জীবন

একটি অবস্থা, যা একটি অর্গানিজমকে জড় পদার্থ (প্রাণহীন) ও মৃত অবস্থা থেকে পৃথক করে

জীবন বা প্রাণ এমন একটি অবস্থা, যা একটি জীবকে জড় পদার্থ (প্রাণহীন) ও মৃত অবস্থা থেকে পৃথক করে। খাদ্য গ্রহণ, বিপাক, বংশবৃদ্ধি, পরিচলন ইত্যাদি কর্মকাণ্ড জীবনের উপস্থিতি নির্দেশ করে। জীবন বা প্রাণ বিষয়ক শিক্ষা জীববিজ্ঞানে আলোচিত হয়। প্রোটোপ্লাজমের ক্রিয়াকলাপকে জীবন বলা হয়।

জীবন
সময়গত পরিসীমা:
প্রোক্যারিওটার বৈচিত্র্য যাদের মধ্যে রয়েছে আর্কিয়া , সায়ানোব্যাকটেরিয়া , ব্যাসিলাস , ক্যাম্পাইলোব্যাকটেরিয়া , এন্টারোব্যাকটেরিয়া , ডিপ্লোকোকাস এবং স্পিরোচেট
ইউক্যারিওটার বৈচিত্র্য যাদের মধ্যে রয়েছে ধূসর নেকড়ে , জায়ান্ট সিকোইয়া , এন্টোডিনিয়াম , অ্যামানিটা সিজারিয়া , টেরোইস অ্যান্টেনাটা , শৈবাল ব্লুমস , ক্রাইসোটক্সাম ভেরালি , জ্যান্থোপারমেলিয়া লাইকেন , ডিক্টোস্টেলিয়াম , এবং পিলার প্রবাল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস e
অপরিচিত শ্রেণী (ঠিক করুন):জীবন
অধিজগৎসুপারগ্রুপ,ভার্গব পোলারা

পৃথিবীতে প্রাণের শ্রেণিবিভাগ:

জীবন হল সেই সকল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা জৈবিক প্রক্রিয়াসম্পন্ন ভৌত সত্তাগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করে, যেমন, কোষীয় সংকেত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার প্রক্রিয়া, যেসব বস্তুগুলোর এই গুণাবলিগুলো নেই, হয় এইসব গুণগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, নয় তো বা তাদের এই গুণগুলো কোনদিন ছিলই না, সাধারণত এগুলোকে জড় বস্তু হিসাবে শ্রেণীবিভক্ত করা হয়। জীবন বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান, যেমন উদ্ভিদ, প্রাণী, ছত্রাক, প্রোটিস্ট, আর্কিয়া এবং ব্যাকটেরিয়া। কখন কখনও রূপের এই মানদণ্ড দ্ব্যর্থহীন ভাবেও প্রকাশ পেতে পারে এবং সেইসাথে ভাইরাস, ভিরোয়েড, বা সম্ভাবনাময় কৃত্রিম জীবনকে "জীবন্ত" জীব হিসাবে ব্যাখ্যা করতেও পারে আবার নাও করতে পারে। জীববিদ্যা জীবন সম্পর্কিত অধ্যয়নের জন্য বিজ্ঞানের মূল অংশ, যদিওবা বিজ্ঞানে অন্যান্য অনেক শাখাও এর সাথে জড়িত।

জীবনের সংজ্ঞা প্রদান কিছুটা বিতর্কিত। তবে বর্তমানে প্রচলিত সংজ্ঞায় বলা হয় জীব হোমিওস্ট্যাটিস মেনে চলে, যা কোষ দিয়ে গঠিত, রূপান্তরিত হয়, বৃদ্ধি পায়, পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়, উদ্দীপকের প্রতি ক্রিয়াশীল হয়, এবং প্রজননে সক্ষম। এছাড়া জীববিজ্ঞান বিষয়ক আরও অনেক সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে, এবং জীবনের কিছু কিছু ব্যতিক্রমধর্মী উদাহরণও বিদ্যমান রয়েছে, যেমন ভাইরাস। দীর্ঘদিন ধরে জীবনের বলতে কি বুঝায় তা জানার চেষ্টা চলছে এবং জীবন্ত বস্তুর বৈশিষ্ট্য ও বিকাশ নিয়ে অনেক তত্ত্ব প্রদান করা হয়েছে। কয়েকটি প্রধান তত্ত্বের একটি হল - বস্তুবাদ, এটি এমন এক বিশ্বাস যাতে বলা হয় সবকিছু উৎপত্তি হয়েছে কোন বস্তু থেকে এবং জীবন হল এর একটি জটিল রূপ; আরেকটি তত্ত্ব হাইলোমর্ফিজম হল এমন একটি বিশ্বাস যাতে বলা হয় সবকিছু বস্তু ও আকারের সমন্বয়, এবং জীবন্ত বস্তুর রূপ হল এর আত্মা; আরেকটি তত্ত্ব- স্বতঃজনন হল এমন একটি বিশ্বাস যাতে বলা হয় জীবন জড় পদার্থ থেকে পৌনপনিকভাবে বিকশিত হয়; এবং প্রাণবাদ হল এমন একটি বিশ্বাস যাতে বলা হয়ে থাকে জীবদের "জীবন প্রণালি" বা "প্রাণের কণিকা" থাকে। আধুনিক সংজ্ঞায় বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক শাখা থেকে উপাত্ত গ্রহণ করায় তা জটিলতর হয়েছে। জৈবপদার্থবিদগণ রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে অনেক সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। কয়েকটি জীব প্রক্রিয়া তত্ত্ব হল - গাইয়া অনুসিদ্ধান্ত হল এমন একটি ধারণা যেখানে পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে নিজেই জাগ্রত। অন্য একটি তত্ত্বে বলা হয় জীবন হল বাস্তুতন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য; এবং অন্য একটি তত্ত্ব সম্পর্কে বলা যায় জীবন হল জীববিজ্ঞানের জটিল প্রক্রিয়া ব্যবস্থা, যা গাণিতিক জীববিজ্ঞানের একটি শাখা। জীবনের উৎপত্তিতে জড় পদার্থ, যেমন সাধারণ জৈব যৌগ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে জীবনের উত্থান সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়। প্রায় সকল জীবের ক্ষেত্রে যেসকল বৈশিষ্ট্য একই হয়ে থেকে তার মধ্যে অন্যতম হল কিছু সুনির্দিষ্ট মূল রাসায়নিক উপাদান যা প্রাণরসায়নের সাধারণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে প্রয়োজন।

৪.৫৪ বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীর গঠনের কিছু সময় পর, ৪.৪১ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহাসাগরসমূহের গঠনের পর প্রায় ৪.২৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে প্রথম জীবনের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়।[১][২][৩][৪] পৃথিবীর বর্তমান জীবন সম্ভবত আরএনএ জগৎ হতে উদ্ভূত, যদিও আরএনএ-ভিত্তিক জীবনই প্রথম নয়। যে প্রক্রিয়ায় জীবনের উৎপত্তি হয়েছে তা আজও অজানা রয়ে গেছে, যদিও অনেক অনুসিদ্ধান্ত গঠন করা হয়েছে এবং সেগুলো বেশিরভাগ সময়ই মিলার-উরি নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে। প্রাপ্ত প্রথম জীবনের অস্তিত্ব হল ব্যাকটেরিয়ার মাইক্রোফসিল, ৩.৪৫ বিলিয়ন বছর পুরাতন অস্ট্রেলিয়ান শিলায় অণুজীব পাওয়া গেছে বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।[৫][৬] ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিজ্ঞানীরা ৩৫৫টি জিনের সেট প্রাপ্তির প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাদের সকল জীবের সর্বশেষ সার্বজনীন একই পূর্বপুরুষ বলে উপস্থাপন করা হয়।[৭]

পৃথিবীতে জীবনের পরম্পরার শুরু থেকে ভূতাত্ত্বিক সময়ের ভিত্তিতে তা পরিবেশকে পরিবর্তিত করেছে। বেশিরভাগ বাস্তুতন্ত্রে বেঁচে থাকার জন্য জীবনকে বিভিন্ন ধরনের অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। কিছু অণুজীব, যেমন এক্সট্রিমোফিল শরীরগত ও জৈবরাসায়নিকভাবে বিরূপ পরিবেশে বেড়ে ওঠতে পারে, যা পৃথিবীতে অন্য প্রাণের জন্য ক্ষতির কারণ। এরিস্টটল প্রথম ব্যক্তি যিনি জীবদের শ্রেণিবিন্যাস করেন। পরবর্তীতে কার্ল লিনিয়াস প্রজাতিদের শ্রেণিবিন্যাসের জন্য দ্বিপদ নামকরণের নিজস্ব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এছাড়া জীবনের নতুন গণ ও বিভাগে আবিষ্কৃত হয়, যেমন কোষ ও অণুজীব, যা জীবদের সম্পর্কের কাঠামোতে নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে। কোষ জীবনের ক্ষুদ্রতম একক ও গঠনতন্ত্র হিসেবে বিবেচিত। দুই ধরনের কোষ রয়েছে, সেগুলো হল প্রাক-কেন্দ্রিকসুকেন্দ্রিক। উভয়ই মেমব্রেনের সাথে সাইটোপ্লাজম দিয়ে গঠিত এবং অনেক বায়োমলিকিউল, যেমন প্রোটিন ও নিউক্লেইক এসিড থাকে। কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া নতুনভাবে কোষ উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃ কোষ দুই বা ততোধিক অপত্য কোষে বিভাজিত হয়।

যদিও এখন পর্যন্ত শুধু পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, তবে তা শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ তা নয়। অনেক বিজ্ঞানীরা বহির্জাগতিক প্রাণের অস্তিত্বের ব্যাপারে ভাবছেন। কৃত্রিম জীবন হল জীবনের কোন রূপের কম্পিউটারাইজড নকল বা মানুষের তৈরি পুনর্গঠন, যা প্রাকৃতিক জীবন সম্পর্কিত পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। মৃত্যু হল কোন জীবনে মধ্যে থাকা সকল জৈবিক প্রক্রিয়ার চিরস্থায়ী সমাপ্তি। বিলুপ্তি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোন নির্দিষ্ট গণ, প্রজাতি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। জীবাশ্ম হল কোন জীবের সংরক্ষিত বাকি অংশ।

সংজ্ঞা

জীবনকে সংজ্ঞায়িত করা বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের কাছে একটি দুরুহ ব্যাপার।[৮][৯][১০][১১][১২] এর একটি কারণ হল জীবন একটি প্রক্রিয়া, কোন বস্তু নয়।[১৩][১৪][১৫] যেকোন সংজ্ঞাই পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল জানা ও অজানা প্রাণের জন্য এক হতে হবে।[১৬][১৭][১৮]

জীবতত্ত্ব

জীবনের বৈশিষ্ট

যেহেতু জীবনের কোন দ্ব্যর্থতাহীন সংজ্ঞা নেই, বর্তমান বেশিরভাগ সংজ্ঞাই বিবৃতিমূলক। জীবন বলতে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট ধারণকারী যেকোন বিষয়কে বুঝায়:[১৭][১৯][২০][২১][২২][২৩][২৪]

  1. হোমিওস্ট্যাটিস: অভ্যন্তরীণ অবস্থা অপরিবর্তিত রাখার ব্যবস্থা; উদাহরণস্বরূপ, তাপমাত্রা কমানোর জন্য ঘামা।
  2. গঠন: এক বা একাধিক কোষ গঠন। কোষ জীবনের মূল একক।
  3. বিপাক: রাসায়নিক ও শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর করে কোষীয় উপাদানগুলোর সংশ্লেষণ এবং অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোর বিশ্লেষণ। অভ্যন্তরীণ অবস্থা ঠিক রাখা এবং জীবনের সাথে সম্পর্কিত অন্য কিছু উৎপাদনের জন্য জীবন্ত বস্তুর জৈবশক্তির প্রয়োজন।
  4. বৃদ্ধি: বিশ্লেষণের চেয়ে সংশ্লেষণের পরিমাণ বেশি রাখা। একটি বর্ধনশীল জীবের আকারের সাথে এর অন্যান্য অংশ বৃদ্ধি পায়।
  5. অভিযোজন: সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। এই ক্ষমতা বিবর্তন প্রক্রিয়ার একটি মৌলিক বিষয় এবং এর মাধ্যমে জীবের উত্তরাধিকার, খাদ্য শৃঙ্খল ও বাহ্যিক বিষয়সমূহ নির্ধারিত হয়।
  6. উদ্দীপনায় প্রতিক্রিয়া দেখানো: প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রকমের হতে পারে,
  7. প্রজনন: নতুন পৃথক জীবন জন্মদানের ক্ষমতা। এটা একক জীব কোষ থেকে অযৌন প্রজনন বা দুটি জীব কোষ থেকে যৌন প্রজননের মাধ্যমে হতে পারে।

এই জটিল প্রক্রিয়াকে শারীরিক কার্যাবলি বলা হয়, যার কিছু ভৌত ও রাসায়নিক ভিত্তি এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা জীবন ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিকল্প সংজ্ঞা

পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন্ত বস্তুগুলোর তাপগতিবিদ্যার পদ্ধতিতে সুসংবদ্ধ আণবিক গঠন রয়েছে, যা নিজেই প্রজননে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং দীর্ঘ দিন ঠিকে থাকে অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করে।[২৫][২৬] তাপগতিবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে একটি উন্মুক্ত পদ্ধতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা এর পারিপার্শ্বিকতা থেকে তার নিজের পূর্ণ অনুলিপি তৈরি করে থাকে।[২৭] ফলে, জীবন হল আত্মনির্ভরশীল রাসায়নিক পদ্ধতি যা ডারউইনীয় বিবর্তন মেনে চলতে সক্ষম।[২৮][২৯] এই সংজ্ঞার একটি বিশেষ দিক হল এটি জীবনের রাসায়নিক যোগসূত্রের দিকের চেয়েও বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া থেকে জীবনকে আলাদা করতে মনোনিবেশ করে।[৩০]

বাকিরা পদ্ধতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের সংজ্ঞা প্রদান করে যা আণবিক রসায়নের উপর নির্ভরশীল নয়। জীবনের একটি পদ্ধতিগত সংজ্ঞা হল জীবন্ত বস্তু স্ব-সংগঠিত ও স্ব-গঠনে (স্ব-প্রজনন) সক্ষম। এই সংজ্ঞার একটি ভিন্নরূপ হল স্টুয়ার্ট কফম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সংজ্ঞা, যেখানে বলা হয়েছে জীবন একক অথবা একাধিক পদ্ধতি যা নিজের বা তাদের প্রজননে এবং কমপক্ষে একটি তাপগতিবিজ্ঞান কর্ম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সক্ষম।[৩১] এই সংজ্ঞা বিভিন্ন সময়ে কর্ম পদ্ধতির ভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে বর্ধিত করা হয়েছে।[৩২]

ভাইরাস

ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখা একটি এডিনো ভাইরাস।

ভাইরাসকে জীবিত জীব হিসাবে বিবেচনা করা উচিত হবে কিনা তা এখনও বিতর্কিত। এগুলোকে প্রায়শই জীবনের ধরন হিসাবে গণ্য না করে বরং শুধু অনুলিপি তৈরিকারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৩৩] এগুলোকে "জীবনের সংজ্ঞার শেষপ্রান্তের প্রাণীর" হিসাবে বর্ণনা করা হয়,[৩৪] কারণ এগুলো জিন ধারণ করে, প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা বিকশিত হয়[৩৫][৩৬] এবং স্ব-সন্নিবেশের মাধ্যমে নিজেদের একাধিক অনুলিপি তৈরি করে। তবে যাইহোক, ভাইরাসের বিপাক প্রক্রিয়া নেই এবং নিজের নতুন অনুলিপি তৈরি করার জন্য এদের একটি হোস্ট কোষের প্রয়োজন হয়। জীবনের উৎসের গবেষণার জন্য হোস্ট কোষগুলির মধ্যে ভাইরাস স্ব-সন্নিবেশের ক্রিয়া জানার প্রয়োজন রয়েছে, কারণ এটির মাধ্যমে জৈব অণুগুলোর স্ব-সন্নিবেশের মাধ্যমে জীবনের প্রারাম্ভ শুরু হওয়ার অনুসিন্ধান্তটি প্রমাণ করা যেতে পারে।[৩৭][৩৮][৩৯]

জীবপদার্থবিজ্ঞান

জীবন বলতে আসলে কি বুঝায় তা নুন্যতম প্রয়োজনীয় ঘটনাগুলোকে প্রকাশ করার জন্য, জীবনের আরও অন্যান্য জৈবিক সংজ্ঞা প্রস্তাব করা হয়েছে,[৪০] যার অনেকগুলো রাসায়নিক ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। জীবপদার্থবিজ্ঞানীরা মন্তব্য করেছেন যে জীবিত বস্তু নেতিবাচক এনট্রপিতে উপর ভিত্তি করে কাজ করে।[৪১][৪২] অন্যভাবে বলতে গেলে, জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোকে দেখা যেতে পারে জৈব অণুর অভ্যন্তরীণ শক্তির বিলম্বিত স্বতঃস্ফূর্ত ছড়িয়ে পড়া কিংবা বিচ্ছুরণ হিসাবে, যার মাধ্যমে এটি আরও সম্ভাব্য স্থায়ী একটি মাইক্রোস্টেটে পৌছায়। [৮] আরও বিস্তারিতভাবে, যেমন জন বার্নাল, এরভিন শ্রোডিঙার, ইউজিন উইগনার এবং জন এভরির মতো পদার্থবিজ্ঞানীদের মতে, জীবন হল এমন শ্রেণীভুক্ত ঘটনাগুলির সদস্য যা উন্মুক্ত কিংবা চলমান সিস্টেমগুলি তাদের অভ্যন্তরীণ এনট্রপি হ্রাস করতে সক্ষম, তবে সেটির বিনিময়ে সিস্টেমগুলি পরিবেশ থেকে বিনামূল্যে শক্তি কিংবা পদার্থ গ্রহণ করে যা পরবর্তীতে একটি অবনমিত রূপে এটি পরিবেশে প্রত্যাখ্যান করে।.[৪৩][৪৪]

লিভিং সিস্টেম থিওরি

লিভিং সিস্টেমগুলো হল উন্মুক্ত স্ব-সাংগঠনিক জীবিত অংশ যা পরিবেশের সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে থাকে। এই সিস্টেম গুলো তথ্য, শক্তি, এবং পদার্থের প্রবাহ দ্বারা বজায় থাকে।

গত কয়েক দশক ধরে কিছু বিজ্ঞানী প্রস্তাব করেছেন যে, জীবনের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করার জন্য একটি সাধারণ জীবন্ত সিস্টেম তত্ত্ব দরকার।[৪৫] এই ধরনের সাধারণ তত্ত্বটি পরিবেশবিজ্ঞান ও জৈবিক বিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত হবে এবং সমস্ত জীবিত সিস্টেম কীভাবে সাধারণ নীতিমালা মেনে চলার চেষ্টা করে কাজ করে তার রূপরেখা তৈরি করবে। কোন ঘটনাকে ব্যাখা করার জন্য তার সকল উপাদানকে ভেঙে আলাদা করে দেখার পরিবর্তে, একটি সাধারণ জীবিত ব্যবস্থা তত্ত্ব তার পরিবেশের সাথে জীবের সম্পর্কের গতিশীল নিদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করে।[৪৬]

গাইয়া অনুসিদ্ধান্ত

পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে যে একটি জীবিত উপাদান তার ধারণা পাওয়া যায় দর্শন ও ধর্মে, কিন্তু এই বিষয়টির প্রথম বৈজ্ঞানিক আলোচনা করেন স্কটিশ বিজ্ঞানী জেমস হিউটন। ১৭৮৫ সালে, তিনি বলেন যে পৃথিবী একটি সুপারঅর্গানিজম ছিল যার সঠিক ব্যাখা করা সম্ভব শারীরবিদ্যার মাধ্যমে। হিউটনকে ভূতত্ত্ববিদ্যার জনক বলা হয়ে থাকে, কিন্তু হিউটনের এই জীবিত পৃথিবীর ধারণা ১৯শতকে এসে প্রখর খণ্ডতাবাদ তত্ত্বের কারণে হারিয়ে যেতে থাকে[৪৭]:১০ গাইয়া অনুসিদ্ধান্ত, ১৯৬০ সালে প্রস্তাব করেন বিজ্ঞানী জেমস লাভলক,[৪৮][৪৯] তিনি প্রস্তাব করেন যে পৃথিবীর সকল জীবিত প্রাণ একসাথে একটি একক জীব হিসাবে কাজ করে যা তার বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশগত শর্তাবলীকে নির্ধারণ করে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে।[৪৭] এই অনুসিন্ধান্তটি আধুনিক পৃথিবী ব্যবস্থা বিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি হিসাবে কাজ করে।

অভঙ্গুরতত্ত্ব

জীবনের গতি-প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি সাধারণ লিভিং সিস্টেম থিওরির প্রথম প্রস্তাবনা করা হয় ১৯৭৮ সালে, আমেরিকান জীববিজ্ঞানী জেমস গ্রিয়ার মিলার দ্বারা।[৫০] রবার্ট রোসেন (১৯৯১ সালে) এটা তৈরি করেন, তিনি একটি সিস্টেমের সকল উপাদানকে এভাবে সংজ্ঞা প্রদান করে যে, "এটি একটি সংগঠনের একক; যা একটি ফাংশনের অংশ যার উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে এর বিভিন্ন অংশ এবং সমগ্রটির মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক।" এই ধারণা এবং বিভিন্ন প্রথমদিকের ধারণা থেকে, তিনি "সিস্টেম রিলেশনাল তত্ত্বকে" দাড় করান, যা চেষ্টা করে জীবনের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করতে। বিশেষ করে, তিনি "জীবের মধ্যে অভঙ্গুরতত্ত্বের বিভিন্ন উপাদানকে" চিহ্নিত করেন যা লিভিং সিস্টেম ও "বায়োলজিক্যাল মেশিনের" মধ্যে ভিত্তিগত পার্থক্য করতে সাহায্য করে।[৫১]

বাস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যরূপে জীবন

একটি ব্যবস্থাপনা হিসাবে কল্পনা করা জীবন ব্যবস্থায়, পরিবেশগত ফ্লাক্স ও জৈবিক ফ্লাক্সকে একত্রে "পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া" হিসাবে দেখা হয়,[৫২] এবং পরিবেশের সাথে তাদের এই প্রতিক্রিয়াশীল সম্পর্ক কোন বিতর্ক ছাড়াই বলা যেতে পারে জীবনকে বোঝার জন্য তথা বাস্ততন্ত্রকে বোঝার জন্য অতীব জরুরি। হ্যারল্ড জে. মোরোভিটজ (১৯৯২ সালে) এটি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, জীবন কোন একক অণূজীব কিংবা কোন প্রজাতি নয় বরং এটি হল বাস্তুতন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য।[৫৩] তিনি আরও যুক্তি দেন যে, বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কিত জীবনের সংজ্ঞাটি প্রাণরসায়ন কিংবা পদার্থবিজ্ঞানের সাথে বেশি বাঞ্ছনীয়। রবার্ট উলানওউইকজ (২০০৯ সালে) পারস্পরিক মঙ্গলজনক সহাবস্থানকে উল্লেখ করেন জীবনের ও বাস্ততন্ত্রের নিয়মতান্ত্রিক ক্রমবর্ধমান আচরণ বোঝার জন্য মূল চাবিকাঠি হিসাবে।[৫৪]

জীববিদ্যার জটিল ব্যবস্থা

কমপ্লেক্স সিস্টেম বায়োলজি (সিএসবি) বিজ্ঞানের সেই ক্ষেত্র যা ডায়নামিক সিস্টেম তত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে কার্যকরী জীবের জটিলতার উদ্ভব নিয়ে আলোচনা করে।[৫৫] এই অংশকে প্রায়শই সিস্টেম বায়োলজি বলা হয় এবং যার মূল লক্ষ্য হল জীবনের সবচেয়ে মৌলিক দিকগুলো বুঝতে সাহায্য করা। সিএসবি এবং সিস্টেম বায়োলজির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত অংশটিকে বলা হয় রিলেশনাল বায়োলজি, যার মূল আলোচ্য বিষয় হল গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে জীবন প্রক্রিয়াকে বোঝার চেষ্টা করা, এবং এইসকল সম্পর্কে জীবের অপরিহার্য কার্যকরী উপাদান অনুসারে শ্রেণিবিভাগ করা; বহুকোষীয় জীবের ক্ষেত্রে এই শ্রেণিবিভাগকে সংজ্ঞায়িত করা হয় "ক্যাটাগরিয়াল বায়োলজি" হিসাবে, কিংবা বায়োলজিক্যাল রিলেশনের ক্যাটাগরি তত্ত্ব হিসাবে জীবের একটি মডেল উপস্থাপন, একই সাথে জীবিত জীবের ডায়নামিক, পরিপাকতন্ত্রের জটিল নেটওয়ার্ক, জেনেটিক এবং এপিজেনেটিক প্রসেস ও সংকেত ব্যবস্থাপনা -এর ভিত্তিতে ফাংশনাল অর্গানাইজেশনের বীজগাণিতিক টপোলজি[৫৬][৫৭] বিকল্প কিন্তু ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট পন্থাগুলির নজর রাখে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সীমাবদ্ধতার উপর, যেখানে সীমাবদ্ধতা হতে পারে কোষীয়, যেমন এনজাইম কিংবা ম্যাক্রোস্কোপিক -যেমন হাড় বা ভাস্কুলার সিস্টেমের পুরো নকশার সীমাবদ্ধতা।[৫৮]

ডারউইনীয় পরিবর্তনশীলতা

এটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে যে লিভিং সিস্টেমের পর্বের ও কিছু সুনির্দিষ্ট বাহ্যিক ব্যবস্থার বিবর্তন একই ধরনের কিছু মূলনীতি মেনে চলে যা ডারউইনীয় ডায়নামিক নামে পরিচিত।[৫৯][৬০] এই ডারউইনীয় পরিবর্তনশীলতা গঠন করা হয়েছিল প্রথমে একটি সাধারণ অ-জৈবিক ব্যবস্থায় যা তাপগতিবিদ্যার সাম্যাবস্থায় পৌছানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট দূরে সেখানে কীভাবে অণুবীক্ষণিক পর্বের উদ্ভব হয়েছিল তার উপর ভিত্তি করে, এবং এরপর এর মধ্যে আরও যুক্ত হয়েছে সংক্ষিপ্ত, প্রতিলিপি তৈরি করতে সক্ষম আরএনএ অণু। বিষয়টির অন্তর্নিহিত সারমর্ম হল পর্ব-উৎপাদক প্রক্রিয়াটি প্রকৃতপক্ষে একই হয়ে থাকে উভয় ধরনের ব্যবস্থার জন্য।[৫৯]

অপারেটর তত্ত্ব

আরও একটি সিস্টেমেটিক সংজ্ঞা হল অপারেটর তত্ত্ব যেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে "জীবন হল একটি গতানুগতিক শব্দ যা জীবের মধ্যে উপস্থিত থাকা কিছু সাধারণ বন্ধনীর জন্য ব্যবহার করা হয়; এই সাধারণ বন্ধনীগুলো জীবের কোষে পাওয়া যাওয়া যেমন ঝিল্লি ও অটোক্যাটিক্যাল সেট"[৬১] এবং যা অর্গানাইজেশনে থাকা যে কোন ব্যবস্থার জীবের ক্ষেত্রে যেটি যেকোন অপারেটর টাইপ মেনে চলে তাতে কমপক্ষে একটি কোষ থাকবে।[৬২][৬৩][৬৪][৬৫] জীবনকে আরও চিন্তা করা যেতে পারে নিম্নতর নেগেটিভ ফিডব্যাকের নেটওয়ার্কের মডেল হিসাবে, যা হল একটি সবৃহৎ পজেটিভ ফিডব্যাকের একটি অধিনীস্ত নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া, যা সম্প্রসারণ ও প্রজননের সম্ভাব্যতা দ্বারা গঠিত হয়।[৬৬]

অধ্যয়নের ইতিহাস

বস্তুবাদ

হোহ রেইনফরেস্টে উদ্ভিদের বৃদ্ধি।
মাসাই মারা সমভূমিতে জড় হওয়া জেব্রা ও ইমপালার পাল
ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক-এ অবস্থিত গ্র্যান্ড প্রিজম্যাটিক স্প্রিং এর কাছাকাছি মাইক্রোবিয়াল ম্যাটের একটি আকাশ থেকে তোলা ছবি

জীবনের সবচেয়ে প্রাচীনতম তত্ত্বগুলো বস্তুবাদী ছিল, যেখানে ধারণ করা হয় যে, বিদ্যমান সব কিছুই বস্তু, এবং সেক্ষেত্রে জীবন কেবল একটি জটিল আকারের বা বিন্যাসের বস্তুর সমাবেশ। এম্পেদোক্লেস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ সালে) যুক্তি যে, মহাবিশ্বের সবকিছু চারটি শাশ্বত "উপাদান" বা "সবকিছুর শিকড়" দ্বারা গঠিত হয়: এগুলো হল মাটি, জল, বায়ু এবং আগুন। এই চারটি উপাদানগুলির বিন্যাস এবং পুনর্বিন্যাস দ্বারা সমস্ত পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা যায়। জীবনের বিভিন্ন প্রকারভেদ এই উপাদানগুলির উপযুক্ত মিশ্রণ দ্বারা সৃষ্ট হয়।[৬৭]

ডেমোক্রিতোস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ সালে) মনে করতেন যে জীবনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যটি হল এতে একটি আত্মা (মনস্তত্ত্ব) আছে। অন্যান্য প্রাচীন লেখকের মত, তিনি চেষ্টা করেছেন ব্যাখ্যা করতে বস্তুর মাঝে কি থাকলে তাকে জীবন্ত বলা যায়। তার ব্যাখ্যাটি ছিল এই রকম যে জ্বলন্ত পরমাণুগুলো ঠিক সেইভাবে একটি আত্না তৈরি করে যেভাবে একটি পরমাণু তৈরি ও বিনষ্ট হয় অন্যান্য বিভিন্ন জিনিসের। তিনি তার ব্যাখ্যাটি করেন আগুনের আলোকে কারণ জীবন ও তাপের মধ্যে আপাত সংযোগ রয়েছে, যেমনটি আগুন জ্বলতে জ্বলতে সামনে আগায় তেমনি জীবন সামনে আগায়।[৬৮]

প্লেটোর চিন্তা করা বিশ্বটি হল শাশ্বত এবং অপরিবর্তনীয় ধরনের, একটি ঐশ্বরিক শিল্পী দ্বারা বস্তুর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, বিভিন্ন যান্ত্রিক বিশ্ব দৃশ্যের সঙ্গে তা তীব্রভাবে বৈপরীত্য প্রকাশ করছে, যার মাঝে পরমাণুবাদ- অন্ততপক্ষে চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ... এই বিতর্কটি প্রাচীন বিশ্বের সর্বত্র জুড়ে চলতে থাকে। যাক্রিক পরমাণুবাদ এপিকুরোসের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পথ পেয়েছিল ... যখন বৈরাগ্য একটি ঐশ্বরিক উদ্দেশ্যবাদ গ্রহণ করেছিল ... তখন সিন্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে ওঠে: হয় পথ দেখাতে হবে পথভ্রেষ্ট প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলে বিশ্বটি থেকে কীভাবে একটি সুবিন্যস্ত, পরিমার্জিত বিশ্ব হিসাবে গড়ে তোলা যায়, কিংবা এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সাহায্য করা যায়।[৬৯]

— আর. জে. হানকিনসন, ক্‌জ এন্ড এক্সপ্লেনেশন ইন এনসিয়ান্ট গ্রীক থটস

প্রাচীন গ্রিসে উদ্ভব হওয়া যন্ত্রবাদীয় বস্তুবাদকে পুনর্জীবিত ও পরিমার্জিত করেন ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত, তিনি বলেন যে প্রাণী এবং মানুষের বিভিন্ন অঙ্গগুলো একসঙ্গে সন্নিবেশ করা হয়েছে একটি মেশিন হিসাবে কাজ করার জন্য। ১৯শতকে জৈবিক বিজ্ঞানের কোষ তত্ত্বের অগ্রগতি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহ প্রদান করে। চার্লস ডারউইন (১৮৫৯) বিবর্তনীয় তত্ত্ব প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির উদ্ভবের একটি যান্ত্রিক ব্যাখ্যা।[৭০]

হাইলোমরফিজম

এরিস্টটলের মতে উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের আত্মার কাঠামো

হাইলোমরফিজম তত্ত্বটি প্রথম প্রকাশ করেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল (খৃষ্টপূর্ব ৩২২ সালে)। অ্যারিস্টট্লের জন্য জীববিজ্ঞানে হাইলোমোফিজার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন অংশ নিয়ে ব্যাপকভাবে তার লেখাগুলো বিদ্যমান রয়েছে। এই দৃষ্টি মতে, গাঠনিক মহাবিশ্বের সবকিছুতে বস্তু ও অবয় উভয় রয়েছে, এবং কোন জীবন্ত জিনিসের অবয় হল তার আত্মা (গ্রীক সাইকে, ল্যাটিন অ্যানিমা)। তিন ধরনের আত্না রয়েছে: গাছপালার উদ্ভিদ আত্মা, যা তাদের বাড়তে ও অবঃক্ষয়ে এবং নিজেদের পুষ্ট করার প্রকৃত কারণ, কিন্তু এটি এদের গতি এবং সংবেদনশীলতা ঘটায় না; প্রাণী আত্মা, যা প্রাণীদের চলাচল এবং অনুভব করার ক্ষমতা প্রদান করে; এবং এরপর হল বিচক্ষণতার আত্মা, যা চেতনা এবং যুক্তি উৎস হিসাবে কাজ করে, এটি (এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন) যে শুধুমাত্র মানুষের মাঝেই দেখা যায়।[৭১] প্রতিটি উচ্চতর আত্মার ক্ষেত্রে নিম্ন আত্মার সকল গুণাবলীর থাকে। এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন বস্তু কোন অবয় ছাড়াও থাকতে পারে, কিন্তু অবয় কোন বস্তু ছাড়া থাকতে পারে না, এবং এই কারণে আত্মা কোন শরীর ছাড়া থাকতে পারে না।[৭২]

এটা জীবন সম্পর্কিত পরমকারণবাদ ব্যাখ্যার সাথে সামঞ্জ্যসপূর্ণ, যা উদ্দ্যেশ কিংবা লক্ষ্য-দ্বারা পরিচালিত ঘটনার প্রকৃত কারণও বটে। ফলশ্রূতিতে, মেরু ভাল্লুকের সাদা রঙের চামড়া থাকাটা এটির ছদ্ম-আবরণের উদ্দেশ্যে রয়েছে বলে ব্যাখ্যা করা যায়। তাই, কার্যকারণের দিকের ক্ষেত্রে (বর্তমান থেকে অতীত পর্যন্ত) বিজ্ঞানলব্ধ উপাত্তের সঙ্গে প্রাকৃতিক নির্বাচনের অসঙ্গতি থাকে, যা পূর্বে ঘটা বিভিন্ন কারণের ফলাফলের প্রভাব ব্যাখ্যা করে। জৈবিক বৈশিষ্ট্যাবলীগুলি ভবিষ্যতের সর্বোত্তম ফলাফলের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না, তবে এটি প্রজাতির অতীত বিবর্তনীয় ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করে, যা বৈশিষ্ট্যগুলির প্রাকৃতিক নির্বাচনের দিকে নিয়ে যায়। জৈবিক বৈশিষ্ট্যাবলীগুলি ভবিষ্যতের সর্বোচ্চ ফলাফল দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না, এটি করা যায় একটি প্রজাতির অতীতের বিবর্তনীয় ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করে, যা প্রশ্ন তোলে বৈশিষ্ট্যগুলির প্রাকৃতিক নির্বাচনকে নিয়ে।[৭৩]

স্বতঃজনন

স্বতঃস্ফূর্ত প্রজনন ছিল সেই বিশ্বাস যেখানে অনুরূপ জীব থেকে বংশদ্ভুত হওয়া ছাড়াই ভিন্ন একটি জীবন্ত জীবের সাধারণ গঠন হওয়া সম্ভব। সাধারণত, ধারণা ছিল যে কিছু কিছু জীব যেমন মশা-মাছি জন্ম নিতে পারে নিষ্প্রাণ বস্তু যেমন ধুলাবালি থেকে অথবা সাধারণ ধারণা ছিল ইদুর বা পোকা-মাকরের মৌসুমি প্রজনন হত কাদা কিংবা আবর্জনা থেকে।[৭৪]

স্বতঃজননের তত্ত্বটি প্রথম প্রদান করেন এরিস্টটল,[৭৫] তিনি জীবের উদ্ভব নিয়ে পূর্বে কাজ করা প্রাকৃতিক দার্শনিকদের বিভিন্ন প্রাচীন ব্যাখ্যার সংকলন এবং সম্প্রসারিত করেন; তার এই ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠিত থাকে প্রায় দুই সহস্রাব্দ পর্যন্ত। এই ব্যাখ্যা পরীক্ষণের মাধ্যমে অপসারিত করেন লুই পাস্তুর ১৮৫৯ সালে, যিনি পূর্বসুরীদের যেমন ফ্রান্সিসকো রেডির করে যাওয়া পরীক্ষণকে সম্প্রসারিত করেন।[৭৬][৭৭] প্রমাণিত না হওয়া স্বতঃজননের ঐতিহ্যগত ধারণা আজ জীববিজ্ঞানের মধ্যে আর কোন বিতর্কের বিষয় নয়।[৭৮][৭৯][৮০]

প্রাণশক্তিবাদ

প্রাণশক্তিবাদ হল সেই বিশ্বাস যে জীবনের-মূলচালিকা শক্তিটি হল অ-উপাদানীয়। এই মতবাদের সূচনা করেন জর্জ আর্নেস্ট স্থ্যাল (১৭ শতকে), এবং এই মতবাদটি জনপ্রিয় ছিল ১৯ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই মতবাদটি বিভিন্ন দার্শনিক যেমন অঁরি বের্গসন, ফ্রিডরিখ নিৎশে, ও উইলহেম ডিলদে,[৮১] শারীরস্থানবিদ যেমন মারি ফ্রাঙ্কোজ জেভিয়ার বিচ্যাট, এবং রসায়নবিদ যেমন যাস্টাস ভন লাইবিগ প্রমুখের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল।[৮২] প্রাণশক্তিবাদ ধারণাটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল জৈব এবং অজৈব পদার্থগুলো মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, এবং আরও ধারণা ছিল যে জৈব পদার্থগুলো শুধুমাত্র জীবন্ত বস্তু থেকেই অপলব্ধি করা সম্ভব। এই ধারণা অসত্য বলে প্রমাণিত হয় ১৮২৮ সালে, যখন ফ্রেডরিখ ভোলার ইউরিয়া উৎপাদন করেন অজৈব পদার্থ থেকে।[৮৩] ধরে নেয়া হয় হয় যে, ভোলার সংশ্লেষণটি হল আধুনিক জৈব রসায়নের প্রারাম্ভ। এটা ছিল একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা কারণ প্রথমবারের মত কোন অজৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জৈব যৌগ তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল।[৮২]

১৮৫০ সালের দিকে, হারমান ভন হেলমোল্ট্জ, জুলিয়াস রবার্ট ভন মেয়ার দ্বারা উৎসাহিত হয়ে, এটা প্রদর্শন করান যে পেশীর আন্দোলনের ফলে কোন শক্তির ক্ষয় হয় না, ইঙ্গিত প্রদান করে যে, পেশী নড়াতে কোন "মাত্রাতিরিক্ত শক্তির" প্রয়োজন হয় না।[৮৪] এই ফলাফলগুলো প্রাণশক্তিবাদমূলক তত্ত্ব নিয়ে আর কোন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে আগ্রহ বিনষ্ট করে দেয়, যদিওবা এই বিশ্বাস ছদ্মবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যেমন হোমিওপ্যাথিকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে, যা রোগ এবং অসুস্থতার কারণকে চিহ্নিত করে জীবনী শক্তি বা কল্পিত মূল চালিকা শক্তির ব্যাঘাত হিসাবে।[৮৫]

উৎপত্তি

জীবন সময়রেখা
-৪৫০ —
-৪০০ —
-৩৫০ —
-৩০০ —
-২৫০ —
-২০০ —
-১৫০ —
-১০০ —
-৫০ —
০ —
প্রথম জল
প্রবল উল্কাবর্ষণ
প্রথম যৌন জনন
ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ
পোঙ্গোলা
হিউরোনিয়ান
ক্রায়োজিনিয়ান
আন্দিয়ান
কারু
কোয়াটার্নারি
অক্ষের স্কেল: কোটি বছর
বামপ্রান্তে কমলা রঙে জানা তুষার যুগ চিহ্নিত।
আরও দেখুন: মানব সময়রেখাপ্রকৃতি সময়রেখা

পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর[৮৬][৮৭][৮৮] প্রমাণ পাওয়া যায় যে অন্তত ৩.৫ বিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীতে জীবন বিদ্যমান[৮৯][৯০][৯১][৯২][৯৩][৯৪][৯৫][৯৬][৯৭] যার মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন জীবে জীবাশ্ম চিহ্নের বয়স প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন বছর;[৯৮][৯৯][১০০] কিছু অন্যান্য তত্ত্বমতে, যেমন- সর্বশেষ গ্রহাণুপঞ্জের ভারীবর্ষণ তত্ত্ব অনুসারে, পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটে আরো আগে থেকে, যার প্রারাম্ভ হয় প্রায় ৪.১–৪.৪ বিলিয়ন বছর আগে,[৮৯][৯০][৯১][৯২][৯৩] এবং প্রাণের বিকাশের রাসায়নিক প্রক্রিয়া হয়তবা শুরু হয় বিগ ব্যাগ শেষ হবার খানিকটা পর থেকেই, প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে, একটি অধিযুগের সময় যখন মহাবিশ্বের বয়স ছিল মাত্র ১০-১৭ মিলিয়ন বছর।[১০১][১০২][১০৩]

৯৯% এরও বেশি প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের জীব, সংখ্যায় যার পরিমাণ পাঁচ বিলিয়ন প্রজাতিরও বেশি,[১০৪] এখন পর্যন্ত যা পৃথিবীতে বসবাস করেছে বর্তমানে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।[১০৫][১০৬]

যদিওবা পৃথিবীতে শ্রেণীভূক্ত প্রজাতি জীবের সংখ্যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন থেকে ২ মিলিয়নের মধ্যে,[১০৭][১০৮] তথাপি পৃথিবীর মোট জীবের প্রজাতির সংখ্যা এখনও নিশ্চিত নয়। এর অনুমানিক পরিধি ৮ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন পর্যন্ত,[১০৭][১০৮] যদি স্বল্প করে ধরা হয় তাহলে এর পরিধি ১০ থেকে ১৪ মিলিয়ন,[১০৭] কিন্তু যদি অতি বৃহৎ আকারে ধরা হয় তাহলে এর পরিধি ১ ট্রিলিয়নেরও অধিক (যার এক হাজার ভাগের এক শতাংশের প্রজাতির বিবরণ আমাদের কাছে রয়েছে), মে ২০১৬ সালে উপলব্ধ এক গবেষণা অনুসারে।[১০৯][১১০] পৃথিবীতে পরস্পর সম্পর্কিত ডিএনএ বেস পেয়ারের সংখ্যা অনুমান করা হয় ৫.০ x ১০৩৭ টি এবং যার ওজন প্রায় ৫০ বিলিয়ন টন।[১১১] ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিজ্ঞানীরা ৩৫৫টি জিনের সেট প্রাপ্তির প্রতিবেদন প্রকাশ করে, এগুলোকে সকল জীবের সর্বশেষ সার্বজনীন একই পূর্বপুরুষ (ইংরেজি বর্ণ অনুসারে- এলইউসিএন) জিন বলে উপস্থাপন করেন যা বর্তমানে পৃথিবীতে সকল জীবিত জীবের অংশ। [৭]

জ্ঞাত সকল জীবের মৌলিক আণবিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে কিছু মিল খুজে পাওয়া যায়, যা একই আদিপুরুষ থেকে জীবনের সৃষ্টিরই বহিঃপ্রকাশ; এই পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে, জীবনের ব্যুৎপত্তির উপর একটি অনুসিন্ধান্ত দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়, যা ব্যাখা করা চেষ্টা করে বিশ্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষ গঠনের, যা গঠিত হয়েছিল সাধারণ জৈব যৌগ থেকে, যার মাধ্যম ছিল প্রটোসেলের প্রাক-কোষীয় জীবন ও বিপাক প্রক্রিয়া। বিভিন্ন মডেলকে শ্রেণীবিভিক্ত করা হয় "প্রথমে-জিন" এবং "প্রথমে-বিপাক" শ্রেণীতে, কিন্তু একটি সাম্প্রতিক প্রবণতা হচ্ছে হাইব্রীড মডেলের উত্থান, যা উভয় শ্রেণিবিভাগকে একত্রিত করে তৈরি করা।[১১২]

জীবন শুরু কীভাবে হয়েছে তা নিয়ে বর্তমানে কোন বৈজ্ঞানিক ঐক্যমত্য নেই। বর্তমানে, সর্বাধিক স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক মডেলটি মিলার-উরি পরীক্ষণ এবং সিডনি ফক্সের কাজ উপর ভিত্তি করে তৈরি করা, যেখানে দেখান হয়েছে যে, আদি-পৃথিবী রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটার জন্য অণুকূলে ছিল, যা অ্যামিনো অ্যাসিড এবং পূর্বের অজৈব যৌগ থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন জৈব যৌগের সমন্বয় করে,[১১৩] এবং ফসফোলিপিডগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে লিপিড বাইলেয়ার গঠন করে,- একটি কোষীয় ঝিল্লির মৌলিক কাঠামো গঠন করে।

ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ)তে অন্তর্ভুক্ত নির্দেশাবলী ব্যবহার করে জীবন্ত জীব প্রোটিন সংশ্লেষণ করে, যা হল অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি পলিমার। প্রোটিন সংশ্লেষণের মধ্যবর্তী প্রক্রিয়ায় মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রিবোনিউক্লিয়িক এসিড(আরএনএ) পলিমারগুলি। আসলে কীভাবে জীবন প্রারাম্ভ হল, তার একটি সম্ভাবনা উত্তর হল, প্রথমে উৎপত্তি হয় জিনের, এরপর প্রোটিনের;[১১৪] বিকল্প সম্ভাবনাটি হচ্ছে প্রোটিন প্রথম এসেছিল এবং তারপর আসে জিন।[১১৫]

যাইহোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে জিন এবং প্রোটিন উভয়ই একে অপরটিকে তৈরি করার প্রয়োজন হয়, কোনটি প্রথমে আসেছিল সেটি বিবেচনা করার ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো মুরগী আগে না ডিম আগে আসছে তার মতো। এই কারণে অধিকাংশ বিজ্ঞানী এই অনুমান গ্রহণ করেছেন যে, এটা অসম্ভাব্য ছিল যে জিন এবং প্রোটিন স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়েছে।[১১৬]

এই সকল কারণে ফ্রান্সিস ক্রিক কর্তৃক প্রথম প্রস্তাব করা হয়,[১১৭] সম্ভবনা রয়েছে যে প্রথম জীবনের প্রারাম্ভ হয়েছিল আরএনএ থেকে[১১৬] যার তথ্য ধারণের জন্য ডিএনএ এর মত গুনাগুণ রয়েছে এবং কিছু প্রোটিনের ন্যায় ক্যাটালাইটিকও গুনাগুণ রয়েছে। এটাকে বলা হয় আরএনএ জগৎ অনুসিন্ধান্ত, এবং এই অনুমানের সমর্থন করা হয়ে থাকে কারণ দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ জটিল কোষীয় উপাদানগুলির (যেগুলো ধীরে ধীরে বিকাশিত হয়) বেশিরভাগ অংশই কিংবা সম্পূর্ণ অংশ আরএনএ দ্বারা গঠিত। এছাড়াও, অনেক ক্রিটিকাল কোফ্যাক্টর (এটিপি, অ্যাসিটাল-কোএ, এনএডিএইচ, প্রভৃতি) হয় নিউক্লিওটাইড সম্পুর্ণভাবে কিংবা এর সাথে সম্পর্কিত উপাদান দ্বারা গঠিত। যখন অনুসিন্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছিল তখন আরএনএ এর ক্যাটালাইটিক গুনাবলী সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না,[১১৮] কিন্তু পরবর্তিতে থমাস ক্যাচ ১৯৮৬ সালে এটি নিশ্চিত করেন।[১১৯]

আরএনএ জগত অনুসিন্ধান্তের একটি বড় সমস্যা হল আরএনএর সংশ্লেষণ অন্য জৈব অণুর প্রেক্ষাপটে সরল অজৈব পদার্থের অনেক কঠিন। এটির একটি কারণ হল সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশে আরএনএ সাধারণত অগ্রসর হয় খুব স্থিতিশীল ভাবে এবং একটি অপরটির সাথে ক্রিয়াশীল হয় খুব ধীরে, এবং অনুসিন্ধান্তে আরও প্রস্তাব করা হয়েছিল যে জীবন্ত জীবের অন্যান্য অণুর সমন্বয় ঘটেছিল আরএনএর সৃষ্টির আগে।[১২০] তবে, পৃথিবীর বর্তমান জীবনযাত্রার শুরুর আগের পরিবেশ সৃষ্টি করে, সফলভাবে কিছু সুনির্দিষ্ট আরএনএ অণুর সংশ্লেষণ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে - বিক্রিয়ার পুরোটা সময় জুড়ে অগ্রদূত ফসফেটের উপস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট অনুক্রমে বিকল্প অগ্রদূত বিক্রিয়ক যুক্ত করে।[১২১] এই গবেষণা আরএনএ জগত অনুসিন্ধান্তকে আরও সুস্পষ্ট করে।[১২২]

২০১৩ সালে প্রাপ্ত ভূতাত্ত্বিক ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, ৩.৫ গিগা বছরের আগে প্রতিক্রিয়াশীল ফসফরাস প্রজাতি (যেমন ফসফাইট) এর প্রাচুর্য্য ছিল পৃথিবীর সাগরগুলোতে, এবং ফলশ্রুতিতে এসক্রাইবারসাইট সহজেই জলীয় গ্লিসারলের সাথে বিক্রিয়া করে ফসফাইট এবং গ্লিসারল ৩-ফসফেট উৎপন্ন করতে পারত।[১২৩] এটা অনুমান করা হয় যে, সর্বশেষ ভারী গ্রহাণুবর্ষণ থেকে আগত উল্কাপিণ্ড এর অংশ হল এসক্রাইবারসাইট- থেকে প্রথম ফসফরাস পৃথিবীতে এসে থাকতে পারে, যা প্রাইবায়োটিক জৈব অণুগুলির সাথে বিক্রিয়া করে ফফোরাইলেটেড বায়োমোলিকুলস যেমন আরএনএ গঠন করতে পারে।[১২৩]

২০০৯ সালে, পরীক্ষণে মাধ্যমে ডারউইনের বিবর্তবাদ প্রদর্শন করা হয়, যেখানে ভিট্রোতে একটি দুই-কম্পোনেন্ট ব্যবস্থার আরএনএ এনজাইম (রাইবোজাইমস) ছিল।[১২৪] কাজটি জেরাল্ড জয়েসের ল্যাবরেটরিতে করা হয়েছিল, যিনি বলেছিলেন "সাধারণ জীববিজ্ঞানের বাইরে এটি প্রথম উদাহরণ, যেখানে একটি আণবিক জেনেটিক ব্যবস্থায় বিবর্তনীয় অভিযোজন ঘটেছে।"[১২৫]

প্রিবায়োটিক যৌগ সমূহ মহাজাগতিকভাবে উৎপন্ন হয়ে থাকতে পারে। ২০১১ সালে নাসা করা, পৃথিবীতে পাওয়া উল্কাপিণ্ডের উপর ভিত্তি করে করা এক গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, ডিএনএ এবং আরএনএ উপাদানগুলি (অ্যাডেনিন, গুয়েনিন এবং এর সাথে সম্পর্কিত জৈব অণুগুলো) হয়তো মহাকাশে গঠিত হয়ে থাকতে পারে।[১২৬][১২৭][১২৮][১২৯]

মার্চ ২০১৫ সালে, নাসার বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো রিপোর্ট প্রকাশ করেন যে, জীবের জটিল ডিএনএ এবং আরএনএ এর জৈব উপাদানগুলি যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ইউরাসিল, সাইটোসিন এবং থায়মিন, - কে পরীক্ষাগারে তৈরি করা হম্ভব হয়েছে মহাকাশের মত পরিবেশ সৃষ্টি করে ও উল্কাপিণ্ডে পাওয়া যায় এরূপ প্রারাম্ভিক রাসায়নিক উপাদান যেমন পাইরিমিডিন ব্যবহার করে। পাইরিমিডিন, যেমন পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচএস), মহাবিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন-সমৃদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ, বিজ্ঞানীদের মতে এটি সম্ভবত রেড জায়েন্ট কিংবা নক্ষত্রীয় ধুলো এবং গ্যাসের মেঘ থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।[১৩০]

প্যানস্পার্মিয়া অনুসিন্ধান্ত অনুসারে, অণুজীব ধরনের জীবসমূহ, সাধারণত ছড়িয়ে থাকে উল্কাপিণ্ড, গ্রহাণু এবং অন্যান্য ছোট সৌরজগতীয় বস্তু দ্বারা - যা সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকতে পারে।[১৩১]

পরিবেশগত অবস্থা

সায়ানোব্যাকটেরিয়ার নাটকীয় পরিবর্তন পৃথিবীতে প্রাণ ধারণের উপাদানগুলোর পরিবর্তন ঘটায় ফলশ্রুতিতে অক্সিজেন সহ্য করতে না পারা অণুজীবগুলোর প্রায় বিলুপ্তি ঘটে।

পৃথিবীতে জীব বৈচিত্র্য ঘটার পিছনে কাজ করেছে জেনেটিক পরিবর্তনের সুযোগ, বিপাকীয় ক্ষমতা, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ[১৩২] এবং মিথোজীবিতা প্রভৃতির মধ্যে গতিশীল মিথস্ক্রিয়তা।[১৩৩][১৩৪][১৩৫] পৃথিবীর অস্তিত্বের অধিকাংশ সময় জুড়েই, এর বসবাসযোগ্য পরিবেশে প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছে অণূজীব এবং তাদের বিপাক ও বিবর্তন। এর ফলাফলস্বরূপ এই অণুজীবীও কার্যক্রমের কারণে পৃথিবীর বাহ্য-রাসায়নিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটছে একটি ভূতাত্ত্বিক সময় রেখা ধরে, যা পরবর্তিতে প্রভাব রাখছে বিভিন্ন সময়ে ঘটা বিবর্তিত প্রাণের বিকাশের উপর।[১৩২] উদাহারণস্বরূপ, সায়ানোব্যাকটেরিয়া দ্বারা সালোকসংশ্লেষনের সময় বাই-প্রোডাক হিসাবে নিষ্কাসিত অক্সিজেন পুরো পৃথিবীর পরিবেশে একটি ব্যাপক আকারের পরিবর্তন নিয়ে আসে। এর কারণ হল ওই সময় পৃথিবীর অধিকাংশ জীবের জন্য অক্সিজেন ছিল বিষস্বরূপ, এর কারণে অক্সিজেনের আবির্ভাব একটি নাটকীয় বিবর্তনীয় চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করে, এবং পরিশেষে এই ঘটনাই পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ শ্রেণীর বিকাশে কাজ করে। জীব এবং তাদের পরিবেশের মধ্যে এই পারস্পরিক সম্পর্ক একটি প্রাণবন্ত জীব-ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য।[১৩২]

জীবমণ্ডল

জীবমণ্ডল হচ্ছে পৃথিবীর সমগ্র ইকোসিস্টেমগুলির সামগ্রিক যোগফল। এটিকে বলা যেতে পারে পৃথিবীর প্রাণের এলাকা, এটি একটি বদ্ধ ব্যবস্থা (সৌর এবং মহাবৈশ্বিক রেডিয়েশন এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরের তাপ থেকে মুক্ত) এবং এটি ব্যাপকভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত।[১৩৬] সর্বশেষ বায়োফিজিওলজিক্যাল সংজ্ঞা অনুসারে, জীবমণ্ডল হল একটি বিশ্বব্যাপী বাস্তুসংস্থান ব্যবস্থা যার সাথে সংযুক্ত সকল জীবিত জীব ও তাদের নিজের মধ্যে সম্পর্ক, তাছাড়াও উল্ল্যেখযোগ্য বিভিন্ন উপাদান যেমন অশ্মমণ্ডল, জীওস্ফিয়ার, জলমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল প্রভৃতির সাথে এটি সম্পর্কিত।

পৃথিবীর জীবমণ্ডলের সকল স্থানেই জীব জীবন ধারণ করে থাকে, যার অন্তর্ভুক্ত হল মাটি, হট স্প্রিং, শিলার অভ্যন্তরে যা প্রায় ভূ-অভ্যন্তরের ১৯ কিমি (১২ মা) গভীরেও হতে পারে, একইসাথে সমুদ্রের গভীরতম স্থানে, বায়ুমণ্ডলের অনেক উচ্চতাতে প্রায় ৬৪ কিমি (৪০ মা) উপরে।[১৩৭][১৩৮][১৩৯] কিছু বিশেষ পরীক্ষাগারের পরিবেশে, এটা দেখা যায় যে মহাশূন্যের প্রায়-ওজনশূন্যতা পরিবেশেও জীব বেঁচে থাকতে পারে[১৪০][১৪১] এবং বেঁচে থাকতে পারে বাইরের মহাশূন্যের অসীম শুন্যতায়।[১৪২][১৪৩] এমনকি পৃথিবীতে সমদ্রের গভীরতম অংশ মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও জীবকে বেঁচে থাকতে দেখা যায়।[১৪৪][১৪৫] এই সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপশ্চিমাংশের সমুদের সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ২,৫৯০ মি (৮,৫০০ ফু; ১.৬১ মা) নিচের শিলার অভ্যন্তরে প্রায় ৫৮০ মি (১,৯০০ ফু; ০.৩৬ মা) নিচেও জীব বেঁচে থাকতে দেখা যায়,[১৪৪][১৪৬] শুধু তাই নয়, জাপানের কাছের সমদ্রতলের ২,৪০০ মি (৭,৯০০ ফু; ১.৫ মা) নিচেও জীবের সন্ধান পাওয়া যায়।[১৪৭] আগস্ট ২০১৪ সালে, বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন যে অ্যান্টার্টিকার বরফের প্রায় ৮০০ মি (২,৬০০ ফু; ০.৫০ মা) নিচেও জীবের সন্ধান পাওয়া গেছে।[১৪৮][১৪৯] একজন গবেষকের মতে, "আপনি অণুজীব যেকোন স্থানে খুজে পেতে পারেন— এগুলো পরিবেশের সাথে মাত্রাতিরিক্তভাবে খাপ খাওয়াতে পারে এবং এইস্থানে বেঁচে থাকতে পারে।"[১৪৪]

এটা স্বীকার্য যে, জীবমণ্ডলের বিকাশ হয়েছে বিবর্তনের দ্বারা, যার শুরুটা হয়েছিল জীবনের উৎপত্তির মাধ্যমে (প্রাকৃতিকভাবে প্রাণহীন বস্তু দ্বারা জীবনের প্রারাম্ভ হয়েছিল, যেমন সাধারণ অর্গানিক কম্পাউন্ড) কিংবা জৈবজনন থেকে (জীবনের উদ্ভব হয়েছে প্রাণযুক্ত বস্তু থেকে), প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে।[১৫০][১৫১] পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিতের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন গুলর মধ্যে রয়েছে বায়জেনেটিক গ্রাফাইট যা প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন বছর পুরাতন পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডের মেটাসেডিমেন্টারি শিলায়,[৯৮] এবং ৩.৪৮ বিলিয়ন বছর পুরাতন অণুজীবীয় স্তরের ফসিল পাওয়া গিয়েছে স্যান্ডস্টোনের ভিতরে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়[৯৯][১০০] অতিসম্প্রতিক ২০১৫ সালে, "বিয়োটিক জীবের ধংশাবশেষ" পাওয়া যায় পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার যা প্রায় ৪.১ বিলিয়ন বছর পুরাতন শীলায়।[৯০][৯১] ২০১৭ সালে, কানাডার কিউনিক এর নুভভুগিটাক বেল্টে সুপরিচিত জীবাশ্ম অণূজীব (কিংবা ক্ষুদ্রজীবাশ্ম) আবিষ্কৃত হয়েছে প্রচণ্ডবেগে নির্গম হওয়া হাইড্রোথার্মাল ভেন্টে, যার বয়স প্রায় ৪.২৮ বিলিয়ন বছর, এটা এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচাইতে পুরাতন, যা প্রস্তাব করে "প্রায় তাৎক্ষণিক জীবনের উদ্ভব হওয়া বিষয়ে", ৪.৪ বিলিয়ন বছর আগে মাত্র সাগর সৃষ্টি হওয়ার পরপরই, এবং এটা ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টি হবার খুব বেশি দিন পরেও নয়।[১][২][৩][৪] জীববিজ্ঞানী স্টিফেন ব্লেয়ার হার্জ -এর মতে, "যদি পৃথিবীতে জীবনের প্রারাম্ভ এত স্বল্প সময়ে ঘটে থাকে ... তাহলে মহাবিশ্বের জন্যও এটি একটি সাধারণ ঘটনা হওয়ার কথা।"[৯০]

সাধারণ দৃষ্টিকোন থেকে, জীবমণ্ডল হল যেকোন আবদ্ধ, স্বনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা যা বাস্তুসংস্থানকে ধারণ করতে পারে। কৃত্রিমভাবে বানানো জীবমণ্ডলও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে যেমন বায়োস্ফিয়ার ২ ও বিআইওএস-৩ এবং চাঁদ কিংবা অন্যান্য গ্রহে থাকা সম্ভব্য যেকোন জীবমণ্ডল।[১৫২]

সহনশীলতার পরিসীমা

ডিনোকক্কাস রেডিয়দুরান্‌স একটি এক্সট্রিমোফিল যা চরম ঠান্ডা, বিশুষ্কীকরণ, ভ্যাকুয়াম, এসিড এবং রেডিয়েশন এক্সপোজারেও টিকে  থাকতে পারে।

একটি বাস্তুতন্ত্রের সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় উপাদান হল জীবন ধারণের জন্য বাহ্যিক ও রাসায়নিক উপাদান যেমন—শক্তি (সূর্যালোক বা রাসায়নিক শক্তি), পানি, তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডল, মাধ্যাকর্ষণ, পুষ্টি, এবং অতিবেগুনী সূর্য বিকিরণ হতে সুরক্ষা[১৫৩] অধিকাংশ বাস্তুতন্ত্রে, এই পরিবেশ দিনের বিভিন্ন সময় পরিবর্তীত হয় এবং এক মৌসুমে থেকে পরবর্তী মৌসুমে পরিবর্তীত হয়।[১৫৪] তাই বেশিরভাগ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য, জীবের একটি পরিবর্তনশীল পরিবেশে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে হয়, যা "সহনশীলতার পরিসীমা" বলে। এই সীমার বাইরে অংশ হল "শারীরবৃত্তীয় চাপের অঞ্চল," যেখানে বেঁচে থাকা এবং প্রজনন করা সম্ভাব্য কিন্তু জীবের অনুকূলে নয় এটি। এই  সীমার বাইরে অংশ হল "অসহিষ্ণু অঞ্চল", যেখানে এই জীবের বেঁচে থাকা ও প্রজনন অস্বাভাবিক কিংবা অসম্ভব। যে সকল জীবের সহনশীলতার পরিসীমার অংশটি অনেক বেশি সেগুলো ব্যাপক পরিসরে ছড়াতে পারে কম সহনশীলতার পরিসীমার জীবদের তুলনায়।[১৫৪]

এক্সট্রিমোফিল

বেঁচে থাকার জন্য, কিছু নির্দিষ্ট অণুজীব এমন একটি অবস্থা ধারণ করতে পারে যাতে করে এরা চরম ঠান্ডা, সম্পূর্ণ বিশুষ্কীকরণ, অনাহার, উচ্চ মাত্রার বিকিরণের প্রকাশে, এবং অন্যান্য বাহ্যিক বা রাসায়নিক চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হতে পারে। এই অণুজীবগুলো সপ্তাহ, মাস, বছর বা এমনকি শতাব্দীর ধরে এই বৈরী পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে।[১৩২] এক্সট্রিমোফিল হল সেই সকল মাইক্রোবিয়াল জীবের ধরণ যা সাধারণত জীবের জন্য যে সহনশীল পরিসীমা আছে তার বাইরে অবস্থান করে বেঁচে থাকে।[১৫৫] এরা বিকাশিত হয় শক্তির কিছু বিরল উৎস ব্যবহার করে। যদিওবা সকল জীবই প্রায় অভিন্ন ধরনের অণু সমন্বয়ে গঠিত, কিন্তু বিবর্তনটি এই ধরনের অণুজীবকে এই বিস্তৃত সীমার বাহ্যিক ও রাসায়নিক অবস্থার সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম করেছে। এই চরম পরিবেশে বেঁচে থাকা এই সকল অণুজীবীয় সম্প্রদায়ের বিপাকীয় বৈচিত্র্যের ও গঠনিক বৈশিষ্ট্য সমূহের উপর এখনও গবেষণা চলছে।[১৫৬]

অণুজীব এমনকি পৃথিবীতে গভীরতম অংশ মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও বেঁচে থাকতে পারে।[১৪৪][১৪৫] এছাড়াও অণুজীব সমুদ্রতলদেশের শিলার ভিতরে প্রায় ১,৯০০ ফুট (৫৮০ মি) নিচে ও সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচের প্রায় ৮,৫০০ ফুট (২,৬০০ মি) নিচে বেঁচে থাকতে পারে।[১৪৪][১৪৬]

পৃথিবীতে জীবের জীবনের সুদৃঢ়তা এবং বহুমুখিতার এই অনুসন্ধান,[১৫৫] সেইসাথে কিছু জীবের আণবিক গঠনের উপর গবেষণা যার কারণে এগুলো চরম পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে - পৃথিবীর বাইরে জীবনের সন্ধানের ক্ষেত্রে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।[১৩২] উদাহরণস্বরূপ, লাইকেন অণুজীব এক মাসের মত বেঁচে থাকতে পারে একটি কৃত্রিমভাবে বানানো মঙ্গলগ্রহের মত পরিবেশে।[১৫৭][১৫৮]

রাসায়নিক উপাদান

সকল জীবিত বস্তুর জৈবরাসায়নিক কার্যকলাপ চলানোর জন্য কিছু মূল রাসায়নিক উপাদান প্রয়োজন। কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস, এবং সালফার- এগুলো হল সব প্রাণীর জন্য মৌলিক ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট - এগুলোকে প্রায়ই ইংরেজি আদ্যক্ষর সিএইচএনওপিএস দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একসঙ্গে এগুলো বেঁচে থাকার মৌলিক বস্তু নিউক্লিক অ্যাসিড, প্রোটিন এবং লিপিড তৈরি করে। এই ছয়টি উপাদানগুলির মধ্যে পাঁচটি দ্বারা ডিএনএর রাসায়নিক উপাদানগুলি গঠিত হয়, একমাত্র ব্যতিক্রম উপাদান হচ্ছে সালফার। সালফার, অ্যামিনো অ্যাসিডের সিসটেইন এবং ম্যাথিয়োনাইন গঠনের একটি উপাদান। এই সকল উপাদানের মধ্যে জৈবিকভাবে সবচেয়ে বেশি প্রচুর্য্য দেখাা যায় কার্বনের, যার মধ্যে একাধিক, স্থিতিশীল সমযোজী বন্ধনী গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। কার্বন, কার্বন-ভিত্তিক(জৈব) অণুর বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক গঠন তৈরি করতে সহায়তা করে।[১৫৯] কিছু বিকল্প কাল্পনিক ধরনের জৈবরাসায়নিক ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এই তালিকার এক বা একাধিক উপাদানকে বাদ দিয়ে কিংবা তালিকার কোনও একটি উপাদানকে অদলবদল করে বাইরের কোন উপাদান যুক্ত করে কিংবা কাইরালিটির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে বা অন্যান্য রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলি পরিবর্তন করে তৈরি হয়।[১৬০][১৬১]

ডিএনএ

ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড হল সেই অণু যা জ্ঞাত সকল জীবিত জীব ও অনেক ভাইরাসের বৃদ্ধি, ক্রমবিকাশ, কার্যকলাপ ও প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ জেনেটিক তথ্য ধারণ করে। প্রোটিনকমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেডের পাশাপাশি, ডিএনএ এবং আরএনএ হল নিউক্লিক এসিড, এগুলো হল তিনটি প্রধান ধরনের মধ্যে অন্যতম ম্যাক্রোমলিকিউল যা জীবিত সকল জীবের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। অধিকাংশ ডিএনএ অণুতে দুইটি বাইপলিমারের সূত্র আঙ্গুরের মত প্যাচানো থেকে দ্বৈত হেলিক্সের মত হয়। দুইটি ডিএনএ সুত্র একত্রে পলিনিউক্লিউটাইড নামে পরিচিত, কারণ এগুলো গঠিত হয় অনেকগুলো একক অংশ নিউক্লিওটাইড দ্বারা।[১৬২] প্রতিটি নিউক্লিউটাইড গঠিত হয়ে থাকে নাইটোজেন-যুক্ত নিউক্লিউওবেস দ্বারা — হয় সাইটোসিন (সি), গুয়ানিন (জি), এডেনিন (এ) কিংবা থাইমিন (টি) দ্বারা — একই সাথে থাকে চিনি, যাকে বলা হয় ডিঅক্সিবেস এবং একটি ফসফেট গ্রুপ। নিউক্লিউওটাইডগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয় একটি সমযোজী বন্ধনের চেইনের মাধ্যমে যার মাঝে থাকে একটি নিউক্লিউটাইডের চিনির অণুর সাথে পরের ফসফেটের সংযুক্তি, ফলশ্রূতিতে পর্যায়ক্রমিকভাবে একটি চিনি-ফসফেটের মেরুদণ্ড তৈরি হয়। বেস পেয়ার নিয়ম অনুসারে (এ সাথে টি, এবং সি সাথে জি সংযুক্ত হয়ে থাকে), হাইড্রোজেন বন্ধন দুটি পৃথক পলিনিউক্লিওটাইডের সুত্রের নাইট্রোজেনীয়াস বেসের মাঝে বন্ধন সৃষ্টি করে দ্বি-সুত্রীয় ডিএনএ তৈরি করে। পৃথিবীতে পরস্পর সংযুক্ত ডিএনএ বেস-জোড়ার মোট পরিমাণ অনুমান করা হয় প্রায় ৫.০ x ১০৩৭টি, এবং যার ওজন হল ৫০ বিলিয়ন টন[১১১] যদি তুলনা করা হয়, বায়ুমণ্ডলের মধ্যে থাকা মোট ভর অনুমান করা হয় প্রায় ৪ টিটন (ট্রিলিয়ন টন কার্বন)।[১৬৩]

ডিএনএর জীবের জৈবিক তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে। ডিএনএ মেরুদণ্ড ফাটল প্রতিরোধী, এবং দ্বি-আনিবিক কাঠামোর উভয় অনুই একই জৈবিক তথ্য ধারণ করে। জৈবিক তথ্যের প্রতিলিপি তৈরি হয় যখন অণু দুটি পৃথক হয়ে যায়। ডিএনএ'র একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (মানুষের ক্ষেত্রে ৯৮% এরও বেশি) নন-কোডিং, যার অর্থ হল এই অংশগুলি প্রোটিন অনুক্রমের প্যাটার্ন হিসেবে কাজ করে না।

ডিএনএর দুটি অণু একে অপরের বিপরীত দিক দিয়ে গমন করে এবং তাই এটা পরস্পর অসমান্তরাল হয়ে থাকে। প্রতিটি চিনির অণুর সাথে সংযুক্ত অংশটি হল যে কোন চার ধরনের মধ্যে এক ধরনের নিউক্লিওবেস (আনুষ্ঠানিকভাবে, ক্ষার) দ্বারা গঠিত। ডিএনএ-এর মেরুদন্ডের সাথে সংযুক্ত নিউক্লিওবেস গুলোর বিভিন্নভাবে সাজানোর ব্যবস্থা হল সেই ক্রম যা জীবের জৈবিক তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে। জেনেটিক কোডের মধ্যে, আরএনএ অণুগুলো অনুধাবনের মাধ্যমে প্রোটিনগুলির মধ্যে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিডের অনুক্রমটি সুনির্দিষ্ট করা যায়। এই আরএনএ অণুগুলো প্রাথমিকভাবে ডিএনএ অণুকে একটি টেমপ্লেট হিসাবে ব্যবহার করে ট্রান্সক্রিপশন নামক একটি প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।

কোষগুলির মধ্যে, ডিএনএ ক্রোমোজোমের দীর্ঘ কাঠামোর মধ্যে সাজানো থাকে। কোষ বিভাজনের সময় এই ক্রোমোসোমগুলি ডিএনএ পুনরাবৃত্তির প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রতিলিপি তৈরি করে, যার ফলে প্রতিটি কোষের ক্রোমোজোমের সম্পূর্ণ সেট বজায় থাকে। সুকেন্দ্রিক জীবের (প্রাণী, উদ্ভিদ, ছত্রাক এবং প্রোটিস্টা) ক্ষেত্রে বেশিরভাগের ডিএনএ কোষের নিউক্লিয়াসের ভিতরে থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অঙ্গাণু যেমন, মাইটোকন্ড্রিয়া বা ক্লোরোপ্লাস্ট মধ্যে থাকে।[১৬৪] এর বিপরীতে, প্রাক-কেন্দ্রিক জীব (ব্যাকটেরিয়া এবং আর্কিয়া) তাদের ডিএনএ সাইটোপ্লাজমে সংরক্ষিত থাকে। ক্রোমোসোমের মধ্যে, ক্রোমাটিন প্রোটিন যেমন হিস্টোন ডিএনএ-কে সঙ্কুচিত ও সংগঠিত করে রাখে। এই সঙ্কুচিত গঠনগুলি ডিএনএ এবং অন্যান্য প্রোটিনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় সহায়তা করে, ডিএনএর বিভিন্ন অংশগুলির মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ডিএনএ - কে প্রথম পৃথক করেন ফ্রেডরিশ মিয়েশার ১৮৬৯ সালে।[১৬৫] ১৯৫৩ সালে জেমস ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক দ্বারা এটির আণবিক কাঠামোটি চিহ্নিত করা হয়েছিল, যার মডেল-বিল্ডিং ব্যবস্থা রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন কর্তৃক এক্স-রে ডিফেকশন উপাত্ত দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।[১৬৬]

শ্রেণিবিন্যাস

জীবনঅধিজগৎজগৎপর্বশ্রেণীবর্গপরিবারগণপ্রজাতি
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসের প্রধান আটটি শ্রেণীবিন্যাস ক্রমের নিন্মতম থেকে উচ্চতম পর্যায় পর্যন্ত ক্রমবিভক্তি। অন্তর্বর্তী অপ্রধান ক্রমগুলো দেখানো হয়নি।

জীবনকে সাধারণত আটটি ভাগে শ্রেণিবিভাগ করা হয়ে থাকে- ডোমেইন, কিংডম, ফাইলাম, ক্লাস, অর্ডার, ফ্যামেলি, জেনাস এবং স্পিসিস. মে ২০১৬ সালে, বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেন যে, পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ১ ট্রিলিয়ান প্রজাতির জীব রয়েছে যার মাঝে মাত্র একহাজার ভাগের এক শতাংশের বিবরন তাদের কাছে রয়েছে।[১০৯]

প্রাপ্ত তথ্যমতে গ্রীক দার্শনিক এরিস্টেটল (৩৮৪-৩২২ বিসি) সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি জীবের শ্রেণি বিভাগের উপর কাজ করেন, ওই সময়ের পরিচিত সকল জীবন্ত জীবকে তিনি ভাগ করেন হয় উদ্ভিদ কিংবা প্রাণি হিসাবে, এই বিভাগের মূল ভিত্তি ছিল এগুলো চলাচল করতে পারে কিনা। তিনি প্রাণিকে আরও বিভক্ত করেন এগুলোতে রক্ত রয়েছে কিনা বা রক্তবিহীন কিনা (অন্তত লাল রক্তবিহীন কিনা), যেটাকে পারস্পরিকভাবে মেরুদণ্ডী প্রাণীঅমেরুদণ্ডী প্রাণীতে বিভক্ত করার সাথে তুলনা করা যায়, এবং রক্তযুক্ত প্রাণীকে বিভক্ত করা যায় পাঁচটি গ্রুপে: ভিভিপেরাস কোয়াড্রুপেডস্‌ (মেমেল্‌স), অভিপেরাস কোয়াড্রুপেডস্‌ (রেপটাইল ও এমফিবিয়ান), পাখি, মাছ ও তিমি। রক্তবিহীন প্রাণীকেও বিভক্ত করা যায় পাঁচটি গ্রুপে: সিফালোপেড, ক্রাসটাসিন, পোকামাকড় (যার মধ্যে রয়েছে মাকড়শা, স্কর্পিয়ানসেণ্ট্রিপেডস, এগুলো ছাড়াও আজকাল যা পোকামাকর হিসাবে গণ্য কর হয় তাও এর অন্তর্ভুক্ত), খোলস যুক্ত প্রাণী (যেমন বেশিরভাগ মলাস্কাএকাইনোডার্মাটা), এবং জুফাইটা (প্রাণি যেগুলো দেখতে উদ্ভিদের মত)। যদিও প্রাণিবিদ্যা নিয়ে এরিস্টেটলের কাজ নির্ভুল ছিল না, কিন্তু এটা ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে বড় জীববিজ্ঞানের বিশ্লেষণ এবং তার মৃত্যুর পর বহু শতাব্দী ধরে এই বিশ্লেষণ চূড়ান্ত কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিল।[১৬৭]

আমেরিকার অন্বেষণার ফলে বিপুল সংখ্যক নতুন উদ্ভিদ ও প্রাণির সন্ধান পাওয়া যায় যাদের বিবরণ ও শ্রেণিবিন্যাস করা প্র্যোজন হয়ে উঠে। ১৬শ শতাব্দীর শেষভাগে ও ১৭ তম শতাব্দীর শুরুর দিকে, প্রাণি জগতের উপর নিরুপম গবেষণা করা হয় এবং এই গবেষণা চালিয়ে যাওয়া হয় যতক্ষণ না এর ফলাফল সম্মখ জ্ঞানের একটি আধার তৈরি করা যা শ্রেণিবিন্যাসের একটি গাঠনিক কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করা। ১৭৪০-দশকের শেষের দিকে, কার্ল লিনিয়াস প্রজাতির শ্রেণিবিন্যাসের জন্য দ্বিদলীয় নামকরণের একটি পদ্ধতি চালু করেন। লিনিয়াস নামকরণের এই গঠনটি উন্নত করার চেষ্টা করেন এবং পূর্বে ব্যবহৃত বহু-শব্দযুক্ত নামগুলোকে সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করেন এগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় অলঙ্করণ বিলুপ্ত করে, নতুন বর্ণনামূলক শর্তাবলী প্রবর্তন করেন এবং সঠিকভাবে তাদের অর্থ সংজ্ঞায়িত করেন।[১৬৮]

প্রাথমিকভাবে ছত্রাকে উদ্ভিদ হিহাবে গণ্য করা হত। খুব অল্প সময়ের জন্য লিনিয়াস এগুলোকে শ্রেণিবিন্যাসের প্রাণিজগতের ভার্মিস বলে শ্রেণিবিভাগ করেন, কিন্তু পরবর্তিতে এটিকে তিনি আবার উদ্ভিদজগতে স্থাপিত করেন। কোপল্যান্ড ছত্রাকে প্রোস্টিস্টা হিসাবে শ্রেণিবিভাগ করেন, ফলশ্রুতিতে তিনি সমস্যাটা খানিকটা পাশ কাটিয়ে যান কিন্তু স্বীকার করেন এগুলোর আলাদা অবস্থা।[১৬৯] এই সমস্যাটা পুরোপুরিভাবে সমাধান করেন হুইট্রেকার, যখন তিনি এগুলকে নিজস্ব কিংডমের অধীনস্থ করেন, তার পাঁচ-কিংডম ব্যবস্থায়। বিবর্তনের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে প্রকৃতপক্ষে ছত্রাক উদ্ভিদজগতের থেকে প্রাণিজগতের সাথে বেশি সম্পর্কিত।[১৭০]

নতুন আবিষ্কার কোষ ও মাইক্রো-অরগানিজম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান আহরণের সুয়োগ করে দিয়েছে, জীবনের নতুন গ্রুপ উন্নমোচিত হয়েছে এবং ফলশ্রুতিতে কোষবিদ্যা এবং মাইক্রোবায়োলজির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এই নতুন জীবগুলি মূলত হয়, প্রোটোজোয়া রূপে প্রাণিজগতে কিংবা প্রোটোফাইটা/থেলোফাইটা রূপে উদ্ভিদজগতে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়, কিন্তু পরিশেষে এগুলোকে একত্রিত করে একটি জগতে নিয়ে আসেন হেকেল যা হল প্রোটিস্টা, পরবর্তিতে প্রাক-কেন্দ্রিক অংশটিকে ভেংগে মনেরা জগতে নিয়ে যাওয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত দুটি পৃথক গ্রুপে বিভক্ত করা হয়, ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া রূপে। এই ঘটনাগুলো ছয়-কিংডম ব্যবস্থা তৈরিতে সহায়তা করে এবং পরিশেষে বর্তমানের তিন-অধিজগৎ ব্যবস্থা তৈরিতে সহায়তা করে, যার মূল ভিত্তি হল বিবর্তনীয় সম্পর্ক।[১৭১] যদিওবা, সুকেন্দ্রিক অংশের শ্রেণিবিভাগ, বিশেষ করে প্রোটিস্টার শ্রেণিবিভাগ, এখনও বিতর্কিত।[১৭২]

মাইক্রোবায়োলজি, আণবিক জীববিজ্ঞানভাইরাসবিদ্যার উন্নতির সাথে সাথে, অ-কোষীয় পুনঃপ্রজনন এজেন্টগুলো আবিষ্কৃত হয়, যেমন ভাইরাস এবং ভিরোড। যদিওবা এগুলো জীবিত বলে বিবেচিত হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে; ভাইরাসের মধ্যে জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন কোষীয় ঝিল্লি, বিপাক এবং পরিবেশের সাথে বৃদ্ধি বা প্রতিক্রিয়া করার গুণের অভাব রয়েছে। ভাইরাসকে এখনও এর জীববিদ্যা এবং জেনেটিক্স উপর ভিত্তি করে "প্রজাতি"তে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে থাকে, কিন্তু এই ধরনের শ্রেণিবিভাগ অনেক দিক দিয়ে বিতর্কিত।[১৭৩]

১৯৬০-এর দশকে ক্লাডিস্টিক নামে একটি ট্র্যাডিশন প্রচলিত হয়, যা টেক্সানমিক শ্রেণিবিভাগ ক্লাড্‌সের উপর নির্ভর করে একটি বিবর্তনীয় বা ফিজোজেনটিক বৃক্ষের মত তৈরি করে।[১৭৪]

লিনিয়াস
১৭৩৫[১৭৫]
হেকেল
১৮৬৬[১৭৬]
স্যাটোন
১৯২৫[১৭৭]
কোপল্যান্ড
১৯৩৮[১৭৮]
হুইট্রেকার
১৯৬৯[১৭৯]
ওয়াইজা ইটি এল.
১৯৯০[১৭১]
ক্যাভালির-স্মিস্থ
১৯৯৮[১৮০]
২ জগৎ৩ জগৎ২ সাম্রাজ্য ৪ জগৎ৫ জগৎ৩ অধিজগৎ৬ জগৎ
(আলোচনা করা হয়নি)প্রোটিস্টপ্রাক-কেন্দ্রিকমনেরামনেরাব্যাক্টেরিয়াব্যাক্টেরিয়া
আর্কিয়া
সুকেন্দ্রিকপ্রোটিস্টপ্রোটিস্টসুকেন্দ্রিকপ্রোটোজোয়া
ক্রোমিস্টা
সবজিউদ্ভিদউদ্ভিদউদ্ভিদউদ্ভিদ
ছত্রাকছত্রাক
প্রাণীপ্রাণীপ্রাণীপ্রাণীপ্রাণী

প্রাণীজগৎ (শ্রেণিবিন্যাস)

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে প্রাণীজগৎ[১৮১] হল সেই মহাঅধিজগৎ যা সকল জীবকে কে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভাগ করে।[১৮২]

কোষ

কোষ হল প্রতিটি জীবন্ত বস্তুর কাঠামো মৌলিক একক, এবং সমস্ত কোষ উৎপন্ন হয় পূর্ব থেকে উপস্থিত কোষের বিভাজনের মাধ্যমে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে হেনরি ডিট্রোচেট, থিওডোর শচওয়ান, রুডলফ ভিরচোও এবং অন্যান্যরা কোষ তত্ত্ব প্রণয়ন করা করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তা ব্যাপকভাবে গ্রহীত হয়েছিল।[১৮৩] একটি প্রাণীর কার্যকলাপ তার কোষের মোট কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে, কারণ দেহে শক্তি প্রবাহ এগুলোর মধ্যে ও মাঝে ঘটে।[১৮৪] কোষগুলো বংশগতির তথ্য ধারণ করে থাকে যা কোষ বিভাজনের সময় একটি জেনেটিক কোড হিসাবে পরবর্তি কোষে স্থানন্তরিত হয়।[১৮৫]

কোষ প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রাক-কেন্দ্রিক কোষে নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য ঝিল্লি-আবদ্ধ অঙ্গাণু থাকে না, যদিও এই কোষগুলোতে গোলাকার ডিএনএ এবং রাইবোজোম থাকে। ব্যাকটেরিয়াআর্কিয়া হল প্রাক-কেন্দ্রিক কোষের দুইটি ডোমেন। আরেকটি প্রধান শ্রেনীর কোষ হল সুকেন্দ্রিক কোষ, যাতে স্বতন্ত্র নিউক্লি ঝিল্লি থাকে একটি নিউক্লিয়ার মেমব্রেণ ও মেমব্রেণ ঝিল্লি-আবদ্ধ অঙ্গাণুর মাঝে, এতে আরো অঙ্গাণু যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরোপ্লাস্ট, লাইসোসোম, রুক্ষ ও মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এবং অন্তকোষীয় গহ্বর থাকে। উপরন্তু, তারা সংগঠিত ক্রোমোসোম ধারণ করে যা জেনেটিক উপাদান বহন করে। বৃহৎ জটিল জীবগুলোর সকল প্রজাতিই সুকেন্দ্রিক কোষ দ্বারা গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে প্রাণী, উদ্ভিদ ও ছত্রাক, যদিও সুকেন্দ্রিক প্রজাতির বেশিরভাগই প্রোটিস্ট অণুজীব[১৮৬] প্রচলিত মডেল অনুসারে সুকেন্দ্রিক কোষ বিকাশিত হয়েছে প্রাক-কেন্দ্রিক কোষ থেকে, আর সুকেন্দ্রিক কোষের প্রধান অঙ্গাণুগুলো এন্ডোসিম্বায়োসিস মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া এবং প্রাক-সুকেন্দ্রিক কোষের সাথে ক্রিয়ার মধ্যে গঠিত হয়েছে।[১৮৭]

কোষবিদ্যার মূল আণবিক ক্রিয়াগুলো সংগঠিত হয়ে থাকে প্রোটিনের উপর ভিত্তি করে। প্রোটিন বায়োসিনেথিসিস নামক একটি এনজাইম-অনুঘটক প্রক্রিয়া দ্বারা রবিওসোমের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াগুলির অধিকাংশ সমন্বিত হয়ে থাকে। কোষের নিউক্লিক অ্যাসিডের জিন এক্সপ্রেশনের উপর ভিত্তি করে একটি ধারাক্রম অনুসারে আমিনো অ্যাসিডগুলো একত্রিত হয় এবং সংযুক্ত হয়।[১৮৮] সুকেন্দ্রিক কোষে, কোষের নিদির্ষ্ট স্থানে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয় গল্গি এপারেটাসের মাধ্যমে যাতে করে এই প্রোটিনগুলিকে বিভিন্ন স্থানে পৌছাতে পারে ও প্রক্রিয়াজাত হতে পারে।[১৮৯]

কোষগুলো, কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরুৎপাদিত হয়ে থাকে যার মধ্যমে একটি মাতৃকোষ থেকে দুই বা ততোধিক নতুন কোষের সৃষ্টি হয়। প্রাক-কেন্দ্রিক কোষের জন্য, কোষ বিভাজন হয়ে থাকে ফিশন প্রক্রিয়ায় যেখানে ডিএনএ টির প্রতিলিপি তৈরি হয়, তারপর দুটি অংশই কোষীয় ঝিল্লির বিভিন্ন অংশে সংযুক্ত হয়। সুকেন্দ্রিক কোষে, মাইটোসিসের আরও জটিল একটি প্রক্রিয়া অনুসরিত হয়। যাইহোক, শেষ ফলাফল একই; ফলে কোষ বিভাজনের ফলে সৃষ্ট কোষগুলো তার আদি কোষের সাথে পরিপূর্ণ সমাঞ্জস্য থাকে (মিউটেশনের কোষগুলো ছাড়া) এবং উভয়ই পরবর্তিতে আবার কোষ বিভাজনে সক্ষম থাকে একটি ইন্টারফেজ সময়ের পর থেকে।[১৯০]

বহুকোষীয় জীবগুলি প্রথম বিকাশিত হয়েছিল কোষের কলোনি তৈরি করে। এই কোষগুলি গ্রুপ জীবের সৃষ্টি করতে পারে কোষীয় সংযুক্তির মাধ্যমে। কলোনির প্রত্যেক সদস্য পৃথকভাবে নিজেরমত বেঁচে থাকতে সক্ষম, অপরদিকে সত্যিকারের বহু-কোষীয় জীবের সদস্যরা আলাদা বিশেষত্ব বিকাশ করেছে, তাদের বেঁচে থাকার জন্য অবশিষ্ট জীবের উপর নির্ভর করে। এই ধরনের জীবগুলি কলোনি তৈরি করেছে বা একক জীবাণু কোষ তৈরি করেছে যা বিভিন্ন ধরনের বিশেষ কোষ গঠন করতে সক্ষম হয় যা পূর্ণাং জীব গঠন করে। এই বিশেষত্ব বহুকোষীয় জীবগুলিকে এক কোষীয় জীবের তুলনায় আরো দক্ষতার সাথে রসদ ব্যবহারে সাহায্য করে।[১৯১] জানুয়ারিতে ২০১৬ সালে, বিজ্ঞানীরা মন্তব্য করেন যে, প্রায় ৮০০ মিলিয়ন বছর আগে, একটি অণুতে একটি সামাণ্য জিনগত পরিবর্তন, যাকে জিকে-পিআইডি বলা হয়, হয়তো জীবের এক কোষীয় জীব থেকে বহুকোষীয় জীবে পরিণত করার পিছনে কাজ করেছে।[১৯২]

কোষগুলো তার মাইক্রোপরিবেশ বোঝার ও এর সাথে খাপ খাওয়ার পদ্ধতি বের করেছে, যার ফলে তাদের অভিযোজন উন্নত হয়েছে। কোষীয় সংকেত ব্যবস্থা কোষীয় কার্যক্রম সমন্বয় করে থাকে, এবং একইসাথে বহুকোষীয় প্রাণীর মৌলিক কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। কোষীয় সংকেতগুলি সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে জেসট্যাক্রিন সিগন্যালিং ব্যবহার করে হতে পারে, অথবা পরোক্ষভাবে এন্ড্রাক্রিন সিস্টেমে এজেন্টদের বিনিময়ের মাধ্যমে হতে পারে। আরো জটিল জীবের ক্ষেত্রে, কার্যক্রমের সমন্বয় একটি সুনির্দিষ্ট স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে ঘটতে পারে।[১৯৩]

বহির্জাগতিক

যদিওবা নিশ্চিতভাবে একমাত্র পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে, অনেকেই মনে করেন যে বহির্জাগতিক প্রাণের বিকাশ যে শুরু কেবলমাত্র যুক্তিসঙ্গত তাই নয়, এটা খুবই সম্ভাব্য কিংবা অনিবার্য।[১৯৪][১৯৫] সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহ ও তার চাঁদে এবং একইসাথে অন্যান্য গ্রহমণ্ডলে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে কোন একসময়ে এগুলোতে থেকে থাকা কোষীয় প্রাণীর অস্তিত্বের সন্ধানে এবং এসইটিইআই এরূপ একটি প্রজেক্ট, যারা বহির্জাগতিক প্রাণীর সভ্যতা কর্তৃক প্রেরিত রেডিও ট্রান্সমিশন শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। সৌর জগতের অন্যান্য স্থান যেখানে অণুজীব প্রাণের অস্থিত্ব থাকতে পারে যার মধ্যে রয়েছে মঙ্গল গ্রহের অধিপৃষ্ট, শুক্র গ্রহের উপরের বায়ুমণ্ডল[১৯৬] এবং বৃহত্তাকার গ্রহগুলোর অধীনস্থ কিছু চাঁদের সাগরের উপরের পৃষ্ঠ।[১৯৭][১৯৮] সৌরজগতের বাইরে, কোন আরেকটি প্রধান-সিকোয়েন্স তারকাটি ঘিরে, যে অঞ্চলটি যা পৃথিবীর মত প্রাণ ধারণ করতে পারবে, পৃথিবীরই মত কোন গ্রহতে এমন অঞ্চলকে বাসযোগ্য অঞ্চল বলে হয়। এই অঞ্চলের ভেতর ও বাহ্যিক ব্যাসার্ধ পরিবর্তিত হতে পারে তারকাটির উজ্জ্বলতার সাথে, এটা অঞ্চলটির কত সময় ধরে টিকে থাকবে তার সাথেও উজ্জ্বলতা সম্পর্কিত। সূর্যের তুলনায় আরো বড় আকারের তারকায় বৃহতাকার বাসযোগ্য অঞ্চল থাকতে পারে, কিন্তু এটি অতি অল্প সময়ের ব্যবধান জন্য প্রধান-সিকোয়েন্স তারকা রূপে থাকে। ছোট লাল খর্বাকার তারকার ক্ষেত্রে আবার বিপরীত সমস্যা রয়েছে, এতে ছোট বাসযোগ্য অঞ্চল থাকতে পারে যা উচ্চ মাত্রার চুম্বকীয় সক্রিয়তায় মাঝে পরে যায় এবং এতে করে বদ্ধ কক্ষপথের টাইডাল লকিং এর প্রভাব দেখা দেয়। অতএব, মধ্যবর্তী ভর পরিসরের তারকা যেমন সূর্যের ক্ষেত্রে অধিক সম্ভাবনা কাজ করে পৃথিবীর মত প্রাণের বিকাশ ঘটার ক্ষেত্রে।[১৯৯] একটি ছায়াপথের মধ্যে তারকার সঠিক অবস্থানও প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে। তারকার সাথে একটি অঞ্চলে থাকা ভারী উপাদানগুলো যা গ্রহ সৃষ্টি করতে পারে, এর সাথে সম্ভাব্য আবাসস্থলের জন্য-ক্ষতিকারক সুপারনোভা ইভেন্টগুলির কম হারের সংমিশ্রণ,  একত্রে জটিল প্রাণ ধারণে ও বিকাশে সক্ষম গ্রহ তৈরির সম্ভবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।[২০০] ড্রেকের সূত্রের ভেরিয়েবলগুলি ব্যবহার করে, গ্রহমণ্ডলের স্বম্ভাব্য অবস্থা আলোচনা করা হয় যেখানে সভ্যতা বিকাশের সম্ভবতা অধিক রয়েছে।[২০১] তার এই সূত্র ব্যবহার করে বহির্জাগতিক জীবনের সংখ্যা নিরূপন করা মোটামুটি কঠিন; তার কারণ ভেরিয়েবলগুলো বেশিরভাগই অজানা, ব্যবহারকারীর মতামত সমীকরণের ফাংশনগুলোর ক্ষেত্রে একটি আয়না হিসেবে কাজ করে। ফলস্বরূপ, ছায়াপথের সভ্যতার সংখ্যা সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ১০^-১১ থেকে সর্বোচ্চ ১৫৬ মিলিয়নের বেশি হতে পারে; বিস্তারিত জানার জন্য ড্রেকের সূত্র পড়ুন।

কৃত্রিম

আর্টিফিশিয়াল লাইফ বা কৃত্রিম জীবন হল জীবনের কোন একটি বিশেষ অংশের অনুকরণ, যা করা হয়ে থাকে কম্পিউটার, রোবটিক্স বা জৈব-রসায়নের মাধ্যমে।[২০২] কৃত্রিম জীবনের অধ্যয়ন ঐতিহ্যগত জীববিদ্যাকে অনুকরণ করে কিছু জৈবিক ঘটনাকে পুনবৃত্তি করার প্রচেষ্টা করে। বৈজ্ঞানিকরা কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে জীবিত সিস্টেমের যুক্তিগত দিকটি নিয়ে অধ্যয়ন করে-বোঝার চেষ্টা করে, সকল ধরনের জটিল তথ্য প্রসেসিংগুলো যা ওই সিস্টেমগুলির প্রকৃত সংজ্ঞা প্রদান করে।[১৮৪] যেখানে সংজ্ঞা অনুসারে, জীবন হল, জীবিত অবস্থায় থাকা, অপর দিকে কৃত্রিম জীবন বলতে সাধারণত একটি ডিজিটাল পরিবেশে এবং অস্তিত্বে সীমাবদ্ধ তথ্যকে বুঝানো হয়।

সিনথেটিক জীববিজ্ঞান হল বায়োটেকনোলজির একটি নতুন ক্ষেত্র, যা বিজ্ঞানজৈব প্রকৌশলকে একত্রিত করে গঠিত। এর সাধারণ লক্ষ্য হচ্ছে নতুন জৈবিক ফাংশন ও সিস্টেমের নকশা করা এবং নির্মাণ করা যা প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। সিনথেটিক জীববিজ্ঞান ধারণ করে বায়োটেকনোলজির বিস্তারিত পুনসংজ্ঞা এবং তার সম্প্রসারণ। যার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল যাতে করে ইঞ্জিনিয়ারিং করে জৈবিক সিস্টেমের নকশা ও কাঠামো তৈরি করতে পারা, যা তথ্য প্রক্রিয়া, রসায়নিক পরিবর্তন, উপকরণ ও কাঠামো তৈরি, শক্তি উৎপাদন, খাদ্য সরবরাহ এবং পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যকে স্বমন্নত এবং উত্তর উত্তর উন্নত করেতে পারবে।[২০৩]

মৃত্যু

প্রাণীর মৃতদেহগুলি, যেমন এই আফ্রিকান মহিষের মত, বাস্তুতন্ত্রের মাধ্যমে পুনর্ব্যবহৃত হয়ে, জীবিত জীবজন্তুর জন্য শক্তি ও পুষ্টি সরবরাহ করে।

মৃত্যু একটি জীব বা কোষের সব গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন বা জৈবিক প্রক্রিয়ার স্থায়ী অবসান।[২০৪][২০৫] এটি ঘটতে পারে দুর্ঘটনা, রোগবালির, জৈবিক মিথস্ক্রিয়া, অপুষ্টি, বিষাক্ততা, বার্ধক্য বা আত্মহত্যার ফলে। মৃত্যুর পরে, একটি জীবের অবশিষ্টাংশ জৈবরাসায়নিক চক্রে পুনরায় প্রবেশ করে। জীবাংশ হয়তোবা শিকারী বা স্ক্যাভেঞ্জার কর্তৃক ভক্ষণ করা হতে পারে এবং বাদবাকি জৈবিক পদার্থগুলো ডিট্রিটিভোরাস দ্বারা আরো বিভাজিত হতে পারে, জীবাংশ যেগুলো ডেট্রিয়াস দ্বারা পুনঃব্যবহার যোগ্য হয়, সেগুলি পরিবেশে ফেরত আসে খাদ্য শৃঙ্খলে আবার ব্যবহারের জন্য।

মৃত্যুকে সংজ্ঞায়িত করার চ্যালেঞ্জগুলির একটি হলো জীবন থেকে একে আলাদা করা। মৃত্যুর বলতে হয়, যে মুহূর্তে জীবনের শেষ হয়ে যায় তা বুঝায়, অথবা যে মুহূর্তে জীবনের সূচনা ঘটে তা বুঝায়।[২০৫] যাইহোক, যখন মৃত্যু ঘটেছে তা নির্ণয় করার জন্য জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে সঠিক ধারণাগত সীমানা অঙ্কন করা প্রয়োজন। এটাই বেশি সমস্যাদায়ক, কারণ কীভাবে জীবনের সংজ্ঞা দেয়া হবে তার উপর সামান্যই ঐক্যমত্য রয়েছে। সহস্রাব্দ ধরে "মৃত্যুর প্রকৃতি" বিশ্বের ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রধান চিন্তাধারার এবং দার্শনিক অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। বেশিরভাগ ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে উঠেছে হয়, পরকাল বা আত্মার পুনর্জন্ম অথবা পরবর্তীকালে দেহের পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস রেখে।

বিলুপ্তি

বিলুপ্তকরণ হল প্রক্রিয়া যার ফলাফল হল, একটা টেক্সোন বা প্রজাতি গ্রুপের সকল প্রাণীর বিনাশ হওয়া, ফলশ্রুতিতে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়।[২০৬] বিলুপ্তির মুহূর্তটি সাধারণত ধরা হয়, যখন ওই প্রজাতির শেষ জীবটি মারা যায়। কারণ একটি প্রজাতি সম্ভাব্য পরিসীমা বেশ বড় হতে পারে, তাই এই মুহূর্তটি নির্ধারণ করা কঠিন, ফলশ্রুতিতে এটা সাধারণত করা হয়ে থাকে অনুক্রমঅনুসারে পৃথকভাবে নির্দিষ্ট সময়ের পর আপাত অনুপস্থিতি থাকলে। প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে থাকে যখন তারা পরিবর্তনশীল আবাসস্থলের সাথে আর খাপ খাওয়াতে পারে না কিংবা শক্তিশালী প্রতিযোগী উপস্থিত থাকলে। পৃথিবীর ইতিহাসের, ৯৯% এরও বেশি প্রজাতির জীব যারা কোন না কোন সময় জীবন্ত ছিল আজ বিলুপ্ত হয়েছে;[১০৪][১০৫][১০৬][২০৭] যাইহোক, গণবিলুপ্তি হয়তোবা নতুন প্রজাতির জীবের বিবর্তন ত্বরানিত করেছে তাদের জন্য বৈচিত্রতার সুযোগ প্রদান করে।[২০৮]

জীবাশ্ম

জীবাশ্ম হল সদূর অতীতের প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জীবের সংরক্ষিত অংশ বা অংশবিশেষ। সামগ্রিকভাবে সকল জীবাশ্মসমূহ, যা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং আবিষ্কৃত হয়নি উভয়ই, এবং শিলা গঠনের ভিতরে ও পাললিক শিলা স্তরগুলির (স্ট্র্যাটা) মধ্যে থাকা জীবাশ্মগুলোকে একত্রে জীবাশ্ম রেকর্ড হিসাবে প্রকাশ করা হয়। একটি সংরক্ষিত নমুনাকে জীবাশ্ম বলা হবে যদি এটি ১০,০০০ বছরের চেয়ে পুরোনো হয়।[২০৯] যদিওবা, জীবাশ্মের বয়সের রেঞ্জ শুরু হয় সবচাইতে নবীনটি হলোসিন যুগের এবং প্রাচীনতমটি আর্কিয়ান যুগ পর্যন্ত, যা প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন বছর পুরোনো।[২১০][২১১]

আরও দেখুন

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

বহিঃসংযোগ


🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী