অলিভার গোল্ডস্মিথ

অলিভার গোল্ডস্মিথ (ইংরেজি: Oliver Goldsmith; ১০ নভেম্বর ১৭৩০ - ৪ এপ্রিল ১৭৭৪) ছিলেন একজন অ্যাংলো-আইরিশ লেখক, কবি ও চিকিৎসক। তার সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্মগুলো হচ্ছে উপন্যাস দ্য ভিকার অব ওয়েকফিল্ড (১৭৬৬), কবিতা দ্য ডেজার্টেড ভিলেজ (১৭৭০) এবং নাটক দ্য গুড-ন্যাচার্ড ম্যান (১৭৬৮) ও শি স্টুপস টু কনকার (১৭৭১, যা ১৭৭৩ সালে প্রথম মঞ্চস্থ হয়)। ধারণা করা হয় তিনি ধ্রুপদী শিশুতোষ গল্প দ্য হিস্ট্রি অব লিটল গুডি টু-শোজ (১৭৬৫) রচনা করেছেন। ১৭৬০ সালে দ্য সিটিজেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড নামে ধারাবাহিক চিঠি প্রকাশ করা শুরু করেন। পাবলিক লেজারে এগুলো প্রকাশিত হতো।

অলিভার গোল্ডস্মিথ
জশুয়া রেনল্ডস কর্তৃক অঙ্কিত গোল্ডস্মিথের পোট্রেট, ১৭৬৯-৭০
জশুয়া রেনল্ডস কর্তৃক অঙ্কিত গোল্ডস্মিথের পোট্রেট, ১৭৬৯-৭০
স্থানীয় নাম
Oliver Goldsmith
জন্ম(১৭২৮-১১-১০)১০ নভেম্বর ১৭২৮
ব্যালিমাহন, কাউন্টি লংফোর্ড, আয়ারল্যান্ড রাজ্য, অথবা এলফিন, কাউন্টি রসকমন, আয়ারল্যান্ড রাজ্য
মৃত্যু৪ এপ্রিল ১৭৭৪(1774-04-04) (বয়স ৪৫)
লন্ডন, ইংল্যান্ড
সমাধিস্থলটেম্পল চার্চ, লন্ডন
পেশানাট্যকার, কবি
ভাষাইংরেজি
শিক্ষাস্নাতক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন
ধরননাটক, কবিতা
সাহিত্য আন্দোলনদ্য ক্লাব

জীবনী

গোল্ডস্মিথের জন্ম তারিখ ও বয়স সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের নথিপত্র অনুসারে, তিনি একজন জীবনীকারকে জানান যে তিনি ১৭২৮ সালের ১০ই নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থানের অবস্থানও অনিশ্চিত। তিনি আয়ারল্যান্ড রাজ্যের কাউন্টি লংফোর্ডের ব্যালিমাহনের নিকটবর্তী পালাস উপশহরে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তার পিতা ফর্গনির যাজকীয় বিভাগের অ্যাঞ্জেলিকান গির্জার সহকারী পাদ্রি ছিলেন; অথবা কাউন্টি রসকমনের এলফিনের নিকটবর্তী স্মিথ হলে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তার পিতামহ অলিভার জোন্স একজন যাজক ও এলফিন ডিওসেজান স্কুলের প্রধান ছিলেন। গোল্ডস্মিথ এই স্কুলে পড়াশোনা করেন।[১] গোল্ডস্মিথের যখন দুই বছর বয়স তখন তার পিতা কাউন্টি ওয়েস্টমিথের কিলকেনি ওয়েস্টের সহকারী পাদ্রিদের রেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। তাদের পরিবার অ্যাথলোন ও ব্যালিমাহনের মধ্যবর্তী লিসয়ে যাজকের বাসবভনে চলে যায় এবং ১৭৪৭ সালে তার পিতার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সেখানেই বসবাস করে।

অলিভার গোল্ডস্মিথ

১৭৪৪ সালে গোল্ডস্মিথ ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন। তার শিক্ষক ছিলেন টিয়েকার ওয়াইল্ডার। ধর্মতত্ত্ব ও আইন বিষয়ে পড়াশোনা পছন্দ না করায় তিনি তার শ্রেণিতে নিম্নতর ফলাফল অর্জন করেন। ১৭৪৭ সালে আরও চারজন স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থীর সাথে তিনি মার্শালসি কারাগারে আক্রমণের প্রচেষ্টা সংক্রান্ত দাঙ্গার জন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়।[২] ১৭৪৯ সালে তিনি ব্যাচলর অব আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন, কিন্তু কোন শাখা বা বিশেষায়িত ক্ষেত্র উল্লেখ না থাকায় তিনি গির্জা বা আইনের কোন পেশায় যোগদান করতে পারেননি। তার শিক্ষা কেবল তাকে নতুন জামাকাপড় পরিধান, তাস খেলা, আইরিশ গান গাওয়া, ও বাঁশি বাজানোর স্বাদ প্রদান করে। তিনি তার মায়ের সাথে কিছুদিন কাটান এবং বিভিন্ন পেশায় যোগদানের চেষ্টায় বিফল হন। তিনি ১৭৫২ থেকে ১৭৫৫ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং ফ্ল্যান্ডার্স, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও উত্তর ইতালিতে সফরে বের হন।

তিনি ১৭৫৬ সালে লন্ডনে স্থায়ী হন। সেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের চাকরি করেন, তন্মধ্যে রয়েছে একজন ঔষধ বিক্রেতার সহকারী ও একটি বিদ্যালয়ের দ্বাররক্ষক। পৈতৃকভাবে ঋণগ্রস্থ ও জুয়ায় আসক্ত গোল্ডস্মিথ লন্ডনের প্রকাশকদের জন্য গ্রাব স্ট্রিটে নিম্নমানের লেখক[৩][৪][৫][৬] হিসেবে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু কিছু যত্নশীল কাজ তাকে স্যামুয়েল জনসনের সহচার্য পেতে সাহায্য করে। তারা দুজনে "দ্য ক্লাব"-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। সেখানে তার সমকালীন ক্লাব সদস্য এডমান্ড বার্কের মাধ্যমে তিনি স্যার জর্জ স্যাভিলের সাথে পরিচিত হন। স্যাভিল তাকে থর্নহিল গ্রামার স্কুলে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। তার সাহিত্যকর্ম ও অনৈতিক জীবনযাপনের জন্য হোরেস ওয়ালপোল তার উপাধি প্রদান করেন "অনুপ্রাণিত নির্বোধ"। এই সময়ে তিনি "জেমস উইলিংটন" ছদ্মনাম ব্যবহার করে ওগেনো জঁ মার্তেইলের ১৭৫৮ সালে রচিত আত্মজীবনীর অনুবাদ করেন।

টেম্পল চার্চে অলিভার গোল্ডস্মিথের স্মৃতিফলক

১৭৭৪ সালে তার অকাল মৃত্যুর কারণ ছিল যকৃতের সংক্রামণে তার ভুল চিকিৎসা। গোল্ডস্মিথকে লন্ডনের টেম্পল চার্চে সমাহিত করা হয়। তার সমাধি ফলকে লেখা রয়েছে "HERE LIES/OLIVER GOLDSMITH" (এখানে সমাহিত/অলিভার গোল্ডস্মিথ)। তার সমাধির স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু ১৯৪১ সালে একটি বিমান আক্রমণে তা ধ্বংস হয়ে যায়। বালিমাহনের কেন্দ্রে তার একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে স্যামুয়েল জনসনের লেখা সমাধি ফলকসহ আরেকটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।[৭]

সাহিত্যকর্ম

প্রধান কর্ম
  • দ্য ট্রাভেলার (১৯৬৪)
  • দ্য ভিকার অব ওয়েকফিল্ড (১৭৬৬)[৮][৯]
  • দ্য গুড ন্যাচার্ড ম্যান (১৭৬৮)
  • দ্য ডেজার্টেড ভিলেজ (১৭৭০)[১০]
  • শি স্টুপস টু কনকার (১৭৭৩)[১১]
অন্যান্য কর্ম
  • অ্যাকাউন্ট অব দি অগাস্টান এজ ইন ইংল্যান্ড (১৭৫৯)
  • দ্য লাইফ অব রিচার্ড ন্যাশ (বো নাশ) (১৭৬২)
  • দ্য হিস্ট্রি অব ইংল্যান্ড (১৭৭১)
  • ডক্টর গোল্ডস্মিথ্‌স রোমান হিস্ট্রি অ্যাব্রিজড বাই হিমসেলফ ফর দ্য ইউজ অব স্কুলস (১৭৭২)[১২]
  • অ্যান হিস্ট্রি অব দি আর্থ অ্যান্ড অ্যানিমেটেড ন্যাচার (১৭৭৪)
  • দ্য কমপ্লিট পোয়েটিক্যাল ওয়ার্কস অব অলিভার গোল্ডস্মিথ (১৮৮৭), অস্টিন ডবসন সম্পাদিত

ধর্মবিশ্বাস

গোল্ডস্মিথ একজন অ্যাঞ্জেলিকান ছিলেন,[১৩] এবং বলেন, "আমি যেমন আমার জুতা চর্মকারের নিকট থেকে, এবং কোট দর্জির নিকট থেকে নিই, তেমনি আমি আমার ধর্ম যাজকের নিকট থেকে নিই।"[১৪]

টমাস হার্স্ট লিখেন যে গোল্ডস্মিথ "শ্বরের অস্তিত্ব ও পরিপূর্ণতাকে আনন্দের সাথে স্বীকার করতেন। খ্রিস্টানদের নিউ টেস্টামেন্টের শেষ গ্রন্থের প্রতিও তার যথেষ্ট সম্মান ছিল, তিনি মনে করতেন শ্বর আমাদের সর্বোত্তম আশা ও প্রত্যাশার উৎস।"[১৫]

স্মৃতিস্তম্ভ

ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের সামনে গোল্ডস্মিথের প্রতিমূর্তি
  • গোল্ডস্মিথ ১৭৭১ থেকে ১৭৭৪ সালে উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের কিংসবারিতে বসবাস করতেন। এই স্থানে তার নামানুসারে অলিভার গোল্ডস্মিথ প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোল্ডস্মিথ লেন ও গোল্ডস্মিথ অ্যাভিনিউয়ের নামকরণ করা হয়েছে।
  • পেকহামে তার নামানুসারে অলিভার গোল্ডস্মিথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে।[১৬]
  • প্রতি বছর জুন মাসে ব্যাংক ছুটির দিনে বালিমাহনে গোল্ডস্মিথের জন্মস্থানের নিকটবর্তী ফর্গনির পালাসে কবিতা ও সৃজনশীল পাঠ্যের উপর অলিভার গোল্ডস্মিথ সামার স্কুল অনুষ্ঠিত হয়।
  • হাওয়ার্ড জিনের মার্ক্স ইন সহো নাটকে মার্ক্স চরিত্রটি গোল্ডস্মিথের দ্য ডেজার্টেড ভিলেজ কবিতার উল্লেখ করে।[১৭]
  • ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের সামনে জে. এইচ. ফলির নির্মিত গোল্ডস্মিথের একটি প্রতিমূর্তি রয়েছে (ছবিতে)।
  • কাউন্টি লংফোর্ডের বালিমাহনের ফর্গনির পালাসে তার জন্মস্থানের ধ্বংসাবশেষে একটি চুনাপাথরের ছোট ঘরে গোল্ডস্মিথের একটি প্রতিমূর্তি রয়েছ। এটি ট্রিনিটি কলেজে অবস্থিত ফলির নির্মিত প্রতিমূর্তির অনুলিপি এবং এটি বার্ষিক অলিভার গোল্ডস্মিথ সামার স্কুলের কেন্দ্রবিন্দু।
  • তার নামানুসারে ট্রিনিটি কলেজ প্রাঙ্গনে অবস্থিত নতুন লেকচার থিয়েটার ও ছাত্রাবাস গোল্ডস্মিথ হলের নামকরণ করা হয়।
  • অ্যালাবামার অবার্ন ও অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় গোল্ডস্মিথের একটি কবিতার প্রথম ছত্র "সুইট অবার্ন, লাভলিয়েস্ট ভিলেজ অব দ্য প্লেইন" ("Sweet Auburn, loveliest village of the plain") অনুসারে। অবার্নকে এখনো সুন্দরতম গ্রাম বলে উল্লেখ করা হয়।
  • সিডনির অবার্নেরও নামকরণ করা হয় "সুইট অবার্ন" থেকে।
  • লংফোর্ড কাউন্টির বালিমাহনের বাইরে টাউন লাইব্রেরিতে আইরিশ ভাস্কর ইয়ামন ও' ডোহার্টি (১৯৩৯-২০১১) নির্মিত একটি প্রতিমূর্তি রয়েছে, এটি ১৯৯৯ সালে উন্মোচন করা হয়।
  • লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড লকোমোটিভ নাম্বার ১৬-এর নাম রাখা হয় অলিভার গোল্ডস্মিথ, ১৯৬২ সালের পূর্ব পর্যন্ত এটি লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের মেট্রোপলিটন লাইন হিসেবে ব্যবহৃত হত।
  • লংফোর্ড ভিত্তিক সঙ্গীতদল গোল্ডস্মিথের নামকরণ করা হয় এই বিখ্যাত লেখকে নামানুসারে।
  • অ্যাথালোন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গ্রন্থাগারের নামকরণ করা হয় গোল্ডস্মিথ লাইব্রেরি।
  • ১৮৭০ সালে ফিবসবরায় একটি রাস্তার নাম পরিবর্তন করা রাখা হয় গোল্ডস্মিথ স্ট্রিট।[১৮]
  • মেলবোর্নের এলউডের "পোয়েটস কর্নার" এলাকার গোল্ডস্মিথ স্ট্রিটের নামকরণ করা হয় এই লেখকের নামানুসারে।[১৯]
  • ডাবলিনের স্টোনিব্যাটারের অবার্ন হিলের নামকরণ করা হয় তার দ্য ডেজার্টেড ভিলেজ কবিতার কাল্পনিক শহর অবার্নের নামানুসারে।[১৮]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

১৯৫১ সালের হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র দ্য ল্যাভেন্ডার হিল মব-এর দুটি চরিত্র গোল্ডস্মিথের দ্য ট্রাভেলার কবিতার একটি ছত্র উল্লেখ করে একটি সূক্ষ্ম কৌতুক করে, কারণ ছবিটির কাহিনিতে স্বর্ণ চুরির একটি ঘটনা রয়েছে।

স্যার টেরি প্র্যাচেটের ক্রিসমাস-ধারার গল্প "দ্য হগফাদার"-এর স্কাই ওয়ান চ্যানেলের জন্য তৈরি টেলিভিশন নাটকের শুরুর দৃশ্যে "আঙ্ক-মর্পোর্ক অ্যাসাসিন্স গিল্ড"-এর নৃশংসতায় জড়িত হল অব মেমোরিয়ালের অংশ হিসেবে গোল্ডস্মিথের একটি পোট্রেট দেখানো হয়।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী