ঘর্ম নিঃসরণ

(ঘাম থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ঘর্ম নিঃসরণ বলতে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের চর্মের ঘর্মগ্রন্থি থেকে ঘর্ম বা ঘাম নামক তরল পদার্থ উৎপাদন ও নিঃসরণের ঘটনাটিকে বোঝায়।[১]

ঘর্ম নিঃসরণ
প্রতিশব্দঘর্মণ, স্বেদন
চর্মের উপরে ঘামের ফোঁটা বা স্বেদবিন্দু
বিশেষত্বচর্মবিজ্ঞান
কারণজ্বর, তাপ, অতিজ্বর

মানবদেহে দুই ধরনের ঘর্মগ্রন্থি দেখতে পাওয়া যায়: : বহিঃস্রাবী ঘর্মগ্রন্থি (Eccrine gland) এবং অপস্রাবী ঘর্মগ্রন্থি (Apocrine sweat gland)।[২] বহিঃস্রাবী বা বহিঃক্ষরা ঘর্মগ্রন্থিগুলি দেহের অধিকাংশ স্থানে ছড়িয়ে আছে এবং এগুলি প্রায়শই মাত্রাতিরিক্ত দেহ তাপমাত্রায় কারণে উদ্দীপ্ত হয়ে পানি-সদৃশ, লবণাক্ত ঘাম নিঃসরণ বা ক্ষরণ করার জন্য দায়ী। অন্যদিকে অপস্রাবী ঘর্মগ্রন্থিগুলি বগলের তলায় এবং দেহের অন্যান্য কিছু অংশে অবস্থিত এবং এগুলি থেকে এক ধরনের গন্ধহীন, তৈলাক্ত, অস্বচ্ছ রস নিঃসৃত হয়, যেগুলি ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিযোজিত হয়ে বৈশিষ্ট্যসূচক গন্ধ প্রকাশ করে।

মানুষের জন্য ঘর্ম নিঃসরণ তাপ-নিয়ন্ত্রণের একটি প্রধান উপায়। বহিঃস্রাবী ঘর্মগ্রন্থিগুলির পানি-সমৃদ্ধ নিঃসরণের মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যটি সম্পন্ন করা হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ থেকে ৪ লিটার পর্যন্ত ঘাম ছাড়তে পারেন এবং দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৪ লিটার (মিনিটে ১০-১৫ গ্রাম) ঘাম নিঃসরণ করতে পারেন। তবে বয়োসন্ধির আগে শিশুদের মধ্য ঘাম নিঃসরণের হার কম।[৩][৪][৫] চর্মের পৃষ্ঠতল থেকে ঘামের বাষ্পীভবনের ফলে একটি শীতলীকরণ ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাই গরম আবহাওয়াতে কিংবা কোনও ব্যক্তির পেশী কাজ করার ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘাম উৎপন্ন হয়। যেসমস্ত প্রাণীর দেহে ঘর্মগ্রন্থি কম, যেমন কুকুর, সেগুলি মুখ হা করে জিহ্বা বের করে রাখে যাতে মুখগহ্বর ও স্বরযন্ত্রের আর্দ্র আবরণগুলি থেকে পানি বাষ্পীভূত হয় এবং ফলে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।

যদিও ঘর্ম নিঃসরণ বহু বিভিন্ন স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীতে পরিলক্ষিত হয়,[৬][৭] মানুষ ও ঘোড়ার ব্যতিক্রম বাদে খুবই কম সংখ্যক প্রাণীই শীতল হবার জন্য বিপুল পরিমাণে ঘর্ম নিঃসরণ করে থাকে।[৮][৯]

ইংরেজিতে ঘর্ম নিঃসরণকে চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক পরিভাষায় "ডায়াফোরেসিস" (Diaphoresis) বা "হাইড্রোসিস" (Hidrosis) বলা হয়ে থাকে।[১০][১১] তবে কখনও কখনও এই পরিভাষাগুলি দিয়ে অতিঘর্মণও বোঝানো হতে পারে।

প্রকারভেদ

  • স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ঘর্ম নিঃসরণকে অতিঘর্মণ (hyperhidrosis হাইপারহাইড্রোসিস) বলা হয়। যদি কোনও নিম্নস্থিত কারণের জন্য এটি ঘটে, তাহলে তাকে গৌণ অতিঘর্মণ (Secondary hyperhidrosis) বলে। সারা দেহ জুড়ে অতিরিক্ত ঘাম বের হলে তাকে সাধারণীকৃত অতিঘর্মণ (Generalized hyperhidrosis জেনারেলাইজড হাইপারহাইড্রোসিস) বলে। আর যদি দেহের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে যেমন বগল, হাতের ও পায়ের তালু, মুখমণ্ডল বা কুঁচকিতে অতিরিক্ত ঘাম বের হলে তাকে স্থানিক অতিঘর্মণ (Focal hyperhidrosis) বলে।
  • কোনও কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ঘাম নিঃসরণ হলে তাকে স্বল্প-ঘর্মণ (Hypohidrosis হাইপোহাইড্রোসিস) বলা হয়।
  • আর্দ্র পরিস্থিতিতে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে ঘাম নিঃসরণ কমে গেলে তাকে ঘর্ম হ্রাস (Hidromeiosis হাইড্রোমিওসিস) বলে।[১২]
  • কোনও পদার্থ বা ঔষধ যদি ঘাম নিঃসরণের কারণ হয়, তবে তাকে ঘর্মোৎপাদক (sudorific বা sudatory) বলা হয়।

আরও দেখুন

  • অপস্রাবী
  • দেহের গন্ধ
  • গন্ধ দূরকারক
  • পুঁজ-উৎপাদী ঘর্মগ্রন্থি প্রদাহ (Hidradenitis suppurativa)
  • অতিজ্বর
  • ঘর্মণস্বল্পতা
  • রক্ত-সোডিয়াম স্বল্পতা
  • ফেরোমোন
  • ঘর্মভিত্তিক রোগনির্ণয়
  • প্রস্বেদন (উদ্ভিদ)
  • রাত্রীকালীন ঘাম
  • অতিঘর্মণ

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

শ্রেণীবিন্যাস
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান
  • মেডলাইনপ্লাস: 003218
🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী