জেৎসুন পেমা

জেৎসুন পেমা (জংখা: རྗེ་བཙུན་པདྨ་; জন্ম: ৪ জুন ১৯৯০) ভুটানের বর্তমান রানী। জংখা ভাষায় তাঁর উপাধি 'ড্রুক গিয়ালৎসুয়েন'। এর আক্ষরিক অর্থ ভুটানের "ড্রাগন রানী"। তিনি ভুটানের পঞ্চম ও বর্তমান রাজা জিগমে খেসার নামগোয়েল ওয়াংসুকের স্ত্রী। তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ রাজ সঙ্গীনী (রানী)। তিনি ভুটানের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ জিগমে নামগিয়াল ওয়াংচুক এবং দ্বিতীয় রাজকুমার জিগমে উগিয়েন ওয়াংচুকের মাতা।

জেৎসুন পেমা
২০১৪ সালে রানী
ড্রুক গিয়ালৎসুয়েন
কার্যকাল১৩ অক্টোবর ২০১১ – বর্তমান
অভিষেক১৩ অক্টোবর ২০১১
জন্ম (1990-06-04) ৪ জুন ১৯৯০ (বয়স ৩৪)
জিগমে দর্জি ওয়াংচুক জাতীয় রেফারেল হাসপাতাল, থিম্পু, ভুটান
দাম্পত্য সঙ্গীজিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক (বি. ২০১১)
বংশধরজিগমে নামগিয়েল ওয়াংচুক
জিগমে উগিয়েন ওয়াংচুক
পূর্ণ নাম
জেৎসুন পেমা ওয়াংচুক
রাজবংশওয়াংচুক (বিবাহের দিক থেকে)
পিতাঢন্ডুপ গিয়ালৎশেন
মাতাসোণম চোকি
ধর্মবৌদ্ধধর্ম
Queen Jetsun Pema Wangchuck of Bhutan
এর রাণী রীতি
উদ্ধৃতিকরণের রীতিHer Majesty
কথ্যরীতিYour Majesty
বিকল্প রীতি(Mewang Gyeltsun) Ashi

প্রারম্ভিক জীবন

জেৎসুন পেমা ১৯৯০ সালের ৪ জুন থিম্পুর জিগমে দর্জি ওয়াংচুক জাতীয় রেফারেল হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ধন্ডুপ গালৎশেন ছিলেন দুই ত্রাসিগাং জংপন থিনলে তোপগে এবং উগিয়েন শেরিং (ত্রাসিগাংয়ের গভর্নর) এর নাতি। তাঁর মাতা আউম সোণম চোকি ভুটানের অন্যতম প্রাচীন অভিজাত পরিবার বুমথাং পাংতির পরিবারের সদস্য।[১][২] সোনম চোকির বাবা ছিলেন ভুটানের দুই রানী ফানৎশো সোডেন (বর্তমানে রাজা অজুদাদী) এবং তাঁর বোন পেমা ডেসেনের সৎভাই।

তাঁর পূর্বপুরুষরা হলেন ত্রংসা জিগমে নামগিয়ালের ৪৮তম ড্রুক দেশি এবং দশম পেনালপ (রাজা উগিয়েন ওয়াংচুক এবং তাঁর ঠাকুমা আশি ইয়েশায় সোদেনের পিতা)। ভুটানের রাজা ও রানী দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাই।

জেৎসুন পেমা পাঁচটি সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। তার দুই ভাই থিনলে নারবু এবং জিগমে নামগিয়াল এবং দুই বোন, চেরচেন ডোমা এবং ইয়েতোসো লামো (জ্যেষ্ঠ, রাজার ভাই যুবরাজ গালশোয়াব জিগমে, দর্জি ওয়াংচুকের স্ত্রী)।[৩][৪][৫]

পেমার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল থিম্পুর লিটল ড্রাগন স্কুল, সানশাইন স্কুল (১৯৯৫-৯৬) এবং অবশেষে সানগাংখা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (১৯৯৭-৯৮)। এরপর তিনি ১৯৯৮-২০০০ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পংয়ের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত থিম্পুর লুংতেনজাম্পা মিডল সেকেন্ডারি স্কুলে মাধ্যমিক অধ্যয়ন করেন এবং এপ্রিল ২০০৬ সালে ভারতের হিমাচল প্রদেশের সোলানের সানাওয়ারের লরেন্স স্কুলে ভর্তি হন।[৬] তিনি লরেন্সের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী হিসেবে যোগদান করেন এবং ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি ও চিত্রকলা অধ্যয়ন করেন। তিনি ৩১ মার্চ, ২০০৮ তারিখে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।[৭] তাৰ পিছত তেওঁ ৰিজেণ্ট বিশ্ববিদ্যালয় লণ্ডনত শিক্ষা আৰম্ভ কৰে।[৮] এরপর তিনি লন্ডনের রেজিমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা শুরু করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন এবং মনোবিজ্ঞান ও শিল্প ইতিহাসকেও প্রধান বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেন।[৩]

বিবাহ

২০ মে, ২০১১ তারিখে সংসদের সপ্তম অধিবেশন খোলার সময় রাজা তাদের বিয়ের কথা ঘোষণা করেন,

"রাজা হিসেবে আমার বিয়ে করার সময় এসেছে। অনেক ভেবে ভেবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই বছরের শেষের দিকে বিয়ে হবে।"[৯]

এই দম্পতি ১৩ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে পুনাখা জং-এ বিয়ে করেন। বিয়ের অনুষ্ঠান টি প্রথম পুনাখায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর পরে থিম্পু[১০] আৰু পাৰোত ৰাজহুৱা উদযাপন কৰা হৈছিল।[১১] এবং পারোতে জনসাধারণের উদযাপন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের সময় রাজা তাঁকে ড্রুক গালৎসুয়েনের মুকুট পরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভুটানের রানী ঘোষণা করেন।[১২]

তাদের বিবাহ "পিতামাতা দেবতাদের আশীর্বাদ" সঙ্গে ঐতিহ্যগত শৈলীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও ভুটানের রাজপরিবারে বহুবিবাহ প্রচলিত, রাজা জানিয়েছেন যে তিনি কখনও অন্য কোনো মহিলাকে বিয়ে করেননি।[১৩] তাদের বিয়ের জন্য, নেদারল্যান্ডসের রাজপরিবার যৌথ টিউলিপ ফুল প্রেরণ করে এবং তাঁর নামে এক জোড়া ফুলে "ভুটানের রানী" নামকরণ করে।[১৪]

সন্তান

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রাজা, রানী এবং প্রথম যুবরাজ

২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ঘোষণা করা হয়েছিল যে তিনি আশা করছেন যে তাদের প্রথম সন্তান ২০১৬ সালের শুরুতে হবে।[১৫][১৬] তিনি ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে তাদের প্রথম পুত্র লিঙ্কনা প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করে। রাজা গিয়ালসে (যুবরাজ) এর জন্মের সময় উপস্থিত ছিলেন।[১৭] ২০১৬ সালের ১৬ ই এপ্রিল তাঁর নাম রাখা হয় জিগমে নামগিয়াল ওয়াংচুক।[১৮]

১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে জানা গিয়েছিল যে তাদের দ্বিতীয় সন্তান ২০২০ সালের বসন্তে জন্মগ্রহণ করবে।[১৯] ২০২০ সালের ১৯ মার্চ রাজা ও রানীর অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জানান যে থিম্পুর লিঙ্কনা প্রাসাদে তাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছে।[২০][২১] ২০২০ সালের ৩০ শে জুন রাজপরিবার ঘোষণা করে যে দ্বিতীয় গিয়ালসের নাম রাখা হয়েছে জিগমে উগিয়েন ওয়াংচুক। তাকে বলা হবে রাজকীয় মহামান্য গিয়ালসে উগেন ওয়াংচুক।[২২][২৩]

রাজকীয় দায়িত্ব

২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রাজা এবং রানী

রাজার সাথে বিয়ের পর জেৎসুন পেমা তাঁর সাথে ভারত,[২৪] সিঙ্গাপুর,[২৫] বাংলাদেশ,জাপান[২৬] এবং যুক্তরাজ্য সফর করেছেন।[২৭]

জেৎসুন পেমা জিগমে খেসারের সাথে বিয়ের আগে ভুটানের বিভিন্ন স্থানে তার বেশ কয়েকটি রাজকীয় সভায় গিয়েছিলেন এবং ভুটানের রানীর মতো সমস্ত সভায় তার সাথে ছিলেন। তিনি দেশের মধ্য দিয়ে রাস্তায় রাজকীয় ভ্রমণে যতটা সম্ভব স্থানীয়, শিক্ষার্থী এবং সরকারি কর্মচারীদের সাথে মিলামিশা এবং আলাপচারিতা করেন।[২৮]

তিনি পরিবেশগত সমস্যার পক্ষে একজন উকিল এবং রয়্যাল সোসাইটি ফর প্রেজেন্টেশন অফ নেচার্সের পৃষ্ঠপোষক। সে আনইপ আজন অ্যাম্বাসেডর। তিনি এবিটি ভুটান সোসাইটির পৃষ্ঠপোষক হিসাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সাথে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। তিনি ভুটান কিডনি অ্যাসোসিয়েশন এবং ভুটান কিডনি ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষক।[২৯] ২০১৬ সাল থেকে তিনি ভুটান রেড ক্রস সোসাইটির (বিআরসিএস) চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবন

২০১৭ সালে তৃতীয় রয়্যাল ভুটান ফ্লাওয়ার এক্সিবিশনে রানী পেমার সঙ্গে জাপানের সাবেক রাজকন্যা মাকে কোমুরো

রানী সুকুমার শিল্প, চিত্রকলা এবং বাস্কেটবল পছন্দ করেন।[৩০] তিনি বাস্কেটবলে তাঁর স্কুল দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং এখনও খেলায় আগ্রহ বজায় রেখেছেন।[৩] তিনি তাঁর বিদ্যালয়ের অন্যান্য ব্যান্ড এবং নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তাঁর বিদ্যালয়ের দিনগুলোতে। ভুটানের রাষ্ট্রভাষা জংখা ছাড়াও তিনি ইংরেজিহিন্দিতেও পারদর্শী।[৫]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী