আমিনা

মোহাম্মদের মাতা

আমিনা বিনতে ওহাব (আরবি: آمنة بنت وهب ʼĀminah bint Wahb; মৃত্যু ৫৭৭ খ্রি.) ছিলেন ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ এর মাতা।[১]

আমিনা বিনতে ওহাব
আমিনাহ বিনতে ওয়াহাবের কথিত কবর; এটি ১৯৯৮ সালে ধ্বংস হয়েছিল
জন্ম
মৃত্যু৫৭৭ হিজরি (৪৬ B.H)
মৃত্যুর কারণঅনির্দিষ্ট অসুস্থতা
সমাধিআল-আবওয়া, সৌদি আরব
দাম্পত্য সঙ্গীআব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব জুলাই, ৫৭০ খ্রি. - জানুয়ারী, ৫৭১ খ্রি.
সন্তানমুহাম্মাদ
পিতা-মাতাওয়াহাব ইবনে আবদ মান্নাফ (বনু জহরা),
বাররাহ বিনতে আবদুল উজ্জা (বনু ‘আব্দ আল-দার)

বিবি আমেনা বিন্তে ওহ্যাব এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:: আবদুল মোত্তালেব তার পুত্র আবদুল্লাহর বিয়ের জন্য আমেনাকে মনোনীত করেন। আমিনার পিতার নাম ওহাব ইবনে আব্দ মানাফ এবং মাতা বারাহ বিনতে আব্দ আল উজ্জা ইবনে উথমান আব্দ আল দার।[২] তিনি কুরাইশ উপজাতির মধ্যে বানু জোহরা এর বংশের সদস্য ছিলেন; যা ইব্রাহিম (আব্রাহাম) থেকে তার পুত্র ইসমাইল (ইসমায়েল) এর মাধ্যমে বংশদ্ভুত বলে দাবি করা হয়। তার পূর্বপুরুষ জুহরা ছিলেন কুসায় ইবনে কিলাব এর বড় ভাই যিনি আব্দ আল্লাহ আল মুত্তালিব এর পুর্বপুরুষ ছিলেন।

কুসাই ইবনে কিলাব ছিলেন প্রথম কুরাইশ যিনি কাবার জিম্মাদার হয়েছিলেন। আব্দ আল্লাহ-এর পিতা আব্দুল মুত্তলিব তার কনিষ্ঠ পুত্র আব্দ আল্লাহ-এর সাথে আমিনার বিবাহ স্থির করেছিলেন। আমিনা শেষ পর্যন্ত 'আব্দ আল্লাহ ইবনে আব্দ আল-মুত্তালিব-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

আমেনা ছিলেন ওয়াহাব ইবনে আবদে মান্নাফ ইবনে যোহরা ইবনে কেলাবের কন্যা। এরা বংশ মর্যাদার দিক থেকে কোরাইশদের মধ্যে সর্বোত্তম বলে বিবেচিত হতো। আমেনার পিতা বংশ মর্যাদা এবং অভিজাত্যের দিক থেকে বনু যোহরা গোত্রের সরদার ছিলেন। বিবি আমেনা বিয়ের পর পিত্রালয় থেকে বিদায় নিয়ে স্বামীগৃহে আগমন করেন। কিছুদিন পর আবদুল মোত্তালেব আবদুল্লাহকে খেজুর আনয়নের জন্য মদিনায় পাঠান। আবদুল্লাহ সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।

কোন কোন সীরাতে রচয়িতা লিখেছেন যে, আবদুল্লাহ ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া গিয়েছিলেন। কোরাইশদের একটি বাণিজ্য কাফেলার সাথে মক্কায় ফিরে আসার সময় অসুস্থ হয়ে মদিনায় অবতরণ করেন এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। নাবেগা যাআদীর বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। সে সময় তার বয়স ছিল পঁচিশ বছর। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে আল্লাহর রসুল তখনো জন্মগ্রহণ করেননি। কারো কারো মতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সাল্লামের জন্ম তার পিতার মৃত্যুবরণের দুই মাস আগে হয়েছিল।[৩]

স্বামী মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর আমেনা বেদনা মথিত কণ্ঠে আবৃত্তি করলেন, বাতহার যমীন হাশেমের বংশধর থেকে খালি হয়ে গেছে। মৃত্যু তাকে এক ডাক দিয়েছে এবং তিনি আমি হাযির বলেছেন। তিনি রাঙ্গ ও খুরুশের মধ্যবর্তী এক জায়গায় শায়িত রয়েছেন। মৃত্যু এখন ইবনে হাশেমের মতো কোন লোক রেখে যায়নি। সেই বিকেলের কথা মনে পড়ে যখন তাকে লোকেরা খাটিয়ায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল। মৃত্যু যদিও তার অস্তিত্ব মুছে দিয়েছে কিন্তু তার কীর্তি মুছে দিতে পারবে না। তিনি ছিলেন বড় দাতা এবং দয়ালু [৪]

আব্দুআল্লাহ-এর মৃত্যুর দুই মাস পরে মুহাম্মদ জন্মগ্রহণ করেন। সিনা চাকের ঘটনার পর বিবি হালিমা ভীত হয়ে পড়লেন। তিনি শিশুকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এলেন। ছয় বচর বয়স পর্যন্ত তিনি মায়ের স্নেহ ছায়ায় কাটালেন।[৫]

হযরত আমেনার ইচ্ছে হলো যে, তিনি পরলোকগত স্বামীর কবর যেয়ারত করবেন। পুত্র মোহাম্মদ, দাসী উম্মে আয়মন এবং শশুর মোত্তালেবকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রায় পাঁচ শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদিনায় পৌঁছলেন। একমাস সেখানে অবস্থানের পর মক্কার পথে রওয়ানা হলেন। মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি আবওয়া নামক জায়গায় এসে বিবি আমেনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ক্রমে এই অসুখ বেড়ে চললো। অবশেষে তিনি আবওয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। [৬]

বৃদ্ধ আবদুল মোত্তালেব পৌত্রকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় পৌঁছলেন। পিতৃ-মাতৃহীন পৌত্রের জন্য তার মনে ছিল ভালোবাসার উত্তাপ। অতীতের স্মৃতিতে তার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। পিতৃ-মাতৃহীন পৌত্রকে তিনি যতোটা ভালোবাসতেন এতো ভালোবাসা তার নিজে পুত্র কন্যা কারো জন্যই ছিলনা। ভাগ্যের পরিহাস, বালক মোহাম্মদ সে অবস্থায় ছিলেন একান্ত নি:সঙ্গ কিন্তু আবদুল মোত্তালেব তাকে নি:সঙ্গ থাকতে দিতেন না, তিনি পৌত্রকে অন্য সকলের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন। ইবনে হিশাম লিখেছেন, আবদুল মোত্তালেবের জন্য কাবাঘরের ছায়ায় বিছানা পেতে দেয়া হতো। তার সব সন্তান সেই বিছানার চারিকে বসতো। কিন্তু মোহাম্মদ গেলে বিছানায়ই বসতেন। তিনি ছিলেন অল্প বয়স্ক শিশু। তার চাচা তাকে বিছানা থেকে সরিয়ে দিনে কিন্তু আবদুল মোত্তালেব বলতেন, ওকে সরিয়ে দিয়ো না। ওর মর্যাদা অসাধারণ। এরপর তাকে নিজের পাশে বসাতেন। শুধু বসানোই নয় তিনি প্রিয় দৌহিত্রকে সব সময় নিজের সাথে রাখতেন। বালক মোহাম্মদ কাজকর্ম তাকে আনন্দ দিতো।[৭]

বয়স আট বছর দুই মাস দশদিন পর তার দাদার স্নেহের ছায়াও উঠে গেল। তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। মৃত্যুর আগে তিনি নিজের পুত্র আবু তালেবকে ওসিয়ত করে গেলেন, তিনি যেন তার ভ্রাতুষ্পুত্রর বিশেষভাবে যত্ন নেন। আবু তালেব এবং আবদুল্লাহ ছিলেন একই মায়ের সন্তান। [৮]

প্রথম জীবন এবং বিবাহ

আমিনার পিতার নাম ওহাব ইবনে আব্দ মানাফ এবং মাতা বারাহ বিনতে আব্দ আল উজ্জা ইবনে উথমান আব্দ আল দার।[২] তিনি কুরাইশ উপজাতির মধ্যে বানু জোহরা এর বংশের সদস্য ছিলেন; যা ইব্রাহিম (আব্রাহাম) থেকে তার পুত্র ইসমাইল (ইসমায়েল) এর মাধ্যমে বংশদ্ভুত বলে দাবি করা হয়। তার পূর্বপুরুষ জুহরা ছিলেন কুসায় ইবনে কিলাব এর বড় ভাই যিনি আব্দ আল্লাহ আল মুত্তালিব এর পুর্বপুরুষ ছিলেন।

কুসাই ইবনে কিলাব ছিলেন প্রথম কুরাইশ যিনি কাবার জিম্মাদার হয়েছিলেন। আব্দ আল্লাহ-এর পিতা আব্দুল মুত্তলিব তার কনিষ্ঠ পুত্র আব্দ আল্লাহ-এর সাথে আমিনার বিবাহ স্থির করেছিলেন। আমিনা শেষ পর্যন্ত 'আব্দ আল্লাহ ইবনে আব্দ আল-মুত্তালিব-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।[৯]

মুহাম্মদ-এর জন্ম

আব্দ আল্লাহ-এর মৃত্যুর দুই মাস পরে, ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদজন্মগ্রহণ করেন।

কবর

আমিনাহ বিনতে ওহাব এর কবর; এটি ১৯৯৮ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়

আমিনা বিনতে ওহাব এর কবর ১৯৯৮ সালে আল আবওয়ায় খুজে পাওয়া গেছেতবে পরবর্তীতে এটি বুলযোজার এবং গ্যাসোলিন দ্বারা ধ্বংস করা হয়॥[১০]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানসামাজিক সমস্যালামিনে ইয়ামালকোপা আমেরিকা২০২৪ কোপা আমেরিকাউয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপউয়েফা ইউরো ২০২৪আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)মুকেশ আম্বানিঅপারেশন সার্চলাইটছয় দফা আন্দোলনরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বাংলাদেশআশুরাযুক্তফ্রন্টবাংলা ভাষা আন্দোলনব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলশেখ মুজিবুর রহমানস্পেন জাতীয় ফুটবল দলকাজী নজরুল ইসলামআনহেল দি মারিয়ালিওনেল মেসিলাহোর প্রস্তাববাংলাদেশের সংবিধানবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাফিফা বিশ্বকাপফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের তালিকারাজাকারকারবালার যুদ্ধমিয়া খলিফাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহকিম কার্দাশিয়ানভূমি পরিমাপ