গম্ভীরা
সরঞ্জাম
সাধারণ
মুদ্রণ/রপ্তানি
অন্যান্য প্রকল্পে
গম্ভীরা | |
---|---|
শৈলীগত বূৎপত্তি | চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা |
প্রথাগত বাদ্যযন্ত্র | ঢোল, তবলা |
বাংলা-এর সঙ্গীত | |
---|---|
ধরন | |
| |
নির্দিষ্ট ধরন | |
ধর্মীয় সঙ্গীত | |
জাতিগত সঙ্গীত | |
ঐতিহ্যবাহি সঙ্গীত | |
মিডিয়া এবং কর্মক্ষমতা | |
সঙ্গীত মিডিয়া | বেতার
টেলিভিশন ইন্টারনেট |
বাংলাদেশ-এর সঙ্গীত | |
---|---|
ধরন | |
| |
নির্দিষ্ট ধরন | |
ধর্মীয় সঙ্গীত | |
জাতিগত সঙ্গীত | |
ঐতিহ্যবাহি সঙ্গীত | |
মিডিয়া এবং কর্মক্ষমতা | |
সঙ্গীত পুরস্কার | |
সঙ্গীত উৎসব | |
সঙ্গীত মিডিয়া | বেতার টেলিভিশন ইন্টারনেট |
জাতীয় এবং দেশাত্মবোধক গান | |
জাতীয় সঙ্গীত | আমার সোনার বাংলা |
অন্যান্য | নতুনের গান (রণসঙ্গীত) একুশের গান (ভাষা আন্দোলন গাথা) |
আঞ্চলিক সঙ্গীত | |
সম্পর্কিত এলাকা | |
অন্যান্য এলাকা |
|
গম্ভীরা বাংলার লোকসঙ্গীতের অন্যতম একটি ধারা। পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা ও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে [১][২][৩][৪][৫] গম্ভীরার প্রচলন রয়েছে। গম্ভীরা দলবদ্ধভাবে গাওয়া হয়। এটি বর্ণনামূলক গান। পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা অঞ্চলে গম্ভীরার মুখোশ পরে গম্ভীরা গানের তালে গম্ভীরা নৃত্য পরিবেশন করা হয়৷ বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অঞ্চলের গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতি খুব জনপ্রিয়।
ধারণা করা হয় যে, গম্ভীরা উৎসবের প্রচলন হয়েছে শিবপূজাকে কেন্দ্র করে। শিবের এক নাম 'গম্ভীর', তাই শিবের উৎসব গম্ভীরা উৎসব এবং শিবের বন্দনাগীতিই হলো গম্ভীরা গান। মালদহে মূলত চৈত্রসংক্রান্তির শিবপূজা উপলক্ষে বিগত বছরের প্রধান-প্রধান ঘটনাবলি নৃত্য, গীত ও অভিনয়ের মাধ্যমে সমালোচিত হয়; অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে ছোট তামাশা, বড় তামাশা ও ফুলভাঙ্গা অনুষ্ঠানের গম্ভীরা মুখোশনৃত্য পরিবেশিত হয়।[৬] গম্ভীরা উৎসবের সঙ্গে এ সঙ্গীতের ব্যবহারের পেছনে জাতিগত ও পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে।
কথিত আছে, প্রায় হাজার বছরের পুরনো গম্ভীরা উৎসব এবং তার ধারাবাহিকতা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার জীবনকে প্রভাবিত করে এসেছে৷[৭]পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চলে চৈত্রসংক্রান্তির গাজন উৎসবই গম্ভীরা পূজা ও উৎসব নামে পরিচিত (উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে এটি গমীরা নামে খ্যাত)। চৈত্রের শেষ চারদিনে মূল অনুষ্ঠান হয়, তবে অঞ্চলভেদে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ এমনকি শ্রাবণ মাসেও শিবমূর্তি স্থাপন করে গম্ভীরা পূজা হয়। বর্তমানে মূলত শিবপূজা নামে খ্যাত হলেও প্রাচীনকালে এটি সূর্যের উৎসব ছিল বলে মনে করা হয়।
মালদহে নিম্নবর্ণের হিন্দু, কোচ-রাজবংশী, পোলিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা মূলত উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। গম্ভীরা উৎসব মালদহ জেলাতে প্রধানত চার দিনের উৎসব। প্রথমদিন 'ঘটভরা' অনুষ্ঠান; গম্ভীরা মণ্ডপে ঘট স্থাপন করে শিবপূজার উদ্বোধন করা হয়। দ্বিতীয় দিনে হয় 'ছোট তামাশা'; এই দিনে শিব ও পার্বতীর পুজো হয়, পুজোর অনুষ্ঠান রং, তামাশা, আনন্দ, রসিকতার মধ্যে কাটে এবং ঢাক-ঢোল বাদ্য সহযোগে মণ্ডপে নানা নৃত্যানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। তৃতীয় দিনে 'বড়ো তামাশা'র সন্ন্যাসীরা শুদ্ধচিত্তে শুদ্ধাচারে কাঁটা-ভাঙ্গা, ফুল-ভাঙ্গা ও বাণফোঁড়ায় অংশ নেয়। এদিন মালদহে বিভিন্ন সঙের দল ঘোরে; রাতে গম্ভীরা মণ্ডপে মুখোশনৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। চামুণ্ডা, নরসিংহী, কালীর মুখোশ পড়ে ঢাকের তালে তালে নৃত্য হয়। মুখোশ পড়ে উদ্দাম নৃত্যের মধ্য দিয়ে গম্ভীরার বিশেষ রূপ প্রকাশ পায়। চতুর্থ দিনের উৎসবের নাম ‘আহারা’। এই দিন মণ্ডপে শিবের সঙ্গে নীলপূজাও হয়, সঙ্গে গম্ভীরা গান গাওয়া হয়ে থাকে। বিকালবেলায় সঙ বেরোয়। বিভিন্ন সাজে সেজে সঙ গ্রাম-শহর পরিক্রমা করে। এই সঙ আবার দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম রীতিতে গান গেয়ে অভিনয় করা হয়। এখানে সব রকম ভাবে নাটকীয় গুণ প্রকাশ পায়। এই রীতিটিই হল গম্ভীরা লোকনাট্য। গম্ভীরা গানের শুরুতে দেবাদিদেব শিবকে বন্দনা করার রীতি আছে। শিবরূপী অভিনেতাকে মঞ্চে নিয়ে এসে তাঁকে সমস্ত বিষয়ে জানানো হয়। সমাজের মঙ্গলের জন্য কী করণীয় বা কোনও সমস্যা থাকলে কী ভাবে তার সমাধান করা যেতে পারে, তার প্রতিকারের নিদান দেন শিব।[৬][৭]
গম্ভীরা গান সাধারণত দুপ্রকার — আদ্যের গম্ভীরা এবং পালা-গম্ভীরা। প্রথমত, দেবদেবীকে সম্বোধন করে মানুষ তার সুখ-দুঃখ পরিবেশন করলে তাকে আদ্যের গম্ভীরা বলা হয়। দ্বিতীয়ত, পালা-গম্ভীরায় নানা-নাতির ভূমিকায় দুজন ব্যক্তির অভিনয়ের মাধ্যমে এক একটা সমস্যা তুলে ধরা হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম দেবতা শিব। শিবের অপর এক নাম 'গম্ভীর'। শিবের উৎসবে শিবের বন্দনা করে যে গান গাওয়া হত- সেই গানের নামই কালক্রমে হয়ে যায় ‘গম্ভীরা’। শিব> গম্ভীর> গম্ভীরা।
পরবর্তী সময়ে গম্ভীরা গানের ধরন অনেকাংশে বদলে গেছে। গানের সুরে দেবদেবীকে সম্বোধন করে বলা হয় গ্রামীণ দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষের সুখ-দুঃখ। কখনও সারা বছরের প্রধান ঘটনা এ গানের মাধ্যমে আলোচিত হয়। পালা-গম্ভীরায় অভিনয়ের মাধ্যমে এক একটা সমস্যা তুলে ধরা হয়। চৈত্র-সংক্রান্তিতে বছরের সালতামামি উপলক্ষে পালা-গম্ভীরা পরিবেশন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে ‘গম্ভীরা’ বলতে বিশেষ একটি অঞ্চলের লোকসঙ্গীতকে বোঝায়।
গম্ভীরা গানের উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় হিন্দুসমাজে। গম্ভীরা নৃত্যটি উত্তরবঙ্গের অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা জুড়ে চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবের সময় প্রদর্শিত হয়। মালদহের গম্ভীরার বিশেষত্ব হল মুখোশের ব্যবহার৷ স্থানীয় সূত্রধর সম্প্রদায় নিম এবং ডুমুর গাছের অংশবিশেষের সাহায্যে মুখোশগুলি তৈরি করে। কখনও কখনও মুখোশগুলি মাটি দিয়েও তৈরি করা হয়।[৮] গম্ভীরা গানের তালে এই মুখোশ পরেই নৃত্য পরিবেশন করা হয়।গম্ভীরা নৃত্যের মুখোশ হিসাবে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ ব্যবহৃত হয়। হিন্দু পৌরাণিক চরিত্রের বাণ, কালী, নরসিংহী, বাশুলী, গৃধিনীবিশাল, চামুণ্ডা, উগ্রচণ্ডা, ঝাঁটাকালী, মহিষমর্দিনী, লক্ষ্মী-সরস্বতী, হিরণ্যকশিপুবধ, তাড়কাবধ, শুম্ভনিশুম্ভ বধ ইত্যাদির মুখোশ ব্যবহৃত হয়। এই মুখোশের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় নরসিংহী মুখোশ।[৯]
পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলাতে গম্ভীরা বা রাগীনি কৌশলে একাধিক ভাগ থাকে। প্রথম ভাগটি হল বন্দনা। এই অংশে মঞ্চে শিব আসেন এবং শিবকে উদ্দেশ্য করে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে দুটি চরিত্র। শিব সমস্যাগুলির প্রতিকারের উপায় বলে দিয়ে প্রস্থান করেন। পরের ভাগটিতে আসে দ্বৈত চরিত্র। পুরুষ ও মহিলা দুটি চরিত্র সংলাপ ও গানের মধ্য দিয়ে সমাজজীবন, রাজনীতি থেকে শুরু করে ঘটনাবহুল নানা বিষয় তুলে ধরেন। পরে চার ইয়ারি হিসেবে চারজন অভিনেতা মঞ্চে আসেন। এর মধ্যে একজন উচিত বক্তা থাকেন। সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে তিনি স্পষ্ট বক্তব্য গান ও কথার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেন। এই চার ইয়ারি বা বন্ধুর বাক্যালাপের মধ্য দিয়ে সামাজিক সমস্যা মেটানোর পথ বেরিয়ে আসে। এর পরের পর্বটি হল ব্যঙ্গ। একটি চরিত্র ব্যঙ্গের মাধ্যমে জরুরি কিছু কথা বলে৷ আর শেষভাগে ‘সালতামামি’ বা রিপোর্টিং। সারা বছরের নানা ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়াই হল সালতামামি। এখানে সারা বছরের কাজের নানা সমালোচনা হয়। শেষে একটি সমাধানের রাস্তা বার করে গম্ভীরা গান শেষ হয়। গম্ভী লোকনাট্যে বিশেষ ভূমিকা বহন করে তালবাদ্য। এছাড়াও ট হারমোনিয়াম, তবলা, করতাল, ট্রাম্পেট প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার করা হয় গম্ভীরা পরিবেশনায়।[৭]
যে সমস্ত প্রথিতযশা শিল্পীদের হাত ধরে গম্ভীরা মালদহ জেলাতে স্বমহিমায় বিরাজমান তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলি হল ধনকৃষ্ণ অধিকারী, কৃষ্ণধনদাস গোস্বামী, মহম্মদ সুফি, গোপালচন্দ্র দাস, সতীশচন্দ্র গুপ্ত, গোলাম গুপ্ত, কিশোরীকান্ত চৌধুরী প্রমুখ। গম্ভীরা গানকে বিশেষ মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন পুরাতন মালদহের ইটখোলা গ্রামে জন্ম নেওয়া এবং ইংরেজবাজার শহরের কুতুবপুর বাবুপাড়া নিবাসী যোগেন্দ্রনাথ চৌধুরী যিনি গম্ভীরাসম্রাট নামে আখ্যায়িত হন । গম্ভীরায় কৌতুক সৃষ্টিকারী অভিনেতা ও গায়ক শিল্পী হিসেবে তাঁর স্থান ছিল অদ্বিতীয়। তাঁর ডাকনাম ছিল মটরা। এক সময় , মালদহ তো বটেই, অবিভক্ত দিনাজপুর তথা গোটা বাংলায় তাঁর অভিনীত গম্ভীরা মটরার গান হিসেবে অভিহিত হত। এ ছাড়া গোবিন্দলাল শেঠ, গোপীনাথ শেঠ, অনিল চৌধুরী, রামেশ্বর রায়ের মতো অসংখ্য শিল্পী গম্ভীরাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন মালদহ জেলায়।[৭]
বাংলাদেশে পূর্বে গম্ভীরা গানের আসরে শিবের অস্তিত্ব কল্পনা করা হত। বর্তমানে বাংলাদেশের গম্ভীরা গানের আসরে শিবের পরিবর্তে ‘নানা-নাতি’র ভূমিকায় দুজন অভিনয় করে। নানার মুখে পাকা দাঁড়ি, মাথায় মাথাল, পরনে লুঙ্গি; হাতে লাঠি। আর নাতির পোশাক ছেঁড়া গেঞ্জি, কোমরে গামছা ইত্যাদি। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের গ্রামের ছবি। ‘নানা-নাতি’র সংলাপ ও গানের মধ্য দিয়ে দ্বৈতভাবে গম্ভীরা গান পরিবেশিত হয়।এক সময় গম্ভীরা গান একতাল, ত্রিতাল, দাদরা, খেমটা, কাহারবা প্রভৃতি সুরে গাওয়া হতো। বর্তমানে সুরের পরিবর্তন ঘটেছে এবং তাতে হিন্দি ও বাংলা ছায়াছবির গানের সুর প্রাধান্য পাচ্ছে। এ ছাড়া লোকনাট্যের বহু বিষয়, চরিত্র ও সংলাপও গম্ভীরা গানে সংযুক্ত হয়েছে। নবাবগঞ্জের কুতুবুল আলম, রকিবউদ্দীন, বীরেন ঘোষ, মাহবুবুল আলম প্রমুখ গম্ভীরা গানের বিশিষ্ট শিল্পী। তারা নতুন নতুন সুর সৃষ্টির মাধ্যমে গম্ভীরা গানকে সারা বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।[১০]
বাংলার লোকসঙ্গীত | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
আঞ্চলিক গান | |||||||
ব্যবহারিক গান |
| ||||||
আনুষ্ঠানিক গান |
| ||||||
প্রেম সঙ্গীত |
| ||||||
কর্ম সঙ্গীত |
| ||||||
পটের গান | |||||||
বিবিধ |