ওথেলো সিনড্রোম (ইংরেজি: Othello syndrome) এক ধরনের মনোরোগ যা মনোবিদ্যায় প্যাথলজিক্যাল জেলাসি বা ডিলুশনাল জেলাসি বা মরবিড জেলাসি নামে পরিচিত। এই রোগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই ব্যক্তির মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে যে তার সঙ্গী বা সঙ্গিনী অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করছে।[১] এবং এই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তারা নানারকম অস্বাভাবিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য আচরণ করতে থাকে। [১] এটাকে ডিলুশনাল ব্যাধির একটি রূপ বলা যায়। [১] এই রোগে নিম্নলিখিত আচরণ লক্ষ করা যায় :
ওথেলো সিনড্রোম নামটি শেকসপিয়রের নাটক ওথেলোর এক চরিত্রের নাম থেকে নেওয়া হয়েছে যে তার স্ত্রী ডেজডিমোনাকে মিথ্যা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে হত্যা করেছিল। তবে কেউ কেউ দাবি করেন ওথেলো আসলে এই সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন না বরং তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। [৩]
মরবিড জেলাসি বা ওথেলো সিনড্রোমের সাথে সম্পর্কিত অনেক মনস্তাত্ত্বিক বিষয় রয়েছে। কিছু ব্যক্তি এটাকে চিত্তবিভ্রমের সাথে তুলনা করেন।অবচেতনভাবে রোগীর চিত্তের কিছু পরিবর্তন ঘটে ফলে সে তার সঙ্গীর কর্মকাণ্ডকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। এটা শেষ পর্যন্ত এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে সঙ্গীর বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে রোগীর মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে যায়।কিছু মস্তিষ্কের রোগ এই ধরনের বিশ্বাসভঙ্গের চিত্তবিভ্রম ঘটাতে পারে বলে মনে করা হয় । বিজ্ঞানী কব ১৯৭৯ সালে দেখান যে সকল ধরনের সেরিব্রাল ইঞ্জুরি এই রোগ ঘটাতে পারে।[৪] যৌনশক্তি হ্রাস পাওয়ার সাথে ওথেলো সিনড্রোমের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করা হয়। কব ১৯৭৯ সালে ঐসকল বৃদ্ধদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যাদের ক্রমশ হ্রাসমান যৌনশক্তি অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সী স্ত্রীর যৌনাকাঙ্ক্ষা মেটাতে অক্ষম।
অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসহীন, অনির্ভয় ও শঙ্কিত ব্যক্তিরাই তাদের সঙ্গীদের ব্যাপারে বেশি উদ্বিগ্ন থাকে বা তাদের প্রতি সঙ্গীর দায়বদ্ধতা বা প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে।
কেউ কেউ এমন ধারণা পোষণ করে যে ওথেলো সিনড্রোমের রোগীরা এরূপ সন্দেহ করতে পারে যে তাকে এমন ওষুধ বা পদার্থ খাওয়ানো হচ্ছে যা তাদের যৌনক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।[৫]
ঠিক কতজন এই রোগে আক্রান্ত সে ব্যাপারে সঠিক উপাত্ত নেই তবে বর্তমানে এটিকে একটি বিরল রোগ মনে করা হয়।[৬] তবে এখনও অনেক চিকিৎসক এরকম রোগী পাচ্ছেন। পুরুষ ও নারী রোগীর মধ্যে নাটকীয় কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পুরুষ রোগী নারীদের তুলনায় বেশি সহিংস প্রবন এবং নিজ হাত ব্যবহার করে আঘাত বা হত্যা করতে চায় অপরপক্ষে নারীরা ভোঁতা বস্তু ব্যবহার করে।[৭]পুরুষরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর সামাজিক অবস্থান ও ধনসম্পদকে প্রধান হুমকি হিসেবে মনে করে। নারীরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর যৌবন ও শারিরীক আকর্ষণকে হুমকি হিসেবে মনে করে ঈর্ষা করে। [৮]
পুরুষের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রধান উদ্দীপক হচ্ছে দাম্পত্য বিশ্বাসভঙ্গ এবং নারীদের ক্ষেত্রে প্রধান উদ্দীপক হচ্ছে আবেগীয় বিশ্বাসভঙ্গতা। পুরুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি এই বিশ্বাসভঙ্গতা দূর করা না যায় তাহলে তারা আত্মহত্যা করতে পারে অথবা চূড়ান্ত পর্যায়ে সঙ্গিনীকে হত্যা পর্যন্ত করতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে আত্মরক্ষা ব্যতীত সঙ্গীকে খুন করার প্রবণতা কম।এই রোগটি অন্যান্য অনেক রোগের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে যেমন দীর্ঘদিনের মদ্যাসক্তি, অ্যালকোহল ভিন্ন অন্য বস্তু যথা মরফিন, কোকেন, অ্যামফিট্যামিন প্রভৃতির প্রতি আসক্তি । মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ যেমন পার্কিনসন্স রোগ, হান্টিংটন্স রোগ ছাড়াও স্কিটসোফ্রিনিয়া, নিউরোসিস, অ্যাফেক্টিভ ডিস্টার্ব্যান্স বা ব্যক্তিত্ত্বের রোগ ইত্যাদির সাথে ওথেলো সিনড্রোমের সম্পর্ক থাকতে পারে[৯]