আল জাজিরা ইংরেজি

কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

আল জাজিরা ইংরেজি হল আন্তর্জাতিক ২৪ ঘণ্টার ইংরেজি ভাষার সংবাদ ও সাম্প্রতিক ঘটিত বিষয়নির্ভর টিভি চ্যানেল, যার সদর দপ্তর কাতারের দোহায় অবস্থিত। এটি আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক মালিকানাধীন ও কাতার সরকার দ্বারা অর্থায়িত একটি টেলিভিশন চ্যানেল

আল জাজিরা ইংরেজি
উদ্বোধন১৫ নভেম্বর ২০০৬
নেটওয়ার্কআল জাজিরা
মালিকানাআল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক
চিত্রের বিন্যাসএইচডিটিভি ১০৮০আই২৫
স্লোগান"Setting The News Agenda"
দেশকাতার
ভাষাইংরেজি
প্রচারের স্থানবিশ্বব্যাপী
প্রধান কার্যালয়দোহা, কাতার
ভ্রাতৃপ্রতিম
চ্যানেল(সমূহ)
আল জাজিরা, আল জাজিরা আমেরিকা, আল জাজিরা বালকান, আল জাজিরা তুর্কী আল জাজিরা ডকুমেন্টারি চ‍্যানেল, আল জাজিরা বাংলা
ওয়েবসাইটআল জাজিরা ইংরেজি
স্ট্রিমিং মিডিয়া
https://www.aljazeera.com/live

এটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইংরেজি টিভি চ্যানেল আল জাজিরা অ্যামেরিকা এবং মূল আরবি চ্যানেল আল জাজিরা এর সহোদর টেলিভিশন চ্যানেল। এই টেলিভিশন কেন্দ্রটি স্বয়ং ধারণকৃত সংবাদ উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ, তথ্যচিত্র, সরাসরি বিতর্ক, সাম্প্রতিক বিষয়াবলি, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, খেলাধুলা প্রভৃতি বিষয়ে সরাসরি এবং আদিতে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। এটি প্রথম ইংরেজি টিভি চ্যানেল যার সদর দপ্তর মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত। এছাড়াও চ্যানেলটি স্বয়ং বিশ্বের প্রথম বিশ্বব্যাপী এইচ ডি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক হিসেবে দাবি করে।[১]

ইতিহাস

আল জাজিরা ইংলিশ চালু হয়েছিল ২০০৬ সালের ১৫ নভেম্বর।[২][৩] চ্যানেলটির নাম ছিল আল জাজিরা ইন্টারন্যাশনাল,কিন্তু চালু হওয়ার ৯ মাস আগে চ্যানেলটির নাম পরিবর্তন করে আল জাজিরা ইংলিশ করা হয়। কারণ চ্যানেলের একজন সমর্থক যুক্তি দিয়েছিলেন যে মূল আরবি ভাষার চ্যানেল আল জাজিরা আরবি ইতিমধ্যেই একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রচারকারীতে পরিণত হয়েছে তাই নতুন করে ইন্টারন্যাশনাল (আন্তর্জাতিক) শব্দটি ব্যবহার না করাই উত্তম।[৪]

চ্যানেলটির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ৪ কোটি দর্শক সংখ্যা অর্জন করা,তবে এটি শুরুতেই লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ দর্শক সংখ্যা অর্জন করেছে[৫]যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন নেটওয়ার্কের একজন মুখপাত্রের মতে, ২০১৩ সালে চ্যানেলটি প্রায় ১০০ টি দেশে স্যাটেলাইট ও কেবলের মাধ্যমে প্রায় ১৩০ মিলিয়ন (১৩ কোটি) দর্শকের কাছে উপলব্ধ ছিল[৬]। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এটির জনপ্রিয়তা পূর্বে খুব একটা বেশি ছিল না। এটি শুধুমাত্র একটি স্যাটেলাইট পরিষেবা এবং অল্প সংখ্যক কেবল নেটওয়ার্ক দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।[৭] চ্যানেলটি প্রাথমিকভাবে অনলাইন স্ট্রিমিং-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়। তবে ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক,ওয়াশিংটন ডিসি,লস এঞ্জেলস ইত্যাদি বড় শহরগুলোতে সম্প্রচার শুরু করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের জনপ্রিয়তা বিস্তারের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে।[৮]

আল জাজিরা ইংলিশ সাংবাদিক মিশরে আটক

২০১৩ সালে মিশরের নামে মিথ্যা প্রচার এবং একটি সন্ত্রাসী সংঘটনকে সহায়তা করার অভিযোগে আল জাজিরা ইংলিশের তিনজন সাংবাদিক পিটার গ্রেস্ট,মোহাম্মদ ফাহমি ও বাহের মোহাম্মদকে আটক করে মিশরের পুলিশ[৯]। মিশর সরকারের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির বিরোধিতা দমনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করার অভিযোগ আনেন এ সাংবাদিকেরা।[১০]

এ ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যপকভাবে নিন্দিত হয়। আল জাজিরা,বিবিসিসহ আরো অনেক সংবাদ মাধ্যম এর নিন্দা জানায় ও দ্রুত আল জাজিরারা সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি জানায়। সাংবাদিকদের মুক্তির জন্য জাতিসংঘ,ইউরোপীয় ইউনিয়নমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানায়। তবে মিশর সরকার এসব আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে।

পিটার,ফাহমি ও বাহের-এর বিচার প্রায় ১০ বার পেছানো হয়। মিশরের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য কিছু অযৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপনের অভিযোগ রয়েছে[১১]। ২০১৪ সালের ২৩ জুন এ তিনজন সাংবাদিককে মিশর দোষী সাব্যস্ত করে। বাহেরকে ১০ বছর,পিটার ও ফাহমিকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়[১২]। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ রায়ের নিন্দা জানানো হয়। জাতিসংঘ,যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,কানাডা,অস্ট্রেলিয়াসুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে এ রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও মিডিয়ার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করা বলে অভিহিত করা হয়।[১৩][১৪]

বিভিন্ন সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার আহ্বান মিশরের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয় ও বলা হয় বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে এ রায় দিয়েছে।[১৫]

আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আল জাজিরা সাংবাদিক পিটার গ্রেস্টকে ২০১৫ সালে মিশরীয় সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।[১৬] ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অবশেষে অপর দুই সাংবাদিক মোহাম্মদ ফাহমি ও বাহের মোহাম্মদকে মুক্ত করা হয়।[১৭][১৮]

আল জাজিরা আমেরিকা

২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি আল জাজিরা যুক্তরাষ্ট্রে একটি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল চালু করার ঘোষণা দেয় যা পরবর্তীতে ৬০% আমেরিকা থেকে ও ৪০% আল জাজিরা ইংলিশ থেকে অনুকরণ করে সম্প্রচার করে[১৯]। পরবর্তীতে এটি সম্পূর্ণ আমেরিকান সংবাদ সম্প্রচার চালায়।[২০] তবে সকাল ও মধ্যাহ্নের সংবাদ ও বিভিন্ন তথ্যচিত্র আল জাজিরা ইংলিশ থেকে অনুকরণ করা হতো। ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি আল জাজিরা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আল জাজিরা আমেরিকা বন্ধের সিন্ধান্ত নেয়।[২১]

সংবাদ কভারেজ

দোহা,লন্ডনওয়াশিংটন ডিসিতে আল জাজিরা ইংলিশের তিনটি সম্প্রচার কেন্দ্র রয়েছে। এ তিনটি কেন্দ্রে আল জাজিরার স্টুডিও রয়েছে সেখান থেকে প্রতি ঘন্টায় সংবাদ ও অন্যান্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়।

আল জাজিরা ইংলিশের সারাবিশ্বে প্রায় ২১ টি ব্যুরো রয়েছে। এছাড়া আল জাজিরা আরবি ও আল জাজিরা তুর্কের ৭০ টি ব্যুরো থেকে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করে।

আল জাজিরা সবসময় মধ্যপ্রাচ্যেকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের কভারেজগুলো করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো প্রধান ঘটনা আল জাজিরা খুব গুরুত্ব সহকারে সম্প্রচার করে।

২০০৮-২০০৯ সালে ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের সময় আল জাজিরা ইংলিশ ও ইরানের প্রেস টিভি একমাত্র ইংরেজি ভাষার আন্তর্জাতিক সম্প্রচারকারী হিসেবে সরাসরি সংবাদ সম্প্রচার করে। তখন পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সেখানে তাদের সংবাদদাতা পাঠাতে পারেনি কারণ ইসরায়েল বা মিশরের ভেতর দিয়ে গাজায় বিদেশী সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছিল[২২]। কিন্তু সেখানে তখনো আল জাজিরার দুইজন সাংবাদিক অবস্থান করছিলেন,তাই তাদের পক্ষে সংঘাতের "এক্সক্লুসিভ কভারেজ" দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।[২৩]

২০১১ সালে মিশরীয় বিপ্লবের লাইভ কভারেজের জন্য আল জাজিরা সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ও নতুনভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিতি পায়। দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি রিপোর্টে দাবি করে সে সময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রায় ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন দর্শক আল জাজিরা ইংলিশ দেখেছেন[২৪]। আল জাজিরা যখন লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ কভার করছিল তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আল জাজিরার জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন মন্তব্য করেন,"আল জাজিরার দর্শক সংখ্যা আমেরিকায় বাড়ছে কারণ এটিতে আসল খবর প্রচারিত হয়।"

"আপনি এটির সাথে একমত নাও হতে পারেন,কিন্তু আপনি চিন্তা করুন যখন আপনি এক মিলিয়ন বিজ্ঞাপনের পরিবর্তে ২৪ ঘন্টা সত্য খবর পাচ্ছেন, তবে তা আমাদের কাছে অর্থপূর্ণ নাও হতে পারে কিন্তু আমাদের বিদেশীদের কথাও ভাবতে হবে[২৫]।"

লক্ষ্য

ইংরেজি ভাষাভাষী পশ্চিমা দেশগুলোর মত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না এমন দুইশত কোটি দর্শকের জন্য সংবাদ পরিবেশনা চ্যানেলটির মূল লক্ষ্য। তাদের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে চ্যানেলটি নিজস্ব আঞ্চলিক বাচনভঙ্গি ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি উভয়ের সমন্বয় সাধন করে তাদের সংবাদ অনুষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

তথ্যচিত্র

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • AlJazeera.com - প্রাতিষ্ঠানিক ইংরেজি ওয়েবসাইট
  • AlJazeera.net - প্রাতিষ্ঠানিক আল জাজিরা ওয়েবসাইট
  • AlJazeera.com.bd - প্রাতিষ্ঠানিক আল জাজিরা ওয়েবসাইট
🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী