খিডো ইম্বেন্স
খিডো ভিলহেলমুস ইম্বেন্স (ওলন্দাজ: Guido Wilhelmus Imbens; জন্ম সেপ্টেম্বর ৩, ১৯৬৩, খেলড্রোপ, নেদারল্যান্ডস) একজন ওলন্দাজ-মার্কিন অর্থনীতিবিদ। "কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণে পদ্ধতিগত অবদানের জন্য" ২০২১ সালে তাকে জশুয়া অ্যাংরিস্টের সাথে যৌথভাবে অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কারের অর্ধেক প্রদান করা হয়, ডেভিড কার্ডকে বাকি অর্ধেক পুরস্কৃত করা হয়।[১][২] তিনি ২০১২ সাল থেকে স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ বিজনেসের অর্থনীতির অধ্যাপক।[৩]
খিডো ভিলহেলমুস ইম্বেন্স | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | খেলড্রোপ, নেদারল্যান্ডস | ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩
জাতীয়তা | |
দাম্পত্য সঙ্গী | সুজান এথি |
প্রতিষ্ঠান | স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় |
কাজের ক্ষেত্র | অর্থমিতি |
শিক্ষায়তন | ইরাসমাস বিশ্বিদ্যালয় (বিএ) হাল বিশ্ববিদ্যালয় (এমএসসি) ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় (এমএ, পিএইচডি) |
ডক্টরেট উপদেষ্টা | অ্যান্থনি ল্যানচেস্টার |
ডক্টরেট শিক্ষার্থীরা | রাজিব দেহেজিয়া |
পুরস্কার | অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কার (২০২১) |
Information at IDEAS / RePEc |
প্রাথমিক ও শিক্ষাজীবন
খিডো ভিলহেলমুস ইম্বেন্স ১৯৬৩ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর নেদারল্যান্ডসের খেলড্রোপ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] ১৯৭৫ সালে তার পরিবার ডিউর্নে চলে যায়, সেখানে তিনি পিলল্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেন। ছোটবেলায় ইম্বেন্স একজন উৎসুক দাবা খেলোয়াড় ছিলেন।[৫]
ইম্বেন্স ১৯৮৩ সালে ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয় রটারডাম (নেদারল্যান্ডস) থেকে অর্থমিতিতে ক্যান্ডিডেট ডিগ্রি (স্নাতক ডিগ্রির সমতুল্য) নিয়ে স্নাতক হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৬ সালে হাল বিশ্ববিদ্যালয় (কিংস্টন আপঅন হাল, ইংল্যান্ড) থেকে অর্থনীতি ও অর্থমিতিতে বিশেষ সম্মানের সাথে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর উপাধি অর্জন করেন। এরপর তিনি যথাক্রমে ১৯৮৯ এবং ১৯৯১ সালে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এএম এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[৩][৬][৭]
ব্যক্তি ও কর্মজীবন
ইম্বেন্স হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯০-৯৭, ২০০৬-১২), লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, (১৯৯৭-২০০১), এবং বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (২০০২-০৬) শিক্ষকতা করেছেন। তিনি কার্যকারণ সম্পর্ক নির্নয়ের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি অর্থমিতি বিশেষজ্ঞ।[৩] তিনি ২০১৯ সালে ইকনোমেট্রিকা নামক গবেষণা সাময়িকীর সম্পাদক পদ লাভ করেন এবং ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই পদে কাজ করবেন।[৮]
ইম্বেন্স অর্থমিতিক সমাজ তথা ইকনোমেট্রিক সোসাইটি (২০০১) এবং মার্কিন শিল্পকলা ও বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির ২০০৯) একজন বিশিষ্ট সভ্য।[৩][৯][১০] তিনি ২০১৭ সালে রয়্যাল নেদারল্যান্ডস শিল্পকলা ও বিজ্ঞান একাডেমির বিদেশী সদস্য নির্বাচিত হন।[১১][১২] তিনি ২০২০ সালে আমেরিকান স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ফেলো হিসাবে নির্বাচিত হন।[১৩]
ইম্বেন্স ২০০২ সালে অর্থনীতিবিদ সুজান এথিকে বিয়ে করেন।[১৪]
অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কার
সহ-অর্থনীতিবিদ ডেভিড কার্ড এবং জশুয়া অ্যাংরিস্টের সাথে কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণের পদ্ধতিতে অবদানের জন্য ইমবেনস ২০২১ সালে অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কার লাভ করেন।[১৫] বিজয়ীদের ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে "এ বছরের বিজয়ীরা- ডেভিড কার্ড, জশুয়া অ্যাংরিস্ট এবং খিডো ইম্বেন্স আমাদের শ্রম বাজার সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে এবং দেখিয়েছে যে প্রাকৃতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যান্য ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে এবং অভিজ্ঞতামূলক গবেষণায় বিপ্লব এনেছে।"[১৬]
খিডো ইম্বেন্স ও তাঁর সহযোগীরা একটি অভিনব পরিকাঠামো নির্মাণ করেছেন, যার মাধ্যমে "প্রাকৃতিক পরীক্ষা" থেকে কার্যকারণ সম্বন্ধ সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব। অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে কোনও সমস্যাকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করার জন্য গবেষকেরা ঘটনাসমূহের কারণ ও পরিণাম নির্ণয় করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস্তব জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতির অধ্যয়নে এই কার্যকারণ সংযোগ পরিষ্কার করে নির্ণয় করা সবসময় সম্ভব হয় না, কেননা এগুলি বিভিন্ন ধরনের চলরাশি বিদ্যমান থাকে। যদিও বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৈবকৃত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা স্বর্ণমান তথা সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে গণ্য করা হয়, অর্থনীতিবিদদের পক্ষে প্রায়শই সমাজ ও অর্থনীতির কেন্দ্রীয় কিছু প্রশ্নের উত্তর বের করার জন্য এই ধরনের পরীক্ষা প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। খিডো ইম্বেন্স ও তাঁর সহযোগীরা (যেমন সহ নোবেল স্মারক পুরস্কার বিজয়ী ডেভিড কার্ড ও জশুয়া অ্যাংরিস্ট) অর্থনৈতিক বিজ্ঞানসমূহে পরীক্ষণভিত্তিক বা অভিজ্ঞতাবাদী গবেষণায় বিপ্লবের সৃষ্টি করেছেন। ইম্বেন্স একজন অগ্রপথিক অর্থমিতিবিদ যিনি এমন সব অভিনব গাণিতক ও পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যার ফলে গবেষকদের জন্য মাঠ পর্যায়ের উপাত্ত ও পরীক্ষামূলক উপাত্ত থেকে কার্যকারণ সম্বন্ধ সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করার ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে গিডো ও তাঁর সহযোগীদের অবদান অর্থনীতিবিদদের এমন কিছু মৌলিক উপকরণ প্রদান করেছে, যার ফলে তাঁরা "প্রাকৃতিক পরীক্ষা" থেকে পর্যবেক্ষণলব্ধ উপাত্ত ব্যবহার করে কোনও কর্মসূচীর বা হস্তক্ষেপমূলক কর্মকাণ্ডের কার্যকারণ সম্পর্ক প্রাক্কলন করতে পারছেন। ২০২০-এর দশকে এসে ফলিত অর্থশাস্ত্রের বেশির ভাগ সাফল্যই ইম্বেন্স ও তাঁর সহপুরস্কারজয়ীদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গিগুলির কাছে ঋণী। গিডো-র পদ্ধতিগুলি শুধু অর্থনৈতিক বিজ্ঞান নয়, বরং সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের হাজার হাজার গবেষক প্রয়োগ করে থাকেন।
১৯৯৪ সালে একটি নতুন ধরনের গবেষণাতে অ্যাংরিস্ট ও ইম্বেন্স প্রথম এমন একটি পরিকাঠামো নির্মাণ করেন। প্রাকৃতিক পরীক্ষা হল বাস্তব জীবনের এমন কিছু পরিস্থিতি যাতে মানুষেরা দৈবভাবে অংশগ্রহণ করতেও পারে বা না-ও করতে পারে এবং যাতে কোনও কর্মসূচী বা নীতিগত পরিবর্তনের ফলে এক ধরনের সীমারেখা বিদ্যমান। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গবেষকেরা দুইটি দলের মধ্যে তুলনার মাধ্যমে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কার্যকারণ সম্বন্ধ বের করে আনতে পারে। এর সাথে একটি দৈবকৃত পরীক্ষণে দৈবচয়িত দল ও নিয়ন্ত্রিত দলের মধ্যে তুলনার সাদৃশ্য আছে।
ইম্বেন্স ও অ্যাংরিস্ট কারণঘটিত পরিণাম প্রাক্কলন করতে দুই ধাপবিশিষ্ট একটি প্রক্রিয়া প্রয়োগ করেন। প্রথমে তারা "উপকরণমূলক চলরাশি" বলে একটি ধারণা ব্যবহার করেন, যেটি অর্থনীতিবিদরা ভেদের একটি উৎস হিসেবে ব্যবহার করে তুলনার জন্য দুইটি স্বতন্ত্র দলের মধ্যকার সীমাস্থ পার্থক্য অনুকরণ করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যখন তাঁরা পরিণামগুলি মূল্যায়ন করেন, তখন তাঁরা প্রয়োজনীয় পূর্বানুমানগুলির বিশদ ও পরিস্কার ব্যাখ্যা প্রদান করেন এবং এ উদ্দেশ্যে স্থানীয় গড় হস্তক্ষেপ পরিণাম (local average treatment effect) নামক একটি ধারণা উদ্ভাবন করেন। কার্যকারণ সম্বন্ধযুক্ত পরিণাম প্রতিষ্ঠাকারী এই প্রতিমান বা মডেলটি অভিজ্ঞতাবাদী গবেষণার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ব্যাপারটিকে নোবেল স্মারক পুরস্কারে স্বীকৃতিদান করা হয়।[১৭]