উভে জেলার

জার্মান ফুটবলার

উভে জেলার (জার্মান: Uwe Seeler, জার্মান উচ্চারণ: [ˈuːvə ˈzeːlɐ]; ৫ নভেম্বর ১৯৩৬ – ২১ জুলাই ২০২২) একজন জার্মান পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় এবং ফুটবল কর্মকর্তা ছিলেন। ভক্তদের কাছে উনস উভে (আমাদের উভে) ডাকনামে পরিচিত জেলার তার খেলোয়াড়ি জীবনের অধিকাংশ সময় হামবুর্গার এবং কর্ক সেল্টিকের হয়ে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছিলেন। তিনি মূলত কেন্দ্রীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেললেও মাঝেমধ্যে দ্বিতীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছিলেন।[১]

উভে জেলার
২০১৬ সালে জেলার
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৯৩৬-১১-০৫)৫ নভেম্বর ১৯৩৬
জন্ম স্থানহামবুর্গ, পশ্চিম জার্মানি
মৃত্যু২১ জুলাই ২০২২(2022-07-21) (বয়স ৮৫)
মৃত্যুর স্থাননর্ডারস্টেট, জার্মানি
উচ্চতা১.৭০ মিটার (৫ ফুট ৭ ইঞ্চি)
মাঠে অবস্থানআক্রমণভাগের খেলোয়াড়
যুব পর্যায়
১৯৪৬–১৯৫৩হামবুর্গার
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছরদলম্যাচ(গোল)
১৯৫৩–১৯৭২হামবুর্গার৪৭৬(৪০৪)
১৯৭৮কর্ক সেল্টিক(২)
মোট৪৭৭(৪০৬)
জাতীয় দল
১৯৫৩–১৯৫৪পশ্চিম জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৮১০(১৫)
১৯৫৪–১৯৭০পশ্চিম জার্মানি৭২(৪৩)
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

১৯৪৬–৪৭ মৌসুমে, মাত্র ১০ বছর বয়সে, জার্মান ফুটবল ক্লাব হামবুর্গারের যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে জেলার ফুটবল জগতে প্রবেশ করেছিলেন এবং এই দলের হয়ে খেলার মাধ্যমেই তিনি ফুটবল খেলায় বিকশিত হয়েছিলেন। ১৯৫৪–৫৫ মৌসুমে, জার্মান ক্লাব হামবুর্গারের মূল দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন, যেখানে তিনি ১৮ মৌসুম অতিবাহিত করেছিলেন; হামবুর্গারের হয়ে তিনি ৪৭৬ ম্যাচে ৪০৪টি গোল করেছিলেন। সর্বশেষ ১৯৭৭–৭৮ মৌসুমে, তিনি আয়ারল্যান্ডীয় ক্লাব কর্ক সেল্টিকে যোগদান করেছিলেন; কর্ক সেল্টিকের হয়ে মাত্র এক মৌসুম খেলার পর তিনি অবসর গ্রহণ করেছিলেন।

১৯৫৩ সালে, জেলার পশ্চিম জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে পশ্চিম জার্মানির বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন। প্রায় ২ বছর যাবত পশ্চিম জার্মানির বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলার পর, তিনি ১৯৫৪ সালে পশ্চিম জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন; পশ্চিম জার্মানির জার্সি গায়ে তিনি সর্বমোট ৭২ ম্যাচে ৪৩টি গোল করেছিলেন। তিনি পশ্চিম জার্মানির হয়ে সর্বমোট ৪টি ফিফা বিশ্বকাপ (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ এবং ১৯৭০) অংশগ্রহণ করেছিলেন, যার মধ্যে ১৯৬৬ সালে হেলমুট শোনের অধীনে ফিফা বিশ্বকাপের রানার-আপ হয়েছিলেন।[২]

ব্যক্তিগতভাবে, জেলার বেশ কিছু পুরস্কার জয়লাভ করেছিলেন, যার মধ্যে তিনবার জার্মানির বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জয় অন্যতম। ২০০৪ সালে পেলে কর্তৃক ফিফার ১২৫ জন সেরা জীবিত খেলোয়াড়ের একজন হিসেবে জেলারলে মনোনীত করা হয়েছিলেন।[৩] তিনি প্রথম ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানির গ্রেট অর্ডার অব মেরিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। দলগতভাবে, জেলার সর্বমোট ২টি শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন, যার মধ্যে উভয়ই হামবুর্গারের হয়ে জয়লাভ করেছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন

উভে জেলার ১৯৩৬ সালের ৫ই নভেম্বর তারিখে পশ্চিম জার্মানির হামবুর্গে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানেই তার শৈশব অতিবাহিত করেছিলেন। তার বাবার নাম আরভিন জেলার, যিনিও একজন ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। তার নাতি লেভিন ওজতুনালিও একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়।

আন্তর্জাতিক ফুটবল

জেলার পশ্চিম জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে পশ্চিম জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৫৩ সালে তিনি পশ্চিম জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন। পশ্চিম জার্মানির বয়সভিত্তিক দলের হয়ে তিনি প্রায় ২ বছরে ১০ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ১৫টি গোল করেছিলেন।

১৯৫৪ সালের ১৬ই অক্টোবর তারিখে, ১৭ বছর, ১১ মাস ও ১১ দিন বয়সে, ডান পায়ে ফুটবল খেলায় পারদর্শী জেলার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পশ্চিম জার্মানির হয়ে অভিষেক করেছিলেন।[৪] উক্ত ম্যাচের ২২তম মিনিটে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় বার্নহার্ড টারমাটের বদলি খেলোয়াড় হিসেবে তিনি মাঠে প্রবেশ করেছিলেন;[৫] ম্যাচটি ফ্রান্স ৩–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল।[৬] পশ্চিম জার্মানির হয়ে অভিষেকের বছরে জেলার সর্বমোট ৩ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের ৩ বছর, ৭ মাস ও ২৩ দিন পর, পশ্চিম জার্মানির জার্সি গায়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন;[৭][৮] ১৯৫৮ সালের ৮ই জুন তারিখে, আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচের ৪০তম মিনিটে পশ্চিম জার্মানির হয়ে গোলটি করার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রথম গোলটি করেছিলেন, এছাড়াও ফিফা বিশ্বকাপে এটি তার প্রথম গোল ছিল।[৯][১০] এছাড়াও, ৩ দিন পর, চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম গোলে অ্যাসিস্ট করার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রথম অ্যাসিস্টটি করেছিলেন।[১১] অন্যদিকে, অভিষেকের প্রায় ৫ বছর পর, ১৯৫৯ সালের ২১শে অক্টোবর তারিখে, নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচে আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রথম হ্যাট্রিকটি করেছিলেন;[১২] তিনি উক্ত ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির হয়ে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম গোল করেছিলেন।[১৩][১৪] ১৯৬১ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর তারিখে, প্রীতি ম্যাচে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত ম্যাচে তিনি পশ্চিম জার্মানির হয়ে প্রথমবারের মতো অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন,[১৫] ম্যাচটি পশ্চিম জার্মানি ৫–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল, যেখানে তিনি ৯০ মিনিট খেলার পাশাপাশি ম্যাচের প্রথম, তৃতীয় এবং চতুর্থ গোলটি করার মাধ্যমে খেলোয়াড়ি জীবনের দ্বিতীয় হ্যাট্রিকটি করেছিলেন।[১৬][১৭]

১৯৬৬ সালের ১৬ই জুলাই তারিখে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের ভিলা পার্কে অনুষ্ঠিত আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তিনি পশ্চিম জার্মানির জার্সি গায়ে তার ৫০তম ম্যাচ খেলেছিলেন,[১৮][১৯] ম্যাচটি পশ্চিম জার্মানি ০–০ গোলে ড্র করেছিল,[২০] যেখানে তিনি ৯০ মিনিট খেলার পাশাপাশি ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির হয়ে অধিনায়কত্ব করেছিলেন।[২১] ১৯৭০ সালের ৯ই জুন তারিখে জেলার ৩৪ বছর বয়সে পশ্চিম জার্মানির হয়ে তার সর্বশেষ ম্যাচটি খেলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।[২২] পশ্চিম জার্মানির নুরেমবার্গের মাক্স-মরলক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে উক্ত ম্যাচে পশ্চিম জার্মানি ৩–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল,[২৩] যেখানে তিনি পশ্চিম জার্মানির অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[২৪] আন্তর্জাতিক ফুটবলে, তার ১৬ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি সর্বমোট ৭২ ম্যাচে ৪৩টি গোল করেছিলেন।

অবসর

১৯৯৫ সালে, জেলার হামবুর্গারের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তিনি প্রায় আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একটি আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল, তবে জেলার নিজে এই অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন না।

স্বীকৃতি

ভক্সপার্ক স্টেডিয়ামের বাইরে অবস্থিত জেলার ডান পায়ের একটি স্মৃতিস্তম্ভ

জেলার তার নম্রতা এবং শালীনতার কারণে একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন এবং বর্তমানেও হামবুর্গ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উনস উভে (আমাদের উভে) নামে পরিচিত। জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাকে ১৯৭২ সালে জার্মান জাতীয় দলের দ্বিতীয় সম্মানসূচক অধিনায়ক করেছিল (প্রথমজন ছিলেন ফ্রিৎস ভাল্টার)। ২০০৩ সালে, তিনি তার শহর হামবুর্গের সম্মানসূচক নাগরিক হয়েছেন; এই সম্মান প্রথমবারের মতো একজন ক্রীড়াবিদকে প্রদান করা হয়েছিল।[২৫] একই বছর তিনি তার স্মৃতিকথা ডানকে, ফুসবাল (ধন্যবাদ, ফুটবল) প্রকাশ করেছেন, যা ২০০৯ সালে ইংরেজি সংস্করণ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৫ সালে হামবুর্গারের স্টেডিয়ামের সামনে তার ডান পায়ের একটি দৈত্যাকার স্মৃতিসৌধ উন্মোচন করা হয়েছে।

চলচ্চিত্র জীবন

জেলার ১৯৭২ সালের হাইনৎস আরহার্টের জনপ্রিয় কৌতুক চলচ্চিত্র উইলি ভার্ড ডাস কিন্ড শোন শাউকেন-এ (ইংরেজি শিরোনাম: উইলি ম্যানেজেস দ্য হোল থিং; অনুবাদ: উইলি পুরো জিনিসটি পরিচালনা করে) স্বভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। উক্ত চলচ্চিত্রে জাংবর্ন (আরহার্ট) নামে একজন ম্যানেজার একটি ফুটবল ক্লাব পরিচালনা করেছেন। শেষ পর্যন্ত, তার ক্লাব একটি জনপ্রিয় খেলোয়াড়ের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল: যা ছিলেন জেলার। যদিও ক্লাবের সবাই আনন্দিত ছিল, তবে কিন্তু জাংবর্ন বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে "শয়তানটি কে সেই লোকটি?"।

পরিসংখ্যান

আন্তর্জাতিক

দলসালম্যাচগোল
পশ্চিম জার্মানি১৯৫৪
১৯৫৬
১৯৫৮
১৯৫৯
১৯৬০
১৯৬১
১৯৬২
১৯৬৩
১৯৬৪
১৯৬৫
১৯৬৬১২
১৯৬৭
১৯৬৮
১৯৬৯
১৯৭০১০
সর্বমোট৭২৪৩

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী