অনাগরিক ধর্মপাল
অনাগারিক ধর্মপাল (পালি: অনাগারিক, [ɐˈnɐɡaːɽɪkɐ]; সিংহলি: අනගාරික ධර්මපාල; ১৭ সেপ্টেম্বর ১৮৬৪ - ২৯ এপ্রিল ১৯৩৩) ছিলেন একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং ধর্মপ্রচারক যিনি ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে ও উপাসনালয় গড়ায় বিশেষ অবদান রেখেছেন।[১] তিনি শ্রীলঙ্কায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আণ্দোলনের একজন জাতীয়তাবাদী নেতা এবং অহিংস আন্দোলনের পুরোধাদের একজন।[২]
অনাগারিক ধর্মপাল | |
---|---|
জন্ম | ১৭ সেপ্টেম্বর ১৮৬৪ |
মৃত্যু | ২৯ এপ্রিল ১৯৩৩ |
পেশা | বৌদ্ধ ভিক্ষু |
পরিচিতির কারণ | ধর্মপ্রচারক ও শিক্ষাবিদ |
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
অনাগারিক ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর তত্কালীন ব্রিটিশ ভারতের শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে ধনাঢ্য হেওয়া বিতরণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] পিতা ডন কেরোলিস মুডালিয়ার হেওয়া বিতরণ ছিলেন কলম্বোর একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী।[১] তার পিতৃদত্ত নাম ডন ডেভিড হেওয়া বিতরণ।[৩]
শিক্ষাজীবন
তিনি সেন্ট টমাস নামে এক খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে অধ্যয়ন করাকালীণ সতীর্থদের মধ্যে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের স্কুল ত্যাগ করতে হয় এবং বিভিন্ন স্কুলে একই ঘটনা ঘটতে থাকে ও শেষ পর্যন্ত ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে সিংহলের একটি স্কুলে ভর্তি হয়ে সেখান থেকেই বিদ্যার্জন সম্পন্ন করেন।[১] তিনি খ্রিস্টান কলেজ; সেন্ট বেনেডিক্টস কলেজ, কোটাহেনা; এস থমাস কলেজ, মুটওয়াল এবং কলম্বো একাডেমি (রয়েল কলেজ)-এ পড়াশোনা করেছেন।[৪][৫]
কর্মজীবন
প্রাথমিক অবস্থায়
ধর্মপালের পিতামহ কর্নেল হেনরি স্টিল অলকট প্রতিষ্ঠিত থিওসোফিক্যাল সোসাইটির কলম্বো শাখার প্রতিনিধি হওয়ায় ডন ডেভিড মাত্র ১৪ বছর বয়সে এই সংস্থার কর্মী হয়ে সেখান থেকেই বৌদ্ধধর্ম-দর্শন বিষয়ে চর্চা শুরু করেন ও স্কুলে অধ্যয়নকালীনই সতীর্থদের মধ্যে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করতে থাকেন এবং এর ধারাবাহিকতায় ১৮৮৬ সালে, মাত্র বাইশ বছর বয়সে নিজেকে ধর্মের পালক হিসেবে উৎসর্গ করে ‘ধর্মপাল’ নাম ধারণ করেন ও তখন থেকেই ধর্ম-আন্দোলন, ভারতীয় মেধার সমন্বয় সাধন, প্রচার-পর্যটন এবং সংঘজীবন যাপন করতে শুরু করেন।[১]
বৌদ্ধধর্মের নব-জাগরণ
১৮৯১ সালে তীর্থভ্রমণার্থ বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দিরে গমন করে তিনি দেখতে পান যে অধুনা সংস্কারপ্রাপ্ত মহাবোধি মন্দিরটি শৈব পুরোহিতগণের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সেখানে ভগবান বুদ্ধের উপাসনার পরিবর্তে ব্রাহ্মণ্য ধর্মানুসারে পূজার্চনা অনুষ্ঠিত হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে তিনি একটি আন্দোলন গড়ে তোলেন।[৬] বুদ্ধগয়ায় অবস্থিত মহাবোধি মন্দির পুনরুদ্ধারেরউদ্দেশ্যে সে বছরই কলম্বোয় প্রতিষ্ঠা করেন মহাবোধি সোসাইটি যার মূল কার্যালয় পরের বছর, ১৮৯২ সালে, কলম্বো থেকে স্থানান্তরিত করে কলকাতায় আনা হয়।[৭][৮]
সম্মাননা
২০১৪ সালে তার জন্মের ১৫০ বছর পূর্তিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কা তার উপর স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।[৯] কলম্বোর একটি সড়কের নাম তার নামে রাখা হয়েছে।[১০][১১] ২০১৪ সালে তার জীবন কাহিনীকে ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র নির্মান করা হয়।[১২]
সমালেচনা
অনাগরিক ধর্মপাল কর্তৃক প্রবর্তিত বৌদ্ধ নবজাগরণকে বহুক্ষেত্রে রক্ষণশীল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, কারণ তিনি ভারতে বৌদ্ধধর্মের অবলুপ্তির কারণ হিসেবে মুসলিম শাসনকে দায়ী করেছেন।[১৩]
আরও দেখুন
- মহাবোধি সোসাইটি;
- বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- অনাগরিক ধর্মপাল - বাংলাপিডিয়া সাইটে।