ওয়েবার (একক)
পদার্থবিদ্যায় ওয়েবার (প্রতীক চিহ্নঃ Wb [১][২]) আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি বা এস.আই পদ্ধতি নির্দেশিত চৌম্বক ফ্লাক্স -এর একক। ১ ওয়েবার/মি২ (প্রতি বর্গ মিটারে এক ওয়েবার) -এর একটি ফ্লাক্স ঘনত্ব ১ টেসলার সমান।
জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী উইলহেলম এডুয়ার্ড ওয়েবারের নামানুসারে ওয়েবার এককের নামকরণ হয়েছে।
সংজ্ঞা
Submultiples | Multiples | |||||
---|---|---|---|---|---|---|
মান | প্রতীক | নাম | মান | প্রতীক | নাম | |
১০−১ Wb | dWb | ডেসিওয়েবার | ১০১ Wb | daWb | ডেকাওয়েবার | |
১০−২ Wb | cWb | সেমিওয়েবার | ১০২ Wb | hWb | হেক্টওয়েবার | |
১০−৩ Wb | mWb | মিলিওয়েবার | ১০৩ Wb | kWb | কিলোওয়েবার | |
১০−৬ Wb | µWb | মাইক্রোওয়েবার | ১০৬ Wb | MWb | মেগাওয়েবার | |
১০−৯ Wb | nWb | নানোওয়েবার | ১০৯ Wb | GWb | গিগাওয়েবার | |
১০−১২ Wb | pWb | পিকোওয়েবার | ১০১২ Wb | TWb | টেরাওয়েবার | |
১০−১৫ Wb | fWb | femtoওয়েবার | ১০১৫ Wb | PWb | petaওয়েবার | |
১০−১৮ Wb | aWb | attoওয়েবার | ১০১৮ Wb | EWb | exaওয়েবার | |
১০−২১ Wb | zWb | zeptoওয়েবার | ১০২১ Wb | ZWb | zettaওয়েবার | |
১০−২৪ Wb | yWb | yoctoওয়েবার | ১০২৪ Wb | YWb | yottaওয়েবার | |
সাধারণ গুণকগুলি বৃহৎ হরফে চিহ্নিত |
ওয়েবার এককটি ফ্যারাডের সুত্র -এর সাথে সম্পর্কিত যা আবার কোন তড়িৎ কুণ্ডলীর সংলগ্ন তড়িৎক্ষেত্রে চৌম্বক ফ্লাক্স -এর পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। প্রতি সেকেন্ডে একটি ওয়েবারের ফ্লাক্সের পরিবর্তন এক ভোল্ট তড়িচ্চালক বল উতপাদন করে (খোলা মুখের তড়িৎ বর্তনীর দুপ্রান্তের মধ্যে ১ ভোল্টের তড়িৎ বিভব পার্থক্য উৎপন্ন করতে সক্ষম)।
রীতি অনুসারে,ওয়েবার হল চৌম্বক ফ্লাক্স যা একটি মাত্র কুণ্ডলীযুক্ত তড়িৎ বর্তনীতে এক ভোল্ট তড়িচ্চালক বল উতপাদন করতে পারে যদি তা ১ সেকেন্ড সময় ব্যবধানে অভিন্ন হারে হ্রাস করিয়ে শূন্য মানে আনা হয়।[৩]
ওয়েবার সাধারণত অন্যান্য প্রচুর এককের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়:
যেখানে,Wb = ওয়েবার,
Ω = ওহম,
C = কুলম্ব,
V = ভোল্ট,
T = টেসলা,
J = জুল,
N = নিউটন
m = মিটার,
s = সেকেন্ড,
A = অ্যামপিয়ার,
H = হেনরি,
Mx = ম্যাক্সওয়েল
ওয়েবার এককের নামকরণ হয়েছে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী উইলহেলম এডুয়ার্ড ওয়েবারের নামানুসারে। আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে সমস্ত এককের নামই কোন না কোনও বিজ্ঞানীর নামানুসারে হয়েছে। ওয়েবার -এর ক্ষেত্রেও তার বিকল্প হয়নি। ইংরেজিতে এর যে প্রতীক চিহ্ন (Wb) ব্যবহার হয় তার প্রথম অক্ষরটি বড় হরফের এবং পরের অক্ষরটি ছোট হরফের হয়।
ইতিহাস
১৮৬১ সালে, ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স ("বিএ" নামে পরিচিত[৪]) বৈদ্যুতিক ইউনিটগুলি অধ্যয়ন করার জন্য উইলিয়াম থমসনের (পরে লর্ড কেলভিন) অধীনে একটি কমিটি গঠন করে।[৫] ১৯০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে অলিভার হেভিসাইড, জিওভানি জর্জি তদের হাতে লেখা সংকলনে ওয়েবার সহ তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন এককের একটি যৌক্তিক সংকলনের প্রস্তাব করেছিলেন, যাতে তারা উল্লেখ করেছিলেন যে "বি এ দ্বারা ওয়েবার নামক একটি এককের ব্যবহার হয় যা সেকেন্ডের সময় ব্যবধানে ভোল্টের পরিমাপের সঙ্গে যুক্ত।"[৬]
আন্তর্জাতিক বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি কমিশন ১৯০৯ সালে পরিভাষা নিয়ে কাজ শুরু করে এবং ১৯১১ সালে প্রথম প্রযুক্তি কমিটি প্রতিষ্ঠা করে যা এই কার্যক্ষেত্রের সবচেয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠিত কমিটি। [৭] তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তড়িৎ প্রযুক্তির বিভিন্ন কার্যক্ষেত্রে ও বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহৃত পৃথক পৃথক এককের সংকলন এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সামাঞ্জস্য স্থাপন করা।[৮]
১৯২৭ সালের আগে কখনোও টি সি ওয়ান তড়িৎক্ষেত্র ও চুম্বকক্ষেত্রের পারস্পরিক সম্পর্কিত তড়িৎ চুম্বকীয় বিজ্ঞান, তার বিভিন্ন উপভাষা ও একক সম্পর্কিত ধারণা এবং সমস্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ এবং সমাধানের চেষ্টা শুরু করেনি। চুম্বকক্ষেত্রের শক্তি এবং চুম্বক ফ্লাক্সের ঘনত্ব একই প্রকৃতির কিনা এই বিষয়ে তড়িৎ প্রকৌশলী এবং পদার্থবিদদের মধ্যে প্রায়শই তাত্ত্বিক আলোচনা হত। মতবিরোধ অব্যাহত থাকায়, আই ই সি পরিস্থিতি সমাধানের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের পরবর্তী সভায় এই বিষয়ের সমাধানের জন্য তারা তাদের কার্যনির্বাহী দলকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল।[৯]
১৯৩০ সালে, টি সি ওয়ান স্থির করে যে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র শক্তি (H) চৌম্বকীয় ফ্লাক্স ঘনত্ব (B) -এর থেকে আলাদা প্রকৃতির[৯] এবং উভয়ের জন্য আলাধা একক স্থির করতে তারা উদ্যোগী হয়। ১৯৩৫ সালে টি সি ওয়ান চৌম্বক ফ্লাক্স -এর একক আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি অনুসারে ওয়েবার এবং সিজিএস পদ্ধতি অনুসারে ম্যাক্সয়েল রাখার প্রস্তাবনা দেয়।[৯][১০]১৯৩৫ সালে, অধ্যাপক জর্জি তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রে চারটি মূল একক যুক্ত একটি পরিমাপ পদ্ধতির প্রচলন করে যা জর্জি পদ্ধতি নামে জনপ্রিয় হয়।[১১] সেই একই বছরে টিসি ১ "বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বকীয় চৌম্বক এবং ইউনিটগুলির" দায়িত্বে তাদের নতুন কমিটি টিসি ২৪-কে দিয়ে দেয় যার পরে জর্জি পদ্ধতি আরও বহুল জনপ্রিয় হয়। এর ফলে তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি এবং সিজিএস পদ্ধতির বিভিন্ন এককের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়।[১২]
১৯৩৮ সালে টিসি ২৪ শূন্যস্থানে প্রবেশ্যতার μ0 = ৪π×১০−৭ হেনরি/মিটার একক চালু করে। ১৯৫০ সালে, অ্যাম্পিয়ার, জর্জি পদ্ধতির চতুর্থ ইউনিট হিসাবে গৃহীত হয়েছিল।[১১]