এম. এল. জয়সীমা

ভারতীয় ক্রিকেটার

মতগানহালি লক্ষ্মীনার্সু জয়সীমা (; তেলুগু: ఎం.ఎల్.జయసింహ; জন্ম: ৩ মার্চ, ১৯৩৯ - মৃত্যু: ৬ জুলাই, ১৯৯৯) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সেকান্দারাবাদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক ছিলেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫৯ থেকে ১৯৭১ সময়কালে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

এম. এল. জয়সীমা
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
মতগানহালি লক্ষ্মীনার্সু জয়সীমা
জন্ম(১৯৩৯-০৩-০৩)৩ মার্চ ১৯৩৯
সেকান্দারাবাদ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৬ জুলাই ১৯৯৯(1999-07-06) (বয়স ৬০)
সৈনিকপুরি, সেকান্দারাবাদ
অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম পেস, ডানহাতি অফ ব্রেক
ভূমিকাব্যাটসম্যান, কোচ, প্রশাসক, ধারাভাষ্যকার
সম্পর্কবিবেক জয়সীমা (পুত্র), বিদ্যুৎ জয়সীমা (পুত্র)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৯১)
১৮ জুন ১৯৫৯ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৩ এপ্রিল ১৯৭১ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৫৫ - ১৯৭৬হায়দ্রাবাদ
১৯৬৯রিশটন
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতাটেস্টএফসি
ম্যাচ সংখ্যা৩৯২৪৫
রানের সংখ্যা২০৫৬১৩,৫১৬
ব্যাটিং গড়৩০.৬৮৩৭.৪৪
১০০/৫০৩/১২৩৩/৬৫
সর্বোচ্চ রান১২৯২৫৯
বল করেছে২,০৯৭২৭,৭৭১
উইকেট৪৩১
বোলিং গড়৯২.১১২৯.৮৬
ইনিংসে ৫ উইকেট১৮
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং২/৫৪৭/৪৫
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং১৭/–১৫৭/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৯ মে ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দ্রাবাদ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম পেস কিংবা অফ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন এম. এল. জয়সীমা

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

১৯৫৪-৫৫ মৌসুম থেকে ১৯৭৬-৭৭ মৌসুম পর্যন্ত এম. এল. জয়সীমা’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। টেস্টে অভিষেকের পাঁচ বছর পূর্বে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল তার। তিনি সম্মুখের পায়ের উপর ভর রেখে বলকে ড্রাইভ করানোয় পারদর্শী ছিলেন।

এম. এল. জয়সীমা ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। মাঠের উভয় পার্শ্বেই দর্শনীয়ভাবে ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন তিনি। মিডিয়াম পেস বোলিংয়েও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রায়শঃই অফ ব্রেক বোলিং সহযোগে ভারতের পক্ষে বোলিং উদ্বোধনে নামতেন। পাশাপাশি ফিল্ডার হিসেবেও চমৎকার দক্ষতা দেখিয়েছেন। লিকলিকে গড়নের অধিকারী ছিলেন যা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন। বালকসূলভ চাহনি ছিল তার। সিল্কের শার্টের হাতায় বোতাম দিয়ে রাখতেন যা সহজেই তাকে শনাক্ত করা যেতো।[১] ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে তাকে পরিশীলিত ভঙ্গীমার অধিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে।

১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় ১৫ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে এম. এল. জয়সীমা’র। হায়দ্রাবাদের সদস্যরূপে অন্ধ্রপ্রদেশের বিপক্ষে ৯০ রান সংগ্রহ করাসহ ৩/৫১ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান।[১] পরবর্তী দুই মৌসুমে তার খেলার মান দূর্বলতর ছিল। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান দল - তামিলনাড়ু ও মহীশূরের বিপক্ষে দূর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন তিনি। একই মৌসুমে রঞ্জীর খেলায় ২০ উইকেট দখল করেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৫৯ সালে ভারত দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমনার্থে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সর্বমোট ১৬ মৌসুমে ৭৬ খেলায় হায়দ্রাবাদকে নেতৃত্ব দেন। ভারতীয় অধিনায়ক মনসুর আলি খান পতৌদি প্রায়শঃই তার অধিনায়কত্বে খেলেছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ঊনচল্লিশটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন এম. এল. জয়সীমা। ১৮ জুন, ১৯৫৯ তারিখে লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৩ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

২০ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় এম. এল. জয়সীমা’র। লর্ডসে বিপর্যয়কর অবস্থায় প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেন। কিন্তু, পরের দুই টেস্টে তার সপ্রতিভ অংশগ্রহণ বেশ তাৎপর্যময় ছিল। ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কলকাতায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত টেস্টে বেশ ভালো খেলা প্রদর্শন করেন। প্রথম দিনের শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন ও দ্বিতীয় দিনের খেলায় অংশ নেন। তৃতীয় দিনের শেষদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে মাঠে নামেন। চতুর্থ দিনে মাত্র ৫০ রান করেন ও চূড়ান্ত দিনে ৭৪ রানে আউট হন।[২] এরফলে, প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টের সবকটি দিনেই ব্যাট হাতে মাঠে নামার অধিকারী হন।[২]

এক বছর পর ১৯৬০-৬১ মৌসুমে কানপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে সারাদিন ব্যাটিং করে মাত্র ৫৪ রান তুলেন। ৫০৫ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ৯৯ রানে আউট হন। শতরান পূর্তির লক্ষ্যে এক রান সংগ্রহকালে রান আউটের শিকার হন।[৩]

পরবর্তীকালে নিজেকে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে নিয়ে যান। এ সময় মাঝারিসারি থেকে পঙ্কজ রায় তার খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ঐ অবস্থানে থেকে ১৯৬১-৬২ ও ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন এম. এল. জয়সীমা। তন্মধ্যে, শেষ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ৪৪৪ রান তুলেন।

অস্ট্রেলিয়া গমন

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে সিলনের বিপক্ষে করেন ১৩৪ রান। এ মৌসুমে হায়দ্রাবাদের সদস্যরূপে মাঝারিসারিতে ব্যাটিং করে ৭১৩ রান তুলেন। টেস্ট খেলায় ব্যর্থ হলে দলের বাইরে চলে যান তিনি।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমনে ভারত দলে তাকে রাখা হয়নি। তবে, চান্দু বোর্দেবি.এস. চন্দ্রশেখরের আঘাতপ্রাপ্তি এবং অন্যান্যদের খেলার মানের অবনতি ঘটায় দলকে শক্তিশালীকরণের উদ্দেশ্যে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রেরণ করা হয়। সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তিনি সরাসরি অংশ নেন। ব্রিসবেনে বিল লরি’র নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলের মুখোমুখি হন। ৭৪ ও ১০১ রান তুলেন। দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান।[৪]

কিন্তু পরবর্তী টেস্টগুলোর কোনটিতেই আর ২৫ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেননি। সংগৃহীত তিনটি শতরানের প্রত্যেকটিই সিরিজের তৃতীয় টেস্টে করেছিলেন। ১৯৭০-৭১ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে অংশ নেন। অধিনায়ক অজিত ওয়াড়েকর পরবর্তীকালে উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি জয়সীমা’র অবদান অমূল্য ছিল। পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে নিজস্ব শেষ ইনিংসে ঘণ্টাখানেক ক্রিজে অবস্থান করে ২৩ রান তুলেন। সুনীল গাভাস্কারের সাথে জুটি গড়ে খেলাকে রক্ষা করেন।[৫]

অবসর

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুম থেকে ১৯৮০-৮১ মৌসুম পর্যন্ত জাতীয় দল নির্বাচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন এম. এল. জয়সীমা। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ভারত দলের ব্যবস্থাপক হিসেবে দলকে নিয়ে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ১৯৭৮ সালে এমসিসি’র আজীবন সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। এছাড়াও, কিছুকাল টিভি ধারাভাষ্যকর্মের সাথে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে তিনি ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন তিনি। তার সন্তান বিবেক জয়সীমা ও বিদ্যুৎ জয়সীমা - উভয়েই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার ছিলেন।[৬] ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। অতঃপর ৬ জুলাই, ১৯৯৯ তারিখে ৬০ বছর বয়সে সেকান্দারাবাদের সৈনিকপুরি এলাকায় এম. এল. জয়সীমা’র দেহাবসান ঘটে।

তার মৃত্যুতে দেশব্যাপী শোকের ছায়া নেমে আসে। মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের ন্যায় ব্যাটসম্যানসহ অনেকেরই উজ্জ্বীবনী শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছিলেন নিজেকে। দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন না করা সত্ত্বেও অজিত ওয়াড়েকরের সাথে একত্রে দলকে সাজিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে প্রয়োজনীয় উপদেশমালা প্রদান করেছেন।

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  • ^ Partab Ramchand, "A Prince Among Cricketers"

আরও দেখুন

আরও পড়ুন

  • Sujit Mukherjee, Matched Winners

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানসামাজিক সমস্যালামিনে ইয়ামালকোপা আমেরিকা২০২৪ কোপা আমেরিকাউয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপউয়েফা ইউরো ২০২৪আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)মুকেশ আম্বানিঅপারেশন সার্চলাইটছয় দফা আন্দোলনরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বাংলাদেশআশুরাযুক্তফ্রন্টবাংলা ভাষা আন্দোলনব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলশেখ মুজিবুর রহমানস্পেন জাতীয় ফুটবল দলকাজী নজরুল ইসলামআনহেল দি মারিয়ালিওনেল মেসিলাহোর প্রস্তাববাংলাদেশের সংবিধানবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাফিফা বিশ্বকাপফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের তালিকারাজাকারকারবালার যুদ্ধমিয়া খলিফাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহকিম কার্দাশিয়ানভূমি পরিমাপ