উত্তর সাগর
উত্তর সাগর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি প্রান্তীয়, ভূভাগীয় সাগর, যেটি ইউরোপীয় মহীসোপানের উপর অবস্থিত। সাগরটির পূর্বে নরওয়ে ও ডেনমার্ক, পশ্চিমে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ড, এবং দক্ষিণে জার্মানি, নেদারল্যান্ড্স, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স। সাগরটি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৯৭০ মাইল ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৫৬০ মাইল দীর্ঘ এবং এর আয়তন প্রায় ৫,৭৫,০০০ বর্গকিমি। উত্তর সাগর ঐতিহাসিকভাবে জার্মান মহাসমুদ্র বা জার্মানীয় সাগর নামেও পরিচিত ছিল। [৪] লাতিন ভাষায় এর নাম Mare Germanicum (মারে গের্মানিকুম)।
উত্তর সাগর | |
---|---|
![]() | |
অবস্থান | আটলান্টিক মহাসাগর |
স্থানাঙ্ক | ৫৬° উত্তর ০৩° পূর্ব / ৫৬° উত্তর ৩° পূর্ব |
প্রাথমিক অন্তর্প্রবাহ | ফর্থ, ইথান, এলবে, ভেসার, এম্স, রাইন/ভাল, মোজ, শেল্ট, স্পে, টে, টেম্স, হাম্বার, টিস, ওয়্যার ও টাইন নদী। |
অববাহিকার দেশসমূহ | নরওয়ে, ডেনমার্ক, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড, জার্মানি, নেদারল্যান্ড্স, বেলজিয়াম এবং ফ্রান্স |
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য | ৯৭০ কিমি [১] |
সর্বাধিক প্রস্থ | ৫৬০ কিমি |
পৃষ্ঠতল অঞ্চল | ৫৭৫,০০০ বর্গকিমি[২] |
গড় গভীরতা | ৯৪ মি[৩] |
সর্বাধিক গভীরতা | আনুমানিক ৬৬০ মি[২] |
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/ae/NASA_NorthSea1_2.jpg/220px-NASA_NorthSea1_2.jpg)
ইউরোপের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নদী উত্তর সাগরে পতিত হয়েছে। এমনকি বাল্টিক সাগরের পানিও এই উত্তর সাগরের মাধ্যমেই নিষ্কাশিত হয়। উত্তর সাগর পূর্বে স্কাগেরাট প্রণালী ও কাটেগাট প্রণালীর মাধ্যমে বাল্টিক সাগরের সাথে যুক্ত। সাগরটি পশ্চিমে ডোভার প্রণালীর মাধ্যমে ইংলিশ চ্যানেল হয়ে এবং উত্তরে নরওয়েজীয় সাগরের মাধ্যমে আটলান্টিক সাগরের সাথে যুক্ত। বহু যুগ ধরেই উত্তর সাগর বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ এবং এর আশেপাশের দেশগুলির জন্য মূল্যবান সম্পদের ভাণ্ডার। তবে অর্থনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি এর পরিবেশগত অবস্থাও বর্তমানে ভাবনার বিষয়।
উত্তর সাগর গড়ে ১০০ মিটার গভীর; তবে এটি কোন কোন এলাকায় ৭০০ মিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে, আবার কোথাও কোথাও এর গভীরতা মাত্র ১৫ মিটারও হতে পারে। উত্তর সাগর তিনটি ভূগাঠনিক প্লেটের সংযোগস্থলের উপর অবস্থিত, ফলে এখানে ভূমিকম্প ও ক্ষুদ্র আকারের সুনামি হতে পারে। তবে সাগরটির উপকূলের গঠন ভূগঠনপ্রণালী নয়, বরং হৈমবাহিক সঞ্চালনের ফলাফল। উত্তর সাগরের উত্তর তটরেখা সুউচ্চ খাড়া ঢাল ও এদের মধ্যবর্তী খাঁড়ি বা ফিয়র্ড নিয়ে গঠিত; অন্যদিকে এর দক্ষিণ উপকূলের বৈশিষ্ট্য বালুকাময় বেলাভূমি ও সমতল কর্দমভূমি। দক্ষিণের এই সমতল এলাকাগুলি ঝড়ের সময় সহজেই সাগরের পানিতে প্লাবিত হতে পারে, তাই উত্তর সাগরের দক্ষিণ উপকূলকে রক্ষা করার জন্য বিস্তৃত ডাইক ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে।
উত্তর সাগরের নৌপরিবহন ইউরোপীয় সভ্যতার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। রোমান ও ভাইকিঙেরা উভয়েই সাগরটিকে করায়ত্ত করতে চেয়েছিল। হানজেয়াটিক লিগ ও নেদারল্যান্ড্স উত্তর সাগরের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। উত্তর সাগরে আধিপত্যে স্থাপনের মধ্য দিয়েই পরাক্রমশালী নৌশক্তি হিসেবে যুক্তরাজ্যের আবির্ভাব ঘটে।
বর্তমানে উত্তর সাগরের সামরিক গুরুত্ব কমে গিয়ে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন মৎস্যশিকার ও নৌপরিবহন বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিককালে শক্তির অন্যান্য উৎস যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি ও বায়ু শক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এগুলি আহরণের বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করা হয়েছে।