খেলানির্মাতা (ফুটবল)

ফুটবল খেলাতে খেলানির্মাতা বা ইংরেজিতে প্লেমেকার (ইংরেজি: Playmaker) বলতে এমন একজন খেলোয়াড়কে বোঝায় যে সাধারণত মধ্যমাঠ থেকে তার দলের আক্রমণাত্মক খেলা বিন্যস্ত করে ও নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রায়শই এমন সব পাস (বলের আদানপ্রদান) প্রয়োগ করে, যা তার দলের জন্য গোলের (প্রতিপক্ষ দলের জালে বল পাঠানো) সুযোগ নির্মাণ করে। খেলানির্মাতা তার কল্পনাশক্তি, প্রতিপক্ষের ভবিষ্যৎ চাল পূর্বাভাস করার ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, কারিগরি দক্ষতা, বল নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ও পাস করার দক্ষতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে এই ভূমিকাটি পালন করে।[১][২]

ফরাসি ফুটবলার জিনেদিন জিদান, যিনি ২০০৬ সালে বিশ্বের সেরা খেলানির্মাতার পুরস্কার পান।

সাধারণত আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় বা সম্মুখভাগের খেলোয়াড় (ফরওয়ার্ড) খেলানির্মাতার ভূমিকা পালন করে, কেননা তাদের বেশিরভাগই উপরে বর্ণিত সৃষ্টিশীল ও কারিগরি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে। কিন্তু খেলানির্মাতারা আরও অনেক অবস্থানে থেকে কাজ করতে পারে। অনেকে পার্শ্বীয় বা উইং অবস্থানে থেকে উইংগার হিসেবে, আবার কেউ কেউ সহকারী স্ট্রাইকার (সহকারী আক্রমণকারক) অবস্থানে থেকে খেলানির্মাতার ভূমিকা পালন করতে পারে। আবার কেন্দ্রীয় মধ্যমাঠের খেলোয়াড়রাও খেলানির্মাতার কাজ করতে পারে, যেখানে তারা অধিকতর আক্রমণাত্মক হবার পাশাপাশি মাঝমাঠ থেকে সুযোগসন্ধানী খেলা গড়ে তুলতে নেতৃত্ব দান করতে পারে। এমনকি গভীরে অবস্থিত খেলানির্মাতাও আছে, যারা অবাধে বিচরণ করে ও মাঝমাঠের রেখার পেছন থেকে রক্ষণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড়ের পাশে থেকে কাজ করতে পারে। খেলানির্মাতারা সাধারণত তাদের রক্ষণাত্মক দক্ষতার জন্য পরিচিত নন, তাই প্রায়শই তাদেরকে একজন রক্ষণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় সহায়তা দান করে।

উন্নত খেলানির্মাতারা অবাধে বিচরণ করে মাঠের যেকোনও অবস্থান থেকে আক্রমণাত্মক খেলা নির্মাণ করতে পটু হয়ে থাকেন। তারা সাধারণত দলে ১০ নম্বর জার্সি পরিধান করেন। দিয়েগো মারাদোনা, জিকো, মিশেল প্লাতিনি, পেলে, জিনেদিন জিদান, জে-জে ওকোচা, রোবের্তো বাজ্জো, রুই কস্তা, মিখায়েল লাউড্রপ, গেয়র্গে হাজি, ও ফ্রাঞ্চেসকো তত্তি এ ধরনের কিছু উন্নত খেলানির্মাতার উদাহরণ।[৩]

ভালো খেলানির্মাতার বৈশিষ্ট্যসমূহ

একজন খেলানির্মাতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল খেলার ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়া, খেলা পড়তে পারা ও ভাল অবস্থানে যাওয়ার ক্ষমতা, যার সুবাদে সঠিকভাবে বল গ্রহণ করে কার্যকরভাবে সেটিকে বিতরণ করে দেওয়া যায়। সহজাত অন্তর্জ্ঞান ও সৃজনশীলতা তার আরও দুইটি প্রধান বৈশিষ্ট্য, কেননা কোন খেলোয়াড় কোন সময়ে কোথায় অবস্থান করছে, তা তার জানা থাকতে হয় ও খুব বেশি সময় বলের সংস্পর্শে থাকতে হয় না। একজন ভালো খেলানির্মাতা বলের উপরে ভালো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, কারিগরি ও ড্রিবলিং দক্ষতার অধিকারী হয় ও প্রায়শই বল ধরে রাখতে পারে, যাতে দলের অন্যান্য খেলোয়াড়েরা আক্রমণাত্মক দৌড় শুরু করতে সক্ষম হয়। সাধারণত খেলানির্মাতা গোল করার শটটির ঠিক আগের বা আগের আগের পাসটি প্রদান করে থাকে, যেটি প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের ব্যুহভেদ করে গোলের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।[৪] ফুটবলের পরিভাষায় এই পাসটিকে "শেষ বল" বা "ঘাতক বল" হিসেবে ডাকা হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে অ্যাসিস্ট তথা গোলে সাহায্যকারী পাস হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়।

উন্নত খেলানির্মাতারা প্রায়শই নিজেরাও গোল করে থাকে। তারা সাধারণত দ্রুতগামী, ক্ষিপ্র ও সর্বদা অবস্থান পরিবর্তনকারী খেলোয়াড় হয়ে থাকে। তাদের কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা উন্নত হয়ে থাকে। বলের সংস্পর্শে থাকার পাশাপাশি বল থেকে দূরে থাকা অবস্থাতেও তাদের গতিবিধি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা পুনরায় আক্রমণাত্মক খেলার জন্য জায়গা তৈরি করে নিতে পারে। অনেক খেলানির্মাতা সরাসরি ফ্রি-কিক, পেনাল্টি কিক ও পূর্বপরিকল্পিত দানের (সেট পিস) বিশেষজ্ঞ, যখন তারা বাঁকিয়ে বক্সের ভেতরে বল সরবরাহ করতে পারে।[৫]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী