ইন্দিরা নাথ
ইন্দিরা নাথ (জন্ম: ১৪ই জানুয়ারী ১৯৩৮) একজন ভারতীয় অধ্যাপক, চিকিৎসক এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর প্রধান অবদান মানবদেহের রোগের অনাক্রম্যতা সংক্রান্ত গবেষণা এবং কুষ্ঠরোগ কীভাবে মানবদেহের স্নায়ুর ক্ষতি করে সেই সংক্রান্ত গবেষণা। অধ্যাপক নাথের বিশেষায়িত ক্ষেত্র হ'ল রোগের অনাক্রম্যবিজ্ঞান, রোগবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞানে জৈবপ্রযুক্তি এবং সংক্রামক রোগ[১][২]।
ইন্দিরা নাথ | |
---|---|
জন্ম | ১৪ জানুয়ারি ১৯৩৮ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | অখিল ভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান সংস্থান, নতুন দিল্লি |
পরিচিতির কারণ | রোগের অন্যক্রমতা সংক্রান্ত গবেষণা এবং ভারতে কুষ্ঠ দূরীকরণ |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী, লোরিয়েল ইউনেস্কো পুরস্কার শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | অন্যাক্রমতা |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | এইমস, জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান, ভারত |
কর্মজীবন
ইন্দিরা নাথ নতুন দিল্লির অখিল ভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান সংস্থান বা অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইএমএস) থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতক হয়েছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যে বাধ্যতামূলকভাবে হাসপাতালের প্রশিক্ষণ শেষে এমডি (প্যাথলজি) রূপে এইমস-এ যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৭০ সালে ইন্দিরা যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন নাফিল্ড বৃত্তি নিয়ে। এই সময়কালে তিনি অনাক্রম্যতার উপরে বিশেষজ্ঞ হতে এসেছিলেন। তিনি সংক্রামক রোগের ক্ষেত্র বিশেষত কুষ্ঠরোগ নিয়ে কাজ করেছেন, রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনসের অধ্যাপক জন তুর্ক এবং লন্ডনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল রিসার্চ-এর ডাঃ আর জে ডাব্লিউ রিস-এর সাথে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৭০-এর দশকে ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কুষ্ঠরোগাক্রান্ত রোগী ছিল, এই সংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ[৩]।
তিনি বিদেশে অভিজ্ঞতা অর্জনে গুরুত্ব দিলেও ভারতের বাইরে কাজ করতে চাননি। তিনি এবং তাঁর স্বামী পড়াশোনা শেষ করার তিন বছরের মধ্যেই ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতে ফিরে এসেছিলেন[৪]।
"দেশে ফিরে আসার জন্য বেশ উত্তেজনাপূর্ণ সময় ছিল কারণ আমি অনুভব করেছিলাম যে আমি ভারতে এই বিষয়ে গবেষণা ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সত্যই ভূমিকা নিতে পারি," - ২০০২ সালে নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত একটি সাক্ষাতকারে তিনি এই কথা বলেছিলেন[৪]।
ভারতে ফিরে আসার পরে, তিনি এইমস-এর অধ্যাপক গুরসরণ তালওয়ারের জৈবরসায়ন বিভাগে যোগদান করেছিলেন, যেখানে অনাক্রম্যতার উপরে গবেষণা সবেমাত্র শুরু হয়েছিল। পরে ১৯৮০ সালে তিনি প্যাথলজি বিভাগে চলে আসেন এবং তিনি এইমস এ জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ (১৯৮৬) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন তবে আইএনএসএ-এসএন বোস গবেষণা অধ্যাপক হিসাবে তিনি এইমস-এ কাজ চালিয়ে যান।
প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী যখন ভারতে বিজ্ঞান গবেষণা উন্নত করার জন্যে ১০০ জন বিজ্ঞানীকে পরামর্শদাতা রূপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, ইন্দিরা নাথও তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন[৪]।
ইন্দিরা দেবী ২০০২ সালে প্যারিসের পিয়ের ও মারি ক্যুরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি পেয়েছিলেন। মালয়েশিয়ার এইআইএমএসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন পদে এবং হায়দরাবাদের ব্লু পিটার রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক (কুষ্ঠ গবেষণা কেন্দ্র) রূপেও তিনি কাজ করেছেন।
গবেষণা
তাঁর গবেষণাটি মানবদেহের কুষ্ঠর ক্ষেত্রে কোষীয় প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়াগুলির পাশাপাশি রোগের ফলে স্নায়ুর ক্ষতির পরিমাপের উপর কেন্দ্রীভূত। তাছাড়া, মানবদেহে কুষ্ঠ ব্যাসিলাস বেঁচে আছে কিনা, তা বোঝার সূচক সন্ধানেও তিনি গবেষণা করেছেন[5]।
কুষ্ঠ গবেষণা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) দ্বারা ভারতে ১৯৮২ সালে চালু হওয়া মাল্টি ড্রাগ থেরাপির সাহায্যে ভারতে এই রোগের প্রকোপ ১৯৮৩ সালে প্রতি ১০,০০০ এর জনের মধ্যে ১জনের এরও কম হয়ে গেছে। ইন্দিরার মতো বিজ্ঞানীদের অবদান এই অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
পুরস্কার
পুরস্কারের বছর | পুরস্কার বা সম্মানের নাম | পুরস্কারদাতা সংস্থা |
---|---|---|
২০০৩ | সিলভার ব্যানার | টাসক্যানি, ইতালি |
২০০৩ | শ্যাভেলিয়র অরদ্রে ন্যাশনাল দু মেরিট | ফ্রান্স সরকার |
২০০২ | নারীদের মধ্যে বিজ্ঞান (এশিয়া প্যাসিফিক)পুরস্কার | লোরিয়েল ইউনেস্কো |
১৯৯৯ | পদ্মশ্রী[৫] | ভারত সরকার |
১৯৯৫ | আর ডি বিড়লা পুরস্কার | |
১৯৯৫ | কোশ্রানে গবেষণা পুরস্কার | ইউ কে সরকার |
১৯৯৪ | বাসন্তী দেবী আমির চাঁদ পুরস্কার | আই সি এম আর |
১৯৯০ | ওম প্রকাশ ভাসিন পুরস্কার | |
১৯৮৮ | ক্লেটন স্মারক বক্তৃতা পুরস্কার | |
১৯৮৭ | প্রথম নিত্য আনন্দ বক্তৃতা সম্মান | আই এন এস এ |
১৯৮৪ | ক্ষনিকা পুরস্কার | আই সি এম আর |
১৯৮৩ | শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার | ভারত সরকার |
১৯৮১ | জালমা ট্রাস্ট বক্তৃতা পাঠ | আই সি এম আর |
সদস্যপদ
ইন্দিরা নাথ বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা ও পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, যেমনঃ ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান অকাদেমি, এলাহাবাদ (১৯৮৮), ভারতীয় বিজ্ঞান অকাদেমি, বেঙ্গালুরু (১৯৯০)[৬], ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান অকাদেমি (আইএনএসএ; ১৯৯২)[৭], চিকিতসা বিজ্ঞানের জাতীয় অকাদেমি(ভারত) (১৯৯২)[৮] ইত্যাদি।তিনি মন্ত্রিসভায় বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন এবং ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান অকাদেমির পররাষ্ট্র সচিব (১৯৯৫-৯৭), কাউন্সিলের সদস্য (১৯৯২-৯৪, ১৯৯৮-২০০৬) , সহসভাপতি (২০০১-০৩) এবং সভাপতি রূপেও কাজ করেছেন।
আরও দেখুন
- বিজ্ঞান গবেষণায় মহিলারা