জনি মার্টিন
জন ওয়েসলি মার্টিন (ইংরেজি: Johnny Martin; জন্ম: ২৮ জুলাই, ১৯৩১ - মৃত্যু: ১৫ জুলাই, ১৯৯২) নিউ সাউথ ওয়েলসের উইংহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।[১] অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | জন ওয়েসলি মার্টিন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | উইংহাম, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া | ২৮ জুলাই ১৯৩১|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১৫ জুলাই ১৯৯২ বারেল ক্রিক, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া | (বয়স ৬০)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | লিটল ফেভ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | বামহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | লেফট-আর্ম আনঅর্থোডক্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বোলার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২১৬) | ৩০ ডিসেম্বর ১৯৬০ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২ জুন ২০১৯ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস ও সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ লেফট-আর্ম আনঅর্থোডক্স বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে বামহাতে ব্যাটিং করতেন ‘লিটল ফেভ’ ডাকনামে পরিচিত জনি মার্টিন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
১৫ বছর বয়সে ডিসেম্বর, ১৯৪৬ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান ও সিড বার্নসের ২৩৪ রানের জুটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল তার। পরবর্তী কয়েক বছর পরই স্থানীয় পর্যায়ে তার সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে সিডনি গ্রেড ক্লাব পিটারশ্যামে যোগ দেন। সারারাত রেলগাড়ীতে চড়ে প্রত্যেক শনিবারের খেলায় অংশ নিতেন ও সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরতেন। এ পর্যায়ে ১৬৬টি ছক্কার মার মেরেছিলেন তিনি।
১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষে খেলার জন্যে তাকে মনোনীত করা হয়। ফলে, রাগবি লীগের খেলোয়াড়ী জীবন গড়ার বিষয়টি দূরে সরে যায়। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম পর্যন্ত জনি মার্টিনের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন চলমান ছিল। তন্মধ্যে, ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে ৪৫ উইকেট নিয়ে শেফিল্ড শিল্ডের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন।[২] ১৯৬০ সালে তরুণ অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্যরূপে টেস্টবিহীন সফরে নিউজিল্যান্ড যান। তিন বছর বাদে দলে ফিরে আসেন। আবারও, ইয়ান ক্রেগ তার অধিনায়ক হন। ১৯৬১ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের কোলনে এক মৌসুম খেলেন। ১২ গড়ে ৭০ উইকেট ও ৩৫ গড়ে ৭০৬ রান তুলেন। ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে সিডনিতে অনুষ্ঠিত খেলায় ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৮/৯৭ পান। পরের মৌসুমে পার্থে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলোয়াড়ী জীবনের একমাত্র শতরানের সন্ধান পান।
নিউ সাউথ ওয়েলস দলটিতে ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম পর্যন্ত একাধারে খেলেন। তবে, ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে এক মৌসুম খেলেছিলেন। এ পর্যায়ে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে ৭/১১০ পান। তাসত্ত্বেও টেস্ট খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয় তার। একই ধরনের বোলিংয়ের অধিকারী ভিক্টোরিয়ার লিন্ডসে ক্লাইনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে আটটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল জনি মার্টিনের। ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৬০ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৭ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
১৯৬০-৬১ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল অস্ট্রেলিয়া সফরে আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন টেস্টে অংশ নেন। এ সিরিজের মেলবোর্নে তার টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। মেলবোর্নে অংশগ্রহণ করা টেস্টটি ৫০০তম টেস্ট খেলা ছিল। অংশগ্রহণকৃত আট টেস্টের মধ্যে এ টেস্টই সেরা ছিল। ব্যাটিং ও বোলিং বিভাগে বেশ ভালো খেলেন। দশ নম্বরে নেমে ওয়েস হল, চেস্টার ওয়াটসন, ফ্রাঙ্ক ওরেল ও সন রামাদিনের বল মোকাবেলায় সচেষ্ট হন। ৫৫ রান করেন তিনি। তন্মধ্যে, ওরেলের বলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। তবে, বড় ধরনের রান তুলতে গিয়ে ভ্যালেন্টাইনের শিকারে পরিণত হন জনি মার্টিন। ক্যান ম্যাকের সাথে ৭২ মিনিটে ৯৭ রান তুলেন। ফলে, অস্ট্রেলিয়া দল ৩৪৮ রান তুলতে সমর্থ হয়েছিল। পরবর্তীতে ফলো-অনে ফেলে সাত উইকেটে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে জনি মার্টিন ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। দলটি ৯৭/২ তুলে তখনও ৭০ রানে পিছিয়ে ছিলেন। এ পর্যায়ে মাত্র চার বলের ব্যবধানে তিন উইকেট তুলে নেন তিনি। রোহন কানহাই পুল করার চেষ্টাকালে কটে পরিণত হন। এক ওভার পর গ্যারি সোবার্সকে স্লিপ অঞ্চলে সিম্পসনের ক্যাচে পরিণত করান। হ্যাট্রিক বল শেষ হলে ফ্রাঙ্ক ওরেলকে সিম্পসনের কটে ফেলে পেয়ার লাভ করান। এগুলোই তার খেলার উইকেট ছিল।
সিডনিতে পরের টেস্টে কোন উইকেট পাননি। অ্যাডিলেড টেস্ট থেকে বাদ পড়েন। তবে, ব্রিসবেনের ঐতিহাসিক টাই টেস্টে তিনি অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে ফিল্ডিং করেছিলেন। মেলবোর্নে চূড়ান্ত টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৯০,৮০০ দর্শকের সমাগম ছিল। কেন ম্যাকের সাথে তিনিও খুব কমই ভূমিকা রাখেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি
মেলবোর্নে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার জন্য আমন্ত্রিত হন। আবারও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, ১৯৬৪ সালে ইংল্যান্ড গমনে তাকে রাখা হয়। ঐ সফরে তিনি কোন টেস্টে অংশ নেননি ও কাঁধের আঘাতে জর্জরিত ছিলেন। ৩২.৪০ গড়ে ৩৫ উইকেট পান। ব্যাট হাতে ১৯ গড়ে রান তুলেন। টানটনে সর্বোচ্চ ৭০ রানের ইনিংস খেলেন। দেশে ফেরার পথে ভারত ও পাকিস্তানে যথাক্রম দুই ও একটি টেস্টে অংশ নেন। আট উইকেট পান ও নিচেরসারিতে কার্যকরী ব্যাটিং করেন। তবে, এরপর আর তিনি মাত্র একটি টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পান।
পরের টেস্টে অংশ নেয়ার জন্য তাকে তিন বছর অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে ঠিকই তিনি তার দক্ষতা প্রদর্শন করে চলছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। পোর্ট এলিজাবেথে নিজস্ব সর্বশেষ টেস্ট খেলেন। ঐ টেস্টে তিনি শূন্য ও ২০ রান তুলেন এবং ২২ ওভার বোলিং করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। এ শূন্য রান তার খেলোয়াড়ী জীবনের তৃতীয় ঘটনা ছিল। ঐ খেলায় গ্রেইম পোলক তিন ঘণ্টা ব্যাটিং করে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন।
এ সফরে টেস্ট শুরুর পূর্বে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্টের বিপক্ষে এগারো উইকেট ও পিটারমারিৎজবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে ছয় উইকেট পান।
আদর্শ পর্যটক হিসেবে ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্যাভিলিয়ার্স দলের সদস্যরূপে গমন করেন। ১৯৬৮ সালে অবসর নেন। ৩১.১৭ গড়ে ৪৪৫ উইকেট পান ও সতেরোবার ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট লাভ করেছিলেন। তবে, ১৭টি টেস্ট উইকেট লাভের জন্যে তাকে প্রায় গড়ে ৫০ রান খরচ করতে হয়েছিল। তবে, ছয় বলে গড়া ওভারে ২.৭ রান দিয়েছিলেন। ২৩.৭৭ গড়ে ৩,৯৭০ প্রথম-শ্রেণীর রান সংগ্রহ করেছিলেন জনি মার্টিন।
খেলার ধরন
শেষদিকের আনঅর্থোডক্স লো লেফট-আর্ম বোলারদের একজন ছিলেন জনি মার্টিন। নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে আগত যে-কোন ক্রিকেটারের তুলনায় বিনোদনধর্মী আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের অধিকারী তিনি। প্রত্যেকের কাছেই জনপ্রিয় থাকায় ‘লিটল ফেভ’ ডাকনামে পরিচিতি পান। খেলায় তিনি খুব কমই ভূমিকা রেখেছিলেন। মূলতঃ দলের প্রয়োজনে তিনি অংশ নিতেন।
ব্যক্তিগত জীবন
১৮৯০-এর দশকের সারে ও ইংরেজ ফাস্ট বোলার টম রিচার্ডসন মাতৃসম্পর্কীয় আত্মীয় হন। বারেল ক্রিকসে ডাকঘরের ব্যবস্থাপকের দশ সন্তানের একজন ছিলেন। ১৯৮৪ সালে বাইপাস সার্জারির ২০ বছর পূর্বে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৫ জুলাই, ১৯৯২ তারিখে ৬০ বছর বয়সে নিউ সাউথ ওয়েলসের বারেল ক্রিক এলাকায় জনি মার্টিনের দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে জনি মার্টিন (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে জনি মার্টিন (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)