Day। "MAXWELL, Lieutenant Joseph 18th Australian Infantry Battalion AIF"। Blue Mountains Vietnam Veterans and Associated Forces Inc। ৮ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ 
🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী