জাফিরুদ্দিন মিফতাহি

দারুল উলুম দেওবন্দের ত্রয়োদশ প্রধান মুফতি

জাফিরুদ্দিন মিফতাহি (৭ মার্চ ১৯২৬ – ৩১ মার্চ ২০১১) ছিলেন একজন ভারতীয় মুসলিম পণ্ডিত ও আইনবিদ। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের ত্রয়োদশ প্রধান মুফতি এবং ইসলামি ফিকহ একাডেমির দ্বিতীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আজিজুর রহমান উসমানির ফতোয়া (ধর্মীয় রায়) সংকলন করেন, যার নাম ছিল ফতোয়া দারুল উলুম দেওবন্দ (১২ খন্ড)। তার রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে, ইসলাম কা নিজাম-ই-মাসাজিদ, ইসলাম কা নিজাম ইফফাত-ও-আসমত এবং তারিখ-ই-মাসাজিদ ইত্যাদি। তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্নি ধর্মতত্ত্ব বিভাগের বোর্ড অফ স্টাডিজের সদস্যও ছিলেন।

মাওলানা, মুফতি

জাফিরুদ্দিন মিফতাহি
১৩তম প্রধান মুফতি দারুল উলুম দেওবন্দ
অফিসে
১৯৯৩ – ২১ আগস্ট ২০০৮
পূর্বসূরীনিজামুদ্দীন আজমি
উত্তরসূরীহাবিবুর রহমান খায়রাবাদী
২য় সভাপতি, ইসলামি ফিকহ একাডেমি
অফিসে
২০০২ – ৩১ মার্চ ২০১১
পূর্বসূরীমুজাহিদুল ইসলাম কাসেমি
উত্তরসূরীনেমাতুল্লাহ আজমি[১]
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম৭ মার্চ ১৯২৬
মৃত্যু৩১ মার্চ ২০১১(2011-03-31) (বয়স ৮৫)
ধর্মইসলাম
আখ্যাসুন্নি হানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
উল্লেখযোগ্য কাজফতোয়া দারুল উলুম দেওবন্দ
যেখানের শিক্ষার্থীজামিয়া মিফতাহুল উলুম

তিনি ১৯২৬ সালে দ্বারভাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জামিয়া মিফতাহুল উলুমের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন এবং প্রায় পঞ্চাশ বছর দারুল উলুম দেওবন্দের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি প্রায় এক লক্ষ ফতোয়া জারি করেছিলেন। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ তিনি মারা যান।

জীবনী

প্রাথমিক ও শিক্ষাজীবন

জাফিরুদ্দিন মিফতাহি ১৯২৬ সালের ৭ মার্চ (২২ শা'বান ১৩৪৪ হিজরি) দ্বারভাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন।[২] তিনি বাড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং নেপালের তেরাইয়ে মাদরাসা মাহমুদিয়ায় স্কুল শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ছাপড়া ওয়ারিসুল উলুম মাদরাসায় আরবি ও ফার্সি ভাষায় মাধ্যমিক শিক্ষালাভ করেন। তিনি জামিয়া মিফতাহুল উলুম থেকে স্নাতক হন এবং এখানে তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত হাবিবুর রহমান আজমি এবং আব্দুল লতিফ নোমানির সাথে পড়াশোনা করেন।[৩] তার অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন হুসাইন আহমদ মাদানি, সুলাইমান নদভি, মিন্নাতুল্লাহ রহমানি, আবুল হাসান আলী নাদভী এবং মুহাম্মদ তৈয়ব কাসেমি[৪]

কর্মজীবন

১৯৪৪ সালে স্নাতক হওয়ার পর তিনি জামিয়া মিফতাহুল উলুমে এক বছরের জন্য শিক্ষকতা করেন এবং এরপর লখনউয়ের মা'দানুল উলুমে চলে যান। সেখানে তিনি সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ থেকে জানুয়ারি ১৯৪৮ এর মধ্যে তিন বছর শিক্ষকতা করেন।[৩] ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি বেগুসরাই-এর দারুল উলুম মুঈনিয়া ও জামিয়া ইসলামিয়া তালিমুদ্দিনে শিক্ষকতা করেন।[৩] শাওয়াল ১৩৬৪ হিজরিতে তিনি সুলাইমান নদভির পরামর্শে লখনউয়ের নাদওয়াতুল উলামায় পড়তে যান এবং সেখানে কয়েক মাস পড়াশোনা করেন।[৩]

তিনি প্রথমে দারুল উলুম দেওবন্দে ফতোয়া সংকলনের জন্য নিযুক্ত হন।[৫] ১৯৬২ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে তিনি আজিজুর রহমান উসমানির ফতোয়া বারো খণ্ডে সংকলন করেন।[৩] সফর ১৩৮৫ হিজরিতে দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিষদ তাকে মাসিক দারুল উলুম-এর সম্পাদকীয় লেখার জন্য নিয়োগ দেয়, যা তিনি সতেরো বছর ধরে ক্রমাগত লিখেছিলেন।[৬][৭] ১৯৯৩ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের দারুল ইফতা-তে তিনি প্রধান মুফতি হিসেবে নিযুক্ত হন; ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।[৬] তিনি পঞ্চাশ বছর দেওবন্দে কাজ করেছিলেন এবং এক লক্ষ ফতোয়া জারি করেছিলেন।[৮] তিনি ২০০৮ সালের ২২ আগস্ট দেওবন্দ থেকে ২০০০ আইএনআর মাসিক পেনশনে অবসর গ্রহণ করেন যা তিনি আমৃত্যু পেয়েছিলেন।[৬]

তিনি ইসলামি ফিকহ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং মুজাহিদুল ইসলাম কাসেমির পরে এর সভাপতি হন।[৯] তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্নি ধর্মতত্ত্ব বিভাগের বোর্ড অফ স্টাডিজের সদস্য ছিলেন।[১০]

তিনি ৩১ মার্চ ২০১১ তারিখে মারা যান। ১ এপ্রিল ২০১১ তারিখে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদের সাবেক ডিন সৌদ আলম কাসেমি তার জানাজার নামাজ পড়ান।[১১]

রচনাবলী

তার রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে:[৭]

  • ইসলাম কা নিজামে মাসাজিদ
  • ইসলাম কা নিজাম ইফফাত ও আসমত
  • তারীখ-ই-মাসাজিদ
  • উসওয়ায়ে হাসানাহ
  • তাআরুফ মাখতুতাত
  • জামায়াতে ইসলামি কে দ্বীনী রুজহানাত
  • মাশাহির উলামায়ে দেওবন্দ
  • দারুল উলুম: ক্বায়াম আওর ইস কা পাসে মানজার
  • দারুল উলুম: এক আজীম মাকতাব ফিকর
  • নিজামে তারবিয়াত
  • নিজাম তামীরে সীরাত
  • মাসাইলে হজ্ব ও উমরাহ
  • ইসলাম কা নিজামে হায়াত
  • দরসে কুরআন (দশ খন্ড)
  • হাকীমুল ইসলাম আওর উনকা মাজালিস[ক]
  • জুরম ও সাযা কিতাব ও সূন্নাত কে রৌশনী মেঁয়
  • ইসলামি হুকুমত কে নকশ্ ও নিগার
  • ইসলাম কা নিজামে আমান
  • হায়াতে গিলানী
  • হযরত নানুতুবি এক মিসালী শাখসিয়াত
  • তারীখী হাক্বাইক
  • ইসলামি জিন্দিগী কে আসার ও নুকুশ
  • ইসলাম কা নিজামে মাঈশাত

আরও দেখুন

গ্রন্থপঞ্জি

  • Nayab Hasan Qasmi। "Mufti Zafeeruddin Miftāhi"। Darul Uloom Deoband ka Sahāfati Manzarnāma (উর্দু ভাষায়) (2013 সংস্করণ)। Deoband: Idara Tahqeeq-e-Islami। পৃষ্ঠা 214–216। 
  • Qāsmi, Muhammad Saud Alam (সম্পাদক)। Hayāt-e-Zafeer [The Life of Zafeer] (উর্দু ভাষায়) (September 2011 সংস্করণ)। Islamic Fiqh Academy, India: IFA Publications। 
  • Amīni, Nūr Alam Khalīl। "Hadhrat Mawlāna Mufti Muḥammad Zafeeruddin Miftāhi Sāheb"। পাস-ই-মার্গ-ই-জিন্দাহ (উর্দু ভাষায়)। Deoband: Idāra Ilm-o-Adab। পৃষ্ঠা 913–932। 

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী