ইসমাইল

একজন নবী

ইসমাʿঈল (ইংরেজি: Ishmael; আরবি: إسماعيل; হিব্রু ভাষায়: יִשְׁמָעֵאל‎‎) হলেন ইহুদিধর্ম, খ্রীষ্টধর্মইসলাম অনুসারে ইব্রাহিমের জ্যেষ্ঠপুত্র যিনি হাজেরার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামে ইসমাইলকে নবী এবং ইসলামী নবী মুহাম্মদের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও তিনি মক্কাকাবা নির্মাণের সাথে যুক্ত হন। এই উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে কুরআন, কুরআন ভাষ্য (তাফসীর), হাদিস, মুহাম্মদ ইবনে জারির আল-তাবারির মত ঐতিহাসিক বর্ননাভিত্তিক সংকলন, এবং ইস্রায়েলীয় (বাইবেল বা প্রাচীন বনি ইসরাইল ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ইসলামি গ্রন্থ যা ইহুদী বা খ্রিস্টান উৎস থেকে উদ্ভূত)। [১] [২][৩]


ইসমাʿঈল
إسماعيل
ইশ্মায়েল

ইসলামি চারুলিপিতে লেখা ইসমাইল
জন্ম২৪২৪ হিজরি
(আনু. ১৮০০ খ্রীষ্টপূর্ব)
মৃত্যু(বয়স ১৩৬)
অন্যান্য নামইশ্মায়েল (হিব্রু ভাষায়: יִשְׁמָעֵאל‎‎)
সন্তানবনী ইসমাʿঈল
পিতা-মাতাইব্রাহিম
হাজেরা
আত্মীয়ইসহাক (ভাই)

ইসলামে ঐতিহাসিক আখ্যান

জন্ম

ইসমাইল ছিলেন ইব্রাহিমের প্রথম পুত্র; তার মা ছিলেন হাজেরা। ইসমাইলের জন্মের কাহিনীকে ইসলামী উৎসে খুব কমই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। গল্পের অনেক সংস্করণ আছে, যার মধ্যে ইসমাইলের জন্ম সম্পর্কে একটি ভবিষ্যদ্বাণী অন্তর্ভুক্ত। ইবনে কাসির এর একটি উদাহরণ, যার বর্ণনায় বলা হয়েছে যে একজন ফেরেশতা গর্ভবতী হাজেরাকে তার সন্তানের নাম ইসমাইল রাখেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, "তার হাত সবার উপর থাকবে, এবং সবার হাত তার বিরুদ্ধে থাকবে। তাঁর ভাইয়েরা সব জমি শাসন করবেন।" ইবনে কাসির মন্তব্য করেছেন যে এটি মুহাম্মদের নেতৃত্বের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে।[২] :৪২

ইসমাইল ও হাজেরাকে ইব্রাহিম মক্কায় নিয়ে গেলেন

ইসলামী গ্রন্থে ইসমাইল ও হাজেরাকে ইব্রাহীমের দ্বারা মক্কায় নিয়ে যাওয়া[৪] ইসমাইলের কাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেহেতু এটি মক্কার মনোযোগ এনে দেয় এবং একটি পবিত্র এলাকা হিসেবে মক্কাকে সত্যায়িত করে।[২] :৬১ ইসলামী ঐতিহ্য বলছে, ইব্রাহীমকে আল্লাহ হাজেরা ও ইসমাইলকে মক্কায় নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন এবং পরে ইব্রাহীম কাবা নির্মাণের জন্য মক্কায় ফিরে এসেছিলেন।[৫] এই সব বর্ণনায়, সাকিনা (ঈশ্বরের পাঠানো বাতাস বা আত্মা), অথবা ফেরেশতা জিবরাঈল তাদের কাবার অবস্থানে যাবার পথ দেখান, যেখানে ইব্রাহীম (আ.) এটি নির্মাণ করেন এবং পরে হাজেরা ও ইসমাইলকে সেখানে রেখে ফিরে যান (নীচে আলোচিত অন্যান্য সংস্করণে বলা হয়েছে যে কাবা নির্মাণ পরবর্তিতে ঘটে এবং ইসমাইল তাতে অংশ নিয়েছিলেন)। সাধারণত বলা হয় যে, হাজেরা ইব্রাহিমকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তাদেরকে তিনি কার ভরসায় এখানে রেখে যাচ্ছেন। ইব্রাহিম উত্তর দেন, আল্লাহর ভরসায়, এর উত্তরে হাজেরা যা বলেন তা তার বিশ্বাসকে প্রদর্শন করে, তিনি বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন আল্লাহ তাদেরকে পথ দেখাবেন। এরপর হাজেরা ও ইসমাইলের জল শেষ হয়ে যায় এবং ইসমাইল অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন। হাজেরা বিষণ্ণ হয়ে পড়েন এবং জলের খোঁজে, আল-সাফা এবং আল-মারওয়াহ পাহাড়ের মাঝখানে সাতবার দৌড়ান। হজ্জ্বের সময় মুসলিমরা হাজেরার এই কাজকে স্মরণ করে, যেখানে মুসলমানরা সা'য়ী এর অংশ হিসেবে এই একই পাহাড়ের মধ্যে দৌড়ায়।[৬] যখন তিনি ইসমাইলের কাছে ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখেন যে ইসমাইল (আ.) এর পায়ের আঘাতে জল প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং হাজেরা পানি সংগ্রহ করার পর লক্ষ করেন পানি প্রবাহ থামছে না, তাই তিনি বাঁধ দেন এবং বলেন জমজম অর্থাত থাম থাম। এ থেকে এই ঝর্না বা কূপ জমজম নামে পরিচিত। এক পর্যায়ে জুরহুম নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠী পাখিদেরকে জলের চারপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখে এবং তা তদন্ত করে। তারা হাজেরাকে জিজ্ঞেস করে যে তারা সেখানে বসতি স্থাপন করতে পারবে কিনা, তিনি তাদেরকে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন, এবং অনেক সংস্করণ বলে যে ইসমাইল বড় হওয়ার সাথে সাথে তিনি এই জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে বিভিন্ন জিনিস শিখেছেন। এই গল্পের অসংখ্য সংস্করণ আছে, প্রতিটি বিভিন্ন উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন। এই সারসংক্ষেপে যে সংস্করণটি উল্লেখ করা হল তা এবং অন্যান্য সংস্করণ আল-তাবারীর ইতিহাসে পাওয়া যায়[৭] এবং রুভেন ফায়ারস্টোনের জার্নিস ইন হলি ল্যান্ড গ্রন্থে এর উল্লেখ রয়েছে।

উৎসর্গ

অধিকাংশ মুসলমান বিশ্বাস করে যে ইব্রাহীমকে তার পুত্র ইসমাইলকে উৎসর্গ করতে বলা হয়েছে, যদিও কোরআনে ছেলের নাম উল্লেখ করা হয়নি। একাধিক সংস্করণ প্রস্তাব করে যে এটি মূলত একটি মৌখিক গল্প যা কোরআন এবং অতিরিক্ত ধারাভাষ্যে লেখার আগে প্রচারিত হয়েছিল।[৮] :৯২–৯৫ নরম্যান ক্যালডার ব্যাখ্যা করেছেন, "মৌখিক আখ্যানের ক্ষেত্রে এর বিভিন্ন সংস্করণে ফর্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খতার অস্থিতিশীলতা এবং একটি যথাযথ সৃজনশীল নমনীয়তা পরিলক্ষিত হয়, যা একে একটি অনন্য শিল্পে পরিণত করে।" :৯২–৯৩ প্রতিটি সংস্করণ প্রকৃতপক্ষে একটি "শিল্পের অনন্য রচনা", নির্দিষ্ট ধারণা উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন উপায়ে যেমন অন্যরকম থেকে পৃথক, যেমন ইসহাকের চেয়ে ইসমাইলের গুরুত্ব কারণ তিনি প্রথম সন্তান ছিলেন।

ইব্রাহিম তার ছেলে ইসমাইলকে কোরবানি দিচ্ছেন; ইব্রাহিম তাকে নিম্রোদ দ্বারা আগুনে নিক্ষেপ করলেন

ইসলামী সাহিত্যে ইসমাইল সম্পর্কিত সাধারণ আখ্যানে এই ত্যাগকে হয় পরীক্ষা বা ব্রতের অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিছু সংস্করণে বলা হয়েছে যে শয়তান হাজেরা, ইসমাইল ও ইব্রাহিমের কাছে গিয়ে ঈশ্বরের আদেশ পালন করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। যখনই শয়তান বলে যে ইব্রাহিম ইসমাইলকে উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন, তখন প্রত্যেকে উত্তর দেয় যে, যদি আল্লাহ আদেশ দেন, তবে তাদের মেনে চলা উচিত। ঘটনাক্রমে অব্রাহাম ইসমাইলকে এই আদেশ সম্পর্কে বলেন এবং ইসমাইল উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক হন এবং অব্রাহামকে ঈশ্বরের কথা শুনতে উৎসাহিত করেন। প্রায়ই ইসমাইলকে দেখানো হয় যে তার জামা হাজেরার কাছে ফিরিয়ে আনতে, তাকে শক্ত করে বেঁধে রাখতে, ছুরি ধারালো করে, এবং তাকে নিচে নামিয়ে দেয়, যাতে ঈশ্বরের আনুগত্য করার সংকল্পে কোন দ্বিধা না হয় বা হাত না কেঁপে ওঠে।

যখন ইব্রাহীম ইসমাইলকে হত্যা করার চেষ্টা করছেন, তখন হয় ছুরিটি তার হাতে ফিরে আসে অথবা মৃত্যু প্রতিরোধের জন্য ইসমাইলের উপর তামা দেখা যায় এবং আল্লাহ্‌ ইব্রাহিমকে বলেন যে তিনি আদেশ পালন করেছেন। বাইবেলের মত কুরআনে ছেলেটির পরিবর্তে কোন পশুর (ভেড়া) উল্লেখ নেই; বরং তাকে 'মহান ত্যাগ' (থিভিন আথিম) দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।[৯] যেহেতু ভেড়ার বলিদান ইব্রাহিমের পুত্রের (এবং ইসলামে একজন নবী) চেয়ে বড় হতে পারে না, তাই এই প্রতিস্থাপন হয় উৎসর্গের ধর্মীয় প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দিকে ইঙ্গিত করে, অথবা ভবিষ্যতের ইসলামী নবী মুহাম্মদ ও তার সঙ্গীদের আত্মত্যাগকে নির্দেশ করে (যারা ইসমাইলের বংশধর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নির্ধারিত ছিল)। প্রতি বছর ঈদুল আযহায় সারা বিশ্বের মুসলমানরা ইব্রাহিমের আত্মত্যাগের স্মরণে একটি পশু জবাই করে যা আল্লাহর পথে নিজেদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। [১০] পরবর্তীতে হিস্টোরিওগ্রাফভিত্তিক সাহিত্যে বাইবেলীয় আখ্যান অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেখানে ইসমাইলের পরিবর্তে একটি ভেড়াকে বলি দেয়া হয়। [২] [৭]

এই আখ্যানে ইসমাইলের কর্মকাণ্ড তাকে আতিথেয়তা এবং আনুগত্যের একটি বিশিষ্ট আদর্শের দিকে নিয়ে গেছে। বাইবেলের সাথে তুলনা করলে কোরানের এই কাহিনী অনন্য, কারণ ইব্রাহীম তার পুত্রের সাথে কথা বলেন এবং পুত্র এই বলিদান সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং অনুমোদন দেন। উপরে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু সংস্করণে, ইসমাইল বিভিন্ন ভাবে নিশ্চিত করেন যে তিনি বা তার পিতা কেউই ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করতে দ্বিধা বোধ করেন না। এইভাবে ইসমাইল হলেন আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করার একটি আদর্শ যা ইসলামের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।[১১]

যদিও আধুনিক মুসলমানরা সাধারণত বিশ্বাস করে যে ইসমাইল ছিলেন সেই পুত্র যাকে প্রায় উৎসর্গ করা হচ্ছিল, প্রারম্ভিক ইসলামের পণ্ডিত ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই বিষয়ে অনেক বিতর্ক আছে। উভয়ের জন্য এমন প্ররোচনামূলক যুক্তি আছে, প্রকৃতপক্ষে, অনুমান করা হয় যে ১৩১টি ঐতিহ্য বলে যে ইসহাক সেই পুত্র ছিলেন, অন্যদিকে ১৩৩ টি ঐতিহ্য বলে তিনি ছিলেন ইসমাইল। [২] :১৩৫ এই ধরনের বিতর্কে কোন পুত্রের সাথে ও কোথায় এই ঘটনাটি ঘটে তা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। :১৪৪ যুক্তি দেয়া হয় যে, গল্পটির উৎপত্তি র‍্যাবিনিক গ্রন্থে, এবং সেখান থেকে এটিকে ধীরে ধীরে মক্কার উপর ধর্মীয় গুরুত্বারোপ করার জন্য এবং হজ্জ্ব বা তীর্থযাত্রার সাথে গল্পটিকে সম্পর্কিত করার জন্য ইসলামে গ্রহণ করা হয়েছে। [৮] :৮৭ ইসমাইলকে উৎসর্গ করা হচ্ছিল - এই দাবির পক্ষের প্রারম্ভিক ইসলামী পণ্ডিতগণ বলেন, ইহুদিগণ ইসহাকের কথা বলেন কেননা তারা ইসমাইলকে নিয়ে ঈর্ষান্বিত কেননা তিনিই আরবদের পূর্বপুরুষ, এবং তার বদলে যে ভেড়াটিকে উৎসর্গ করা হয় তার শিং কাবায় ঝুলিয়ে রাখা হয়, যা নির্দেশ করে পুত্রটি ইসমাইলই ছিল (কেননা ইসমাইল মক্কায় ছিল, যেখানে ইসহাক সেসময় সিরিয়ায় ছিল) [৭] :৮৮–৯০ কোন পুত্রের কোরবানি দিতে হবে তা নির্ধারণ করার জন্য কেবল কুরআনের পাঠের দিকে তাকালেও সেক্ষেত্রে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। কুরআনে ইসমাইলের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘটনাটি হ'ল কোরবানি বর্ণনার পরপরই ইব্রাহিমকে ইসহাকের জন্মের কথা বলা হয়েছিল, সুতরাং অবশ্যই ইসমাইলকেই কোরবানি দেবার কথা ছিল। :৮৮ তবে তাবারি যুক্তি দেখান যে, এই পুত্রটি কেবল ইসহাকই হতে পারেন, যাকে জন্মের ঘোষণার দ্বারা নির্দেশ করা হয়, সেই ঘোষণা যা এই উৎসর্গের আখ্যানের শুরুতে রয়েছে, "সুতরাং আমরা তাকে সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিয়েছি" দ্বারা ইসহাককেই নির্দেশ করা হচ্ছে। :১৩৫–১৩৬ :৮৯ প্রামাণিক হাদিসগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে যায়না, কারণ তা হাদিসের সংজ্ঞার বিরুদ্ধে যায়।

কাবা নির্মাণ

এক পর্যায়ে, হাজেরার মৃত্যুর পর (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মনে করা হয়), ইসমাইল জমজমের আশেপাশের এলাকায় বসতি স্থাপনকারী সম্প্রদায় জুরহুমের এক মহিলাকে বিয়ে করেন। ইব্রাহিম মক্কায় ইসমাইলের কাছে গিয়েছিলেন এবং যখন তিনি তাঁর বাড়ীতে পৌঁছলেন তখন ইসমাইল সেখানে ছিলেন না। তার বদলে ইসমাইলের স্ত্রী ইব্রাহিমকে শুভেচ্ছা জানালেন, কিন্তু তিনি তাঁকে স্বাগত জানালেন না বা উদার হলেন না।

ইব্রাহিম তাকে ইসমাইলকে বলতে বলেন যে তিনি সন্তুষ্ট হননি, অথবা তিনি তাকে "দরজার সীমানা" পরিবর্তন করতে বলেন। ফিরে আসার পর স্ত্রীর কাছ থেকে এই কথাগুলো শুনে ইসমাইল বুঝতে পারেন যে তার বাবা ফিরে এসেছেন এবং তিনি তাকে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে উপদেশ দিচ্ছেন, ফলে তিনি তাই করেন। তারপর তিনি জুরহুমের আর এক মহিলাকে বিয়ে করলেন। ইব্রাহিম আবার ইসমাইলের বাড়িতে গেলেন এবং ইসমাইলের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে দেখা করলেন। এই স্ত্রী খুব দয়ালু ছিলেন এবং তাঁর জন্য খাবার সরবরাহ করলেন। ইব্রাহিম তাকে ইসমাইলকে বলতে বলেন যে তিনি "তার দরজার সীমানা" নিয়ে সন্তষ্ট। ইসমাইলের স্ত্রী যখন ইসমাইলকে কথাটি বললেন তখন ইসমাইল বুঝলেন যে তার বাবাই এটা বলেছেন এবং তিনি তার স্ত্রীকে রেখে দেন।[২] [৭]

কাবা নির্মাণের কাহিনীর অনেক সংস্করণ আছে যা মোটামুটি উল্লেখযোগ্য উপায়ে ভিন্ন, যদিও সবগুলো অনুসারেই ইব্রাহিম কাবা নির্মাণ বা পরিষ্কার করেন, এবং এরপর সাথে সাথে বা অজানা সময় পর ঈশ্বর আব্রাহামকে হজ্জ্ব বা তীর্থযাত্রা প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন। কখন এই ঘটনাটি ঘটেছিল, এখানে অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা ছিল নাকি ছিল না, এখানে কালো পাথর বা হাজরে আসওয়াদ ছিল নাকি ছিল না, ইসমাইল তার পিতাকে সাহায্য করেছিলেন নাকি করেন নি - এই সব প্রশ্নে এই আখ্যানটি ভিন্ন ভিন্ন হয়। যারা বলেন যে ইসমাইল এই নির্মাণে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই বর্ণনা করেন যে ইব্রাহিম মক্কায় তৃতীয়বার ইসমাইলের সাথে দেখা করেন, যে সময়ে তারা কাবা নির্মাণ করেন। কেউ কেউ বলে ইসমাইল চূড়ান্ত পাথরের সন্ধান করেন, কিন্তু তিনি যেটা নিয়ে আসেন সেটা ইব্রাহিম গ্রহণ করেননি। তার বদলে একজন স্বর্গদূত হাজরে আসওয়াদ নিয়ে এসেছিলেন যাকে ইব্রাহিম সঠিক স্থানে স্থাপন করেন। এরপর এই স্থানটি দেখভাল করতে এবং অন্যদেরকে হজ্জ্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেবার জন্য ইব্রাহিম ইসমাইলকে এখানে রেখে যান।[২] [৭] হজ্বের শুরু নিয়ে অনেক সংস্করণ রয়েছে, এবং পণ্ডিতেরা বিশ্বাস করেন যে হজ্জ্ব এর প্রথা এর আগে থেকেই ছিল, এবং ইব্রাহিমের দ্বারা সেখানে ইসলামের বিকাশের মাধ্যমে হজ্জ্বের প্রারম্ভিক পৌত্তলিক সংযোগকে দূরীভূত হয়। :১০১

ইসলামী চিন্তায়

নবীমূলক কর্মজীবন

ইসমাইলকে ইসলামে নবী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য নবীদের সাথে কুরআনে তালিকাভুক্ত করা হয়।[১২] [১৩] [১৪] [১৫] অন্যান্য আয়াতে, যেমন ২১:৮৫[১৬] এবং ৩৮:৪৮-এ[১৭] ইসমাইল ধৈর্য্যশীল, সৎ এবং ধার্মিক হওয়ার জন্য প্রশংসিত হন।[১৮] একটি বিশেষ উদাহরণ যা স্বতন্ত্রভাবে ইসমাইলকে বর্ণনা করে তা হ'ল 19: 54-55 [১৯] একটি বিশেষ উদাহরণ যা ইসমাইলকে পৃথকভাবে বর্ণনা করে তা হল ১৯:৫৪-৫৫ আয়াত - "আর স্মরণ কর এই কিতাবে ইসমাইলকে। তিনি ছিলেন সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী এবং [আল্লাহ্‌র] রাসূল, নবী। আর তিনি তার পরিবার-পরিজনকে প্রার্থনা ও দানের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি ছিলেন তার আল্লাহ্‌র সন্তোষপ্রাপ্ত।"[২০] ইসমাইলের বংশধর হিসেবে মুহাম্মদের নবুয়ত ন্যায্য হয় এবং এতে প্রাক-ইসলামী যুগ থেকে নবীদের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।

বংশবৃদ্ধি এবং আরবদের সাথে মেলামেশা

ইসমাইলের "আরবদের প্রতিষ্ঠাতা" হিসেবে প্রথম উল্লেখ করেন জোসেফাস।[২১] ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইসমাইল ও তাঁর বংশধর ইসমাইলাইটদেরকে ইহুদি ও খ্রিস্টীয় সাহিত্যে আরবদের সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে, এবং প্রায়ই আরব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।[২২] ইসলাম একটি ধর্ম হিসেবে বিকশিত হওয়ার আগে, ইসমাইলকে নানাভাবে চিত্রিত করা হয়, কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর ইসমাইলকে প্রায় সবসময় ইহুদী ও খ্রিস্টান শাস্ত্রে নেতিবাচক আলোকে দেখা যায়, যেন তিনি ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মে "অপর" এর প্রতীক হয়ে গেছেন।[২৩] :২–৩ ইসলামী সম্প্রদায় আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠার পর, ইসমাইল এবং এইভাবে মুসলমানরা ইব্রাহীমের প্রিয় বংশধর - এই ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ইসমাইল সম্পর্কে কিছু ইহুদী মিদ্রাশ সংশোধন করা হয় যাতে তাকে আরো নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করা হয়। :১৩০ ইহুদি ও মুসলিম উৎস্য অনুযায়ী ইসমাইলের বংশধরদের বংশলতিকায় পার্থক্য দেখা যায়। ইসলামের বিকাশ ইসলামের উপর যেকোনভাবে ইহুদিধর্ম ও খ্রিস্টধর্ম থেকে ভিন্ন হবার জন্য চাপ সৃষ্টি করে, আর এর প্রভাবে ইসমাইলের উত্তরসুরিদের থেকে আরবদের উদ্ভবের বংশধারাটিও প্রভাবিত হয়। :১১৭

আজ, কতিপয় খ্রীষ্টান বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর আজ তেল[২৪] এবং রাজনৈতিক শক্তি[২৫] দিয়ে আরব জাতিকে আশীর্বাদ করে ইসমাইলের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। প্রাক-ইসলামী যুগে আরবদের তিনটি স্বতন্ত্র দল ছিল- বাইদা, আরিবা এবং মুস্তারিবা। বাইদা ছিল "অতীতের কিংবদন্তি আরব", আর আরিবা ছিল "দক্ষিণ আরব"। ইসমাইলের বংশধররা ছিল উত্তর আরব যারা মুস্তারিবা বা "আরবীকৃত আরব" নামে পরিচিত হয়। মুস্তারিবাকে আরব হিসেবে বর্ণনা করা হয় যেহেতু বিশ্বাস করা হয় যে ইসমাইল যখন মক্কায় চলে আসেন এবং জুরহুমের আরবি উপজাতিতে বিয়ে করেন তখন ইসমাইল আরবি শেখেন। ইসমাইলের বংশধারাটি তার পুত্র কেদারের কাছে বাহিত হয়, তারপর আদনান, তারপর মুস্তারিবা, ও তারপর কুরাইশ পর্যন্ত বাহিত হয়।[২৩] :১১৮ এইভাবে মুহাম্মদের পূর্বপুরুষ ইসমাইল অব্দি প্রসারিত হয়, যা "আব্রাহামের উৎপত্তিগত বাইবেলীয় পূর্বপুরুষত্বের সাথে আরব বংশধারাকে" যুক্ত করে,[২৬] :১৪৭ এবং মুহাম্মদকে মক্কা ও কাবার সাথে সংযুক্ত করে। :১৫২

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী