ভেড়া বা মেষ কে গৃহপালিত করার ইতিহাস ১১০০০ থেকে ৯০০০ খ্রিস্টপূর্ব আগের যখন থেকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় বন্য মোফলন পোষ মানানো শুরু হয়।ভেড়া বা মেষ মানুষের দ্বারা প্রথম গৃহপালিত প্রাণী,যার প্রমাণ সে সময়ের ইরানি মূর্তি দেখে পাওয়া যায়।প্রথম দিকে ভেড়া মাংস, দুধ, এবং চামড়ার জন্য পালন করা হত।৬০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে ইরানে পশমওয়ালা ভেড়া পালন শুরু হয় এবং পারস্য সংস্কৃতির লোকেরা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ভেড়ার পশমের উপর নির্ভরশীল হতে থাকেন। ঐ সময়ে তারা ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে আফ্রিকা এবং ইউরোপ থেকে ভেড়া আমদানি শুরু করেন।
গৃহপালিত ভেড়া এবং তাদের বন্য পূর্বপুরুষ মধ্যে বংশ পরম্পরার কোন সঠিক হদিস নেই।[১] তবে সবচেয়ে প্রচলিত অনুমান এই যে অভিস এরাইস মেষ এশিয়াটিক (O. orientalis) প্রজাতির মোফলন থেকে এসেছে।তবে এটা মনোনীত যে ইউরোপিয়ান মোফলন হচ্ছে গৃহপালিত ভেড়াদের মধ্যে প্রাচীনতম শাবক যা তাদের প্রাচীনতম প্রজাতি থেকে কম বন্য পরিবেশে বেড়ে উঠেছে,যা প্রাচীন সাহিত্যে ও ফুটে উঠেছে।[২]:৫স্কটল্যান্ড এর দুর্গদুগ্ধ মরিট এর মতো খুব কম প্রজাতি বন্য ইউরোপিয়ান মোফলনের সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে প্রজনন করা হয়েছিল। [৩] একসময় মনে করা হত উরিয়াল(O. vignei) ইরানের আশপাশের মোফলনের সাথে সংরায়নের মাধ্যমে গৃহপালিত ভেড়ার একটি আদিম পূর্বপুরুষ। [৪]:৬ যাইহোক, উরিয়াল আরগালি ( O. ammon),এবং তুষার মেষ(O. nivicola) এর অন্যান্য অভিস প্রজাতির তুলনায় ক্রোমোজোমের সংখ্যা সতন্ত্র, যা তাদের অকল্পনীয় সম্পর্ক প্রদর্শন করে,এবং সনাক্তকারী গবেষণা প্রমাণ করে উরিয়াল প্রজাতির পূর্বপুরুষ এর কোনো অস্তিত্ব নেই।[১] অনেক গবেষণা ইউরোপীয় ও এশীয় প্রজাতির তুলনা আরও জোরদার করেছে এবং দুই প্রজাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেনেটিক পার্থক্য প্রদর্শন করেছে।এসবের মধ্যে দুটি ব্যাখ্যা কে সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।প্রথম ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে একটি অজানা প্রজাতির বা উপপ্রজাতির বন্য ভেড়া থেকে গৃহপালিত ভেড়া উদ্ভূত হয়েছে। [৫] দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয় এই প্রজাতি বন্য মোফলনের বিভিন্ন প্রজাতির সংকর প্রকরণ যা অন্যান্য প্রাণীদের মতো পরিচিতি লাভ করে। [৬]
প্রাচীন ভেড়া এবং আধুনিক প্রজাতির মধ্যে উল সংগ্রহ করার কৌশলকে প্রধান পার্থক্য হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আদিম ভেড়াদের রোইং নামক প্রক্রিয়ায় হাত দ্বারা তাদের দেহ থেকে উল সংগ্রহ করা হত যার ফলে অনেক উল থেকে যেত। রোইং মোটা তন্তু পিছনে ফেলে রাখতে সাহায্য করে যাকে কেম্প ও বলা চলে এবং যা এখনও নরম মেষলোমের চেয়ে দীর্ঘতর।এছাড়াও মেষলোম মাঠ থেকে সংগ্রহ করা হতে পারে যা স্বাভাবিকভাবেই দেহ থেকে কষে পড়ে। রোইং এর এই বৈশিষ্ট্যের জন্য "সয়ায়" এবং অনেক "শিটল্যান্ড" প্রজাতি আজও টিকে আছে। প্রকৃতপক্ষে,সয়ায় প্রজাতির অন্যান্য উত্তর ইউরোপীয় প্রজাতির ভেড়াদের মতো ছোট লেজ, স্বাভাবিক রোইং মেষলোম, সঙ্কুচিত আকার, এবং উভয় লিঙ্গের ভেড়াদের শিং রয়েছে, যেগুলো নিবিড়ভাবে প্রাচীন ভেড়া এর সাথে সম্পর্কিত। মূলত, বয়ন এবং উল কাটন ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিল্পের তুলনায় বরং একটি হস্তশিল্প যার একসময় বাড়ীতে,বাড়ীতে প্রচলন ছিল। বাবিলন, সুমেরীয়, এবং পারস্যরা সবাই ভেড়ার উপর নির্ভরশীল ছিল ; যদিও পোশাক শিল্পে লিলেন ছিল প্রথম বুনন কাপড়, যখন উল ছিল একটি উচ্চমূল্য পণ্য। মেষলোমের জন্য মেষপালের উন্নয়ন বৃদ্ধি ছিল আদিম শিল্পের প্রথম ধাপ,এবং ক্রমেই এটি পণ্যবিনিময় অর্থনীতির আদান-প্রদানের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।অসংখ্য বাইবেলের পরিসংখ্যান পশুপাল রাখা সম্পর্কে বলে থাকে, এবং ইস্রায়েলের রাজারা তাদের প্রজাদের মালিকানাধীন ভেড়ার সংখ্যা অনুযায়ী কর নির্ধারণ করত। [৪]:৭
মেষ বা ভেড়া মানবজাতির দ্বারা প্রথম পোষ্য প্রাণী ( যদিও কুকুর পোষ মানানো হয় ২০,০০০ বছর আগে হতে।) ; পোষ পালনের সময় মেসোপটেমিয়ায় নয় থেকে এগারো হাজার বছর আগে বলে অনুমান করা হয়। [৪]:৪[৭]:১১–১৪[৮]:২[৯] তাদের বন্য আত্মীয়দের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল,যেমন-তুলনামূলক আগ্রাসনের অভাব, সামলানো আকার,তাড়াতাড়ি যৌন পরিপক্কতা, একটি সামাজিক প্রকৃতি, এবং উচ্চ প্রজনন হার,যা পোষ মানানোর জন্য তাদের বিশেষভাবে উপযুক্ত করে তুলেছিল। [১০]:৭৮–৮০অভিস অ্যারাইজ প্রজাতির মেষ আজ একটি সম্পূর্ণরূপে পোষা প্রাণী তে রূপান্তরিত যা তার স্বাস্থ্য এবং বেঁচে থাকার জন্য মানুষের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বন্য ভেড়ার অস্তিত্ব আছে,(সাধারণত দ্বীপপুঞ্জ)যেখানে বড় শিকারী বর্জিত এলাকা আছে এবং যা বন্য ঘোড়া, ছাগল, শূকর, বা কুকুর এর আকারে নয়,যদিও বহু বন্য জনগোষ্ঠী দীর্ঘ সময় ধরে বিচ্ছিন্ন পরিবেশে স্বতন্ত্র প্রজাতির মতো বাস করছে। [১০]:৭৫[১১]
গৌণ পণ্য হিসেবে,এবং নতুন প্রজাতির উন্নয়নের লক্ষ্যে এশিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বা ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে ভেড়া পালন শুরু হয়েছিল। [১২] প্রাথমিকভাবে, ভেড়া শুধুমাত্র মাংস, দুধ ও চামড়ার জন্য রাখা হত।ইরানে পাওয়া মূর্তিসংক্রান্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন বলে লোমশভেড়া নির্বাচন খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দে শুরু হতে পারে,[৪]:৫[৭]:১১ এবং প্রথম উলের বোনা জামাকাপড় দুই থেকে তিন হাজার বছর পরে প্রচলন হয়েছে। [১৩]:৮ এর আগে,ভেড়া মাংসের জন্য জবাই করা হত,তখনকার সময় চামড়া পাকিয়ে/কষিয়ে পরিধানের এক ধরনের নিমা তৈরি করা হত। গবেষকরা মনে করেন এধরনের পোশাকের উন্নয়ন উর্বর অঞ্চলের চেয়ে দূরবর্তী প্রচণ্ড শীতলঅঞ্চলে মানুষের বসবাসে উৎসাহিত করে যেখানে গড় তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২১°C)।[১৪] ক্যাটালহইউক(Çatalhöyük) এ প্রাপ্ত ভেড়ার কর্ষণদন্ত(molars) এবং হাড়গোড় এই ধারণা দেয় যে ঐসময়ে ভেড়া ঐসব এলাকায় গৃহপালিত হতে শুরু করে।[১৫] আধুনিক প্রজাতির সবপ্রধান বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ব্রোঞ্জ যুগের ভেড়াদের সারা পশ্চিম এশিয়া জুড়ে ব্যাপক মিল ছিল। [৪]:৬
খৃস্টপূর্ব ৬০০০ অব্দে, প্রাচীন শহর জেইতুন এর অধিবাসীরা ভেড়া ও ছাগল তাদের প্রাথমিক গৃহপালিত পশু হিসেবে পালন করত।[১৬] এছাড়াও বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে যাযাবর মেষপালকের চরিত্র/ধরন সংক্রান্ত অনেক নির্দশন শনাক্তকরা হয়েছে,যার মধ্যে- ভেড়া ও ছাগলের হাড়ের প্রাদুর্ভাব দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে, শস্য বা শস্য-প্রক্রিয়াকরণ সরঞ্জামাদির অভাব, খুব সীমিত স্থাপত্য প্রদর্শনকারী চারিত্রিকবৈশিষ্ট্যের সমষ্টি, একটি কৃষি অঞ্চলের বাইরের এলাকা, এবং আধুনিক যাযাবর মেষপালকের জীবনসংক্রান্ত জনগণের সাথে মানবজাতিসমূহের বিজ্ঞানসন্মত বিবরণের সাদৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। [১৭]
ঐসব দেশে অনেক মেষ থাকলে ও ভবঘুরে এবং আধা-ভবঘুরে প্রজাতি একদম নগণ্য যেমন- সৌদি আরবে (সম্ভবত ৩%এর কম ), ইরান (৪%), এবং আফগানিস্তান (সর্বোচ্চ ১০%)। [১৯]
ভারতে মেরিনো এবং অন্যান্য উচ্চ মানের উল ভেড়ার সঙ্গে সংকরায়নের মাধ্যমে দেশী ভেড়ার শাবকের গুণমান উন্নত করার প্রচেষ্টায় চলছে। উন্নত মানের উল ও মাংস উৎপন্ন করার লক্ষ্যে দেশী ভেড়ার উত্পাদনে এই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
চীনে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ভেড়া-পালনের জন্য প্রয়োজনীয় বৃহৎ খোলা চারণভূমি না থাকায় ভেড়া চীনের কৃষি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয়। চীনের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের মধ্যে ভেড়ার খামার বেশি দেখা যায় যেখানে খোলা চারণভূমি রয়েছে। ‘’’ঝান’’’ নামে চীনের একটি দেশি প্রজাতির ভেড়া আছে। সরকারের প্রচার সত্ত্বেও ১৯৮৫ সাল থেকে প্রজাতিটির বংশবৃদ্ধি কমে গেছে।
জাপানি সরকার ১৮০০ সালে সর্বত্র ভেড়া বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করে। মেষ প্রতিপালনের প্রকল্প হিসেবে ইয়র্কশায়ার,বার্কশায়ার, স্প্যানিশ মেরিনো, অসংখ্য চীনা এবং মঙ্গোলিয়ান প্রজাতির ভেড়া খামারে পালনের জন্য সরকার প্রচার করে উত্সাহ দান করে। কৃষকদের জ্ঞানের অভাব ছিল যে কীভাবে সফলভাবে ভেড়া রাখা যায় এবং আমদানি করা ভেড়া সম্পর্কে তথ্য প্রদানে সরকারের ব্যর্থতা, প্রকল্পটিকে ব্যর্থ করে দেয়,১৮৮৮ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
ভেড়া পালন সহস্রাব্দ ধরে মঙ্গোলিয়ানদের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জীবনধারায় রূপ নিয়েছে। মঙ্গোলিয়ান ভেড়া পালনের ঐতিহ্য ও আধুনিক বিজ্ঞান ভালোভাবে বিকশিত হয়েছে। মঙ্গোলিয়ান নির্বাচন এবং পশু বিজ্ঞান দেশের শ্রেণী বিভাগ করেছে- (১) উল ফাইবার এর দৈর্ঘ্য, সূক্ষ্মতা এবং স্নিগ্ধতা, (২)বিভিন্ন উচ্চতায় বাঁচার সামর্থ্য, (গ) প্রকৃত চেহারা, পুচ্ছ আকৃতি, আকার, এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য। সবচেয়ে সাধারণ প্রজাতির ভেড়াদের মধ্যে- মোঙ্গল কালহা, গভঃ-আলতাই, বাইদ্রাগ, বায়াদ, উঝেঞ্চিন, সাম্বার এবং অন্যান্য প্রজাতির সংখ্যা, মোটা-লেজ শাবক প্রজাতি।
দেশের সমগ্র ভেড়া পালের দেশীয় প্রাণীর একটি আদমশুমারি প্রতি বছর প্রকাশ করা হয়। ২০১৪ সালের শেষের দিকের আদমশুমারি আনুযায়ী দেশে ভেড়ার সংখ্যা ২৩ মিলিয়নের অধিক যা সমগ্র দেশে মজুত প্রাণিদের ৪৪.৬ শতাংশ ।
বার্ষিক চান্দ্র বছরের আগে মর্যাদাপূর্ণ সরকারি পুরস্কার "বেস্ট হারডার’’ (মঙ্গোলিয়ান "Улсын сайн малчин цол" ) মনোনয়ন ও নির্বাচন করা হয়।
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)