আহোম বিবাহ পরম্পরা
আহোম বিবাহ পরম্পরা (চীনা ভাষা:傣 阿洪 婚姻传统,থাই ভাষা:การแต่งงานแบบดั้งเดิม ไทอาหม, ইংরাজী ভাষা:Tai Ahom Marriage Tradition) মুখ্য তিনদিনে সম্পন্ন ফুরালুং ধর্মের নিয়মে পালন করা আহোমদের একমাত্র বিবাহ পরম্পরা।[১] আহোম বিবাহ পরম্পরার রীতিনীতি মতে রিক্ খ্বান উৎসব বিবাহের প্রথম দিন চাওবান উৎসব বিবাহের দ্বিতীয় দিন এবং চ'-ক্লঙ তৃতীয় দিন তৈরি করেন। আহোমদের বিবাহ প্রথাত মুখ্য সময়ের পরম্পরা বর ঘর মেয়ে অনার দিন মুখ্য প্রথা চ'-ক্লঙ করেন। আহোম বিবাহে মোট জুরণ সহ কুড়িটি নিয়ম থাকে।
ইতিহাস এবং বিবরণ
আহোম বিবাহ পদ্ধতির সূত্রপাত প্রাচীন মধ্য সাম্রাজ্য চীন দেশের মৌঙ ফিতে হয়েছিল। চাং বংশের শাসক লেংডন অক কাই ম'-হুংর কন্যা নাঙ হুন ফাকে বিয়ে করতে সূচনা করেছিলেন। তৃতীয় সময়ের কার্যসূচী চ'-ক্লঙ বিবাহের পূর্বে কিছু আইন নীতি নিয়ম করে নেওয়া হয়। সেই নিয়মসমূহ হচ্ছে- ১. জোরণ এবং টেকেলি দেয়া. ২. নোবনী, ৩.প্রীতিভোজ, ৪. রিক্ খ্বান উৎসব, ৫. চাওবান উৎসব, ৬. আপতাঙ করা বা গা ধোওয়া, ৭. গাঁঠিয়ন খুন্দা, ৮. দৈয়ন দেয়া, ৯. বিবাহ যাত্রা, ১০. সোয়াগুড়ি তোলা, ১১. বর রভা নিচে মণ্ডপের সম্মুখে বসা, ১২. মধ্য থেকে তুলে এনে বরের বামদিকে কনেকে বসানো, ১৩. বর এবং কনেকে সাত পুরুষের ইতিহাস বলা, ১৪. চ'-ক্লঙ আয়োজন, ১৫. কনের বরের হাতে হেংদান[১] প্রদান, ১৬. ম-লুঙে বর কনের যুগ্ম জীবনের জন্য দেওয়া উপদেশ, ১৭. সোনার আংটি এবং রূপার টেমি কাটারি সলোয়ার নিয়ম, ১৮. পঞ্চামৃত ভোজন, ১৯. কড়ি খেলার নিয়ম, ২০. কনের বরের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করারপর পাচঁ জন দেবতাক করা প্রর্থনা।
জোরণ
তিনদিনের বিবাহ কার্যসূচীর পূর্বে কোনো একদিন জু-রণ কর্ম সম্পন্ন করা হয়।টাই আহোমদের ভাষায় এর অর্থ যুগ্ম জীবন অর্থাৎ যুগ্ম জীবনের পত্তন এই অনুষ্ঠানের দ্বারাই করা হয়। জো শব্দের অর্থ হচ্ছে বাস করা বা চিরন্তন এবং রণ শব্দের অর্থ হল যুগ্ম অর্থাৎ একসাথে বাস করা। জোরণে বর ঘর থেকে কনে ঘর পর্যন্ত আ-অলংকার যেনে-কেন-রু (আহোমদের পারম্পরিক কানে পরা অলংকার), মোটো খারু , ফা ছিট এবং পরম্পরাগত পাটের সাজের সাথে দুটি মাটির টেকেলির সাথে আম পাতার ডালি এবং মাটি মাস, হলুদ ইত্যাদি একটি টোপোলাতে নিয়ে যায়। জোরণের অন্য টোপোলাতে রূপার টেমি কাটারি এবং তামোল পানে ধুনিয়া একটি গামোছায় বেঁধে আনে। সাধারণত এই জোরণ দিতে বরের মা এবং সাথে অনেক মতা ও মাইকী মানুষও আসেন। বরপরিবারের মাইকী মানুষগুলি প্রথমে পাটি যায় কনেকে বহুয়ায় এবং তারপর কাপের-কানি পড়ায়। চুলে তেল দিয়ে ফণির আচুরি রূপার তামোল এবং সোনার আঙঠি রেখে জোরণের নাম গায়। জোরণ দেওয়া মানুষগুলি ঘরে উলটি যাওয়ার সময় একটি টেকেলি এবং মাতি মাস, হলুদের টোপোলা এবং একটি টেমি কাটারি কনের ঘর থেকে বর পর্যন্ত বলে নিয়ে যায়। সাথে কনের বাপকে বরের দেওয়া বরের সজ্জাটি কনে ছুয়ে দেয়ারপর নিয়ে যায়। বর এবং কনে উভয়ে এই টেমি কাটারি বিবাহ কর্ম শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনবরত হাতে রাখে। হাতে এমনভাবে কাটারি রাখলে বাইরের কোনো ভূত-প্রেত বা শত্রু আক্রমণ করতে পারে না বলে বিশ্বাস করা হয়।আসামে আহোমদের মধ্যে বিবাহ কার্যে বর-কনে উভয়কে গা ধোওয়ানোর নিয়ম আছে। তিনবার স্নান করে পাঁচবার গা ধোওয়ানো হয়। প্রথম দিন রিক খ্বন উৎসবে বেলা বর-কনের মাথায় তেল দেয়ার নিয়ম। এরপর স্নানের নিমিত্তে চারটা বাঁশের খুঁটা পুতে তার উপর কলের ঢকুয়ায় সুন্দরভাবে মেরিয়া বেই তৈরি করে নেন। তার উপর তামুলি পীরা যায় গা ধুইয়ে দেন। বেইর মাটির নিচে বাইরের ভূত-প্রেত না পাওয়া পর্যন্ত জনবিশ্বাসে একটি কণী, একজোড়া পাণ-তামোল এবং একটি বেজি পুঁতে রাখেন। স্নানের জল আনার সময় তিরোতারা নাম গেয়ে ঘটের জল তুলে আনে। এই জল এনে প্রথমে ঘরের সম্মুখের ছলে অল্প অল্প করে তিনবার ঢেলে দেন। এরপরে বর-কনে বেই নিয়ে স্নান করাতে তুলে আনে। স্নানের নিমিত্তে মাস-হলুদ মিহিকরে বেড়ে দেওয়া হয়। সাথে জল ঢেলে কাঁসা বা পিনিসের কলসী নেয়। স্নানের জল আনতে যাওয়ার সময় একটি দুলরীতে চাউল ভরে একগাছি বান-ফাইর সাথে পাণ-তামোল এবং একটি পইছা দেয়। একটি কলসিতে আমর ডালির জল ভরা হয়। স্নানের সময় বর কনের সম্মুখে এই দুলরী কলসি আগে রেখে দেয়।
ভোজ
সাধারণত বর-কনে উভয়ের ঘরেই বিয়ের কয়েকদিন আগে একটা ভোজ দেন। নয়জন ঊর্ধপুরুষ দেবতার নিমিত্তে এই ভোজের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও কনে ঘরে কন্যা ধরা একটি ভোজ দেন। আজকাল আহোমদের বিয়ের এই ভোজটির কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আগের সময়ে এই ভোজে গরু, মোষ, গাহরী বিভিন্ন ধরনের মাছ, শাক-পাতা, লুকলাও, নামলাও ইত্যাদি দেওয়া হত। বিয়ের মঙ্গলের জন্য নয়জন দেবতার উপলক্ষে উৎসর্গ করা এই ভোজে বর-কনে খেতে যাবার পূর্বেই হাতে তামোল-পানের বাটা নিয়ে বাকীদের আগে খ্রুপ-তাং জানায়। নিমন্ত্রিতরা তাঁদের জনমিং দেয়।