ম্যানিলায় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসেসে এবং মিসেস লুজ ম্যাগসেসেয়ের সাথে এলিনর রুজাভেল্ট
নিউইয়র্কভিত্তিক অত্যন্ত সম্পদশালী ও জনপ্রিয় রুজাভেল্ট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এলিয়ানর। কিন্তু শৈশবকাল অতিবাহিত করেছেন নিদারুণ শোকে। পিতা-মাতা উভয়েই মারা যান। পাশাপাশি ভাইদের একজনও মৃত্যুবরণ করেন। পনের বছর বয়সে তিনি লন্ডনের অ্যালেনউড অ্যাকাডেমিতে অধ্যয়ন করেন। সেখানে তিনি নারীবাদী প্রধান শিক্ষিকা ম্যারি সোভেস্ত্রে'র সংস্পর্শে এসে ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত হন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাগমন করে ১৯০৫ সালে ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজাভেল্টকেবিয়ে করেন। কিন্তু ফ্রাঙ্কলিনের মা তাদের বিয়েতে প্রতিবন্ধকতার পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এছাড়াও ১৯১৮ সালে প্রকাশ পায় যে, ফ্রাঙ্কলিন লুসি মার্সার নাম্নী এক মহিলার সাথে প্রণয়াসক্ত ছিলেন। এ গুঞ্জনকে থামিয়ে দেন তিনি। ফ্রাঙ্কলিনের পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে অংশবিশেষ অবশ হয়ে যাওয়ার পর তিনি ফ্রাঙ্কলিনকে ক্ষমা করেন ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করেন। তার পক্ষ হয়ে এলিয়ানর ভাষণসহ নির্বাচনী প্রচারণায়ও অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কের গভর্নর নির্বাচনের পর এলিনর নিয়মিতভাবে ফ্রাঙ্কলিনের পক্ষে জনসমাবেশে অংশ নিতেন।
ফার্স্ট লেডি
ফাঙ্কলিন ডি. রুজাভেল্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় ঐ সময়ে এলিনর রুজভেল্ট ফার্স্ট লেডির মর্যাদায় অভিষিক্ত হন ও বৈশ্বিকভাবে সমাদৃত হন। কিন্তু জাতিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও ভূমিকা রাখায় তিনি যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেন। তিনিই হচ্ছেন প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রপতির পত্নী যিনি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন, সংবাদপত্রে লিখেছেন এবং জাতীয় সম্মেলনে বক্তৃতা প্রদান করেছেন। কিছু কিছু বিষয় বাদে তিনি তার স্বামীর শাসননীতির সাথে একমত হতে পারেনি। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার আর্থারডেল এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে বেকার খনি শ্রমিকদের পরিবারদেরকে নিয়ে একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়েন যা পরবর্তীতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান নিয়ে পরামর্শমূলক কথকতা, আফ্রো-আমেরিকান ও জাপান-আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরশরণার্থীদেরঅধিকার নিয়ে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
বৈশ্বিক প্রভাব
স্বামীর মৃত্যুর পর এলিয়ানর তার জীবনের বাকী সময়টুকুতে রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি মার্কিন প্রশাসনকে নবগঠিত জাতিসংঘে যোগ দিতে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘের ধারণাকে সমর্থন যুগিয়েছেন এবং পরবর্তীকালে জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রতিনিধিরূপে মনোনীত হয়েছিলেন। মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের কমিশনে প্রথম সভাপতিত্ব করেন তিনি। সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের খসড়া নীতিমালার সাথে অন্যান্যদের সাথে তিনিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এরপর তিনি জন এফ. কেনেডি প্রশাসনের নারীর মর্যাদা শীর্ষক প্রেসিডেনশিয়াল কমিশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এলিনর রুজাভেল্ট মারা যাবার পর তাকে বিশ্বে প্রভাববিস্তাকারী অন্যতম নারী ও বিশ্বের সর্বত্র সম্মানীয়া হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।[৩] ১৯৯৯ সালে তিনি গলাপ'স কর্তৃক বিংশ শতকের সেরা ব্যক্তিত্বদের একজনরূপে শীর্ষ দশে স্থান পান।[৪]