অশুভ সংকট

অশুভ সংকট (ইংরেজি: Problem of evil) দ্বারা সেই সমস্যাকে বোঝানো হয় যা প্রশ্ন করে যে, সর্বশক্তিমান, সর্বহিতকারী ও সর্বজ্ঞ ঈশ্বর যেখানে উপস্থিত সেখানে কীকরে অশুভের অস্তিত্বও থাকতে পারে।[১][২] অশুভ সংক্রান্ত যুক্তি দাবী করে, যেহেত্য অশুভের অস্তিত্ব আছে, তাহলে হয় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই, অথবা ঈশ্বরের তিনটি বৈশিষ্ট্যের (সর্বশক্তিমান, সর্বহিতকারী ও সর্বজ্ঞ) এর একটিও নেই। এর বৈপরীত্য দেখানোর চেষ্টাকে ধর্মতত্ত্বের শিরোনামের অধীনে আলোচনা করা হয়। ধর্মদর্শন ছাড়াও সমস্যাটি ধর্মতত্ত্বনীতিবিদ্যা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ।

অশভ সংকটকে প্রায়ই দুটো আকারে গঠন করা যায়: তর্কশাস্ত্রীয় অশুভ সংকট এবং প্রামাণিক অশুভ সংকট। তর্কশাস্ত্রীয় অশুভ সংকটভিত্তিক যুক্তিসমূহ ঈশ্বর ও অশুভ - উভয়েরই সহ-অস্তিত্বকে যৌক্তিকভাবে অসম্ভব দাবী করে।[১][৩] অন্যদিকে প্রামাণিক অশুভ সংকটভিত্তিক যুক্তিসমূহ এই জগতে অশুভের অস্তিত্ব আছে, এটি দেখিয়ে সর্বশক্তিমান, সর্বহিতকারী ও সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের অস্তিত্ব অসম্ভব দাবী করে।[২] অশুভ সংকট অ-মানব জীবনের ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হয়, যেহেতু মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীদেরকেও প্রাকৃতিক অশুভের কারণে ভুগতে হয় এবং মানুষেরাও তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখায়।[৪]

অশুভ সংকটের বিভিন্ন সংস্করণের প্রতিক্রিয়া তিনটি আকারে আসে: অপ্রমাণ, প্রতিরক্ষা এবং থিওডিসি। এই যুক্তিসমূহের বিরুদ্ধে বিস্তৃত পরিসরের প্রতিক্রিয়া তৈরি করা হয়েছে। দর্শনের অন্যান্য শাখা, যেমন ধর্মনিরপেক্ষ নীতিশাস্ত্র,[৫][৬][৭] এবং বিবর্তনীয় নীতিশাস্ত্রে[৮][৯] অশুভ এবং তৎসংশ্লিষ্ট সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু সাধারণত "অশুভ সংকটকে" ধর্মতাত্ত্বিক প্রসঙ্গেই উত্থাপিত করা হয়।[১][২]

অশুভ সংকটকে একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো যেমন খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম এবং ইহুদিধর্মে তীব্রভাবে প্রয়োগ করা হয়, যেখানে এই ধর্মগুলোতে একজন মাত্র সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং সর্বহিতকারী ঈশ্বরে বিশ্বাস করা হয়।[১০][১১] কিন্তু "কেন অশুভ এর অস্তিত্ব আছে?' এই প্রশ্নটি নিয়ে অ-একেশ্বরবাদী বা বহুঈশ্বরবাদী ধর্মগুলোতেও অনেক আলোচনা হয়েছে যেগুলোর মধ্যে বৌদ্ধধর্ম, হিন্দুধর্মজৈনধর্ম রয়েছে।[১২][১৩]

গঠন এবং বিস্তারিত যুক্তিসমূহ

অশুভ সংকট দ্বারা একই সাথে একজন সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং সর্বহিতকারী ঈশ্বরের সাথে অশুভ এর অস্তিত্বএবং জগতে বিভিন্ন রকমের ভোগান্তির উপস্থিতি এর সমস্যাকে নির্দেশ করা হয়।[২][১২][১৪][টীকা ১] এই সমস্যাটিকে পরিক্ষণগতভাবে বা তাত্ত্বিকভাবে বর্ণনা করা যায়।[২] পরীক্ষণগত সমস্যা হচ্ছে হিতকারী ঈশ্বরের ধারণায় বিশ্বাস করতে সমস্যা যখন এটি বাস্তব জগতের ভোগান্তি যেমন মহামারী, যুদ্ধ, খুন, ধর্ষণ বা জঙ্গি আক্রমণ প্রভৃতির সম্মুখীন হয়, যেখানে নিরপরাধ শিশু, নারী, পুরুষ বা প্রিয়জনেরা শিকারে পরিণত হয়।[১৭][১৮][১৯] অশুভ সংকট একই সাথে তাত্ত্বিক, যা ধর্মীয় পণ্ডিতগণ দুটো ভিন্ন ভিন্নভাবে গবেষণা করেন এবং আলোচনা করেন: তর্কশাস্ত্রীয় সমস্যা হিসেবে এবং প্রামাণিক সমস্যা হিসেবে।[২]

অশুভের তর্কশাস্ত্রীয় সমস্যা

এই সমস্যাটির আবিষ্কর্তা হচ্ছেন গ্রীক দার্শনিক এপিকিউরাস।[২০] অশুভের তর্কশাস্ত্রীয় যুক্তি নিচে দেয়া হল:

  1. যদি একজন সর্বশক্তিমান, সর্বহিতকারী ও সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে অশুভের অস্তিত্ব নেই।
  2. জগতে অশুভের অস্তিত্ব রয়েছে।
  3. সুতরাং একজন সর্বশক্তিমান, সর্বহিতকারী এবং সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।

এই যুক্তিটি মোডাস টলেন্স এর আকারে পরে, এবং যৌক্তিকভাবে বৈধ: যদি প্রতিজ্ঞা সত্য হয়, যদি উপসংহার প্রয়োজনীয়তা অনুসরণ করে। প্রথম প্রতিজ্ঞা সম্ভবপর এটা দেখানোর জন্য পরবর্তী সংস্করণগুলোর বিস্তৃতি করা যায়, যেমন এই আধুনিক উদাহরণটি:[২]

  1. ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে।
  2. ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, সর্বহিতকারী এবং সর্বজ্ঞ।
  3. একজন সর্বশক্তিমান সত্তার অশুভ এর অস্তিত্বকে প্রতিহত করবার ক্ষমতা থাকে।
  4. একজন সর্বহিতকারী সত্তা সকল অশুভকে প্রতিহত করতে চান।
  5. একজন সর্বজ্ঞানী সত্তা অশুভের অস্তিত্ববান হবার প্রত্যেকটি উপায় সম্পর্কে জানেন, এবং তিনি এই অশুভকে প্রতিহত করবার প্রত্যেকটি উপায় সম্পর্কে জানেন।
  6. একটি সত্তা যিনি অশুভের অস্তিত্ববান হবার প্রত্যেকটি উপায় সম্পর্কে জানেন, যিনি অশুভ এর অস্তিত্ববান হওয়াকে প্রতিহত করতে পারেন, এবং যিনি অশুভ এর অস্তিত্ববান হওয়াকে প্রতিহত করতে চান, তিনি অশুভ এর অস্তিত্বকে প্রতিহত করতেন।
  7. যদি একজন সর্বশক্তিমান, সর্বহিতকারী এবং সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে অশুভ এর অস্তিত্ব নেই।
  8. অশুভ এর অস্তিত্ব আছে (যৌক্তিক স্ববিরোধ)।

এই যুক্তিগুলোর উভয়ই অশুভের দুরকম তর্কশাস্ত্রীয় সমস্যা প্রকাশ করে। এগুলো এটি দেখাবার চেষ্টা করছে যে গৃহীত প্রস্তাবগুলো যৌক্তিক স্ববিরোধে পর্যবসিত হয় এবং এর ফলে এগুলো পুরোপুরি সত্য হতে পারে না। বেশিরভাগ দার্শনিক বিতর্কে এই প্রস্তাবেই মনোনিবেশ করা হয়েছে যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকতে পারে না, বা তিনি সকল অশুভকে প্রতিহত করতে চান না (প্রতিজ্ঞা ৩ এবং ৬), যেখানে আস্তিক্যবাদের সমর্থকগণ (যেমন লিবনিজ) বলেন, ঈশ্বর অধিকতর ভালর জন্য অশুভের সাথে খুব ভাল ভাবেই অস্তিত্ববান হতে পারেন।

যদি ঈশ্বরের এই তিনটি বৈশিষ্ট্যের যথা সর্বশক্তিমত্তা, সর্বজ্ঞান এবং সর্বহিতপ্রত্যাশার একটাও যদি কম থাকে, তাহলে এই তর্কশাস্ত্রীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। প্রক্রিয়া ধর্মতত্ত্ব এবং উন্মুক্ত আস্তিক্যবাদ হচ্ছে অন্য দুটো প্রস্তাব যা ঈশ্বরের সর্বশক্তিমত্তা এবং/অথবা সর্বজ্ঞানকে (যেমনটা গতানুগতিক ধর্মতত্ত্বে সংজ্ঞায়িত করা হয়) সীমাবদ্ধ করে। ডিসথেইজম হচ্ছে একটি বিশ্বাস যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে ঈশ্বর পুরোপুরি মঙ্গলকারী নয়।

আরও দেখুন

টীকা

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী