জেসন গিলেস্পি

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

জেসন নিল গিলেস্পি (ইংরেজি: Jason Neil Gillespie; জন্ম: ১৯ এপ্রিল, ১৯৭৫) নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে জন্মগ্রহণকারী সাবেক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। বর্তমানে ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের প্রথম একাদশ দলে কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে খেলেছেন। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, ইয়র্কশায়ার ও গ্ল্যামারগনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডিজি ডাকনামে পরিচিত জেসন গিলেস্পি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার ছিলেন। এছাড়াও নিচের সারির ডানহাতে ব্যাটসম্যান হিসেবেও পারদর্শীতা দেখিয়েছেন তিনি। ১৯৯৫ সালে এআইএস অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট একাডেমির বৃত্তিধারী তিনি।[১]

জেসন গিলেস্পি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
জেসন নিল গিলেস্পি
জন্ম (1975-04-19) ১৯ এপ্রিল ১৯৭৫ (বয়স ৪৯)
সিডনি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনামডিজি
উচ্চতা১.৯৫ মিটার (৬ ফুট ৫ ইঞ্চি)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩৭০)
২৯ নভেম্বর ১৯৯৬ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ টেস্ট১৬ এপ্রিল ২০০৬ বনাম বাংলাদেশ
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১২৭)
৩০ আগস্ট ১৯৯৬ বনাম শ্রীলঙ্কা
শেষ ওডিআই১২ জুলাই ২০০৫ বনাম ইংল্যান্ড
ওডিআই শার্ট নং
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৯৪-২০০৮দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া
২০০৬-২০০৭ইয়র্কশায়ার
২০০৮গ্ল্যামারগন
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতাটেস্টওডিআইএফসিএলএ
ম্যাচ সংখ্যা৭১৯৭১৮৯১৯২
রানের সংখ্যা১,২১৮২০১৩,৭৪২৬৪০
ব্যাটিং গড়১৮.৭৩১২.৫৬১৯.৫৯১৪.২২
১০০/৫০১/২০/০৩/১০০/০
সর্বোচ্চ রান২০১*৪৪*২০১*৪৪*
বল করেছে১৪,২৩৪৫,১৪৪৩৫,৩৭২১০,০৪৮
উইকেট২৫৯১৪২৬১৩২৫৫
বোলিং গড়২৬.১৩২৫.৪২২৬.৯৮২৭.৪০
ইনিংসে ৫ উইকেট২২
ম্যাচে ১০ উইকেট--
সেরা বোলিং৭/৩৭৫/২২৮/৫০৫/২২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং২৭/–১০/–৬৮/–৩১/–
উৎস: ক্রিকইনফো, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

খেলোয়াড়ী জীবন

১৯৯৬ সালে সিডনিতে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। টেস্টে একমাত্র শতক হিসেবে অপরাজিত ২০১* রান তুলেছেন। গিলেস্পি একাকী একবার টেস্ট সিরিজে প্রাধান্য বিস্তার করে ২০ উইকেট দখল করেন। বেশ কয়েকবছর দলীয় সঙ্গী গ্লেন ম্যাকগ্রাশেন ওয়ার্নকে বিশ্বস্ত সহযোগী বোলার হিসেবে সহায়তা করেন। কিন্তু, ২০০৫ সালের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। তাস্বত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় ফাস্ট বোলার ম্যাকগ্রা’র সাথে অংশীদার হিসেবে খেলতেন। ২০০৫ সালের অ্যাশেজ সিরিজ পর্যন্ত তার এ দূর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে। ৩০০ রানের খরচায় তিনি মাত্র ৩ উইকেট পান। ফলে, তৃতীয় টেস্ট শেষে দল থেকে বাদ পড়েন। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাফল্যের প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে পুনরায় ফিরে আসেন ও বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। ৮ উইকেট লাভের পাশাপাশি দুই টেস্টের সিরিজে দ্বি-শতক করে ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন। এরপর তাকে আর অস্ট্রেলিয়া দলে খেলতে দেখা যায়নি।

১৯৯৬ সালে কলম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত সিঙ্গার বিশ্ব সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার ওডিআই অভিষেক হয়। একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৪৪* করেছেন ও ৭৮.৫৩ স্ট্রাইক রেটে ১২.৫৬ গড়ে রান তুলেছেন।

২০০৭ সালে নিজস্ব ৩২তম জন্মদিনে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে সাসেক্সের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন। ওভালে ইয়র্কশায়ারের সদস্যরূপে অপরাজিত ১২৩* রান তোলেন। নবম উইকেটে নয়ন দোসি’র বলে স্ট্যাম্পড হওয়া টিম ব্রেসনানের সাথে ২৪৬ রানের জুটি গড়ে রেকর্ড করেন। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া প্রতিযোগিতা পুরা কাপে ২০০৭-০৮ মৌসুমে তাসমানিয়ার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার উইকেট-রক্ষক গ্রাহাম ম্যানু’র সাথে ২৫০ রানের জুটি গড়েন। ইনিংস শেষ হলেও তিনি ১১৮* রানে অপরাজিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সফর

১৯ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজস্ব ৩১তম জন্মদিনে ২০১ রান তুলেন। এরফলে শেষের দিকের ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান তুলে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি ছিল। ৪র্থ উইকেটে মাইকেল হাসি’র সাথে ৩২০ রানের জুটি গড়েন। প্রথম ইনিংসে তার দ্বি-শতক এবং ৩/১১ ও ০/১৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। খেলায় তার দল ইনিংস ও ৮০ রানে জয়সহ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। এছাড়াও, ১১.২৫ গড়ে আট উইকেট লাভের প্রেক্ষিতে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান তিনি। উল্লেখ্য যে, এটিই গিলেস্পি’র খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বশেষ টেস্ট খেলা ছিল।[২]

খেলায় গিলেস্পি কেবলমাত্র নয় ওভার বোলিং করেছিলেন যা তার খেলোয়াড়ী জীবনে শেষ হওয়া যে-কোন খেলায় সবচেয়ে কম। তবে, ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে মেলবোর্ন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ওভার করেছিলেন। ঐ টেস্টটি তার খেলোয়াড়ী জীবনের দ্বিতীয় টেস্ট ছিল। কিন্তু আঘাতের কারণে আর বোলিং করতে পারেননি।[৩]

অবসর

২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেও অনুমোদনহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে আহমেদাবাদ রকেটসের পক্ষে খেলেন।[৪] ২০০৮ সালের ইংরেজ ঘরোয়া মৌসুমে অংশগ্রহণ শেষে সকল স্তরের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি।[৫] আগস্ট, ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে মিডওয়েস্ট রাইনোজ দলে কোচের দায়িত্বে ছিলেন। তাছাড়াও, জিম্বাবুয়ের তরুণ খেলোয়াড়দের দক্ষতা বাড়াতে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেন। আইপিএলে কিংস ইলাভেন পাঞ্জাবের বোলিং কোচের দায়িত্ব পান। এপ্রিল, ২০১১ সালে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম খেলার পর তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়।

অর্জনসমূহ

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৭১ টেস্টে অংশ নিয়ে ২৬.১৩ গড়ে ২৫৯ উইকেট পেয়েছেন তিনি। এরফলে তিনি শতাধিক উইকেট লাভকারী অস্ট্রেলীয়দের মধ্যে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ও বোলিং গড়ে অস্ট্রেলিয়ার ১৪শ সেরা বোলিং গড়ের অধিকারী হন। ২০০১ সালে খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুর দিকে গড়ে ১৪০-১৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিবেগে বোলিং করতেন। কিন্তু ছন্দ ফিরে পাবার পর ১৩০-১৪০ কিলোমিটারের মধ্যে নিয়ে আসেন। আঘাতপ্রাপ্তির ফলেই তাকে স্বল্প দূরত্ব থেকে বোলিং করতে বাধ্য হতে হয়।

ব্যাট হাতে তাকে খুব কমই সফলতা লাভ করতে দেখা যায়। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ২০১ রান ও ১৮.৭৩ গড়ে রান পেয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ইনিংসে ২০০ রান করলেও ব্যাটিং গড় ২০-এর নিচে। রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় খেলে বড় ধরনের সংগ্রহ করতে পারেননি। তাকে আউট করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল ও ক্রিজে ব্যাটিং অংশীদারকে সঙ্গ দেয়ার লক্ষ্যে অংশ নিতেন।

ব্যক্তিগত জীবন

অস্ট্রেলীয় আদিবাসী কামিলারোই জনগোষ্ঠীর সদস্য তার বাবা। প্রথম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আদিবাসী হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।[৬] তার মা গ্রীক বংশোদ্ভূত।[৭] দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কাবরা ডমিনিকান কলেজে অধ্যয়ন করেন।

২০০৩ সালে আন্না (বিবাহ-পূর্ব ম্যাকইভয়) নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন গিলেস্পি। তাদের সংসারে জ্যাকসন, ব্রেন্ডন, কিংস্টন[৮] ও ডেলানি নামের চার সন্তান রয়েছে। এছাড়াও, পূর্বেকার সম্পর্কে সাফির নাম্নী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী