জাইলোজ
জাইলোজ (প্রাচীন গ্রিক: ξύλον, xylon মানে "কাঠ") হল একটি চিনি যা প্রথমে কাঠ থেকে আলাদা করা হয় এবং এর থেকেই এর নামকরণ করা হয়। জাইলোজকে অ্যালডোপেন্টোজ ধরণের মনোস্যাকারাইড হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এতে পাঁচটি কার্বন পরমাণু রয়েছে এবং এতে একটি অ্যালডিহাইড কার্যকরী মূলক রয়েছে। এটি হেমিসেলুলোজ থেকে উদ্ভূত হয় যা জৈববস্তুর অন্যতম প্রধান উপাদান। বেশিরভাগ শর্করার মতোই এটি অবস্থার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন কাঠামো গ্রহণ করতে পারে। এর মুক্ত অ্যালডিহাইড গ্রুপ থাকার কারণে এটি একটি বিজারক চিনি।
নামসমূহ | |||
---|---|---|---|
ইউপ্যাক নাম ডি-জাইলোজ | |||
অন্যান্য নাম (+)-জাইলোজ কাঠের চিনি | |||
শনাক্তকারী | |||
| |||
ত্রিমাত্রিক মডেল (জেমল) | |||
সিএইচইএমবিএল | |||
কেমস্পাইডার | |||
ইসিএইচএ ইনফোকার্ড | ১০০.০৪৩.০৭২ | ||
ইসি-নম্বর |
| ||
পাবকেম CID | |||
ইউএনআইআই |
| ||
| |||
এসএমআইএলইএস
| |||
বৈশিষ্ট্য[১][২] | |||
C 5H 10O 5 | |||
আণবিক ভর | ১৫০.১৩ g/mol | ||
বর্ণ | মনোক্লিনিক সূঁচ বা প্রিজম আকারের, বর্ণহীন | ||
ঘনত্ব | ১.৫২৫ g/cm৩ (২০ °C) | ||
গলনাঙ্ক | ১৪৪ থেকে ১৪৫ °সে (২৯১ থেকে ২৯৩ °ফা; ৪১৭ থেকে ৪১৮ K) | ||
আপেক্ষিক ঘূর্ণন ([α]D) | +২২.৫° (CHCl 3) | ||
চৌম্বকক্ষেত্রের প্রতি সংবেদনশীলতা (χ) | -৮৪.৮০·১০−৬ cm৩/mol | ||
ঝুঁকি প্রবণতা | |||
এনএফপিএ ৭০৪ | ১ ১ | ||
সম্পর্কিত যৌগ | |||
সম্পর্কিত অ্যালডোপেন্টোজ | অ্যারাবিনোজ রাইবোজ লাইক্সোজ | ||
সম্পর্কিত যৌগ | জাইলুলোজ | ||
সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ছাড়া, পদার্থসমূহের সকল তথ্য-উপাত্তসমূহ তাদের প্রমাণ অবস্থা (২৫ °সে (৭৭ °ফা), ১০০ kPa) অনুসারে দেওয়া হয়েছে। | |||
যাচাই করুন (এটি কি ?) | |||
তথ্যছক তথ্যসূত্র | |||
গঠন
জাইলোজের অচক্রীয় আকারের রাসায়নিক সংকেত HOCH
2(CH(OH))3CHO। সাইক্লিক হেমিয়াসিটাল আইসোমারগুলি দ্রবণে বেশি পাওয়া যায়। এরা দুটি প্রকারের হয়: পাইরানোজ, যা ছয়-সদস্য বিশিষ্ট C
5O বিশিষ্ট রিং এবং ফিউরানোজ, যা পাঁচ-সদস্যযুক্ত C
4O বিশিষ্ট রিং (একটি লম্বভাবে অবস্থিত CH
2OH গ্রুপ সহ)। অ্যানোমেরিক হাইড্রক্সি গ্রুপের আপেক্ষিক অভিযোজনের উপর নির্ভর করে এই রিংগুলির আরো আইসোমেরিজম হতে পারে।
ডেক্সট্রোরোটারি ফর্ম ডি -জাইলোজ সাধারণত জীবিত জিনিসের মধ্যে দেখা যায়। একটি লেভোরোটারি ফর্ম এল -জাইলোজ সংশ্লেষণ করা যায়।
প্রাপ্তি
জাইলোজ হলো হেমিসেলুলোজ জাইল্যানের প্রধান উপাদান যা কিছু গাছের প্রায় ৩০% (উদাহরণস্বরূপ বার্চ) গঠন করে। যা অন্যদের তুলনায় অনেক কম (স্প্রুস এবং পাইনে প্রায় ৯% জাইল্যান রয়েছে)। জাইলোজ বেশিরভাগ ভোজ্য উদ্ভিদের ভ্রূণে পাওয়া যায়। এটি ১৮৮১ সালে ফিনিশ বিজ্ঞানী কোচ প্রথম কাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন।[৩] ১৯৩০ সালে এটি সুক্রোজের কাছাকাছি দাম সহ প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হয়ে ওঠে।[৪]
জাইলোজ প্রোটিওগ্লাইকানে সেরিন বা থ্রোনিনে যোগ করা প্রথম স্যাকারাইড। বেশিরভাগ অ্যানায়নিক পলিস্যাকারাইড যেমন হেপারান সালফেট এবং কন্ড্রয়েটিন সালফেটের বায়োসিন্থেটিক পাথওয়েতে প্রাপ্ত এটি প্রথম স্যাকারাইডও জাইলোজ।[৫]
Chrysolina coerulans সহ ক্রাইসোলিনিনা পরিবারের কিছু প্রজাতিতে যেমন- গুবরে পোকায় জাইলোজ পাওয়া যায়। তাদের প্রতিরক্ষামূলক গ্রন্থিতে কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড (জাইলোজ সহ) রয়েছে।[৬]
প্রয়োগ
রাসায়নিক
হেমিসেলুলোজের অ্যাসিড-অনুঘটকের প্রভাবে বিয়োজনে ফুরফুরাল উৎপন্ন হয়।[৭][৮] ফুরফুরাল সিন্থেটিক পলিমার এবং টেট্রাহাইড্রোফুরানের পূর্ববর্তী যৌগ।
মানুষের ব্যবহৃত
মানুষ জাইলোজ বিপাক করতে পারে। এটি মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রধান পুষ্টি নয় এবং এটি কিডনি দ্বারা বহুলাংশে নির্গত হয়। মানুষ শুধুমাত্র তাদের খাদ্য থেকে জাইলোজ পেতে পারে। এককোষী অণুজীবের মধ্যে একটি অক্সিডোরেডাক্টেজ পথ থাকে। মানুষের জাইলোসিল ট্রান্সফারেস প্রোটিন (এক্সওয়াইএলটি১, এক্সওয়াইএলটি২) নামক এনজাইম রয়েছে যা প্রোটিওগ্লাইক্যানের মূল প্রোটিনে ইউডিপি থেকে সেরিনে জাইলোজ স্থানান্তর করে।
জাইলোজের প্রতি গ্রামে ২.৪ ক্যালোরি থাকে। যা গ্লুকোজ বা সুক্রোজের চেয়ে কম। সুক্রোজের প্রতি গ্রামে প্রায় ৪ ক্যালোরি থাকে।
পশুর ওষুধ
ম্যালাবশোরপশন পরীক্ষা করার জন্য জাইলোজ ব্যবহার করা হয়। এজন্য পশুর ওষুধে পানির সাথে জাইলোজ মিশিয়ে উপবাসের পরে খেতে দেয়া হয়। পরবর্তী কয়েক ঘন্টার মধ্যে রক্ত এবং/অথবা প্রস্রাবে জাইলোজ সনাক্ত করা গেলে এটি অন্ত্র দ্বারা শোষিত হয়েছে বলা যায়।[৯]
প্রাণীর দেহের ওজনের ক্রম অনুসারে প্রায় ১০০ গ্রাম/কেজি উচ্চ জাইলোজ গ্রহণ করলে শূকর তুলনামূলকভাবে তা ভালভাবে সহ্য করতে পারে। গ্রহণ করা জাইলোজের একটি অংশ হজম না করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় যা মানব গবেষণার ফলাফলের অনুরূপ।[১০]
হাইড্রোজেন উৎপাদন
২০১৪ সালে নিম্ন-তাপমাত্রায় ৫০ °সে (১২২ °ফা), বায়ুমণ্ডলীয় চাপে এনজাইমের সহায়তায় জাইলোজকে হাইড্রোজেনে রূপান্তর করা হয়। এ প্রক্রিয়াতে তাত্ত্বিকভাবে প্রায় ১০০% উৎপাদ পাওয়া সম্ভব। প্রক্রিয়াটি ১৩টি এনজাইম ব্যবহার করে সম্পন্ন হয় যার মধ্যে একটি অভিনব পলিফসফেট জাইলুলোকাইনেস (এক্সকে) রয়েছে।[১১][১২]
উদ্ভূত যৌগ
অনুঘটকের হাইড্রোজেনেশন দ্বারা জাইলোজ বিজারিত হয়ে চিনির বিকল্প জাইলিটল তৈরি করে।
আরও দেখুন
- স্যাকারোফ্যাগাস অবক্ষয়
- জাইলোনিক অ্যাসিড
- জাইলোজ বিপাক