চাপলি কাবাব
চাপলি কাবাব (পশতু: چپلي کباب)[α][β] একটি মোগলাই-প্রভাবিত পশতুনের কিমা কাবাব, যা সাধারণত গরু, খাসি বা মুরগির মাংসের কিমা এবং বিভিন্ন মশলা দিয়ে একটি প্যাটির আকারে তৈরি করা হয়। এটি পেশোয়ার থেকে উদ্ভূত, যা বর্তমান উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তান এবং এটি পেশোয়ারী কাবাব নামেও পরিচিত।[১][২]
সালাদের সাথে পরিবেশিত 'চাপলি কাবাব' | |
অন্যান্য নাম | পেশোয়ারি কাবাব |
---|---|
ধরন | কাবাব |
প্রকার | এপেটাইজার, প্রধান খাবার অথবা পার্শ্ব খাবার |
উৎপত্তিস্থল | দক্ষিণ এশিয়া[১] |
সংশ্লিষ্ট জাতীয় রন্ধনশৈলী | পাকিস্তান,[১] আফগানী,[১] ভারতীয়[১] |
প্রধান উপকরণ | গরু, খাসি, অথবা মুরগির মাংসের কিমা |
সাধারণত ব্যবহৃত উপকরণ | বিভিন্ন উদ্ভীজ্জ এবং মশলা |
অনুরূপ খাদ্য | শিক কাবাব |
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/3/33/Chapli_Kebab.jpg/220px-Chapli_Kebab.jpg)
চাপলি কাবাবটি খাইবার পাখতুনখোয়া এবং পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলের পাশাপাশি পূর্ব আফগানিস্তান এবং ভারতে একটি জনপ্রিয় বারবিকিউ এবং স্ট্রিট ফুড।[১] ভারতে এটি নিয়মিত একটি পথখাবার হিসাবে খাওয়া হয়, বিশেষ করে ভারতের ভোপাল, লখনউ, দিল্লি এবং হায়দ্রাবাদে ; এটি ভারতীয় মুসলমানদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।[৩] খাবারটি নান রুটি, ভাত, বা বনরুটির সাথে অথবা বান কাবাবের মতো স্যান্ডউইচ হিসাবে গরম পরিবেশন করা যায় এবং খাওয়া যায়।
উৎপত্তি
এই অঞ্চলে মুঘল রন্ধনসম্পর্কিত প্রভাবগুলি বেশ কয়েকটি কাবাবকে জনপ্রিয় করে তুলেছে, তন্মধ্যে চাপলি কাবাবও একটি।[১] চাপলি নামটি পশতু শব্দ চাপরিখ থেকে উদ্ভূত বলা হয়, যার অর্থ "সমতল" - কাবাবের হালকা, গোলাকার এবং সমতল আকারকে ইঙ্গিত করে এই নাম দেওয়া হয়েছে। আরেকটি তত্ত্ব হলো, নামটি চপ্পল থেকে এসেছে, যা ভারতীয় উপমহাদেশে স্যান্ডেলের একটি স্থানীয় শব্দ - এটি কাবাবের গড় আকার এবং গঠনকে বোঝায়, যা স্যান্ডেলের তলির অনুরূপ।[৪]
পেশোয়ার শহরে, যেখানে খাবারটির রন্ধনপ্রণালীর উদ্ভব হয়েছিল সেখানে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি কাবাব ঘর রয়েছে যারা চাপলি কাবাব পরিবেশন করে থাকে। এই খাবারটি দ্রুত অন্যান্য শহরেও প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে দক্ষিণ এশীয় রেস্তোঁরাগুলির খাদ্যতালিকায় 'চাপলি কাবাব' দেখা যায়।[৫]
উপকরণ এবং প্রস্তুতি
চাপলি কাবাব কাঁচা, মেরিনেট করা কিমা দিয়ে প্রস্তুত করা হয় এবং মাংসগুলি গরু, খাসি/ভেড়া অথবা মুরগির হতে পারে। প্রধান উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে ময়দা, বিভিন্ন গুল্ম এবং মশলা যেমন মরিচের গুঁড়ো, ধনিয়া পাতা, স্বল্প পরিমাণে পেঁয়াজ, টমেটো, ডিম, আদা, ধনিয়া বা জিরা, কাঁচা মরিচ, কর্ন স্টার্চ, লবণ এবং গোলমরিচ, বেকিং পাউডার, সেইসাথে লেবুর রস বা ডালিমের বীজের এক প্রকার মশলা থাকতে পারে।[১][২]
খাবার তেলে চুলায় মাঝারি আঁচে কাবাবগুলিকে অল্প অথবা কড়া ভাজা করা যেতে পারে। কিছু শেফ (রাঁধুনি) খাবারটিতে জৈবিক স্বাদ দিতে কাঠ-চালিত চুলায় ভেড়ার চর্বি দিয়ে কাবাব ভেজে থাকেন। তবে স্বাস্থ্য ঝুকির কারণে গ্যাস্ট্রোনোমিস্টরা এটিকে এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।[৬]
প্রস্তুতপ্রণালী
উপকরণ :-
- মাংসের কিমা - আধা কেজি
- ডিম ২ টি (ফেটানো)
- বড় পেঁয়াজ কুঁচি - ২ টি
- ধনিয়া পাতা কুঁচি - আধাকাপ
- রসুনবাটা - ১ চা চামচ
- আদাবাটা - ১টেবিল
- টমেটো কুঁচি - ২ টি
- কাঁচামরিচ কুঁচি – ২/৩ টি
- লবণ - স্বাদ মতো
- মরিচ গুঁড়ো - ১ চা চামচ
- গরম মসলা - আধা চা চামচ
- জিরা গুঁড়ো - ১ চা চামচ
- বেসন – আধা কাপ একটু টেলে নেয়া
- গোটা জিরা – ১ টেবিল চামচ
- গোটা ধনিয়া – ১ টেবিল চামচ
- চিলি ফ্লেক্স – ১ টেবিল চামচ
- তেল – ডুবো তেলে ভাজার জন্য[৭]
প্রণালী :-
- গোটা ধনিয়া, গোটা জিরা গুঁড়ো করে নিতে হবে। এমনভাবে করতে হবে যেন আধ ভাঙা থাকে।
- এবার ডিম বাদে সব উপকরণ ভালোভাবে মাংসের কিমার সাথে মাখিয়ে ফেলতে হবে।
- এবার হাতের তালুতে নিয়ে গোল চ্যাপ্টা করে করে নিয়ে সময় নিয়ে ডুবো তেলে ভাজতে হবে।[৭]
পরিবেশনা
চাপলি কাবাব তৈরির পর পার্সলে পাতা, পেঁয়াজের টুকরো এবং টমেটোর পাশাপাশি অন্যান্য উপকরণ যেমন চাটনি সস, সালাদ, দই, আচার বা বাদাম দিয়ে খাবারটি সুসজ্জিতভাবে পরিবেশন করা যেতে পারে।[৮][৯][১০] চাপলি কাবাব মশলাযুক্ত, আর্দ্র এবং ঝাঁজালোভাবে পরিবেশন করা হয়।[১১] এটি পশতুন খাবারের একটি বিশেষত্ব হিসাবে বিবেচিত এবং প্রায়শই অতিথিদের জন্য এটি পরিবেশন করা হয়।[১২] কাবাবটি সাধারণত নান, ভাত জাতীয় খাবার যেমন কাবুলি পোলাও বা ফাস্টফুডে মোড়ানো খাবারের সাথে খাওয়া হয়।[৫] শীতকালে, কাওয়াহ'র মতো গ্রিন টি ঐতিহ্যগতভাবে কাবাবটির সাথে পরিবেশন করা যেতে পারে, তবে গ্রীষ্মে ঠান্ডা পানীয়কেই বেশি পছন্দ করা হয়।