অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
(অলিম্পিক গেমস থেকে পুনর্নির্দেশিত)

আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা অলিম্পিক গেমস (ইংরেজি: Olympic Games ফরাসি: Jeux olympiques)[১][২] হলো একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা যেখানে গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করে। দুইশতাধিক দেশের অংশগ্রহণে মুখরিত এই অলিম্পিক গেমস বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বোচ্চ সম্মানজনক প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।[৩] অলিম্পিক গেমস প্রত্যেক চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর দুটো প্রকরণ গ্রীষ্ম এবং শীতকালীন প্রতিযোগিতা প্রত্যেক দুই বছর পর পর হয়ে থাকে, যার অর্থ দাঁড়ায় প্রায় প্রত্যেক দুই বছর পর পর অলিম্পিক গেমসের আসর অনুষ্ঠিত হয়। খ্রীষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দিতে প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিয়া থেকে শুরু হওয়া প্রাচীন অলিম্পিক গেমস থেকেই মূলত আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ধারণা জন্মে। ১৮৯৪ সালে ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) গঠন করেন। এই আইওসি-ই অলিম্পিক গেমস সংক্রান্ত সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

অলিম্পিক আন্দোলন থেকেই বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দিতে অলিম্পিক গেমসে অনেক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনগুলোর অন্যতম হল শীতকালীন অলিম্পিকের প্রচলন, প্রতিবন্ধীদের জন্য প্যারা অলিম্পিক এবং কিশোর ক্রীড়াবিদদের জন্য যুব অলিম্পিক গেমস। এইসব পরিবর্তনকে সার্থক করার জন্য আইওসিকে অনেক ধরনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কারিগরি দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছে। ফলত পিয়ের দ্য কুবারত্যোঁর অপেশাদারি ধারণা থেকে সরে এসে পেশাদার ক্রীড়াবিদদের এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরী হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল এবং স্নায়ুযুদ্ধের সময় এই প্রতিযোগিতা সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়।

অলিম্পিক গেমস ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফেডারেশন, জাতীয় অলিম্পিক কমিটি এবং প্রত্যেক আসরের জন্য নির্দিষ্ট কমিটির সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক আসরের জন্য আয়োজক দেশ নির্বাচনের ক্ষমতা আইওসি সংরক্ষণ করে। অলিম্পিক সনদ অনুযায়ী আয়োজক দেশ এই গেমস আয়োজনের খরচ বহন করবে এবং তহবিল সংগ্রহ করবে। তবে অলিম্পিক গেমসের ক্রীড়া অনুষ্ঠান সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত আইওসি গ্রহণ করে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও অলিম্পিক গেমসে আরও অন্যান্য আচার ও রীতি-রেওয়াজের প্রচলন রয়েছে যেমন অলিম্পিক মশাল, পতাকা, উদ্বোধনী এবং সমাপনি অনুষ্ঠান ইত্যাদি। গ্রীষ্ম এবং শীতকালীন অলিম্পিকে ৩৩ টি ক্রীড়ার ৪০০ টি বিভাগে প্রায় ১৩,০০০ ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রত্যেক বিভাগের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারী ক্রীড়াবিদদের যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জের পদক দেওয়া হয়।

কালের আবর্তনে অলিম্পিক গেমস এমন একটি অবস্থানে পৌঁছে গেছে যে আজ প্রায় প্রত্যেকটি দেশই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ফলে বছর বছর বর্জন, মাদক, ঘুষ এবং সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার মত নানা ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি দুই বছরে অলিম্পিক ও তৎসংশ্লিষ্ট প্রচার একজন অখ্যাত ক্রীড়াবিদকে রাতারাতি জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক খ্যাতির সুযোগ এনে দেয়। অলিম্পিক গেমস আয়োজনকারী দেশও এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে সারা বিশ্বে নিজেকে প্রকাশ করার একটি সুযোগ পায

প্রাচীন অলিম্পিক গেমস

গ্রীসের অলিম্পিয়ায় একটি স্টেডিয়াম

প্রাচীন গ্রীসে দেবতা জিউসের আবাসস্থল অলিম্পিয়ায় ধর্মীয় রীতি-রেওয়াজের সাথে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হত। মূলত প্রাচীন গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরাই এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করত। সাধারণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে মল্লযুদ্ধ, ঘোড়দৌড়, রথ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত। প্রাচীন বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায় যে বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও এই প্রতিযোগিতা চলাকালে তা স্থগিত থাকত। এই যুদ্ধ এবং দ্বন্দ্বে সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়াকে “অলিম্পিকের যুদ্ধবিরতির নীতি” বলা হত।[৪] যদিও এই প্রাচীন ধারনাটি হয়ত একটি গল্পকথা কারণ গ্রীকরা কখনই যুদ্ধবিরতি করেনি। তবে এই রীতিটি অলিম্পিয়ামুখী তীর্থযাত্রীদের বিভিন্ন যুদ্ধরত নগর রাষ্ট্রের মধ্যে দিয়ে অবাধে চলাচল করতে সাহায্য করত। কারণ তারা মনে করত যে জিউস সকল তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষা করেন।[৫] অলিম্পিকের জন্ম আজও মানুষের কাছে একটি রহস্য এবং কিংবদন্তি হয়ে আছে। তবে জনপ্রিয় একটি গল্পকথা মতে দেবতা জিউস এবং তার ছেলে হেরাক্লিস বা হারকিউলিস এই অলিম্পিক গেমসের জনক।[৬][৭][৮] এই গল্পকথার মতে হেরাক্লিসই এই অনুষ্ঠানকে অলিম্পিক নাম দেন এবং প্রত্যেক চার বছর পর পর এই গেমস অনুষ্ঠানের প্রচলন করেন।[৯]

এই গল্পকথা অনুসারে হেরাক্লিস তার বারোটি মহাকাব্যিক অভিযান শেষে তার পিতা জিউসের সম্মানে অলিম্পিক স্টেডিয়াম তৈরী করেন। এই কাজ শেষ করার পরে হেরাক্লিস সোজা ২০০ কদম হেটে যান এবং একে স্টেডন হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে এটা দূরত্ব মাপার একক হিসেবে প্রচলিত হয়। অলিম্পিক সংক্রান্ত একটি প্রাচীন লিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে অলিম্পিকের সূচনা ঘটেছিল খৃষ্টপূর্ব ৭৭৬ সালের দিকে।[১০] এই লিপিতে চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল। এই প্রাচীন ক্রীড়া অনুষ্ঠানে দৌড় প্রতিযোগিতা, মল্লযুদ্ধ, মুষ্টিযুদ্ধ এবং ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানা যায়।[১১] লোকোগাথা মতে কোরিবাস নামের ইলিস শহরের এক পাচক অলিম্পিকের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন।

মূলত অলিম্পিক ছিল ধর্মীয় আচার ও রীতি অনুযায়ী জিউস এবং অলিম্পিয়ার রাজা এবং পৌরানিক বীর পিলোপ্সকে সম্মান প্রদর্শনের একটি ঐতিহ্যগত ক্রীড়া অনুষ্ঠান। রাজা পিলোপ্স ওয়িনৌসের সাথে রথ প্রতিযোগিতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। অলিম্পিকে বিজয়ীরা সম্মানে ভূষিত হতেন। তাদের উদ্দেশ্যে গান ও কবিতা লেখা হত। এই অনুষ্ঠান প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হত এবং এই চার বছরের সময়কালকে বলা হত এক অলিম্পিয়াড যা গ্রিকদের সময় পরিমাপার একটি একক ছিল।

খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ এবং পঞ্চম শতকে অলিম্পিক গেমস জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। কিন্তু, রোমের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গ্রীসের উপর এর প্রভাব বিস্তারের সাথে সাথে এর কার্যকারীতা হ্রাস পেতে শুরু করে। অলিম্পিক গেমসের কখন ইতি টানা হয় এর ব্যাপারে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া না গেলেও সাধারনভাবে মনে করা হয় যে ৩৯৩ খৃষ্টাব্দে এই ক্রিড়াযজ্ঞের সমাপ্তি হয় যখন সম্রাট প্রথম থিওডোসিয়াস সমস্ত পৌত্তলিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেন। যদিও, থিওডোসিয়াসের আদেশে সরাসরি অলিম্পিকের কোনো উল্লেখ ছিল না। [১২] এছাড়া অনেকের ধারণা মতে দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস যখন ৪২৬ খৃষ্টাব্দে সমস্ত গ্রিক মন্দির ধ্বংশ করার আদেশ দেন তখনই এই গেমসের সমাপ্তি ঘটে।[১৩]

আধুনিক অলিম্পিক

প্রতিষ্ঠাতা বৃন্দ

ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ

আধুনিক যুগে অলিম্পিক গেমস বলতে ১৭শ শতাব্দীর দিকে শুরু হওয়া আধুনিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকেই বুঝানো হয়ে থাকে। এই ধরনের প্রথম অনুষ্ঠান ছিল ইংল্যান্ডে শুরু হওয়া কোটসউল্ড গেমস বা কোটসউল্ড অলিম্পিক গেমস। ১৬১২ থেকে ১৬৪২ সালের মধ্যে এই কোটসউল্ড গেমসের প্রধান আয়োজক ছিলেন রবার্ট ডোভার, যিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ আইনজীবী। লন্ডনে ২০১২ সালের অলিম্পিক গেমসের বিদায়ী অনুষ্ঠানে সপ্তদশ শতকের এই ঘটনাকে বৃটেনের অলিম্পিকের সূচনার অভ্যূদয় হিসেবে ঘোষণা করে।[১৪]

ফ্রান্সে ১৭৯৬ থেকে ১৭৯৮ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত এল অলিম্পিয়েড ডি লা রিপাবলিক গেমসও প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের ঐতিহ্য বহন করে।[১৫] প্রাচীন গ্রিক অলিম্পিক গেমসে অনুষ্ঠিত কিছু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এই অলিম্পিকেও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৭৯৬ সালে অনুষ্ঠিত এই এল অলিম্পিয়েড ডি লা রিপাবলিক গেমসে সর্বপ্রথম ম্যাট্রিক পদ্ধতির পরিমাপ অনুসরণ করা হয়েহিল।[১৫]

১৮৫০ সালের দিকে ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারের মাক ওয়েনলকে আধুনিক যুগের মত করে অলিম্পিক গেমসের প্রচলন শুরু করেন ডঃ উইলিয়াম পেনি ব্রুকস। ডঃ ব্রুকস এই গেমের নাম দেন ওয়েনলক অলিম্পিয়ান গেমস। এই ক্রিড়াযজ্ঞটিই ধারাবাহিকভাবে আজ পর্যন্ত চলে আসছে।[১৬] ডঃ ব্রুকস এই গেমের জন্য ১৮৬০ সালের ১৫ নভেম্বর ওয়েনলক অলিম্পিয়ান সোসাইটির প্রতিষ্ঠা করেন।[১৭]

১৮৬২ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের লিভারপুলে জন হুলি এবং চার্লস মিলির তত্বাবধানে বার্ষিক অলিম্পিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই ক্রীড়ার আসরটি আন্তর্জাতিক হলেও পেশাদারিত্বের মান ছিল অনেক নিচে। এই আসরে শুধুমাত্র ভদ্র সমাজের শৌখিন এবং অপেশাদার খেলোয়াড়রাই অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন।[১৮][১৯] তবে ১৮৯৬ সালের গ্রীসে অনুষ্ঠিত আধুনিক অলিম্পিক ছিল লিভারপুলে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের প্রায় হুবহু অনুরূপ ছিল।[২০] ১৬৬৫ সালে জন হুলি এবং ডঃ ব্রুকস ন্যাশনাল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন যা পরবর্তীতে ব্রিটিশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন গঠনের পথ প্রদর্শকের কাজ করে। শুধু তাই নয় এই সংস্থার সংবিধানের বিভিন্ন পরিচ্ছেদের ভিত্তিতেই অলিম্পিক সনদ লেখা হয়। ১৮৬৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনে লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেসে একটি জাতীয় অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করা হয়।[২১]

পূনর্জাগরণ

প্রথম গ্রিক অলিম্পিকের একটি ডাকটিকিট।

অটোমান সাম্রাজ্যের থেকে মুক্ত হতে ১৮২১ সালে গ্রীসে মুক্তিযুদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার পর থেকেই গ্রীকরা এই অলিম্পিক গেমসকে পূনর্জীবিত করার চিন্তাভাবনা করে আসছিল। অলিম্পিকের এই পূনর্জাগরণের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন প্যানাজিওটিস সটসস, যিনি ছিলেন একাধারে কবি ও সংবাদপত্রের সম্পাদক। ১৮৩৩ সালে ডায়ালগ অফ দি ডেড নামে একটি কবিতায় তাঁর এই চিন্তা তুলে ধরেন।[২২] পরবর্তীতে ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাস নামের এক বিত্তশালী এবং লোকহিতৈষী ব্যক্তি গ্রীসের রাজা অট্টোকে একটি চিঠির মাধ্যমে অলিম্পিক গেমস পুনরায় স্থায়ী ভাবে চালু করার জন্য একটি তহবিল গঠনে সহায়তা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৮৫৯ সালে ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাসের পৃষ্ঠপোষকতাতেই অ্যাথেন্সের সিটি স্কোয়ারে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয় যেখানে অটোমান সাম্রাজ্য এবং গ্রীসের ক্রীড়াবিদেরা অংশগ্রহণ করেছিল। এছাড়াও তিনি তার অর্থ দিয়ে একটি স্টেডিয়ামও সংস্কার করে দেন যাতে করে ভবিষ্যতের আসরগুলো নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতে পারে।[২৩]

ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাসের সংস্কারকৃত স্টেডিয়ামে ১৮৭০ এবং ১৮৭৫ সালের অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়।[২৪] ১৮৭০ সালের অলিম্পিকে প্রায় তিরিশ হাজার দর্শক উপস্থিত হয় তবে ১৮৭৫ সালে কত দর্শক হয়েছিল তার প্রামান্য তথ্য পাওয়া যায় না। ১৮৯০ সালের ওয়েনলক অলিম্পিয়ান সোসাইটির অলিম্পিয়ান গেমস দেখে ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা পান।[২৫] তিনি ব্রুকসের সাথে এমন একটি অলিম্পিক কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করেন যা প্রত্যেক চার বছর পর পর বিভিন্ন দেশে অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করবে।[২৫]

১৮৯৬ সালের আসর

প্যানাথেইনিকো স্টেডিয়ামে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির তত্ত্বাবধানে প্রথম অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯৬ সালে এথেন্সের প্যানাথেনেইক স্টেডিয়ামে। এই ক্রিড়াযজ্ঞে ৪৩ টি প্রতিযোগিতায় ১৪ টি দেশের প্রায় ২৪১ জন ক্রীড়াবিদ জড়ো হয়েছিলেন।[২৬] ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাস ও তাঁর তুতো ভাই কনস্ট্যান্টিনোস জ্যাপ্পাস গ্রিক সরকারের কাছে ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমসের জন্য একটি তহবিল রেখে যান, ট্রাস্টের সেই তহবিল থেকেই ১৮৯৬ সালের অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়।[২৭][২৮][২৯] জর্জ এভেরফ, এক গ্রিক ব্যবসায়ী উদারমনে অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতির জন্য স্টেডিয়াম সংস্কারের অর্থ দান করেন।[৩০] এছাড়াও গ্রিক সরকার অলিম্পিক গেমসের জন্য অর্থের যোগান দিয়েছিলো যা গেমসের টিকিট এবং ডাকটিকিট বিক্রয়ের মাধ্যমে উঠে আসে।[৩০]

গ্রীক সরকার এবং জনগণ এই অলিম্পিক গেমস আয়োজন করে অত্যন্ত গর্বিত এবং উজ্জীবিত ছিল। কিছু ক্রীড়াবিদ এই গেমসকে চিরতরে অ্যাথেন্সে অয়োজন করার পক্ষে মত দিলেও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি বিভিন্ন দেশে এই গেমসের আয়োজনকে ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি ছিল। গ্রিস অলিম্পিকের পরবর্তী আসর বসে ফ্রান্সের প্যারিসে।.[৩১]

পরিবর্তন ও সংশোধন

১৮৯৬ সালের আসরের সফলতার পর অলিম্পিক গেমস একটি স্থবির সময়ের মধ্য দিয়ে যায় যখন এর অস্তিত্বই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ১৯০০ ও ১৯০৪ সালের উভয় অলিম্পিক গেমসই যথাক্রমে ফ্রান্সের বিখ্যাত প্যারিস প্রদর্শনী ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস শহরের বিশ্বমেলার পাশে একটি অনুসারি অনুষ্ঠান হিসাবে উদযাপিত হয়। প্যারিসে অলিম্পিক গেমস শুরু হওয়ার জন্য কোন আলাদা স্টেডিয়াম ছিল না। তবে প্রথমবারের মত মহিলারা অংশগ্রহণ করায় এই আসরটি স্মরণীয় হয়ে থাকে। অন্যদিকে সেন্ট লুইসের গেমসে সারা বিশ্ব থেকে মাত্র ৬৫০ জন ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করেন যাদের মধ্যে ৫৫০ জনই ছিল আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের[৩২] তবে ১৯০৬ অধিবর্ষ অলিম্পিক থেকে গেমসটি আবার উজ্জীবিত হতে শুরু করে। এই গেমসের নাম অধিবর্ষ বা Intercalated ছিল কারণ প্রথম অলিম্পিক আয়োজনের পর তৃতীয় অলিম্পিয়াডে আবার অ্যাথেন্সে অলিম্পিকের আয়োজন হয়েছিল। শুরুতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এই গেমসের মান্যতা দিলেও পরে সেই স্বীকৃতি তুলে নেয়। আবার অন্য দিকে ঐ একবারের পর অধিবর্ষ গেমস আর কখনো আয়োজিত হয়নি।[৩৩]

শীতকালীন অলিম্পিক

১৯২৮ সালের অলিম্পিকে আইস হকির দৃশ্য

শীতকালীন অলিম্পিকের সূচনা হয়েছিল মূলত তুষার ও বরফের বিভিন্ন খেলাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য যা গ্রীষ্মকালে আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব। ফিগার স্কেটিং (১৯০৮ ও ১৯২০) এবং আইস হকির (১৯২০) বিভাগগুলো গ্রীষ্মকালের অলিম্পিকে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইওসি বরফের উপর হওয়া এই ক্রীড়াগুলোকে আরো ব্যাপক কলেবরে করার জন্য এই জাতীয় আরো ক্রীড়া অন্তর্ভুক্ত করতে থাকে। ১৯২১ সালের লুসানে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক কংগ্রেসে অলিম্পিকের একটি শীতকালীন আসর যুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফ্রান্সে প্যারিস গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার তিন মাস আগে ১৯২৪ সালে ফ্রান্সের চেমনিক্সে একটি শীতকালীন ক্রীড়া সপ্তাহ পালন করা হয় (আসলে ১১ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল)। এই ক্রীড়া সপ্তাহটিই হল বিশ্বের প্রথম শীতকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।[৩৪] যদিও সেবার শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন আসর একই দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, আইওসি এই পরিকল্পনা পরবর্তীতে বাদ দেয় এবং ঘোষণা করে যে এর পর থেকে শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রত্যেক চার বছর পর পর একই বছরে অনুষ্ঠিত হবে।[৩৫] আইওসির এই সিদ্ধান্ত ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল। ১৯৯২ সালের ফ্রান্স অলিম্পিকের পর থেকে শীতকালীন অলিম্পিক প্রত্যেক চার বছর পর পর, কিন্তু গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ২ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়।

প্যারা অলিম্পিক

টোকিওয় অনুষ্ঠিত ১৯৬৪ গ্রীষ্মকালীন প্যারালিম্পিক।

১৯৪৮ সালে স্যার লুডউইগ গাটম্যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের পূনর্বাসনের জন্য কয়েকটি হাসপাতালের মধ্যে ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকের মত করে মাল্টি ইভেন্ট প্রতিযোগিতা চালু করেন। গাটম্যানের এই ইভেন্টটি স্টোক মেন্ডিভেল গেমস নামে একটি বাৎসরিক ক্রীড়া আসর হিসেবে পরিচিত হয়। তখন থেকে পরবর্তী বার বছর পর্যন্ত গাটম্যান এবং তার সহযোগীরা এই গেমস কে বিকলাঙ্গদের পূনর্বাসন ও নিরাময়ের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। রোমে অনুষ্ঠিত ১৯৬০ সালের অলিম্পিকে গাটম্যান এবং তার সমর্থকেরা প্রায় ৪০০ জন ক্রীড়াবিদকে একটি "সমান্তরাল অলিম্পিকে" অংশগ্রহণ করানোর জন্য নিয়ে আসেন। এটিই ছিল অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথম প্যারালিম্পিক। এর পর থেকে প্রত্যেক অলিম্পিক অনুষ্ঠানের বছরে এই প্যারাঅলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে প্রথমবারের জন্য একই শহরে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ও প্যারাঅলিম্পিক গেমস উভয়ই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[৩৬] ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও আন্তর্জাতিক প্যারালিম্পিক কমিটি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যাতে স্থির করা হয় যেই দেশ অলিম্পিক গেমসের আয়োজক হবে তাকে একই সাথে প্যারা অলিম্পিক গেমসও আয়োজন করতে হবে।[৩৭][৩৮] এই চুক্তি ২০০৮ সালে বেজিংয়ে এবং ভ্যানকুভারে শীতকালীন অলিম্পিকে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। লন্ডন অলিম্পিক আয়োজন কমিটির সভাপতি লর্ড কো লন্ডনে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত প্যারালিম্পিক সম্পর্কে বলেন-

যুব অলিম্পিক

১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী ক্রীড়াবিদদের জন্য সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ২০১০ সালে মূল অলিম্পিক গেমসের সাথে যুব অলিম্পিক গেমসের সংযোজন করা হয়েছিল। এর প্রধান রূপকার ছিলেন আইওসির প্রেসিডেন্ট জ্যাকুয়াস রোগ। তিনি এই যুব অলিম্পিকের প্রস্তাব করেন ২০০১ সালে যা আইওসির ১১৯ তম কংগ্রেসে অনুমোদিত হয়।[৪০] ২০১০ সালের ১৪-২৬ আগস্টে সিঙ্গাপুরে প্রথম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়, অপরদিকে এর শীতকালীন আসর বসে দুই বছর পর অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুকে[৪১] এই যুব অলিম্পিক গেমস অলিম্পিকের মূল আসরের চেয়ে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়। শীতকালীন আসর নয় দিনের জন্য অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ৯৭০ জন ক্রীড়াবিদ ও ৫৮০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করতে পারে অপরদিকে গ্রীষ্মকালীন আসর হয় ১২ দিনের জন্য যেখানে ৩৫০০ জন ক্রীড়াবিদ ও ৮৭৫ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করতে পারে।[৪২][৪৩] মূল অলিম্পিকের ন্যায় এই অলিম্পিকেও বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থাকলেও, এছাড়া এর স্থায়িত্ব কমানোর জন্য কিছু ইভেন্ট বাদ দেওয়া হয়, কিছু খেলায় নারী ও পুরুষের মিশ্র দল গঠন করা হয়, এমনকি জাতীয় অলিম্পিক কমিটিরও মিশ্র দল গঠিত হয়।[৪৪]

একবিংশ শতাব্দীতে অলিম্পিক

১৮৯৬ সালের আসরে ১৪ টি দেশের মাত্র ২৪১ জন ক্রীড়াবিদ নিয়ে যে অলিম্পিকের যাত্রা শুরু হয়েছিল; ২০১২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে সেই গেমস ২০৪ টি দেশের ১০৫০০ জন ক্রীড়াবিদের একটি মহান ক্রীড়াযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।[৪৫] গ্রীষ্মকালীন গেমসের থেকে শীতকালীন গেমস আকারে প্রকারে এখনো পর্যন্ত অনেক ছোট, যেমন, ভ্যানকুভারে অনুষ্ঠিত ২০১০ শীতকালীন অলিম্পিকে ৮২ টি দেশের ২৫৬৬ জন ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করে।[৪৬] গেমস চলাকালে ক্রীড়াবিদ ও আধিকারিকদের যে স্থানে থাকতে দেওয়া হয় তাকে অলিম্পিক ভিলেজ বলা হয়। এই অলিম্পিক ভিলেজে ক্যাফেটেরিয়া, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ধর্মীয় আচার পালনের স্থান সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদি দেওয়া থাকে।[৪৭]

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের মত বিভিন্ন দেশের সদস্যপদ অর্জনের ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বকে প্রাথমিক শর্ত হিসাবে গণ্য করে না। এর ফলে, বিভিন্ন উপনিবেশ ও সার্বভৌম নয় এমন দেশও অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ ও ক্রীড়াবিদ পাঠানোর সুযোগ পায়। যেমন, - পুয়ের্তো রিকো, বারমুডা এবং হংকং অন্য একটি দেশের অধীনে থাকার পরও অলিম্পিক গেমসে একটি স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে অংশগ্রহণ করে।[৪৮] আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বর্তমান সনদ অনুসারে "আন্তর্জাতিক কমিউনিটি কর্তৃক স্বীকৃত কোনো স্বাধীন দেশই" জাতীয় অলিম্পিক কমিটি গঠনের মাধ্যমে অলিম্পিকে অংশগ্রহণের অধিকার রাখে।[৪৯] যার কারণে আইওসি সেন্ট মার্টিন ও কুরাকাওকে ন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি গঠন করার অনুমতি দেয়নি; যেখানে একই রকম সাংবিধানিক মর্যাদার আরুবাকে ১৯৮৬ সালে আরুবান অলিম্পিক কমিটি গঠন করার অনুমতি দেয়।[৫০][৫১]

আয়োজক শহর ও রাষ্ট্রের ওপর অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

অনেক অর্থনীতিবিদই অলিম্পিক আয়োজনের সুফলের ব্যাপারে সন্দিহান কারণ অলিম্পিকের মত "বৃহৎ অনুষ্ঠানের" আয়োজন করতে অনেক ব্যয় হয় এবং এর অধিকাংশই আমদানির মাধ্যমে বিদেশ চলে যায় যাতে করে অর্থনীতিতে বিপরীত প্রভাব পড়ারও সম্ভাবনা থাকে। বিপরীত যুক্তিতে বলা যায়, আয়োজক দেশ অলিম্পিক আয়োজনের (বা শুধুমাত্র দাবি জানানোর) মাধ্যমে সারা বিশ্বকে তার উন্মুক্ত বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করে; ফলে আয়োজক দেশের রপ্তানি বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[৫২] এছড়া গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে আয়োজক শহরে ব্যবসায়িক কোম্পানির সদর দফতরগুলো স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থা এবং স্থানীয় পরিকাঠামোয় যথেষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ করে এবং এতে স্থনীয় অলাভজনক সংস্থাগুলির তথা স্থানীয় জনগণের সুবিধা হয়। গেমসের শুরুর আগের কয়েক বছর থেকে গেমসের সমাপ্তির কয়েক বছর পর পর্যন্তও আয়োজক শহরে এই সুবিধা দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও অলিম্পিকের সময় দেশ বিদেশ থেকে দর্শনার্থী আসার ফলে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসাও নিজেদের প্রচার প্রচার করার সুযোগ পায়।

অলিম্পিক গেমস এর আয়োজনকারী শহরের জন্য কিছু সুফল বয়ে আনলেও শহরবাসীর জন্য তা সবসময় আনন্দের নাও হতে পারে। বাসস্থানের অধিকার ও উৎখাত গবেষণা কেন্দ্র (Centre on Housing Rights and Evictions) তাদের এক সমীক্ষায় দেখেছে দুই দশকে প্রায় বিশ লক্ষ লোককে তাদের আবাসস্থল ত্যাগ করতে হয়েছে। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই সমাজের তথাকথিত নিচুতলার লোক।[৫৩]

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি

সুইজারল্যান্ডের লুসানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদর দফতর।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থা ও ফেডারেশন, স্বীকৃত সংবাদ মাধ্যম, জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ, আন্তর্জাতিক বিচারকমণ্ডলী, রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি এবং যেসকল প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক সনদের নিয়মাবলী মান্য করে চলে তাদের প্রত্যেকের সমন্বয়েই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি গঠন করা হয়।[৫৪] যদিও অলিম্পিকের সাথে অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকে আয়োজক দেশ নির্বাচন, ক্রীড়া পরিকল্পনা উন্নয়ন, পৃষ্ঠপোষক ও প্রচারসত্বের সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি নিজের কাছেই রেখেছে।[৫৫] আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। সংগঠনগুলো হল-

আইওসির দাফতরিক ভাষা হল ফরাসি ও ইংরেজি। যদি আয়োজক দেশের ভাষা ফরাসি বা ইংরেজি না হয় তাহলে অলিম্পিকের আয়োজনে সেই ভাষাও ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ঘোষণা ইংরেজি, ফরাসি ও স্থানীয় এই তিনটি ভাষায় দেওয়া হয়।

বাণিজ্যিকীকরণ

শুরুর দিকে আইওসি কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে অলিম্পিক গেমসের জন্য অর্থ সংগ্রহের বিরুদ্ধাচরণ করলেও ১৯৭২ সালের পর থেকে আইওসি ব্যবসায়িক অংশীদারদের আকর্ষনীয় ও লোভনীয় প্রস্তাবের পক্ষে মত দেয়[৫৬] এবং জোয়াও এন্টোনিও সামারাঞ্চের সময়কাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অলিম্পিক গেমস কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকদের তাদের পণ্য বিপণনের সুযোগ তৈরী করার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ তহবিল পেয়ে আসছে।[৫৭]

বাজেট

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে অলিম্পিক স্বল্প বাজেটে অনুষ্ঠিত হত।[৫৭][৫৮] ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আইওসির প্রেসিডেন্ট আভেরি ব্রান্ডেজ অলিম্পিক গেমসকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহারের সকল প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছিলেন।[৫৬] তিনি বিশ্বাস করতেন যে বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর সাথে অলিম্পিক কমিটির ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে তারা আইওসির উপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবে।[৫৬] ব্রান্ডেজের সময় অলিম্পিকের আয়োজকেরা তাদের নিজেদের পৃষ্ঠপোষকের কাছ থেকে অর্থ নিতেন এবং নিজেদের প্রতীক ব্যবহার করতেন। ব্রান্ডেজ অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত অলিম্পিক কমিটির তহবিলে মাত্র কুড়ি লক্ষ মার্কিন ডলার জমা ছিল। তবে তার অবসরের আট বছর পর আইওসির তহবিলে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার ছিল।[৫৬]

টেলিভিশনের প্রভাব

১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকের সময় অঙ্কিত একটি কার্টুন যাতে বুঝানো হচ্ছে ২০০০ সালের দিকে যখন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে তখন গ্যালারিতে কোন দর্শক থাকবে না। সবাই টিভিতে অলিম্পিক উপভোগ করবে এবং লাউড স্পীকারের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেওয়া হবে।

১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকই সর্বপ্রথম টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারিত হয়েছিল। এই সম্প্রচার শুধুমাত্র স্থানীয় দর্শকরাই উপভোগ করতে পেরেছিলেন।[৫৯] ১৯৫৬ শীতকালীন অলিম্পিকের সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক সম্প্রচার করা হয়।[৬০] এর পরবর্তী শীতকালীন অলিম্পিকের টিভিস্বত্ত্ব বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় করা হয়েছিলো। একটি চেলিভিশন সম্প্রচার সংস্থা সিবিএস শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে এর টিভিস্বত্ত্বের জন্য ৩,৯৪,০০০ মার্কিন ডলার প্রদান করেছিলো।[৬১] এছাড়া ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন ইউরোপে এর টিভিস্বত্ত্বের জন্য প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ মার্কিন ডলার দিয়েছিলো।[৫৭] ষাটের দশকে অলিম্পিককে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন পরাশক্তির মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে শীতলযুদ্ধের অবতারণা হয়েছিলো; আর আইওসি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টিভিস্বত্বের মূল্য আরও বাড়িয়ে চলছিলো।[৬১] টিভিস্বত্বের এই বিশাল আয় থেকে অলিম্পিক কমিটি অলিম্পিক গেমসকে সাধারণের মাঝে আরও জনপ্রিয় করার প্রয়াস পায় এবং ফলশ্রুতিতে এর টেলিভিশন দর্শক আরও বৃদ্ধি পায় এবং টিভিতে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়ায় পরবর্তী দশকগুলো থেকে অলিম্পিকের টিভিস্বত্বের মূল্য আকাশচুম্বী হতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৯৮ সালের নাগানো অলিম্পিকের জন্য সিবিএস ৩৭কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার দেয়,[৬২] অপরদিকে ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এনবিসি সম্প্রচার স্বত্বের জন্য প্রায় ৩৫০কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে।[৫৭]

১৯৬০ সালের থেকে বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত অলিম্পিকের টেলিভিশন দর্শক বাড়তে থাকে। স্যাটেলাইট ও সরাসরি সম্প্রচারের কল্যাণে ১৯৬৪ সালের মেক্সিকো অলিম্পিক প্রায় ৬০ কোটি দর্শক উপভোগ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে দর্শক সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০ কোটি এবং ১৯৯২ সালের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে দর্শক সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫০ কোটি! [৬৩]তবে ১৯৯২ সালের পর থেকে ইন্টারনেটের প্রসার ও টেলিভিশনের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে দর্শক কমতে শুরু করে। বিশেষ করে ইন্টারনেটে অলিম্পিকের বিভিন্ন ইভেন্টের ফলাফল ও সরাসরি ভিডিও দেখার সুবিধা যোগ হওয়ার পর থেকেই দর্শক সংখ্যায় ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে।[৬৪] দর্শক সংখ্যা কমলে আইওসির টিভিস্বত্ত্ব থেকে আয় কমে যেতে পারে এই চিন্তা থেকে আইওসি দর্শক ধরে রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়। যার মধ্যে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান, বিভিন্ন গেমসের সময়কাল বাড়ানো ও প্রচারে নতুনত্ব অন্যতম। এতকিছুর পরও ২০০২ সালের থেকে ২০০৬ সালের শীতকালীন গেমসের দর্শক সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। তবে ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক যুক্তরাষ্ট্রের এযাবতকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দূরদর্শন দর্শক টানতে সমর্থ হয়।[৬৫][৬৬]

বিতর্ক

অলিম্পিক ব্র্যান্ডের স্বত্ব বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রয় করার বিষয়টি প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে। মূল অভিযোগ ছিল, এর ফলে অন্যান্য অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার থেকে অলিম্পিকের কোনো পার্থক্য থাকছে না।[৬৭] এর অন্যতম প্রমাণ হল ১৯৯৬ সালের আটলান্টা ও ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিক। এই আয়োজক শহরগুলিকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানি তাদের অলিম্পিক ব্র্যান্ডের অজস্র পণ্যে ছেয়ে ফেলেছিল সঙ্গে ছিল তীব্র বিপণন প্রতিযোগিতা। যা ছিল অলিম্পিকের মূল নীতির পরিপন্থী।[৬৮] পরে অলিম্পিক কমিটি ঘোষণা করে ভবিষ্যৎ আসরে এই ধরনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবসায়িক প্রচারণা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।[৬৮] অপরদিকে অলিম্পিক গেমসের আয়োজক দেশ, গেমস এবং পরিকাঠামো সংক্রান্ত সকল ব্যয়ভার বহন করে; অথচ, আইওসি অলিম্পিক গেমসের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করে অলিম্পিকের প্রতীক থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় আয়ের পুরোটাই নেয়। এছাড়াও টিভিস্বত্ত্ব ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকদের থেকে প্রাপ্ত অর্থের কিছুটা অংশও নিয়ে থাকে।[৬৭] এতকিছুর পরেও বিভিন্ন দেশ অলিম্পিক আয়োজনের অধিকারের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় খুব ভালো করে জেনেও যে তারা তাদের লগ্নির হয়তো কিছুই ফেরত পাবে না।[৬৯] তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে অলিম্পিক আয়োজনের ফলে আয়োজক দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পায়।[৭০]

প্রতীক

অলিম্পিকের পতাকা

অলিম্পিক সনদ অনুযায়ী অলিম্পিকের সকল গেমসে অলিম্পিকের মূলনীতি প্রতিফলনকারী প্রতীক ব্যবহার করা হয়। অলিম্পিকের প্রতীক যা বাংলায় অলিম্পিক বলয় বা অলিম্পিক নিশান হিসেবে পরিচিত মূলত পাঁচটি বলয় একে অপরকে জড়িয়ে থাকে। পতাকার এই পাঁচটি বলয় আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়া, ওশেনিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশকে নির্দেশ করে। পাঁচটি বলয়ের পাঁচটি রঙ নীল, হলুদ, কালো, সবুজ ও লাল চয়ন করার মূল কারণ হল এই পাঁচটি রঙের অন্তত যেকোন একটি বা একাধিক রঙ প্রত্যেক দেশের পতাকায় ব্যবহৃত হয়েছে। অলিম্পিকের এই পতাকাটি ১৯১৪ সালে সর্বপ্রথম গৃহীত হয় তবে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পে অনুষ্ঠিত ১৯২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ওড়ানো হয়।[৭১]

অলিম্পিকের নীতিবাক্য ল্যাটিন ভাষায় সিটিয়াস, অলটিয়াস, ফোর্টিয়াস বা দ্রুততর, উচ্চতর, বলবত্তর। এই নীতিবাক্যটি ব্যারন পিঁয়ের দ্যা কুবেরত্যাঁর বন্ধু ডমিনিকান যাজক হেনরি ডিডন ওপি সর্বপ্রথম প্রস্তাব করেন ১৮৯১ সালে প্যারিসের একটি যুব সম্মেলনে।[৭২] টোকিও অলিম্পিক ২০২০ নীতিবাক্য পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে দ্রুততর, উচ্চতর, শক্তিশালী-একসঙ্গে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

কুবেরত্যাঁর অলিম্পিক সম্পর্কিত ভাবনার প্রকাশ দেখা যায় অলিম্পিক ধর্মের ব্যাখ্যায়:

অলিম্পিক গেমসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জয়লাভ নয়, বরং অংশগ্রহণকরা, ঠিক যেমন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংগ্রাম করা, জয়ী হওয়া নয়।অপরিহার্য জিনিস হল ভাল লড়াই; অপরকে পরাজিত করা নয়।[৭১]

প্রত্যেকটি অলিম্পিক শুরুর বেশ কয়েকমাস আগে, প্রাচীন গ্রিক রীতি অনুসারে এক অনুষ্ঠানে অলিম্পিয়াতে অলিম্পিক শিখা প্রজ্বলন করা হয়। একজন মহিলা কলাকুশলী, পূজারিনীর বেশে, একটি অধিবৃত্তাকার আয়নার সাহায্যে সূর্যরশ্মি সংহত করে প্রথম রিলে বাহকের জন্য অলিম্পিক মশাল প্রজ্বলন করেন। এই ভাবে অলিম্পিক মশাল দৌড়ের সূচনা হয়। এই দৌড় শেষ হয় আয়োজক শহরের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে, যেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মশালটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।[৭৩] যদিও ১৯২৮ সাল থেকেই অলিম্পিক শিখা অলিম্পিকের একটি অন্যতম প্রতীক; মশাল দৌড়ের সংযোজন হয় ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিক থেকে।[৭১]

১৯৬৮ মেক্সিকো অলিম্পিকে প্রথমবারের জন্য অলিম্পিক ম্যাস্কটের ব্যবহার করা হয়। এই ম্যাস্কট মূলতঃ আয়োজক দেশের কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দ্যোতক জন্তু বা মানুষের মূর্তি। কালে-দিনে, এটি সংশ্লিষ্ট অলিম্পিকের আসরের নিজস্ব বৈশিষ্টের প্রচারে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে। বিশেষ করে ১৯৮০ মস্কো অলিম্পিকের ম্যাস্কট ভালুকছানা মিশা সারা বিশ্বে অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।[৭৪] ওয়েনলক অলিম্পিয়ান গেমসের ম্যাস্কটের নাম ওয়েনলক; কারণ, এই খেলা যুক্তরাজ্যের শ্রপশায়ারের মাক ওয়েনলকে অনুষ্ঠিত হয়, যা এখনো নিয়মিতভাবে আয়োজিত হয়। এই খেলাই কুবেরত্যাঁকে অলিম্পিক আয়োজনের ভাবনায় অনুপ্রাণিত করেছিল।[৭৫]

অনুষ্ঠানসমূহ

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য।

অলিম্পিক সনদে উল্লেখিত রীতি অনুযায়ী গেমস শুরুর পূর্বে একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।[৭৬][৭৭] মোটামুটিভাবে, এই অনুষ্ঠানের রীতি-নীতিগুলি ১৯২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময়ই ঠিক হয়ে গেছে।[৭৮] অনুষ্ঠানটি সাধারণত আয়োজক দেশের পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়।[৭৬] এর পরে আয়োজক দেশ বিভিন্ন নান্দনিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ প্রদান করে। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে স্বাগতিক দেশ তার নিজের কৃষ্টি, কলা, ঐতিহ্য ও ইতিহাস তুলে ধরার সুযোগ পায়।[৭৮] এই জাতীয় অনুষ্ঠানে স্বাগতিক দেশ প্রচুর অর্থ খরচ করে নিজেদের গৌরব ও সামর্থ সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা চালায়। যেমন বেজিং অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হয়।[৭৯]

দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনীর পর বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদরা করে দর্শকদের সামনে অলিম্পিক স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করে। এই প্রদক্ষিণে সর্বপ্রথম আসে গ্রীসের ক্রীড়াবিদরা এবং সর্বশেষে আসে আয়োজক দেশের ক্রীড়াবিদরা। গ্রীসকে সবার আগে আসার সম্মান দেওয়া হয় অলিম্পিকের ইতিহাসে গ্রীসের ভূমিকার জন্য। গ্রীসের পরে আয়োজক দেশের পছন্দের বর্নমালার বর্নানুক্রমে সব দেশের ক্রীড়াবিদরা স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করে, আর আয়োজক দেশ আসে সবার শেষে। গ্রীসের অ্যাথেন্সে অনুষ্ঠিত ২০০৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময় গ্রিক পতাকা সর্বপ্রথম প্রদক্ষিণ করে এবং নিয়ম অনুযায়ী শেষে গ্রীসের ক্রীড়াবিদ ও আধিকারিকেরা প্রদক্ষিণ করে এই পর্বের ইতি টানে। বিভিন্ন দেশের কুচকাওয়াজের পর অলিম্পিকের মশাল স্টেডিয়ামে এনে বিভিন্ন হাত বদলের পর চূড়ান্ত মশাল বাহকের কাছে পৌঁছায় । সাধারণত আয়োজক দেশের কোনো প্রাক্তন অলিম্পিক বিজয়ীই অলিম্পিকের চূড়ান্ত মশাল বাহক হিসাবে অলিম্পিক শিখা প্রজ্বলন করে থাকেন।[৭৬][৭৭]

সমাপনী অনুষ্ঠান

২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সমাপনি অনুষ্ঠানে ক্রীড়াবিদরা।

অলিম্পিক গেমসের সকল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই ক্রীড়াযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানার জন্য সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বর্নানুক্রমে নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে পতাকাবাহক ক্রীড়াবিদরা মাঠে এসে উপস্থিত হন। তাঁদের পিছনে পিছনে সমস্ত অংশগ্রহণকারী দেশের সকল ক্রীড়াবিদরা একসাথে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন।[৮০] সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনটি দেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং তাদের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এই তিনটি দেশ হল বিদায়ী অলিম্পিকের আয়োজক দেশ, গ্রিস (অলিম্পিকের জন্মস্থান হওয়ার সম্মানে।) এবং পরবর্তী আসরের আয়োজক দেশ।[৮০] পতাকা উত্তোলনের পরে অলিম্পিক আয়োজক কমিটির সভাপতি ও আইওসি সভাপতি একটি করে সমাপনী ভাষণ দেন এবং সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অলিম্পিকের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় অলিম্পিক শিখা নিভিয়ে ফেলে।[৮১] অ্যান্টওয়ার্প অনুষ্ঠান নামে পরিচীত রীতি অনুযায়ী বর্তমান আয়োজক শহরের মেয়র আইওসি সভাপতির হাতে একটি বিশেষ অলিম্পিক পতাকা তুলে দেন; ও আইওসি সভাপতি আবার সেই পতাকা পরবর্তী আসরের আয়োজক শহরের মেয়রের হাতে তুলে দেন।[৮২] শেষে, পরবর্তী আসরের আয়োজক দেশ একটি ছোট্ট নান্দনিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের পরিচয় জ্ঞাপন করে।[৮০]

প্রথা অনুযায়ী, শেষ পদক প্রদান অনুষ্ঠান হিসাবে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ক্ষেত্রে পুরুষদের ম্যারাথনের ও শীতকালীন অলিম্পিকের ক্ষেত্রে ৫০ কিমি ক্রস-কান্ট্রি স্কিইং ফ্রিস্টাইল গণ শুরুর পদক সমাপনী অনুষ্ঠানের দিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে দেওয়া হয়।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান

২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সাইক্লিং-এর একটি দলগত বিভাগের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাম থেকে ডাইনে ডেনমার্কের পতাকা, যুক্তরাজ্যের ইউনিয়ন জ্যাক ও নিউজিল্যান্ডের পতাকা।

অলিম্পিক গেমসের প্রতিটি বিভাগের প্রতিযোগিতার শেষে সকল বিজয়ীদের নিয়ে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।[৮৩] প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয়। বিজয়ী দেশের সর্বোচ্চ পদকবিজয়ীকে তার দেশের প্রতিনিধি হিসেবে মেডেল প্রদান করা হয়। কোনো এক আইওসির সদস্য বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন। এই সময়ে তিনজন বিজয়ীরই নিজের নিজের দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয় এবং প্রথম স্থানাধিকারীর দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।[৮৪] সাধারণত আয়োজক দেশের নাগরিকরা এই অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।[৮৫]

ক্রীড়া

৩৫টি ক্রীড়া, ৩০টি শাখা ও প্রায় ৪০০টি বিভাগের সমাহার হল অলিম্পিক ক্রীড়াসমূহ। যথা, কুস্তি একটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া, যার দুটি শাখা হল: গ্রেকো-রোমান এবং ফ্রিস্টাইল। উপরন্তু ওজনের ভিত্তিতে ১৪টি পুরুষদের ও ৪টি মহিলাদের বিভাগও বর্তমান।[৮৬] বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ২৬ টি ক্রীড়া ও শীতকালীন অলিম্পিকে ১৫ টি ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।[৮৭] গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের প্রতিটি আসরে দৌড়বাজী, সাঁতার, অসিচালনা, এবংজিমন্যাস্টিক্স ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা নিয়মিত থেকেছে। অন্যদিকে, ১৯২৪ সালে শীতকালীন অলিম্পিক শুরু হবার পর থেকে ক্রস-কান্ট্রি স্কিইং, ফিগার স্কেটিং, আইস হকি, যুগ্ম নর্ডিক, স্কি লাফ, এবং দ্রুত স্কেটিং ক্রীড়াগুলি প্রতিটি আসরের নিয়মিত সদস্য। আজকের অলিম্পিকের অন্যতম ক্রীড়ার অনেকগুলিই প্রথমে প্রদর্শনমূলক ক্রীড়া হিসাবে অলিম্পিকে আয়োজিত হয়েছে; যেমন, -ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, এবং ভলিবল।[৮৮]

প্রতিটি অলিম্পিক ক্রীড়ারই আইওসি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক নিয়ামক সংস্থা আছে। আইওসিতে এমন মোট ৩৫ টি সংস্থার প্রতিনিধিত্ব আছে।[৮৯] স্বীকৃত সংস্থাগুলির মধ্যে এমন কিছু খেলার সংস্থাও আছে যে খেলা আপাতত অলিম্পিকের আসরে অনুষ্ঠিত হয় না। তবে এই বর্তমানে ক্রীড়াগুলি অলিম্পিক ক্রীড়ার মর্যাদা না পেলেও, যে কোনো অলিম্পিকের আসরের ঠিক পরবর্তী আইওসি সম্মেলনে অলিম্পিক ক্রীড়ার তালিকা সংশোধনের মাধ্যমে পরের অলিম্পিকে সংযোজিত হতে পারে।[৯০][৯১] আইওসি সম্মেলনে অলিম্পিক ক্রীড়ার তালিকা সংশোধনের সময় শুধু যে কেবল নতুন ক্রীড়ার সংযোজন হয় তাই নয়; কোনো বর্তমান ক্রীড়া বাদও দেওয়া হয়, আর এটা করা হয় আইওসির মোট সদস্যের অন্ততঃ দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের ভিত্তিতে।[৯২] দাবা বা সার্ফিং-এর মত এমন অনেক আইওসি স্বীকৃত ক্রীড়া আছে যা কোনো দিন অলিম্পিকে অনুষ্ঠিত হয়নি।[৯৩]

২০০৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আইওসি একটি অলিম্পিক অনুষ্ঠানসূচী কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল অলিম্পিক অনুষ্ঠানসূচীর বর্তমান ক্রীড়া ও আইওসি অননুমোদিত সকল ক্রীড়ার পর্যালোচনা করে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির রূপরেখা তৈরী করা যাতে প্রতিটি অলিম্পিকের অনুষ্ঠানসূচী স্থির করা সহজ হয়।[৯৪] কমিশন সাতটি শর্ত ঠিক করে যার ভিত্তিতে স্থির করা হবে কোনো ক্রীড়া অলিম্পিকের আসরে আয়োজিত হবে কিনা।[৯৪] এই শর্তগুলি হল, - ক্রীড়াটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বিশ্বজনীনতা, জনপ্রিয়তা, ভাবমূর্তি, ক্রীড়াবিদের স্বাস্থ্য, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক নিয়ামক সংস্থার বিকাশ এবং ক্রীড়াটি আয়োজনের খরচ।[৯৪] এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে পাঁচটি স্বীকৃত ক্রীড়ার (যথা, গল্ফ, কারাতে, রাগবি ইউনিয়ন, রোলার ক্রীড়া এবং স্কোয়াশ) সুপারিশ করা হয় ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্তির জন্য।[৯৪] আইওসি কার্যনির্বাহী পরিষদ এই ক্রীড়াগুলির পর্যালোচনা করার পর ২০০৫ সালের জুলাই মাসে সিঙ্গাপুরে আয়োজিত সাধারণ সভায় সুপারিশ করে। পাঁচটির মধ্যে মাত্র দুটি ক্রীড়া - কারাতে ও স্কোয়াশ চূড়ান্ত ভোটাভুটির জন্য নির্বাচিত হয়।[৯৪] কিন্তু কোনোটিই প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না পাওয়ায় অলিম্পিকের সূচীতে স্থান পায়নি।[৯৪] পরবর্তী পর্যায়ে, ২০০৯ সালে আইওসি ভোটে গল্ফ ও রাগবি ইউনিয়ন ক্রীড়াদুটিকে ২০১৬২০২০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।[৯৫]

২০০২ সালে অনুষ্ঠিত ১১৪তম আইওসি অধিবেশনে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়তন নির্দিষ্ট করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, - সর্বোচ্চ ২৮টি ক্রীড়ার ৩০১টি বিভাগে ১০,৫০০ জন ক্রীড়াবিদ অংশ নিতে পারবে।[৯৪] তিন বছর পর, ১১৭তম আইওসি অধিবেশনে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানসূচী পরিবর্তন সাধিত হয়। ফলে বেসবল ও সফ্টবল ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের ক্রীড়াসূচী থেকে বাদ পড়ে। যেহেতু পরিবর্ত ক্রীড়ার বিষয়ে কোনো ঐকমত্য্য হয়নি, ২০১২ অলিম্পিকে তাই ২৬ টি ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা হয়।[৯৪] তবে রাগবি ও গল্ফের ভুক্তির ফলে ২০১৬ ও ২০২০ অলিম্পিকে সর্বোচ্চ সীমার ২৮টি ক্রীড়াই দেখা যাবে।[৯৫]

পেশাদারিত্ব ও অপেশাদারিত্ব

১৯৯৮ সাল থেকে (ছবিতে ১৯৯৮ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণপদকের লড়াই রাশিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে) পেশাদার ক্রীড়াবিদদের আইস হকিতে অংশ নিতে দেওয়া হয়।

ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যশালী বেসরকারী বিদ্যালয়গুলির মূল্যবোধের আদর্শ পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিল।[৯৬] ঐ বেসরকারী বিদ্যালয়গুলি বিশ্বাস করত যে শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল ক্রীড়া। এই মানসিকতা একটি শব্দবন্ধে বলতে গেলে, লাতিন: mens sana in corpore sano বা, "সুস্থ শরীরে সুস্থ মন" বলা যেতে পারে। এই আদর্শ অনুসারে তিনিই একজন পুরুষকে যিনি কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের পরিবর্তে সব ক্ষেত্রে দক্ষ। এর উপরে ছিল এক অসাধারণ সততার ধারণা, - যেখানে কোনো বিষয়ে অনুশীলনকেও প্রতারণার সামিল ধরা হত।[৯৬] ফলে কোনো ক্রীড়ায় পেশাদারী মানসিকতায় অনুশীলন করা ব্যক্তি, সেই খেলার কোনো শখের ক্রীড়াবিদের থেকে অন্যায় সুবিধা নিচ্ছে বলে মনে করা হত।[৯৬]

পেশাদার ক্রীড়াবিদদের বাদ দেবার কারণে আধুনিক অলিম্পিকের ইতিহাস নানা বিতর্কে দীর্ণ হয়ে আছে। ১৯১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে পেন্টাথলন ও ডেকাথলনে বিজয়ী জিম থর্পের অলিম্পিক পদক কেড়ে নেওয়া হয় যখন জানা যায় যে তিনি অলিম্পিকের আগে আধা-পেশাদার বেসবল খেলেছিলেন। আইওসি ১৯৮৩ সালে, মানবিকতার খাতিরে, তাঁর মৃত্যুর পর সেই পদক ফিরিয়ে দেয়।[৯৭] সুইস ও অস্ট্রীয় স্কিয়ারেরা তাঁদের প্রশিক্ষকদের, এই খেলায় অর্থ উপার্জনের তথা পেশাদার হবার অপরাধে, অলিম্পিকে অংশ নিতে বাধা দেওয়ায় ১৯৩৬ শীতকালীন অলিম্পিক বর্জন করেন।[৯৮]

বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আর্থ-সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অপেশাদার ক্রীড়াবিদের গৌরবজনক ভাবমূর্তি ধীরে ধীরে ফিকে পড়তে থাকে।[৯৬] অন্যদিকে, পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির সরকারি অনুদান প্রাপ্ত "পুরো সময়ের অপেশাদার প্রতিযোগী"রা, নিজের পয়সায় অপেশাদার হওয়া পশ্চিমা প্রতিযোগীদের অসুবিধায় ফেলায় বিশুদ্ধ অপেশাদারি মনোভাবের পতনে সাহায্য করে। এতদসত্বেও, আইওসি সনাতন অপেশাদারি নিয়ম-কানুনই বজায় রাখে।[৯৯] সত্তরের দশকের শুরু থেকে, অলিম্পিক সনদ থেকে বাধ্যতামূলক অপেশাদারীত্বের নিয়ম শিথিল হতে শুরু করে। ১৯৮৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পর, আইওসি, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের (IF) অনুমতি সাপেক্ষে, সকল পেশাদার ক্রীড়াবিদকে অলিম্পিকে অংশগ্রহণে সম্মতি দেয়।[১০০] ২০১২ হিসাব অনুযায়ী, একমাত্র মুষ্টিযুদ্ধকুস্তিতে কোনো পেশাদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে না, যদিও এখানে অপেশাদারিত্বের সংজ্ঞা, অর্থ উপার্জনের দিকটি এড়িয়ে লড়াইয়ের নিয়ম-কানুনেই সীমাবদ্ধ। কারণ কিছু মুষ্টিযোদ্ধা ও মল্লবীর নিজেদের জাতীয় অলিম্পিক কমিটির কাছ থেকে আর্থিক পুরস্কার পেয়ে থাকে।

আয়োজক দেশ এবং শহর

অলিম্পিক গেমসের আয়োজক শহর[১০১]
সালগ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসশীতকালীন অলিম্পিক গেমসযুব অলিম্পিক গেমস
অলিম্পিয়াডস্বাগতিক শহরনম্বরস্বাগতিক শহরনম্বরস্বাগতিক শহর
১৮৯৬I এথেন্স, গ্রীস
১৯০০II প্যারিস, ফ্রান্স
১৯০৪III সেন্ট লুইস, মিশৌরি, যুক্তরাষ্ট্র[ক]
১৯০৬অস্বীকৃত[খ] অ্যাথেন্স, গ্রীস
১৯০৮IV লন্ডন, যুক্তরাজ্য[গ]
১৯১২V স্টকহোম, সুইডেন
'১৯১৬VI বার্লিন, জার্মানি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে স্থগিত
১৯২০VII এন্টেওয়ার্প, বেলজিয়াম [ঘ]
১৯২৪VIII প্যারিস, ফ্রান্সI চেমনিক্স, ফ্রান্স
১৯২৮IX আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ডII সেন্ট মরিটজ, সুইজারল্যান্ড
১৯৩২X লস এঙ্গেলস, যুক্তরাষ্ট্রIII লেক প্লাসিড, যুক্তরাষ্ট্র
১৯৩৬XI বার্লিন, নাৎসি জার্মানিIV নাৎসি জার্মানি
'১৯৪০XII টোকিও, জাপান
হেলসিঙ্কি, ফিনল্যান্ড
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে স্থগিত
V সাপ্পোরো, জাপান
সেন্ট মরিটজ, সুইজারল্যান্ড
গার্মিশ-পার্টেনকার্চেন, নাৎসি জার্মানি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে স্থগিত
'১৯৪৪XIII লন্ডন, যুক্তরাজ্য
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে স্থগিত
V কোর্তেনিয়া দি আমপেজ্জো, ইতালি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে স্থগিত
১৯৪৮XIV লন্ডন, যুক্তরাজ্যV সেন্ট মরিটজ, সুইজারল্যান্ড
১৯৫২XV হেলসিঙ্কি, ফিনল্যান্ডVI অসলো, নরওয়ে
১৯৫৬XVI মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া +
স্টকহোম, সুইডেন[ঙ]
VII কোর্তেনিয়া দি আমপেজ্জো, ইতালি
১৯৬০XVII রোম, ইতালিVIII সেক্যুয় উপত্যকা, যুক্তরাষ্ট্র
১৯৬৪XVIII টোকিও, জাপানIX ইন্সব্রুক, অস্ট্রিয়া
১৯৬৮XIX মেক্সিকো সিটি, মেক্সিকোX গ্রেনোবল, ফ্রান্স
১৯৭২XX মিউনিখ, পশ্চিম জার্মানিXI সাপ্পোরো, জাপান
১৯৭৬XXI মন্ট্রিয়ল, কানাডাXII ডেনভার, যুক্তরাষ্ট্র
ইন্সব্রুক, অস্ট্রিয়া
১৯৮০XXII মস্কো, সোভিয়েত ইউনিয়নXIII লেক প্লেসিড, যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮৪XXIII লস অ্যাঞ্জেলেস, যুক্তরাষ্ট্রXIV সারায়েভো, যুগোস্লাভিয়া
১৯৮৮XXIV সিউল, দক্ষিণ কোরিয়াXV ক্যালগেরি, কানাডা
১৯৯২XXV বার্সেলোনা, স্পেনXVI অ্যালবার্টভিল, ফ্রান্স
১৯৯৪XVII লিলহ্যামার, নরওয়ে
১৯৯৮XXVI আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র
১৯৯৮XVIII নাগানো, জাপান
২০০০XXVII সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
২০০২XIX সল্ট লেক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
২০০৪XXVIII অ্যাথেন্স, গ্রীস
২০০৬XX তুরিন, ইতালি
২০০৮XXIX বেজিং, চীন[চ]
২০১০XXI ভ্যাঙ্কুভার, কানাডাI (গ্রীষ্মকালীন)  সিঙ্গাপুর
২০১২XXX লন্ডন, যুক্তরাজ্যI (শীতকালীন) ইন্সব্রুক, অস্ট্রিয়া
২০১৪XXII সোচি, রাশিয়াII (গ্রীষ্মকালীন) নানজিং, চীন
২০১৬XXXI রিও দি জেনেরিও, ব্রাজিলII (শীতকালীন) লিলহ্যামার, নরওয়ে
২০১৮XXIII পিয়ংচ্যাং, দক্ষিণ কোরিয়াIII (গ্রীষ্মকালীন) বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা
২০২০XXXII টোকিও, জাপানIII (শীতকালীন) লোজান, সুইজারল্যান্ড
২০২২XXIV বেজিং, চীনIV (গ্রীষ্মকালীন)অনির্ধারিত
২০২৪XXXIII প্যারিস, ফ্রান্সIV (শীতকালীন)অনির্ধারিত
২০২৬XXV মিলান, ইতালি
২০২৮XXXIV লস অ্যাঞ্জেলেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
২০৩০
২০৩২XXXV ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া

বিতর্ক

অলিম্পিক বর্জন

একটি মানচিত্রের সাহায্যে দেখানো হচ্ছে যে কোন কোন দেশ ১৯৭৬ (হলুদ), ১৯৮০ (নীল) এবং ১৯৮৪ (লাল) সালের অলিম্পিক গেমস বর্জন করেছিল।

১৮৯৬ সালে অলিম্পিক গেমসের শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন এবং সুইজারল্যান্ড প্রত্যেকটি আসরেই অংশগ্রহণ করেছে। অন্যান্য দেশসমূহ হয়তো যোগ্য ক্রীড়াবিদের অভাবে নয়তো নানা রাজনৈতিক কারণে অনেক আসরেই অংশগ্রহণ করে নি। আইরিশ অলিম্পিক কাউন্সিল ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিক বর্জন করেছিলো। তার কারণ ছিল আইওসি তাদেরকে পুরো আয়ারল্যান্ডের প্রতিনিধিত্বের বদলে শুধুমাত্র স্বাধীন আইরিশ রাজ্য হিসাবে যোগদান করতে বলেছিল।[১০৮]

১৯৫৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময় তিনটি ভিন্ন কারণে অলিম্পিক বর্জন হয়: -

  • হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লবের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অত্যাচারের কারণে নেদারল্যান্ড, স্পেন এবং সুইজারল্যান্ড মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমস বর্জন করেছিল। তবে অশ্বচালনা ক্রীড়ার জন্য স্টকহোমে দল পাঠিয়েছিল।
  • সুয়েজ সংকটের জন্য কাম্বোডিয়া, মিশর, ইরাক ও লেবানন বর্জন করে।
  • তাইওয়ানকে "প্রজাতন্ত্রী চীন" হিসাবে অলিম্পিকে অংশ নিতে দেওয়ার প্রতিবাদে গণচীন ("গণপ্রজাতন্ত্রী চীন") এই অলিম্পিক বর্জন করে। কারণ প্রজাতন্ত্রী চীন বলতে পূর্বতন অখণ্ড চীনকে বোঝায়। আর গণচীন মনে করে তারাই অখণ্ড চীনের প্রতিভু। তাইওয়ানের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব গণচীন স্বীকার করে না।[১০৯]

অধিকাংশ আফ্রিকান রাষ্ট্র ১৯৭২ এবং ১৯৭৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে বর্জনের হুমকি দিয়ে আইওসিকে বাধ্য করার চেষ্টা করে, যাতে জাতিগত বিভাজনকারী দক্ষিণ আফ্রিকা ও রোডেশিয়া অলিম্পিকে নিষিদ্ধ হয়। নিউজিল্যান্ডও এই আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলির অভিযোগের লক্ষ্য হয়ে ওঠে, যখন, নিউজিল্যান্ডের জাতীয় রাগবি ইউনিয়ন দল বর্ণবিদ্বেষী দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়। আইওসি দক্ষিণ আফ্রিকা ও রোডেশিয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও রাগবি অলিম্পিক ক্রীড়া নয় এই যুক্তিতে নিউজিল্যান্ডকে নিষিদ্ধ করতে রাজি হয়নি।[১১০] ফলে, কুড়িটি আফ্রিকান দেশ, গায়না ও ইরাকের সঙ্গে মিলে ১৯৭৬ মন্ট্রিয়ল অলিম্পিক বর্জন করে, যদিও এই দেশগুলির কিছু ক্রীড়াবিদ এই সিদ্ধান্তের আগেই সেই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে ফেলেছিল।[১১০][১১১]

অন্যদিকে, এই দুটি অলিম্পিক তাইওয়ান বর্জন করে কারণ গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (PRC) মন্ট্রিয়ল আয়োজক কমিটির উপরে প্রভাব বিস্তার করে প্রজাতন্ত্রী চীন (ROC) নামে তাইওয়ানের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে সফল হওয়ায়। তাইওয়ানকে অলিম্পিকে অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসাবে বলা হয় তারা প্রজাতন্ত্রী চীনের পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু প্রজাতন্ত্রী চীন নাম ব্যবহার করতে পারবে না। স্বাভাবিকভাবেই তাইওয়ান সেই শর্ত অস্বীকার করে।[১১২] এরপর তাইওয়ান ১৯৮৪ সালের আগে আর অলিম্পিকে অংশ নেয়নি। ১৯৮৪ সাল থেকে তাইওয়ান চীনা তাইপেই নামে এবং একটি বিশেষ পতাকা ও নতুন জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে।[১১৩]

১৯৮০ ও ১৯৮৪ সালের অলিম্পিক দীর্ণ হয়েছে ঠান্ডা লড়াইতে বিবদমান দুই গোষ্ঠীভুক্ত দেশের পরস্পরের অলিম্পিক বর্জনের ফলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আরো চৌষট্টিটি রাষ্ট্র আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের প্রতিবাদে ১৯৮০ মস্কো অলিম্পিক বর্জন করে। ফলে মাত্র ৮১টি রাষ্ট্র এই অলিম্পিকে অংশ নেয় যা ছিল অলিম্পিকের ইতিহাসে ১৯৫৬ সালের পর সর্বনিম্ন অংশগ্রহণ।[১১৪] প্রতিশোধ হিসাবে, ১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক বর্জন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আরো ১৫টি রাষ্ট্র। কারণ হিসাবে বলা হয়, তারা নিজেদের দেশের ক্রীড়াবিদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। সোভিয়েত আধিকারিকেরা তাঁদের এই বর্জনের সিদ্ধান্তের সমর্থনে বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র জাতীয়তাবাদী আবেগ ও সোভিয়েত-বিরোধী উন্মাদনা পরিকল্পিতভাবে বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে"।[১১৫] এই বর্জনে অংশগ্রহণকারী বামপন্থী পূর্বইউরোপীয় দেশগুলি নিজেরা Druzhba-84 বা ফ্রেন্ডশীপ গেমস নামে একটি বিকল্প বহু-ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসরের আয়োজন করে জুলাই-আগস্ট মাসে। এই আসরে মোট ৫০টি রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করে ও ৪৮টি বিশ্ব রেকর্ডের সৃষ্টি হয়।[১১৬][১১৭][১১৮]

২০০৮ সালে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাসের জন্য ও সেই সময় তিব্বতি অস্থিরতার জন্য বেজিং অলিম্পিক ও সেই সঙ্গে চীনা পণ্য বর্জনের জন্য বিশ্ব জুড়ে জনমত তৈরি হয়েছিল। তবে কোনো রাষ্ট্রই বর্জন সমর্থন করেনি।[১১৯][১২০] অন্যদিকে, ২০০৮ সালে জর্জিয়া, ২০০৮ সালের দক্ষিণ অটেসিয়ার যুদ্ধে রাশিয়া অংশগ্রহণ করায়, ২০১৪ শীতকালীন অলিম্পিক বর্জনের ডাক দেয়। কারণ এটি রাশিয়ার সোচিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত কোনো বর্জন তো হয়ইনি, জর্জিয়া নিজেও সেই অলিম্পিকে অংশ নেয়।[১২১][১২২]

রাজনীতি

১৯৩৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে লং জাম্পে স্বর্ণপদক নেবার সময় বিজয়মঞ্চে জেসি ওয়েন্স

অলিম্পিক গেমস শুরু থেকেই বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৩৬ সালে জার্মানিতে যখন অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়, তখন নাৎসিরা আর্য জাতীয়তাবোধ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ঠ থাকলেও ন্যাশনাল সোশালিস্ট পার্টিকে একটি উদারপন্থী দল হিসেবে প্রচার করেছিল।[১২৩] সেই আসরে জার্মান ক্রীড়াবিদেরা বেশ ভাল ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়েছিল, যা তাদের আর্য শ্রেষ্ঠত্বের দাবীকে সমর্থন করে। তবে জার্মানি সর্বাধিক সংখ্যক স্বর্নপদক জিতলেও জেসি ওয়েন্সের মতো চারটি স্বর্ণপদক জয়ী আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা বা হাঙ্গেরীয় ইহুদি ইবোলিয়া শাকের মত ক্রীড়াবিদদের কৃতিত্ব সেই আর্য শ্রেষ্ঠত্বের দাবীকে জোরালো ধাক্কা দেয়।[১২৪] ১৯৫২ হেলসিঙ্কি অলিম্পিকের আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন কখনও কোন অলিম্পিকে যোগ দেয় নি। আন্তর্জাতীক এই গেমসে যোগদানের বদলে সোভিয়েতরা নিজেরাই এক ক্রীড়া আসরের আয়োজন করত যার নাম ছিল স্পার্টাকিয়াডস। ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সালের যুদ্ধ মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক সংস্থাগুলি "বুর্জোয়া" অলিম্পিকের পরিবর্তে এই শ্রমিক অলিম্পিকের প্রচারের চেষ্টা করে।[১২৫][১২৬] ১৯৫৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্রীড়াক্ষেত্রে নিজেকে একটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়; ও সেই সঙ্গে প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতির পূর্ণমাত্রায় সুবিধা তোলে।[১২৭] ব্যক্তিগত স্তরেও বহু ক্রীড়াবিদ অলিম্পিককে নিজস্ব রাজনৈতিক বক্তব্য পেশের মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেছে।

স্বর্ণপদকজয়ী টমি স্মিথ (মাঝে) এবং ব্রোঞ্জপদকজয়ী জন কার্লোস (ডানদিকে) মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে ব্ল্যাক পাওয়ার স্যালুট করছেন ১৯৬৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ২০০ মিটার দৌড়ের শেষে বিজয় মঞ্চে। অস্ট্রেলীয় রৌপ্যপদকজয়ী পিটার নর্ম্যান (বামদিকে); তিনজনেই মানবাধিকার সংক্রান্ত অলিম্পিক প্রকল্পের প্রতীক পরে আছেন।

মেক্সিকো শহরে অনুষ্ঠিত ১৯৬৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে, দুইজন মার্কিন দৌড়বীর, টমি স্মিথ ও জন কার্লোস, যারা ২০০ মিটার দৌড়ে যথাক্রমে প্রথম ও তৃতীয় হয়েছিল, বিজয় মঞ্চে ব্ল্যাক পাওয়ার স্যালুট (বা, কৃষ্ণাঙ্গ শক্তির অভিবাদন) করে। একই মঞ্চে, দ্বিতীয় স্থানাধিকারী অস্ট্রেলিয়ার পিটার নর্ম্যান মানবাধিকার সংক্রান্ত অলিম্পিক প্রকল্পের প্রতীক পরে এঁদের সমর্থন করেন। প্রতিক্রিয়ায়, আইওসি সভাপতি আভেরি ব্রুন্দেজ যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক কমিটিকে (USOC) নির্দেশ দেন, হয় ঐ দুই ক্রীড়াবিদকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হোক, অথবা পুরো আমেরিকান দৌড়বাজী দলকে দেশে ফেরানো হোক। আমেরিকা ঐ দুই প্রতিযোগীকে দেশে ফেরত পাঠায়।[১২৮] একই অলিম্পিকে, চেকোস্লোভাকিয়ার জিমন্যাস্ট ভেরা কাস্লাভস্কা, বিমে রৌপ্য ও মেঝেতে যুগ্ম স্বর্ণপদক জয়ী, নিজের দেশে সোভিয়েত আগ্রাসনের প্রতিবাদের মঞ্চ হিসাবে অলিম্পিককে ব্যবহার করায় প্রচুর বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বিজয় মঞ্চে সোভিয়েত জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন কাস্লাভস্কা প্রতিবাদ জানাতে মাথা ঝুঁকিয়ে সোভিয়েত পতাকার ডানদিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলেন। দেশে ফেরার পর, কাস্লাভস্কাকে শুধুমাত্র একঘরেই করা হয়নি; তাঁর যাবতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সোভিয়েত সরকার।

সাম্প্রতিককালে, ইরান সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে তাদের ক্রীড়াবিদদের কোনো ইজরায়েলি ক্রীড়াবিদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না হয়। ২০০৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে এক ইরানি জুডোকা, আরাশ মিরিসমাইলি, একটি খেলায় ইজরায়েলি প্রতিপক্ষের সাথে লড়েননি। সরকারিভাবে যদিও বলা হয়েছিল যে তিনি বেশি ওজনের জন্য যোগ্যতাঅর্জন করতে পারেননি; দেশে ফেরার পর ইরানি সরকার তাঁকে $১২৫,০০০ পুরস্কার দেয়, যা সকল স্বর্ণপদকজয়ীকেও দেওয়া হয়েছিল। সরকারিভাবে তাঁকে ইচ্ছাকৃত অংশগ্রহণে অস্বীকার করার অভিযোগ থেকেও মুক্তি দেওয়া হয়; তবে এই পুরস্কার অনেকের মনে সন্দেহের কারণ হয়।[১২৯]

দক্ষতাবর্ধক মাদকের ব্যবহার

১৯০৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ম্যারাথন দৌড়ে থমাস হিকস।

বিংশ শতকের শুরুর দিকে অনেক ক্রীড়াবিদ দক্ষতাবর্ধক ঔষধের ব্যবহার শুরু করে। ১৯০৪ সালে ম্যারাথন দৌড়ে স্বর্নপদক জয়ী ক্রীড়াবিদ থমাস হিকস তার প্রশিক্ষক কর্তৃক দেওয়া স্ট্রিকনিন মাদক ব্যবহার করেছিলেন।[১৩০] ১৯৬০ সালে একজন ডেনিশ সাইক্লিস্ট ক্যুদ এনমার্ক জেনসন মাদক সেবন করে গেমসে অবতীর্ণ হওয়ার পর সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ময়নাতদন্তে পাওয়া যায় যে অ্যাম্ফিটামিন নামক মাদকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়।[১৩১] এটিই ছিল শক্তিবর্ধক মাদক সেবনের ফলে অলিম্পিক গেমসে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে অলিম্পিক ফেডারেশন দক্ষতাবর্ধক মাদকের ব্যবহার নিষিদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়; যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৭ সালে অলিম্পিক কাউন্সিল আইনের মাধ্যমে মাদকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা শুরু করে।[১৩২]

সুইডিশ পেন্টাথলিট হান্স-গানার লিলজানওয়াল হলেন প্রথম ক্রীড়াবিদ যিনি ১৯৬৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মাদক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে তাঁর ব্রোঞ্জ পদক হারান।[১৩৩] এর পরেই সবচেয়ে প্রচারিত মাদক কেলেঙ্গারির ঘটনা ছিল বেন জনসনের। তিনি ১৯৮৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে স্ট্যানোজোলল মাদক সেবনের জন্য ১০০ মিটার দৌড়ের স্বর্ণপদক হারান। সেই পদক দেওয়া হয় দ্বিতীয় হওয়া কার্ল লুইসকে, যিনি আবার অলিম্পিক শুরুর আগে নিষিদ্ধ মাদকের ব্যবহারে ধরা পড়েছিলেন।[১৩৪][১৩৫] অলিম্পিকে মাদকের ব্যবহার রোধ করার জন্য নব্বইএর দশকের শেষের দিকে, ১৯৯৯ সালে বিশ্ব মাদক বিরোধী এজেন্সি (WADA) গঠন করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে ২০০০ সালের গ্রীষ্মকালীন ও ২০০২ সালের শীতকালীন অলিম্পিকে মাদক পরীক্ষার অনুত্তীর্ণ ক্রীড়াবিদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। বিশেষ করে ভারোত্তোলন ও ক্রস-কান্ট্রি স্কিইং ক্রীড়াবিদদের একটি বড় অংশ মাদক ব্যবহারের জন্য ধরা পড়েন। ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়ার ফলে, ২০০৬ শীতকালীন অলিম্পিকের সময় মাত্র একজন প্রতিযোগী মাদক পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার পদক খোয়ায়। আইওসি-স্থিরীকৃত মাদক পরীক্ষার নিয়মাবলী সারা বিশ্বে মানক হিসাবে ধরা হয়; এবং অন্যান্য ক্রীড়া সংস্থাগুলি একে মেনে চলার চেষ্টা করে।[১৩৬] বেজিং অলিম্পিকের সময়, ৩৬৬৭ জন প্রতিযোগীর মূত্র ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে মাদক পরীক্ষা হয় বিশ্ব মাদক বিরোধী এজেন্সির তত্বাবধানে। অলিম্পিক শুরুর আগেই বিভিন্ন জাতীয় অলিম্পিক কমিটি নিজের দেশের অনেক ক্রীড়াবিদকে মাদক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ায় অলিম্পিকে না পাঠানোয়, মাত্র তিনজন প্রতিযোগীই অলিম্পিক চলাকালীন মাদক পরীক্ষায় ধরা পড়ে।[১৩১][১৩৭] এই সাফল্যের পর লন্ডনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক মিলিয়ে ৬০০০ জনেরও বেশি প্রতিযোগীর মাদক পরীক্ষা হয়। অলিম্পিকের আগের পরীক্ষায় ১০৭জন প্রতিযোগী ধরা পরেন ও বহিষ্কৃত হন।[১৩৮][১৩৯] অলিম্পিক চলাকালীন আটজন প্রতিযোগী ধরা পড়েন ও নিলম্বিত হন। এঁদের মধ্যে ছিলেন শট পাটার নাদিয়া ওস্টাপচুক, যাঁর স্বর্ণপদক কেড়ে নেওয়া হয়।[১৪০]

লিঙ্গ বৈষম্য

১৯০০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে একজন ব্রিটিশ মহিলা টেনিস খেলোয়াড়।

১৯০০ সালে প্যারিস অলিম্পিকে নারীরা সর্বপ্রথম অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তথাপিও ১৯৯২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে প্রায় ৩৫ টি দেশ সকল ইভেন্টের জন্য শুধুমাত্র পুরুষ প্রতিনিধি প্রেরণ করে।[১৪১] তবে পরবর্তী বছরগুলোতে শুধু পুরুষ প্রতিনিধি প্রেরণকারী দেশের সংখ্যা দ্রুতহারে হ্রাস পায়। ২০০০ সালে বাহরাইন প্রথমবার, ফাতেমা হামিদ জিরাশি ও মরিয়াম মোহামেদ হাদি আল হিলি নামে দুই মহিলা প্রতিযোগীকে প্রেরণ করে।[১৪২] ২০০৪ সালে, আফগানিস্তানের হয়ে সর্বপ্রথম রবিনা মুকিমার ও ফারিবা রেজাঈ নামে দুজন মহিলা অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে।[১৪৩] ২০০৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী অলিম্পিকে সর্বপ্রথম মহিলা প্রতিযোগীকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়।[১৪৪]

২০১০ সালের আগ পর্যন্ত তিনটি দেশ কখনই নারী ক্রিড়াবিদকে প্রেরণ করে নি। এই তিনটি দেশ হল ব্রুনাই, সৌদি আরবকাতার। প্রতিবার একজন করে খেলোয়াড় পাঠিয়ে ব্রুনাই মাত্র তিনটি অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে অপরদিকে কাতার ও সৌদি আরব শুধুমাত্র পুরুষ দল নিয়ে নিয়মিতভাবে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে আসছিল। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ঘোষণা করে যে যেসব রাষ্ট্র নারী ক্রীড়াবিদ পাঠানোর ব্যপারে আগ্রহী না তাদের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা হবে। এর পর পরই কাতার অলিম্পিক কমিটি ঘোষণা করে যে শুটিং এবং ফেন্সিং এ অংশগ্রহণের জন্য তারা চারজন নারী খেলোয়াড় পাঠানোর ব্যাপারে আশাবাদী।[১৪৫]

২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে, the সংযুক্ত আরব আমিরশাহী প্রথমবার মহিলা ক্রীড়াবিদদের পাঠায় (মাইথা আল মক্তুম তাইকুন্ডোয় ও লতিফা আল মক্তুম অশ্বচালনায় অংশ নেন)। দুজনেই দুবাইের রাজপরিবারের সদস্য ।[১৪৬]

২০১০ সালে দেখা যায়, ব্রুনেই, সৌদি আরব ও কাতার এই তিনটি মাত্র রাষ্ট্র কখনোই কোনো মহিলা ক্রীড়াবিদ পাঠায়নি। এদের মধ্যে ব্রুনেই তিনটি মাত্র অলিম্পিকে শুধু একজন করেই প্রতিযোগী পাঠিয়েছে, কিন্তু, সৌদি আরব ও কাতার অলিম্পিকে নিয়মিত অংশ নিলেও শুধুমাত্র পুরুষদের দল পাঠিয়েছে। ২০১০ সালে আইওসি ঘোষণা করে এই দেশগুলিকে ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মহিলা প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য "চাপ" দেবে। আইওসির মহিলা ও ক্রীড়া কমিশনের সভাপতি প্রস্তাব দেন, যে সব দেশ মহিলা প্রতিনিধি পাঠাতে বাধা দেবে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। কিছুদিন পরেই কাতার অলিম্পিক কমিটি ঘোষণা করে যে তারা "আশা করে ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে চারজন পর্যন্ত মহিলা প্রতিযোগী পাঠাতে পারবে শুটিং ও অসিচালনায়"।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠিত ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ছিল অলিম্পিক ইতিহাসে প্রথম অলিম্পিক যেখানে অংশগ্রহণকারী সকল রাষ্ট্রই মহিলা ক্রীড়াবিদ এনেছিল।[১৪৭] সৌদি আরব দুই জন, কাতার চারজন এবং ব্রুনেই একজন (৪০০ মিটার বাধাদৌড়ে মাজিয়া মহুসিন) মহিলা প্রতিযোগী এনেছিল। কাতার আবার তাদের একজন মহিলা প্রতিযোগীকে, বাহিয়া আস-হামাদ (শুটিং), ২০১২ অলিম্পিকে তাদের পতাকাবাহিকা করেছিল।[১৪৮] ২০১২ অলিম্পিকেই, বাহরিনের মরিয়ম ইউসুফ জামাল প্রথম আরব উপসাগরীয় মহিলা হিসাবে অলিম্পিক পদক জেতেন, যখন তিনি ১৫০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় হন।[১৪৯]

অশ্বচালনাই একমাত্র অলিম্পিক খেলা যেখানে পুরুষ ও মহিলা একসাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বিভাগভিত্তিক পদকের সংখ্যা কম। তবে, ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে মহিলাদের মুষ্টিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় এখন পুরুষ ও মহিলাদের অলিম্পিক ক্রীড়ার সংখ্যা সমান।[১৫০] যদিও শীতকালীন অলিম্পিকে, মহিলারা এখনো যুগ্ম নর্ডিকে অংশ নিতে পারেননা। আর গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে সমলয় সাঁতার ও ছন্দবদ্ধ জিমন্যাস্টিক্সে পুরুষদের কোনো প্রতিযোগিতা হয় না।

সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতা

বিশ্বযুদ্ধের কারণে মোট তিনটি অলিম্পিক গেমস আয়োজন করা সম্ভব হয় নি এগুলো হল ১৯১৬, ১৯৪০ এবং ১৯৪৪। ১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪০ ও ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অলিম্পিক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। ২০০৮ সালে বেইজিং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনের দিনে রাশিয়া ও জর্জিয়ার যুদ্ধ শুরু হলেও অলিম্পিক অনুষ্ঠান অব্যাহত থাকে। উল্লেখ্য, যে ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ উপস্থিত ছিলেন এবং চীনা প্রধানমন্ত্রী হু জিন্তাও এর সভাপতিত্বে মধ্যান্যভোজে এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।[১৫১]

১৯৭২ সালের মিউনিখে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে সরাসরি সন্ত্রাসবাদী হানা হয়। ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামক একটি ফিলিস্তিনই জঙ্গি সংগঠন ১১ জন ইজরায়েলি ক্রীড়াবিদকে অপহরণ করে। ইতিহাসের এই নির্মমতম ঘটনাটি মিউনিখ হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। জঙ্গিরা তাদের অপহরণের পরপরই দুইজন ক্রীড়াবিদকে হত্যা করে এবং পরে বন্দীদের পালানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলে বাকী নয়জনকেও হত্যা করে। উক্ত ঘটনায় ৫ জন জঙ্গি সহ একজন জার্মান পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন।[১৫২]

যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত গত দুটি অলিম্পিক আসরেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দেখা যায়। ১৯৬৬ সালের আটলান্টায় গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময় সেন্টেনিয়াল অলিম্পিক পার্কের পাশে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে দুই জন নিহত ও ১১১ জন আহত হয়। এই ঘটনার পেছনে দায়ী ছিল এরিক রুডল্ফ নামের একজন স্থানীয় সন্ত্রাসবাদী যে বর্তমানে যাবৎজীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে।[১৫৩] অপরদিকে ইউটার সল্ট লেক সিটিতে অনুষ্ঠিত ২০০২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক গেমসটি শুরু হয় টুইন টাওয়ারে ৯/১১ তে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দূর্ঘটনার ঠিক পাঁচ মাস পরে। এর ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত কড়া ও নজিরবিহীন।[১৫৪]

ঔপনিবেশিক রাজনীতির চর্চা

ঔপনিবেশিক রাজনীতি চর্চার বা প্রচারের জন্য অলিম্পিক গেমস বহুবার সমালোচিত হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগের তীর সরাসরি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি অথবা আয়োজনকারী প্রস্তিষ্ঠানসমূহ কিংবা এর পৃষ্ঠপোষকগোষ্ঠীর দিকে উঠেছে। সমালোচকদের মতে ঔপনিবেশিক স্বার্থে সংশ্লিষ্ট দেশের ভূমিপুত্রদের বিকৃত নৃতাত্তিক তথ্য প্রদান, অপসারণ, পণ্যে রূপান্তরীকরণ[১৫৫] এবং প্রাচীন প্রতীক ও সংস্কৃতির অসম্মানজনক ব্যবহার হয়েছে অলিম্পিক গেমসের জন্য। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সম্পত্তির চুরি ও জবরদখল করে তাদের আরও দারিদ্রের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, ১৯০৪ সেন্ট লুইস, ১৯৭৬ মন্ট্রিয়ল, ১৯৮৮ ক্যালগেরি এবং ২০১০ ভ্যাঙ্কুভার অলিম্পিকে।

নাগরিকত্ব

নাগরিকত্ব বিষয়ক আইওসি নিয়মাবলী

অলিম্পিক সনদ অনুসারে কোনো দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হলে একজন প্রতিযোগীকে সে দেশের নাগরিক হতে হবে। দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলির যে কোনোটির প্রতিনিধিত্ব করা যাবে, যদি অন্য দেশের হয়ে সর্বশেষ প্রতিনিধিত্ব হয়ে থাকে তিন বছর আগে। তবে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, উভয় দেশের জাতীয় অলিম্পিক কমিটি ও সেই খেলার আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের কোনো আপত্তি না থাকলে, আইওসি কার্যনির্বাহী বোর্ড এই তিন বছরের সময়সীমা কমাতে বা সম্পূর্ণ মুছে দিতে পারে।[১৫৬] এই অপেক্ষার সময়কাল শুধুমাত্র সেই সব ক্রীড়াবিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাঁরা আগে অন্য কোনো দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং পরে অন্য আরেক দেশের হয়ে খেলতে চাইছেন। কোনো ক্রীড়াবিদ যদি সদ্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নেয়, তাহলে সেই নতুন নাগরিকের ক্ষেত্রে এই অপেক্ষার সময়কাল প্রযোজ্য নয়। এ প্রসঙ্গে একটি কথা স্মরণে রাখতে হবে, আইওসি নাগরিকত্ব প্রদান করেনা, সুতরাং কোনো ক্রীড়াবিদ একটি দেশের আইনানুগ নাগরিকত্ব পাওয়ার পরই আইওসি সেই ক্রীড়াবিদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে তৎপর হয়, যাতে সে অলিম্পিকে কোন দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে তা নির্দিষ্ট করা যায়।[১৫৭]

নাগরিকত্ব পরিবর্তনের কারণ

কোনো ক্রীড়াবিদের নাগরিকত্ব পরিবর্তনের মূল কারণই হল যাতে তারা অলিম্পিকে অংশ নিতে পারে। নতুন দেশে অনেক সময় ভালো পৃষ্ঠপোষক বা ভালো প্রশিক্ষণের হাতছানি থাকে, যেমন আমেরিকা। অনেক সময় আবার নিজের পূরাতন দেশের হয়ে অলিম্পিকে যোগ্যতাঅর্জন করতে না পারাও একটা কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে এই যোগ্যতাঅর্জন করতে না পারার কারণ, হয়ত সেই দেশে আগের থেকেই ঐ বিভাগে অন্য কোনো প্রতিযোগী যোগ্যতাঅর্জন করে ফেলেছে। ১৯৯২ থেকে ২০০৮ অলিম্পিকে প্রায় পঞ্চাশজন আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করেন, যাঁরা আগে অন্য দেশের হয়ে খেলেছিলেন।[১৫৮]

নাগরিকত্ব পরিবর্তন ও বিতর্ক

অলিম্পিকের ইতিহাসে অন্যতম বহুল আলোচিত নাগরিকত্ব পরিবর্তনের ঘটনা ছিল জোলা বাডকে ঘিরে। সে সময় বর্ণবিদ্বেষের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা অলিম্পিকে নিষিদ্ধ ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক হওয়ার কারণে জোলা অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে পারছিলেন না। জোলার পিতামহ ব্রিটেনে জন্মেছিলেন বলে, জোলা যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এখানে ব্রিটিশ নাগরিকদের অভিযোগ হল তাঁকে নাগরিকত্ব দিতে ব্রিটিশ সরকার বেশি তাড়াহুড়ো করেছিল।[১৫৯]

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিতর্কের উদাহরণগুলি হল, কেনীয় দৌড়বীর বার্নার্ড লাগাট ও বাস্কেটবল খেলোয়াড় বেকি হ্যামনের ঘটনা দুটি। ২০০৪ সালের মে মাসে বার্নার্ড যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। কেনীয় সংবিধান অনুসারে কোনো নাগরিক অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে কেনিয়ার নাগরিকত্ব বর্জন করতে হবে। এদিকে ২০০৪ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত অ্যাথেন্স অলিম্পিকে বার্নার্ড কেনিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন, যদিও ততদিনে তিনি আমেরিকার নাগরিক। ফলে কেনিয়ার নিয়মানুসারে তিনি আর কেনিয়ার নাগরিক নন। এই ধন্দে পড়ে, প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েও; তাঁর অলিম্পিক রৌপ্য পদক সংকটে পড়ে যায়। স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে বার্নার্ড বলেন, তিনি নাগরিকত্বের আবেদন ২০০৩-এর শেষের দিকে করেছিলেন, ভাবেননি যে অলিম্পিকের আগেই সেটা হয়ে যাবে।[১৬০] অন্যদিকে, বেকি অলিম্পিকে বাস্কেটবল খেলতে চেয়েছিলেন; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দলে সুযোগ না পেয়ে রাশিয়ার নাগরিকত্ব নেন। রাশিয়াতে তিনি আগেই WNBA-এর মরশুমের বাইরে ঘরোয়া লিগে খেলেছিলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত আমেরিকাতে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়। এমনকি, আমেরিকার জাতীয় কোচ তাঁকে দেশপ্রেমহীন আখ্যা দেন।[১৬১]

চ্যাম্পিয়ন ও অন্যান্য পদকবিজয়ী

অলিম্পিকে একক বা দলগতভাবে প্রতিটি প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের পদক দেওয়া হয়। ১৯১২ সাল পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নকে নিরেট সোনার পদক দেওয়া হত, পরে গিলটি করা রূপো এবং এখন সোনার জল করা রূপোর পদক দেওয়া হয়। তবে প্রতিটি স্বর্ণপদকে অন্ততঃ ছয় গ্রাম খাঁটি সোনা থাকতেই হবে।[১৬২] দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের যথাক্রমে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হয়। একক-বিদায় প্রতিযোগিতার (যেমন, মুষ্টিযুদ্ধ) ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক কোনো খেলা হয় না; বরং উভয় সেমিফাইনাল বিজিতকেই ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়। ১৮৯৬ সালের প্রথম অলিম্পিকে শুধুমাত্র প্রথম দুজনকে পদক দেওয়া হয় - প্রথম স্থানাধিকারী পেয়েছিলেন রৌপ্য ও দ্বিতীয় স্থানাধিকারী পেয়েছিলেন ব্রোঞ্জ। আজকের তিন পদকের রীতি শুরু হয় ১৯০৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে।[১৬৩] ১৯৪৮ সাল থেকে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানাধিকারীদের মানপত্র প্রদান করা শুরু হয়, এই মানপত্রকে সরকারিভাবে বিজয় মানপত্র (বা, ভিকট্রি ডিপ্লোমা ইংরেজি: victory diploma) বলা হয়; ১৯৮৪ অলিম্পিক থেকে সপ্তম ও অষ্টম স্থানাধিকারীদেরও এই মানপত্র দেওয়া হচ্ছে। ২০০৪ অ্যাথেন্স অলিম্পিকে প্রথম তিনজনকে পদকের সাথে জলপাই পাতার স্তবকও দেওয়া হয়েছিল।[১৬৪] আইওসি পদক সংক্রান্ত কোনো নিজস্ব পরিসংখ্যান রাখে না, তবে বিভিন্ন জাতীয় অলিম্পিক কমিটি ও সংবাদ মাধ্যম এই পরিসংখ্যান রাখে ও এর মাধ্যমে সাফল্যের বিচার করে।[১৬৫]

রাষ্ট্রসমূহ

গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে রাষ্ট্রসমূহ

২০১২ লন্ডন অলিম্পিক পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, বর্তমান ২০৪ টি NOC-এর সবাই অন্ততঃ একবার কোনো না কোনো অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স[A], যুক্তরাজ্য, গ্রীস, এবং সুইজারল্যান্ড[B] এখনো পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ২৭ টি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের প্রতিটিতেই অংশ নিয়েছে।

শীতকালীন অলিম্পিকে রাষ্ট্রসমূহ

শীতকালীন অলিম্পিকে এখনো পর্যন্ত মোট ১১৯ টি NOC (বর্তমান ২০৪টির মধ্যে ১১০ টি ও ৯টি প্রাক্তন NOC) অন্ততঃ একটি আসরে অংশগ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে বারোটি দেশ (যথাক্রমে, অস্ট্রিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, হাঙ্গেরি, ইটালি, নরওয়ে, পোল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, এবং যুক্তরাষ্ট্র) এখনো পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বাইশটি শীতকালীন অলিম্পিকেই অংশ নিয়েছে। এছাড়া পূর্বতন চেকোস্লোভাকিয়ার থেকে উদ্ভূত আজকের চেক প্রজাতন্ত্রস্লোভাকিয়ার মিলিত অংশগ্রহণ ধরলে এরাও সকল শীতকালীন অলিম্পিকে অংশ নিয়েছে।

আয়োজক দেশ ও শহর নির্বাচন

গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজক দেশসমূহের মানচিত্র। যেসব দেশ একবার আয়োজকের ভূমিকা পালন করেছে তাদের সবুজ, আর যারা একাধিক গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন করেছে তাদের নীল রঙ দ্বারা চিহ্নিত করে হয়েছে।
শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজক দেশসমূহের মানচিত্র। যেসব দেশ একবার আয়োজকের ভূমিকা পালন করেছে তাদের সবুজ, আর যারা একাধিক শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজন করেছে তাদের নীল রঙ দ্বারা চিহ্নিত করে হয়েছে।

অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠানের প্রায় সাত-আট বছর আগেই আয়োজক শহর নির্বাচনের পর্বটি সম্পাদন করা হয়।[১৬৬] এই পদ্ধতিটি সাধারণত দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি দুই বছরের মধ্যে শেষ হয়। প্রথমে আগ্রহী শহরগুলো নিজ দেশের জাতীয় অলিম্পিক কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠায়। যদি একাধিক শহর একই সাথে তাদের জাতীয় অলিম্পিক কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠায় সেক্ষেত্রে কমিটি একটি অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি শহরের প্রস্তাবনা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছে তুলে ধরে। কারণ আইওসির নিয়মানুসারে একটি জাতীয় অলিম্পিক কমিটি একটি শহরের নামই প্রস্তাব করতে পারে। প্রথম পর্যায়ে (প্রস্তাব পর্যায়) প্রস্তাবনার সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর সম্ভাব্য স্বাগতিক শহরগুলোকে অলিম্পিক আয়োজনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয় নিয়ে একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতে হয়।[১৬৭] এই প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে আবেদনকারীদের অলিম্পিক কমিটিকে এই মর্মে আশ্বস্ত করতে হয় যে তারা অলিম্পিক সনদের সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে চলবে।[১৬৬] অতঃপর পরবর্তী ধাপে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আবেদনকারীদের যোগ্যতা, অবকাঠামো, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশ পরিস্থিতির ভিত্তিতে বাছাই করে প্রার্থী শহরের তালিকা প্রস্তুত করে। শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায় (প্রার্থী পর্যায়)।[১৬৭]

প্রার্থী শহর নির্বাচিত হবার পর সংশ্লিষ্ট শহরগুলিকে অলিম্পিক আয়োজনের জন্য তারা কি কি করবে তার আরও বিস্তারিত বিবরণ সংবলিত নথি আইওসিতে জমা করতে হয়। আইওসির মূল্যায়ন সংসদ প্রত্যেকটি শহরের এই নথি আরও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে। এমনকি সমস্ত প্রার্থী শহরে এই সংসদ সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় আধিকারিকদের সাথে কথা বলে, সম্ভাব্য প্রতিযোগিতার স্থানগুলি পর্যবেক্ষণ করে আইওসির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের একমাস আগে রিপোর্ট পেশ করে। অলিম্পিক আয়োজন করার জন্য আয়োজক শহরকে যাবতীয় খরচ বহন করার অঙ্গীকার করতে হয়।[১৬৬] মূল্যায়ন সংসদের কাজ শেষ হবার পর, আইওসির সাধারণ অধিবেশন বসে এমন একটি শহরে যেটি আলোচ্য অলিম্পিক আয়োজনের দৌড়ে নেই। সেখানে প্রথমে সকল সদস্যের কাছে প্রার্থী শহরের তালিকা প্রদান করা হয়। এরপর সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত নির্বাচন হয়। নির্বাচনের পর আয়োজক শহর ও সেই দেশের জাতীয় অলিম্পিক কমিটি যৌথভাবে আয়োজক শহরের চুক্তি সই করে আইওসির সাথে। এই চুক্তির বলে সেই শহর ও দেশ সরকারীভাবে অলিম্পিক আয়োজকের স্বীকৃতি পায়।[১৬৬]

২০১৬ অলিম্পিক ধরে হিসাব করলে, ২৩টি দেশের ৪৪টি শহরে অলিম্পিকের আসর বসবে। কিন্তু ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাইরে অলিম্পিক মাত্র ৮ বার আয়োজিত হয়েছে। ১৯৮৮ সিওল অলিম্পিক থেকে আজ অবধি ৪ বার এশিয়া ও ওশেনিয়ায় অলিম্পিক আয়োজিত হয়েছে। অথচ, আগের ৯২ বছরের অলিম্পিকের ইতিহাসে এরকম নজির নেই। ২০১৬ রিও অলিম্পিক দক্ষিণ আমেরিকায় প্রথম অলিম্পিক হবে। এদিকে আফ্রিকায় এখনো পর্যন্ত অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি, আটবার (চারবার গ্রীষ্মকালীন ও চারবার শীতকালীন) অলিম্পিকের আয়োজন করেছে। তিনবার গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন সবচেয়ে বেশিবার অলিম্পিক আয়োজক শহরের রেকর্ড ধারণ করছে। এছাড়া দু'বার করে অলিম্পিক আয়োজন করেছে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও গ্রীস। অন্যদিকে, দুইবার অলিম্পিক আয়োজনের কৃতিত্বের অধিকারী শহরগুলি হল, লস অ্যাঞ্জেলেস, প্যারিস ও অ্যাথেন্স। ২০২০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সাথে সাথে এশিয়া থেকে জাপানের টোকিও শহরও দু'বার অলিম্পিক আয়োজনের গৌরব অর্জন করবে।

শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের নিরিখে তিনবার আয়োজন করে ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের পরেই অবস্থান করছে। এছাড়া সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, জাপান, কানাডা ও ইটালি দুইবার করে অলিম্পিক আয়োজন করেছে। আয়োজক শহরের মধ্যে দুবার করে আয়োজন করে সবার উপরে আছে লেক প্লেসিড, ইন্সব্রুক ও সেন্ট মরিৎজ।


অংশগ্রহণের টিকা

  1. a b ১৯০৪ অলিম্পিকে অ্যালবার্ট কোরীর অংশগ্রহণ নিয়ে বিভিন্ন উৎসে সঙ্গতিহীন তথ্য পাওয়া যায়। তবে অলিম্পিক রিপোর্ট অনুসারে কোরী "শিকাগো অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের রঙের পরিধানের ফরাসি"।[১৬৮] আইওসি তাঁর ম্যারাথন পদক ফ্রান্সের বদলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্জিত পদকের মধ্যে দেখায়। অথচ তাঁর অর্জিত দলগত ৪ মাইল দৌড় ও মিশ্র দল প্রতিযোগিতার পদক দুটি যুক্তরাষ্ট্রর বদলে ফ্রান্স ও মিশ্র দলের অর্জিত পদকের তালিকায় দেখায়।[১৬৯]
  2. a b c d e কম্বোডিয়া, মিশর, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, এবং সুইজারল্যান্ড ১৯৫৬ সালের জুন মাসে স্টকহোমে অনুষ্ঠিত ১৯৫৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অশ্বচালনায় অংশগ্রহণ করলেও,[১৭০] ঐ বছরের পরের দিকে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের মূল পর্বে অংশ নেয়নি।[১৭১]

টিকা

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী