আল-কাবিসি
আবু আল-সাকর আবদ আল-আজিজ ইবনে উসমান ইবনে আলী আল-কাবিসি সাধারণত আল-কাবিসি নামে পরিচিত, (লাতিন ভাষায় আলচাবিটিয়াস বা আলকাবিটিয়াস) এবং কখনও কখনও আলচাবিজ, আবদেলাজিস, আবদিলাজিজ (আরবি: عبدالعزيز) (মৃত্যু: ৯৬৭) নামেও পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন মুসলিম জ্যোতিষী, জ্যোতির্বিদ এবং গণিতবিদ।
জীবনী
আলচাবিটিয়াস মূলত ইরাকের কাবিসাতে জন্মগ্রহণ করেন।[১] পরবর্তিতে তিনি সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে যান এবং সেখানে তিনি সাইফ আল-দাওলার প্রাসাদে থেকে কাজ করতেন। তিনি আলেপ্পোর হামদানীদ আমিরের দরবারে একজন জ্যোতিষী এবং যুবরাজের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করতেন। তিনি জ্যোতিষশাস্ত্র এবং গণিত এর উপর অনেকগুলো রচনা লিখেন। তবে তার জ্যোতিষশাস্ত্রের দুটি গ্রন্থ বিশেষ আলোড়ন ফেলে। সে গ্রন্থ দুটি তিনি অন্যান্য জ্যোতিষীদের মূল্যায়ন এবং নির্দেশনার জন্য লিখেন। সেসময় কয়েকজন একটি কঠিন বিজ্ঞান হিসেবে জ্যোতিষশাস্ত্রের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাই আল-কাবিসি তাদের নিজ নিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে একটি পত্র লিখেন, যাতে রাজকুমার মূল্যায়ন করতে পারে, কোন কোন জ্যোতিষীরা বিজ্ঞানে সত্যিকারের শিক্ষিত ছিল এবং কারা জ্যোতিষী হওয়ার ছদ্মবেশে অনুশীলন করছে। আল-কাবিসির কাজ সেই সময়ের বিজ্ঞান এবং রাতের আকাশ অধ্যয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ছিল। তিনি ৯৬৭ সালে মারা যান।[২]
কাজ
আল-কাবিসি তার বিচারবিষয়ক জ্যোতিষশাস্ত্র "ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য আর্ট অব জাজমেন্টস অব দ্য স্টারস" গ্রন্থের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।[২] এটি আলেপ্পোর আমির প্রিন্স সাইফ আল-দাওলাকে উৎসর্গ করা হয়।[৩] তবে ১৪৭৩ থেকে ১৫২১ সালের মধ্যে মুদ্রিত বারোটি লাতিন সংস্করনসহ কমপক্ষে পঁচিশটি আরবি পাণ্ডুলিপি এবং লাতিন অনুবাদের দুই শতাধিক পাণ্ডুলিপি্ এর মধ্যে টিকে আছে।[৩] আরবি পাঠ্যটির অন্তত তিনটি লাতিন অনুবাদ হয়, যা বেশ কয়েকটি ভাষ্যকে আকর্ষণ করে। ফলস্বরূপ, এটি অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায়ও অনূদিত হয়। "জোহানস হিসপ্যালেনসিস" ১২ শতকে এটি অনুবাদ করেন।[৪] এছাড়াও "মেলচিওর সেসা" ১৫১২ সালে ভেনিসে এটি প্রকাশ করেছিলেন।[২] আল-কাবিসি সম্পর্কে "জন অব স্যাক্সনির" লেখা রয়েছে,[২][৫] যিনি তার জ্যোতিষশাস্ত্রের রচনাগুলোতে মন্তব্য করেন।
আল-কাবিসি পাটিগণিতের উপর একটি পরিমিত বই লিখেন, "রিসালা ফি আনওয়া' আল-আদাদ" (সংখ্যার ধরন নিয়ে গ্রন্থ)। যেখানে তিনি ইউক্লিডের নিখুঁত সংখ্যা এবং সেগুলো গঠন করার নিয়ম ও "সাবিত ইবনে কুররার" উপপাদ্যটি বন্ধুত্বপূর্ণ সংখ্যার উপর বিশ্লেষন করেন।[৪]
অন্যান্য কাজ:[১]
- রিসালা ফি আল-আব'আদ ওয়াল-আজরম (দেহ এবং দূরত্ব সম্পর্কিত গ্রন্থ);
- কিতাব ফি ইতবাত সিনা'আত আহকাম আল-নুজুম (জ্যোতিষশাস্ত্রের শিল্পকে নিশ্চিত করার বিষয়ে);
- হাল আল-জিজাত (জ্যোতির্বিজ্ঞানের সারণী সমাধানে);
- রিসালা ফি ইমতিহান আল-মুনাজ্জিমীন (জ্যোতিষীদের পরীক্ষার জন্য একটি গ্রন্থ);
- শুকুক আল-মাজিসতি (আলমাজেস্তের উপর সন্দেহ);
নক্ষত্রের শক্তিতে বিশ্বাসটি আলেকজান্দ্রিনিয়ান ইয়্যাট্রোম্যাথমেটিশিয়ান সম্প্রদায় এবং হার্মিস ট্রিসমেগিস্তোসের আরও প্রাচীন সম্প্রদায় থেকে শুরু হয়।[৪]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- আলচাবিটিয়াস (১৫১২)। জন অব সেভিল, সম্পাদক। আলচাবিটিয়াস এর একটি নতুন মুদ্রিত ভাষ্য (আবদিলাজিজের ইসাগোজিকাল বই) (লাতিন ভাষায়)। মেলচিওর সেসা।
- ইয়ামামাতো, কেইজি (২০০৭)। "কাবিসি: আবু আল-সাকার আবদুল আজিজ ইবনে উসমান ইবনে আলি আল-কাবিসি"। হকি, টমাস; ও অন্যান্য। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জীবনীমূলক বিশ্বকোষ। নিউ ইয়র্ক: স্প্রিঙ্গার। পৃষ্ঠা ৯৪১। আইএসবিএন 978-0-387-31022-0। (PDF version)
- পিংগ্রি, ডেভিড (২০০৮) [১৯৭০-৮০]। "আল-কাবিসি, আবু আল-সাকার আবদ আল-আজিজ ইবনে উসমান ইবনে আলী"। বৈজ্ঞানিক জীবনীর সম্পূর্ণ অভিধান। বিশ্বকোষ।