আর্মেনিয়া–চীন সম্পর্ক

আর্মেনিয়া এবং গণচীন রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

আর্মেনিয়া—চীন সম্পর্ক হল আর্মেনিয়া ও চীন রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। আর্মেনিয়ার সাথে চীনের সম্পর্কের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় সুদূর ৫ম শতকে, ঐতিহাসিক মোভসেস খোরানাৎসি এবং ৬ষ্ঠ শতকে ভূগোলবিদ ও গণিতবিদ আনানিয়া সিরাকাৎসির লেখনীতে।[১] গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রজাতন্ত্রী আর্মেনিয়াকে ১৯৯১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর স্বীকৃতি প্রদান করে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং প্রজাতন্ত্রী আর্মেনিয়ার মধ্যে ১৯৯২ সালের ৬ই এপ্রিল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্মেনিয়ায় চীনের দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালের জুলাইয়ে, পক্ষান্তরে চীনে আর্মেনিয়ার দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১০ই আগস্টে।[২] চীনে নিযুক্ত আর্মেনিয় রাষ্ট্রদূত বর্তমানে বেইজিং দূতাবাসে অবস্থান করছেন।

আর্মেনিয়া—চীন সম্পর্ক
মানচিত্র Armenia এবং China অবস্থান নির্দেশ করছে

আর্মেনিয়া

চীন

আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রপতি লেভন তের-পেট্রোসিয়ান এবং রবার্ট কোচারান যথাক্রমে ১৯৯৬ সালের মে মাসে এবং ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে গণচীনে সফর করেন। রাষ্ট্রপতি সার্জ সার্গসিয়ান "সাংহাই ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০১০" এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২০১০ সালের মে মাসে চীনে সফর করেন। এছাড়াও চীন থেকে আর্মেনিয়ায় উচ্চপর্যায়ের সফর হয়েছিল, যার মধ্যে পলিটবুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি অব দ্য কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার সদস্য লুও গান ২০০৩-এর সেপ্টেম্বরে এবং লি চ্যাংচুন ২০১১-এর এপ্রিলে চীনে সফর করেন।

বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক

চীনে অবস্থিত আর্মেনিয়ার দূতাবাস

বাণিজ্য বিনিময় (মিলিয়ন মার্কিন ডলার)[৩]

সালরপ্তানিআমদানি (তৈরি)আমদানি (চালান)
2012৩১.২৩৯৯.৭২০৮.১
2011১৬.২৪০৪.২২০৯.১
2010৩০.৮৪০৪.২২২৩.৩
2009১৭.৮২৮৪.৬১৩০.৬
2008১৮.১৩৮২.১১৬৯.৩
2007৭.৮১৯৪.৭৮৪.০
2006০.৪১১১.০৫২.৫
2005৯.২৬৫.৫২৭.১
2004২১.৭৩৮.৪১৩.৩
2003৪.৫৩১.৪৮.৬
2002৪.০-১০.১
2001০.০-৭.৮
2000০.৫-৫.৪
1999০.০-৪.৮

উপর্যুক্ত ছকের তথ্য আর্মেনিয়া ও চীনের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণকে নির্দেশ করে। পরিমাণে কম হলেও বিগত কয়েক দশকে এই হার অনেক বেড়ে গেছে এবং ২০০৮ সালে তা $৪০০ মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছায়। ২০০৯ সালে উল্লেখযোগ্য একটি ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়, মূলত অর্থনৈতিক মন্দা ২০০৭-০৭-এর কারণে। তবে ২০১০ এবং ২০১১ সালে এটি ৪০০ মিলিয়নের মাত্রায় আবারও পৌঁছে যায়।

আর্মেনিয়ার মূল রপ্তানি পণ্য হল ওর, পক্ষান্তরে চীন থেকে আর্মেনিয়ায় আমদানি করা হয় নানাবিধ বস্ত্র, জুতা, মেশিনারি, রাসায়নিক দ্রব্য, সামগ্রি, নির্মানগত অর্থ, ফার্নিচার, খাদ্য ইত্যাদি।[৪]

শিল্প

২০১০ সালের মে মাসে সানসি সিন্থেটিক রাবার গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড এবং আর্মেনিয়ার নৈরিত যৌথভাবে সান্না (সানসি-নৈরিত) সিন্থেটিক রাবার কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে এবং এর উৎপাদন শুরু করা হয়।[৫] সানসি-নৈরিত এর যৌথযাত্রার উদ্বোধনী দিনে দাতোংয়ে ক্লোরোপ্রেন রাবারের উৎপাদন শুরু করা হয়। ঐদিন আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রপতি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।[৬] সানসি-নৈরিত যৌথযাত্রা মূলত ২০০৩ সালে সানসি সিন্থেটিক রাবার কোম্পানি (চীন) এবং নৈরিত এলএলসি (আরএ) এর চুক্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয়। সানসি-নৈরিতের মধ্যে ৪০ শতাংশ অংশীদার আর্মেনিয়ার।

শিক্ষা

ইয়েরেভান স্টেট লিঙ্গুয়েস্টিক ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট

২০০৮ সালে ইয়েরেভান স্টেট লিঙ্গুয়েস্টিক ইউনিভার্সিটিতে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চালু হয়।[৭]

ইতিহাস

চীনাভাষায় "আর্মেনিয়া" উচ্চারিত হয় "ইয়া-মেইন-নি-ইয়া," হিসেবে — যার অর্থ "এশিয়ার সুন্দরী দাসী"। আর্মেনিয় সূত্র, কিংবদন্তি এবং রূপকথা অনুসারে চীনকে চীনস, চিনুমাচিন বা চায়নাস্তান হিসেবে উচ্চারণ করা হয়। আর্মেনিয়া এবং চীনের সম্পর্কের সূত্রপাত প্রায় ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে হয়।

আর্মেনিয়রা বাণিজ্যের জন্য চীনে যেত। তারা মূলত সিল্ক, পোর্সেলেইন এবং অন্যান্য কিছু পণ্য আর্মেনিয়ায় নিয়ে যেত। চীনে আর্মেনিয় ওষুধ, সবজি, প্রাকৃতিক রঙ এবং কীটপতঙ্গের বেশ চাহিদা ছিল। বিশেষত আর্মেনিয় কোচাইনিলের, যা থেকে অসাধারণ চীনা এবং ভারতীয় সিল্ক তৈরি করা হয়। আর্মেনিয় সওদাগরেরা সিল্ক, দাসী এবং অন্যান্য পণ্যের ব্যবসা করত। নানাবিধ চীনা পণ্য আর্মেনিয়ায় সিল্প রোডের মাধ্যমে আনা-নেওয়া করা হয়; যার মধ্যে রূপা ও সোনার এমব্রয়ডারি করা বস্ত্রও থাকত।

আর্মেনিয় শহর গার্নি, দেভিন, আনি এবং অ্যামবের্ড দুর্গে পাওয়া চীনা পোর্সেলেইনের প্রত্নতাত্ত্বিক নানাবিধ দ্রব্য ও সেলাডোনাইট মধ্যযুগীয় আর্মেনিয়-চীনা অর্থনৈতিক বন্ধনেরই পরিচায়ক।

মোভসেস খোরানাৎসি, আনানিয়া সিরাকাৎসি, স্টেপানোস ওরবেলিয়ান এবং আর্মেনিয়ার রাজা প্রথম হেথাম প্রমুখ ব্যক্তিত্ব চীন, চীনা সংস্কৃতি এবং চীনা ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে তাদের লেখনীতে উল্লেখ করেন।

মঙ্গল সাম্রাজ্যকালীন আর্মেনিয়া এবং চীনের সম্পর্ক সরকার কর্তৃক উন্নত হয়। এ কারণে অনেক আর্মেনিয় চীনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। ১৬৮৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি সতর্ক চুক্তিগঠন করে যা চীনা বাণিজ্যে আর্মেনিয়দের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। আর্মেনিয়রা ব্রিটিশদের চুক্তির পূর্ণ ব্যবহার করে সাংহাই এবং ম্যাকাওয়ে সমুদ্র বাণিজ্য করে।

১৯৯১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর চীন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রজাতন্ত্রী আর্মেনিয়াকে স্বীকৃতি দেয়। পরের বছরের ৬ই এপ্রিল নানা কেন্দ্রীয় এশীয় রাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। একই বছরের জুলাই মাসে চীন আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভেনে দূতাবাস স্থাপন করে। ১৯৯৬ সালে আর্মেনিয়া বেইজিংয়ে তাদের নিজস্ব দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত করে।

আরো দেখুন

  • চীনে অবস্থিত আর্মেনিয়

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:আর্মেনিয়ার বৈদেশিক সম্পর্কটেমপ্লেট:চীনের বৈদেশিক সম্পর্ক

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী